স্বপ্ন
স্বপ্ন
সকাল সাতটা। চারিদিকে পাখিদের কলরব। নির্মল বাতাস বইছে। রবির কিরণ যেন চারিদিককে উজ্জীবিত করছে। কিন্তু মানুষকে স্পর্শ করেও যেন করছে না। তারা যেন ম্রিয়মান হয়ে রয়েছে। করোনার করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে গৃহবন্দি জীবন যাপন করছে তারা। তাদের কাছে এখন বাইরে বেরোনোটা আকাশকুসুম স্বপ্নের মতো। সমগ্র পৃথিবী স্তব্ধ। মানুষদের কলরবহীন পৃথিবী, কর্মচঞ্চলতাহীন পৃথিবী, ভাইরাস কবলিত পৃথিবী। এই পৃথিবীকে কেউ কোনোদিন দেখেনি, কেউ কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। রাজশ্রীর কাছে পৃথিবী নতুন ঠেকছে। তার বয়স কুড়ি বছর। সে এখন কলেজছাত্রী। তার কাছে গৃহবন্দি জীবন একঘেয়ে হয়ে উঠছে। সে একা একা ভাবে সেদিন কবে আসবে যেদিন মানুষ আবার রাস্তায় বেরোবে, চারিদিক থেকে মৃত্যু সংবাদ আসবেনা, সে কলেজে যাবে, বন্ধুদের সাথে ফুচকা খাবে চারিদিকে শুধু আনন্দের স্রোত বইবে।
আর করোনার প্রকোপ কমবে। করোনার ছোবল এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে তার মনে কখনো কখনো ভয় হয় এই ভেবে যে, আদৌ আনন্দের দিন আসবে তো? তার দেখা স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে তো? রাজশ্রীর এই সদর্থক চিন্তাগুলি তা
র কাছে এখন আকাশকুসুম স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। আর পাঁচজনের মতো সেও বন্দিদশা থেকে মুক্তি চাইছে। সে দেখছে সমাজের কতো মানুষের করুণ অবস্থা। এই দেখে তার দু'চোখ বেয়ে জল নেমে আসে। ছোট্ট মেয়ের মতো দৌড়ে গিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করে,"মা পৃথিবীর এরকম দশা কেন হলো?" মা বলে ওঠেন," মনা! মানুষ বড়োই স্বেচ্ছাচারী ও দুর্নীতি পরায়ণ হয়ে উঠেছিল, প্রকৃতির ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছিল এতদিন। তাই প্রকৃতি তাঁর ভয়াল রূপ মানুষকে প্রত্যক্ষ করাচ্ছেন। ভয় নেই মা তাঁরই সব সৃষ্টি, তিনি তাঁর সৃষ্টিকে ঠিক রক্ষা করবেন।" কথাগুলো শুনে রাজশ্রীর কাছে যে স্বপ্ন আকাশকুসুম মনে হচ্ছিল, এখন সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবেই এই প্রত্যয় তার মধ্যে দৃঢ় হলো। কিন্তু যত দিন যেতে থাকছে রাজশ্রীর স্বপ্নের বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা বাড়ছে না। যেরকমভাবে খাঁচা থেকে পাখি উড়ে গেলে পাখি চোঁ চা আকাশের দিকে দৌড় দেয় আর মালিক ধরার চেষ্টা করে, ঠিক তেমনি রাজশ্রীর স্বপ্ন যেন একা একা আকাশে উড়ছে আর রাজশ্রী তাকে ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার দৃঢ় বিশ্বাস তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবেই।