Pronab Das

Tragedy

3  

Pronab Das

Tragedy

স্বীকারোক্তি

স্বীকারোক্তি

3 mins
322


চাকরিটা আমি ছেড়েই দিলাম। তার জন্য বন্ধু বান্ধব আত্মীয়ও স্বজনের কাছ থেকে কম কথা শুনতে হয়নি। আসলে আমাদের মত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের চাকরী একটা স্বপ্নের মত। পড়াশোনা আমার বেশিদূর হয় নি। বাবা বলতেন আমি নাকি গবেট। কোনমতে টেনে টুনে মাধ্যমিক উৎরেছি। তাপর তোফা জীবন টা কেটে যাচ্ছিল। খেলাধুলা গুলতানিমারা আর আড্ডাই ছিল রোজকার দিনের মূল কাজ। একদিন হঠাৎই ছন্দপতন, বাবা ডেকে বললেন …..


-----এই যে ধম্মের ষাড়,.......বাড়ির খেয়ে আর কদ্দিন বনের মোষ তাড়াবে শুনি?


         আমি চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কি উত্তর হবে এই প্রশ্নের ভেবেই কুল কিনারা পাচ্ছিলাম না। বিশ্বাস করুন প্রথমটায় আমি কিচ্ছুটি বুঝতে পারিনি,......ষাঁড়, মোষ আর তার সাথে আমার কি সম্পর্ক! পরে বুঝলাম বাড়ির হোটেল জায়গাটায় খাবার আর ফ্রি তে মিলবে না। আর এর পর থেকেই বাড়িতে খাওয়ার সময়ই অদ্ভুত এক সংকোচ বোধ হত। তবে বেশিদিনের জন্য নয়। মায়ের সুপারিশে মামা এক ঠিকাদারের তত্বাবধানে হওড়ায় রেলওয়ে গোডাউনে দেখভালের কাজে লাগিয়ে দিলেন। মূলতঃ মালগাড়ী থেকে যে সমস্ত চাল, ডাল, গমের বস্তা খালাস হয় সেগুলো পাহারা দেওয়া। এই সময় আশেপাশের বস্তি থেকে অনেক মহিলা, বাচ্চা, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা আসে মাটিতে পড়ে থাকা সেই চাল ডাল কুড়িয়ে নেয়ার জন্য। এদের তাড়ানোও ছিল আমার ডিউটির একটা মুখ্য কাজ। কারণ দিনের শেষে এই ধুলোমাখা চাল, গম অল্প দামে বেঁচে একটা উপরি ইনকাম হত। আমাদের সেকশনে আমি, ইকবাল আর পার্থ এই তিনজন আছি। কিন্তু টাকা ঠিকাদারের জন্য চার ভাগে ভাগ হত। প্রতিদিনের যাতায়াতের আর খাওয়া খরচা এর থেকেই উঠে আসতে। 


           আজ অনেক দিন পর চাল খালাস হবে। সকাল থেকে ভীড় জমেছে চাল কুড়োবার জন্য। মাঝে মধ্যে মুঠো মুঠো চাল ছেড়া পাটের বস্তা থেকে ঝরে পড়ছে। পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি দাঁড়িয়ে থাকা বুভুক্ষু মানুষ গুলোর চোখ চিক চিক করছে এক মুঠো ওই চাল নেওয়ার জন্য। কাঁখে কচি বাচ্চা নিয়ে কিছু মহিলাও এসেছে। মাঝে মাঝে পার্থ লাঠি উঁচিয়ে ওদের নিয়ন্ত্রণ করছে। এরই ফাঁকে আমাদের চোখ এড়িয়ে কয়েক জন মহিলা আঁচল ভোরে চাল নিয়ে পালিয়েছে। আমি এদেরকে বিশেষ আমল দিতাম না। দুমুঠো চালই তো নেবে। ওদের বাধা দিতে খারাপ লাগে। এরই মধ্যে হঠাৎ আমাদের ঠিকাদারের আবির্ভাব। ইকবালকে সামনে পেয়ে কড়া ধমকে দিল। কেন সবাই চাল নিয়ে পালাচ্ছে। সবাই চকিতে তটস্থ হয়ে পড়লাম ওদের ভাগাতে। 


          বেলা তখন প্রায় তিনটে। মাল খালাস হয়ে গেছে খানিক আগে। ইকবাল গুম মেরে বসে আছে । সকালে ঠিকাদার নাকি ওকে বাপ মা তুলে খিস্তি দিয়েছে। আমি ওকে বিশেষ ঘাটালাম না। হাত ধুয়ে বাইরে সার দেওয়া চালের বস্তার ওপর বসেই টিফিনের কৌটো খুলে খেতে লাগলাম। হঠাৎ নজরে এল কোলে বাচ্চা নিয়ে এক মহিলা পরে থাকা চাল আঁচলে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি তা দেখেও না দেখার ভান করছি। ইকবাল সেটা দেখতে বেয়ে চিৎকার করতে করতে লাঠি উঁচিয়ে ছুটে আসে। ভয় পেয়ে বাচ্চাটা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। ইকবাল বলে,...


-----শুয়োরের বাচ্চা, চাল কি মাগনা আসে? চোর কোথাকার! আজ বেঁধে রাখবো দুটোকে। দেখ কি করি তোদের।


প্রচণ্ড ভয় পেয়ে, চাল ফেল হাত জোড় করে বলে,.....


----- বাবু আর চুরি করবনি, ভুল হয়ে গেছে। ছেড়ে দিন।


 আমি ইকবালকে বাধা দিতে গেলে সে খেঁকিয়ে ওঠে। বলে,


---- তোর কি, শালা খিস্তি তো আমি খেলাম।


      আমাদের কথার ফাঁকে সুযোগ বুঝে ওই মহিলা পালাতে চেষ্টা করে । অকস্মাৎ একটা আর্ত চিৎকার কানে আসে। পালানোর সময় পাশের রেল লাইন পর হতে গিয়ে মা মেয়ে দুজনেই মেল ট্রেনে কাটা পরে। সে দৃশ্য দেখার নয়। এরপর আমি আর ওই চাকরী করতে পারলাম না। ওই দিনই আমি ছেড়ে দিলাম।


        বাড়ি গিয়ে বাবাকে বলব, …...হ্যা বাবা, তুমি ঠিক বলতে আমি একটা গবেট, অপদার্থ। আমি ঐ চাকরি করতে পারব না।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy