The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Mitali Chakraborty

Tragedy Classics Inspirational

4.5  

Mitali Chakraborty

Tragedy Classics Inspirational

সাম্যবাদ:-

সাম্যবাদ:-

4 mins
529


বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ ডোরবেল বেজে ওঠে। শকুন্তলা দেবী হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুলে দেখেন চম্পা দাঁড়িয়ে আছে। চম্পা শকুন্তলা দেবীর বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে আসছে বহুদিন ধরে।


চম্পাকে দেখেই শকুন্তলা দেবীর মাথা দপ করে জ্বলে ওঠে। বাজখাই গলায় চেঁচিয়ে বলছেন, "এই মেয়ে, এতক্ষনে সময় হলো তোর কাজে আসার? তোকে পইপই করে বলি সকালে আসার জন্য, কিন্তু তুই আমার কোনো কথা গ্রাহ্যই করিস না! বেশি বাড় বেরেছে তোর, এইভাবে চলতে থাকলে আমি নতুন ঝি দেখবো এই বলে দিলাম...."। কথা ক'খানি শুনিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে ঠাকুরঘরের দিকে পা বাড়ান শকুন্তলা দেবী। 

*************************

চম্পা তখন রান্নাঘরে বাসন মাজা নিয়ে ব্যস্ত। সকালের কাগজটা নিয়ে রান্নাঘরের পাশের ছোট্ট বারান্দাটায় এসে বসেন শকুন্তলা দেবী। তখুনি আবার বাড়ির ডোরবেল বেজে ওঠে। চম্পাকে দরজা খুলে দেখতে বললেন কে এসেছে আর মনে মনে ভাবতে লাগলেন এই সময়ে কে আসতে পারে! কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখতে পেলেন ওনার বান্ধবী মিত্রা দেবী ঘরে ঢুকছেন। নিজের সুহৃদয় বান্ধবীকে এতদিন পর দেখতে পেয়ে আনন্দে উদ্বেল হয়ূ ওঠেন শকুন্তলা দেবী। যত্ন করে মিত্রা দেবীকে বসিয়ে পাখাটা চালিয়ে দেন।


ওইদিকে চম্পার তখনও বাসনধোয়া আর বাকি কাজ করা শেষ হয়ে উঠেনি। কিন্তু শকুন্তলা দেবী আবার আরেক নির্দেশ চাপিয়ে দিলেন চম্পার ঘাড়ে। এইবারের নির্দেশ মিত্রা দেবীর জন্য চা-টা করার। চম্পা মনমরা হয়ে ঘড়ির দিকে তাকায়। পৌনে বারোটা বাজতে চললো। কখন কাজ শেষ করবে, কখন বাড়ি যাবে, গিয়ে দুটো ফুটিয়ে তারপর কিছু মুখে তুলবে। চোখের সামনে অন্ধকার দেখে চম্পা। সেই সকালে একটু খেয়ে বেরিয়েছিল কাজ করতে। কিন্তু কাজ ফেলে দুইদণ্ড জিরিয়ে নেওয়ারও উপায় নেই, এখনো যে অনেকগুলো কাজ বাকি।


ওইদিকে মিত্রা দেবী আর শকুন্তলা দেবী গল্প আড্ডায় মেতে রয়েছেন। মিত্রা দেবী জিজ্ঞেস করছেন শকুন্তলা দেবীর মেয়ে সুস্মিতার ব্যাপারে। শকুন্তলা দেবী বলছেন,

- সুমি ভালো আছে রে মিত্রা। এখন তো তার ভরা মাস চলছে, আমার জামাইবাবা একজন রান্নার আর একজন সর্বদা সুমিকে দেখার জন্য লোক রেখে দিয়েছে। ওকে আমি এখন শুধু ভালো ভালো জিনিস খেতে বলেছি। পোয়াতি মেয়ে সুমি, এইসময়ে ভালো খাওয়াদাওয়া করা আর রেস্টে থাকা খুব প্রয়োজন। দিনে সাত থেকে আটবার তো কথা বলি সুমির সাথে, খুব ভালো আছে আমার মেয়েটা।

- বাহ্! তোর মেয়েজামাই তো বেশ ভালো মানুষ। নিজের স্ত্রীর প্রতি সে যথেষ্ট যত্নশীল আর দায়িত্ববান।

- হ্যাঁ রে, সে আর বলতে। আমার বেয়াই বেয়ানও তো কত্তো ভালো। আমার মেয়েটাকে কতো আদরে যত্নে রেখেছেন। কুটোটিও নাড়তে হয়নি তাকে বিয়ের পরে। আর এখন তো কাজকর্ম করার প্রশ্নই নেই।

চম্পা দুর থেকে তাদের খোসগল্প গুলো শুনে আর এক চাপা নিঃশ্বাস ফেলে চায়ের ট্রে নিয়ে তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়।

 - এই নে মিত্রা চা এসে গেছে, নে ধর চা।

মিত্রা দেবী এক চুমুক চা পান করে বলেন 

 - বাহ্ ভালো চা বানিয়েছে তোর ঝি।

 - হ্যাঁ রে, চম্পা খুব ভালো চা বানায়। 

শকুন্তলা দেবী চম্পার দিকে তাকিয়ে বলেন 

 - চল যা, বাকি কাজগুলো সেরে নে এখন। কিছু দরকার হলে ডেকে নেবো। যা.....

চম্পা তখনও দাঁড়িয়ে আছে দেখে একটু অবাক হয়ে শকুন্তলা দেবী জিজ্ঞেস করেন

 - কি হলো? কিছু বলবি?

 - আসলে মাসিমা কাল ছুটি চাই। (খুব ভয়ে ভয়ে কথাটা বললো চম্পা)

 - কেন রে? কি কাজ তোর? এতো কিসের ছুটি চাই? (একরকম চেঁচিয়ে ওঠেন শকুন্তলা দেবী চম্পার ওপর)

 - মাসিমা, জানেন তো আমিও পোয়াতি। এতকাজ শরীরে দেয়না। একদিন দয়া করে ছুটি দিন, শুধু কালকের দিনটা। পরশুদিন আবার এসে সবকাজ করে দেবো মাসিমা।

 - তবে রে! সেদিনকার মেয়ে আমায় শেখাতে এসছিস? আমার পেটে যখন সুমি ছিল, তখন জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থাকতাম আমি! জয়েন্ট ফ্যামিলি বুঝিস্? এক সাথে আট দশ জনের পরিবার। আমি ছিলাম বড় বউ। সব কাজ একা হাতে করতাম। আর তুই আমায় পোয়াতি হয়ে কাজ কামাই করার আখ্যান শোনাচ্ছিস? যা এখন, কোনো ছুটি টুটি হবেনা। যা গিয়ে কাজ কর। এই বলতে বলতে চায়ের কাপে চুমুক দেন শকুন্তলা দেবী।

***************************

শকুন্তলা দেবীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে চম্পা। যেতে যেতে দেখতে পেলো পাড়ার মোড়ে সামিয়ানা টাঙিয়ে প্যান্ডেল বানানো হচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখলো বড় এক কাগজে লেখা আগামী ৮'ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারীদিবস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এবারের বিষয় "সাম্য সকলের জন্য"। অনুষ্ঠানে সকলের সাদর আমন্ত্রণ।

চম্পা নিজের অদৃষ্টের উপর একটু হেসে আবার পা বাড়ায়। মনে মনে ভাবে এসব নারীদিবস অনুষ্ঠানের কি দরকার যেখানে শকুন্তলা দেবীর মত এক নারী আমাকে এরকম করে কথা শুনিয়ে অপমান করতে পারেন। আমাদের মতো গরীব খেটে খাওয়া মেয়েলোকের কাছে নারীদিবস ব্যাপারটাই জটিল। কত শত ভাবতে ভাবতে মাথা নুইয়ে এগিয়ে যেতে থাকে চম্পা।

আচ্ছা আমরা নারীরাই যদি অপর নারীর সমব্যেথায় ব্যাথিত না হই, সমবেদনা না জানাই, তবে কি নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে আমরা সবাই ইকুয়েল বা সমান? সমানাধিকার আছে কি আমাদের সমাজের সকল স্তরের মানুষের? সাম্য বা সকলের সম-অধিকার তখনই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, যখন আমরা পরের তরে নমনীয় হতে পারবো। তাই নয় কি? 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy