সাদা কাগজ
সাদা কাগজ
অনেকেই ব্রেকআপ হলে পুরোনো ভালোবাসার মানুষটাকে ভুলতে, নতুন আরেকজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এই একজনকে ভুলতে, আরেকজনের সাথে জড়িয়ে পড়া সম্পর্কটাকেই "রিবাউন্ড সম্পর্ক" বলে।
আসলে কী জানো? আগেরজনকে নতুন আরেকজন দিয়ে রিপ্লেস করে আগেরজনকে ভোলা যায় না। সম্পর্ক আসলে একটা অভ্যাস। একদিনের অভ্যাস না। ধীরে ধীরে পরিনতি পাওয়া একটা দীর্ঘমেয়াদি অভ্যাস। সেই অভ্যাস রাতারাতি অন্য কারো সাথে কাটানো মুহুর্ত দিয়ে রিপ্লেস করা যায় না। ব্রেকআপ হলে, হুটহাট করে আরেকটা সম্পর্কে না জড়িয়ে, একবার নিজেকে টাইম দাও, নিজের সাথে সময় কাটাও, নিজেকে বুঝতে শেখো। নিজেই নিজের বন্ধু হতে শেখো প্রিয়।
আসলে কী জানো, আমরা একতরফা ভালোবাসতে বাসতে, নিজেকে ভালোবাসতে ভুলে যাই। তাই ছেঁড়া সাদা পাতাতে আঁকি বুকি কাটা কিছু লেখা ছড়িয়ে রয়েছে ঘরময় । তুমি থাকলে হয়তো চিৎকার করে পাড়া মাথায় করে নিতে। কিন্তু নেই , আর কেন নেই সেই কারণটাই খুঁজে পেতে চাইছিলাম এতো দিন ধরে, কিন্তু আজ যখন পেলাম তখন উঁত্তর দিতে পারছি না।
আমার অনুপস্থিতিতে তুমি তোমার অফিস কলিগ সাথে একটা সম্পর্কে জরিয়ে গেছিলে! আমি ধরে নিয়েছিলাম সেটা দূর্ঘটনা। তুমি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলে। আজো তোমার মন কাঁদে অভির জন্য। আমি ধরে নিয়েছিলাম তুমি হয়তো খুব অসহায় ছিলে তাই আমাকে বিয়েটা করেছো। আমি প্রতিবাদ করি নি। ভেবেছিলাম সব ঠিক হয়ে যাবে আগের মতো কিন্তু কিছুই হলো না তেমনটা।
সত্যি কি তুমি খুব অসহায় ছিলে? আমিতো তোমার জীবনের প্রথম পুরুষ ছিলাম। যে বয়সে একটা মেয়েরা প্রেম পরে, কিংবা একটা সাথি খোঁজে তখনই তোমার সাথে দেখা, অনেক বিকল্প না থাকলেও কিছু বিকল্পের মধ্যে তুমি নির্বাচন করেছিলে। যদিও নির্বাচিত হবার কোন যোগ্যতা আমার ছিলো না, শুধুমাত্র ছিলো অনর্গল কথা আর তোমাকে শাসন করা ছাড়া।
মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান তুমি। প্রেমের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছিলো দুই বাড়ি থেকেই। তোমার কথা তোমার বাবা সুবিধার মানুষ না। তোমার পড়াশোনা থেকে যাবতীয় খরচ খরচা যোগান দিতে হলো আমাকে। তোমার জন্য কিছু করতে গেলেই অভাব আঁকড়ে ধরতো উনাকে। তুমি বললে বিয়েটা করে নিই চললো। আমার ভালো চাকুরী না থাকলেও , তুমি জানতে ভাত কাপড়ের অভাব হবে না তোমার। নিজের মেয়ে মতোই দেখতো তোমাকে আমার বাড়ির লোকজন।
বেশ সুখেই দিন কাটছিলো। দুই জনেই মাস্টার ডিগ্রীটা করে চাকুরী খোঁজে বেড়িয়ে পড়লাম। তোমার চাকরীটা হয়ে গেলো তাড়াতাড়ি। আমারটা হবে হবে করছে। যদিও আমি ব্যবসা করতে চাই বাবা দোকান করে দিয়েছে বাজারে। খুলছি মাঝে মাঝে। সেখানে তোমার আপত্তি তাই চাকুরী খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছি, ভালো চাকরির সন্ধানে চলে যাচ্ছি অন্য শহরে ও।
কিন্তু এতোটাও দূরত্ব তৈরি হয়নি যে তোমার জীবনে অন্য কেউ আসবে। আসলে অন্য একটা জ্বালা মেটাতে তুমি সম্পর্কটা করেছিলে। এক অফিসে থেকেও অভি তোমাকে এড়িয়ে যেতো সেটাই তোমার জ্বালা ছিলো। অভির সাথে আমার সম্পর্কটা তোমার মারফত কিন্তু অনেকটা ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম আমরা , তাই হয়তো আমার উপর সহানুভূতি বা সৌজন্যতার খাতিরে ও তোমাকে এড়িয়ে যেতো।
তবু ঘৃণা কারণ তো একটা চাই। তুমি নিজেই বলতে। তোমার আত্মীয় স্বজনরা তোমার মাকে মেনে নেয় নি বলেই তোমার বাবাকে আলাদা বাড়ি ভাড়া করে থাকতে হয়েছিল। তোমার আত্মীয় স্বজনরা আমাকে মেনে নেয়নি আমরা নিচু জাতের বলে। কিন্তু আমরা মা সেটা মানবে কেন? আমাকে নিয়ন্ত্রণ করলো তোমাদের বাড়িতে তাও মৌখিক। একটা কার্ড রেখে যেতে পাড়লো না, তোমার জ্যাঠা মশাই। আমাদের বাড়ি ফেলেই অথচো যেতে হয় তোমাদের ঘরে।
কুড়ি বছর পর নাকি তোমাদের কথা মনে পড়ছে তোমাদের কথা। উনি আমাদের বিয়েতে আসেন নি। তবে শুনেছিলেন অবস্থাপন্ন ঘরে তোমার বিয়ে হয়েছে, তাই একটা টিভি উপহার পাঠিয়েছিলেন। উপহারটা না নিলেও মায়ের সে কথা মনে ছিলো। তোমাকে যেতে না করলো না। কারণ ওটা তোর ব্যক্তি স্বাধীনতা মধ্যে পরে। তবে আমাকে না যাওয়ার পরমর্শ দিলো। এটাই মায়ের অপরাধ।
তুমি অজুহাত পেয়ে গেলে । আমি সব কষ্ট মেনে নিতে পারি কিন্তু তোমাকে বিপদে ফেলতে চাই নি কখনো তাই ভাড়া বাড়িতে যাওয়ার তোমার প্রস্তাবটা মানতে পারি নি। কিন্তু কয়েকটি মাস অপেক্ষা করতে তুমি শহরটা তো আমি বদলাবো বলছিলামই। বাবা মা তাদের সারা জীবনের কষ্ট করে করা বাড়ি ছেড়ে আমাদের পিছু নিতো নাকি। তাছাড়া তো তাদের কোন অভাব নেই রে আমাদের নির্ভরশীল হতে হবে।
জানিনা তোমার কেন যেনো তাড়া ছিলো সম্পর্কটা ভাঙার কোন কথা বলার সুযোগ পর্যন্ত দেও নি তুমি। হয়তো ভালো চাকরি পেয়ে পদোন্নতির ফলে তুমি বিপদে পড়ে গেছিলে। ভেবেছিলে কেন ভর্তুকি দিয়ে একটা সম্পর্কে বাঁচিয়ে রাখতে যাবে তুমি যখন নতুন একটি উন্নত জীবনের পথ খোলা আছে একটা নতুন সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে। মিথ্যা হোক, ভুল বোঝাবুঝি হোক। সাদা কাগজের ওপর তোমার লেখা চিঠিতে অনেক ঘৃণা জমে আছে। তবে সে সব কথা গুলো হয়তো তোমার নয় । আমি তো খুব এক আমার চোখ এখনো জল আসে তোমার জন্য , কলমে আসে ভালোবাসার আকুতি। কিন্তু ঘৃণার কথা লিখতে চাই তোমার জন্য। সাদা কাগজের স্তুপে শুরু স্মৃতির ভিড় যা বলে দেয়ে একদিন বেশে সুখেই ছিলাম আমরা কিন্তু এ শহরের সেটা পছন্দ হলো না।