শিপ্রা চক্রবর্তী

Abstract Others

3  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Abstract Others

রূপালি জগত

রূপালি জগত

3 mins
214


মুম্বাই এর বান্দ্রা সী বীচের কাছে চোদ্দোতলার জাকজমক পূর্ণ বিলাসবহুল ফ্ল‍্যাটের কাঁচের ব‍্যালকনিতে একটা দামি শিফন শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে রূপালি। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সমুদ্রের দিকে। সমুদ্রের ঢেউ গুলো তীব্র বেগে আছড়ে পড়ছে তীরে, আর তীরে জমে থাকা সমস্ত জিনিস নিয়ে যাচ্ছে ভাসিয়ে কিন্তু কোনটাকেই নিজের কাছে ধরে রাখছেনা যা নিয়ে যাচ্ছে কিছু সময় পর আবার সবকিছু ফিরিয়ে দিচ্ছে।


রূপালি সমুদ্রের ঢেউ দেখছে আর ভাবছে সময়ের সাথে যদি ওর জীবনের ফেলে আসা সুন্দর দিন গুলো ফিরে আসতো তাহলে কত ভালো হত!!!!আজ এত বিলাসবহুল জীবনযাপন করলেও রূপালির জীবন থেকে আনন্দ কোথায় যেন পালিয়ে গেছে!!!!! এখনও রূপালির চোখের সামনে ভেসে ওঠে ওদের সেই সবুজে ঘেরা ছোট্ট গ্রাম, মাটির খড়ের ছাউনি দেওয়া বাড়ি, মায়ের আদর, বাবার শাসন, ভাইয়ের সাথে মারামারি, খাবার ভাগ করে খাওয়া। শত কষ্টের মাঝেও কত আনন্দ ছিল, সবার একসাথে থাকাতে।


কিন্তু এখন চাইলেও রূপালি এই আলোর জগত থেকে নিজেকে আলাদা করতে পারবেনা!!!!বাইরে যতই আলোয় ভরা হোকনা কেন এই আলোর জগতের পিছনে কতটা যে অন্ধকার ছড়িয়ে আছে সেটা কেবল মাত্র তারাই জানে যারা এই জগতে বাস করে!!!! এইসব ভাবতে ভাবতে রূপালির চোখ দুটোতে জল ভরে এসেছে। রূপালি এক দৃষ্টিতে দূরে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। দেখে মনে হচ্ছে আকাশ যেন সমুদ্রের বুকে নিজেকে মিশিয়ে নিচ্ছে একটু একটু করে।


আজ রূপালির অতীতের ফেলা আসা দিনের কথা খুব মনে পড়ছে, এই রঙিন দুনিয়ায় ছোট্ট থেকে রূপালিকে আকর্ষন করেছে। এই দুনিয়ায় আসার জন‍্য রূপালি কত কি..... সহ‍্য করছে জীবনে???? এমন কি..... আঠারো বছর বয়সে বাড়ির কাউকে কিছু না.... জানিয়ে একা পালিয়ে এসেছিল এই মুম্বাই শহরে!!! তারপর থেকে শুরু হয় রূপালির জীবন যুদ্ধ। রূপালি বুঝতে পারে বাস্তব দুনিয়া কতটা নিষ্ঠুর এবং কঠিন। রূপালি তবুও হার মানেনি লড়াই চালিয়ে গেছে। নিজের সমস্ত কিছু উজার করে দিয়েছে এই দুনিয়ায় আসার জন‍্য। ধীরে ধীরে একটু একটু করে এই আলোর দুনিয়ায় প্রবেশ করেছে আর প্রতিদিন রাতে এক হাত থেকে অপর হাতে ওর শরীর বদলেছে। এখন রূপালির নিজের ওপর নিজের ঘৃনা হয়, এই নাম, যশ, খ‍্যাতির পিছনে চাপা পড়ে থাকা আসল সত‍্যের রূপ যে..... কি.......ভয়ানক এবং বিভীষিকার তা কেউ কল্পনাও করতে পারবেনা!!!! বাইরে থেকে যতটা রঙিন লাগে, ভীতর থেকে এই দুনিয়া ততটাই নিকষ কালো।


রূপালি নিজেকে শক্ত করে নেয়, কারন ভেঙ্গে পড়লে চলবে না!!! চোখের জলটা মুছে নিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ে। আয়নার সামনে বসে চড়া মেক আপের নীচে নিজের মনের ভীতরে জমে থাকা কষ্টের, ফুটে ওঠা ছাপ কে চাপা দেয় রূপালি। সেজে ওঠে এক অন‍্য সাজে, যে সাজে সব সময় সবাই ওকে দেখে অভ‍্যস্ত। একবার নিজেকে আয়নায় ভালো করে দেখে নেয় রূপালি, আয়নার নিজের এই সাজ দেখে রূপালির মন, নিজের ওপর নিজেই ব‍্যঙ্গের হাসি হেসে ওঠে।

রূপালি আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে নিজের পার্সোনাল সেক্রেটারি এবং গার্ডকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি করে বেড়িয়ে পড়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্য। আজ এতদিন পর রূপালির সমস্ত অপমান, এবং কষ্টের ফসল লাভ হতে চলেছে। রূপালি ফ্লিম ফেয়ার অ‍্যাওয়ার্ডে নমিনেটেড হয়েছে। কিছুক্ষনের মধ‍্যে গাড়ি এসে দাঁড়াল তার গন্তব‍্যে। সাথে সাথে চারিদিকে আলো, ক‍্যামেরা এবং সাংবাদিকদের ভীড় জমে গেল। রূপালির বডি গার্ড গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে দাঁড়াল। সাথে সাথে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এল অভিনয় জগতে উজ্জ্বল তারকা মিস. রূপালি বাসু। শুরু হলো ফটো সেশন এবং প্রশ্নোত্তর পর্ব। সব কিছু মিটিয়ে লাল কার্পেটের ওপর দিয়ে ফ‍্যানদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়াতে নাড়াতে ভীতরে ঢুকে পড়ল রূপালি।

লাল নীল রঙিন আলো এবং ফুলের চাদরে সেজে উঠেছে পুরো স্টেজ। চারিদিকে আনন্দ মুখরিত পরিবেশ, চারিদিক জুড়ে যেন চাঁদের হাট বসেছে। অভিনয় জগতের উজ্বল নক্ষত্ররা আজ এক জায়গায়। দীর্ঘ কুড়ি বছরের অভিনয় জগতে কাজ করে এই প্রথম ফ্লিম ফেয়ার অ‍্যাওয়ার্ডে নাম নমিনেটেড হয়েছে রূপালির। ফ‍্যান, ফলোয়ার সবাই এসে হাজির হয়েছে এই রঙিন জগতটাকে দেখবে বলে। শুরু হল অ‍্যাওয়ার্ড ফাংশান, ঘন্টা-দুয়েকের মধ‍্যে মাইকে ভেসে আসল বেস্ট অ‍্যাক্টার অফ দা ফিমেল দিস ইয়ার ইস....... রূপালি বাসু। চারিদিক থেকে হাততালির আওয়াজ ভেসে আসতে লাগল। রূপালি স্টেজে গিয়ে অ‍্যাওয়ার্ড নিল। রূপালি একটা কথাই বলল.........


"THE WAY I SEE IT,

IF YOU WANT THE RAINBOW,

YOU GOTTA PUT UP WITH THE RAIN."


এর চেয়ে বেশি আজ আর কোন কথা বলতে পারলনা রূপালি, কারন এক কষ্ট মিশ্রিত আনন্দ অশ্রুতে রূপালির গলা বুজে গেছে। ফ‍্যানদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়িয়ে এবং থ‍্যাঙ্ক ইউ বলে স্টেজ থেকে নেমে পড়ল রূপালি।





Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract