টক ঝাল মিষ্টি
টক ঝাল মিষ্টি
সকাল থেকে রায় বাবুর মেজাজ আজ সপ্তমে চড়ে আছে। কত আশা নিয়ে সেজেগুজে মাঞ্জা দিয়ে, ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে রায় বাবু বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন, কিন্ত..... তার সেই বেরনোর আশায় এক বালতি জল ঢেলে দিলেন রায় গিন্নি। আজ আবার বন্ধুদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার কথা ছিল রায় বাবুর, প্রত্যেক মাসে একবার করে রায় বাবুদের এই আসর বসে। আর সবাই মন প্রান খুলে আনন্দ এবং খাওয়া দাওয়া করে, তারসাথে গিন্নিদের নিন্দা যা... যা..... কথা গিন্নিদের মুখের ওপর বলতে গিয়েও বলতে পারেন না..... সেই সব কথা বলে হাল্কা হন। কিন্তু রায় বাবুর সব প্ল্যান ভেস্তে গেল বেরনোর ঠিক আগের মুহুর্তে!
-----রায় গিন্নি দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলেন, কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি! আবার সেই.... বন্ধুদের সাথে ঠেকে, এই এত বয়সে এসেও তোমার স্বভাব বদলালো না.... দেখছি, একই রয়ে গেল!!! কি.... ভাবো নিজেকে, ছোট্ট খোকা। আগের মাসে বন্ধুদের সাথে গিয়ে ঐ. সব মিষ্টি, তেলেভাজা, বিরিয়ানি, খেয়ে দুদিন ধরে শুধু বাথরুম আর ঘর করেছো। তার সাথে ওয়ারেশ আর কাঁচকলার ঝোল নিজে খেয়েছো আর আমাকেও খেতে হয়েছে তোমার চক্করে। আর বলিহারি তোমাদের বন্ধুদের, সবার শরীরে সুগার,প্রেশার, কোলেস্টেরল বাসা বেঁধে আছে আর তার ওপর নিলয়দা তো এই তিনমাস আগে হার্টে পেসমেকার বসালো। অনিমাদিতো আমার সাথে কথা বলে কত দুঃখ করছিলেন, আর নিলয়দার অসুস্থতার ব্যাপারে সব বলছিলেন, সত্যি এই বয়সে এসেও তোমাদের আক্কেল জ্ঞান হলোনা! আবার যে... কবে হবে কে... জানে? এ জন্মে বুঝি আর হবেও না! আর যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকবে বিছানায়, তখন তো.... এই শর্মাকেই দেখাশোনা করতে হবে। চুপচাপ ঘরে গিয়ে বসো, এখন তোমার কোথাও যাওয়া হবেনা। সামনের সপ্তাহে বাবু আসুক, আমি সব বলবো বাবুকে, তারপর বাবু যা... বলবে তাই হবে। অনিমাদি একটু আগেই ফোন করে বলেছে আমাকে আজকে আর নিলয়দাকে যেতে দেবেনা।
---রায়বাবু শুধু অবাক শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন রায় গিন্নির মুখের দিকে। আর মনে মনে বিড় বিড় করে বলে উঠলেন, সত্যি কোথাকার জল কোথায় গড়িয়েছে! কেন যে.... সংসারের কঠিন মোহ, মায়ায় নিজেকে জড়ালাম, এর থেকে হতাম যদি ভবঘুরে তাহলে কত ভালো হত। যখন যেখানে খুশি যেতে পারতাম, যা.... খুশি খেতে পারতাম, এই খিটখিটে বুড়ির মুখ ঝামটা খেয়ে পেট ভরাতে হতো না! যখন বিয়ের জন্য দেখতে গেছিলাম শাশুড়ি মা.... বলেছিলেন বাবা, মেয়ে আমার খুব ঠান্ডা 'সাত চরে রা কাড়ে না' কিন্তু বিয়ের এক বছর পার হতে না.... হতেই বুঝতে পারলাম, সত্যি 'সাত চড়ে রা কাড়ে না' গিন্নি উল্টে আরো চদ্দোটা চড় বসিয়ে দেয়। বয়স বয়স করে সব সময় খোঁটা দেওয়া, নিজের বয়স হয়নি বুঝি উনি কচি খুকি আছেন। একবার ফোন এলেই হলো, ঘন্টার পর ঘন্টা চলে গল্প, আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে আমার নিন্দা, তার বেলা দোষ নেই, তখন কিছু বলতে গেলে ওমনি শুরু ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কান্না। আর 'যত দোষ এই নন্দ ঘোষের'। 'ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলো' এই আমি আছি শান্তি রায়। কি... কুক্ষনে যে... আমার এই রকম নামকরণ হয়ে ছিল কে.... জানে? জীবনে শান্তি আর পেলাম না! আস্ত অশান্তির বোঝা ঘাড়ে নিয়ে এগিয়ে চলেছি বছরের পর বছর।
---------রায় গিন্নি রায়বাবুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, কি.... হল, কি... বিড় বিড় করছো তখন থেকে? ঘরে যেতে বললাম তো...., ঘরে যাও।আজ আর কোন মতেই বেরনো হবেনা। আর এখানে দাঁড়িয়ে আমার গুষ্ঠির ষষ্টি পূজো না.... করে, ঘরে বসেই করো ওতেই মঙ্গল তোমার এবং আমার।
রায় বাবু মনের কথা মনের মধ্যে চেপে রেখে গুটি গুটি পায়ে ঘরে ঢুকে গুম মেরে বসে রইলেন চুপচাপ এবং মনে মনে নিলয়কে গাল দিতে লাগলেন তার সাথে মন্টুর চপের। ওর চপ খেয়ে শরীর খারাপ হয়েছিল। রায় বাবুর কানে কথা ভেসে আসতে লাগল রায় গিন্নির, ফোনে কাকে যেন বলছেন
--------না যেতে দিইনি, আপনিও দেবেননা, তখন শরীর খারাপ হলে কে.... দেখবে?
---------রায় বাবু রাগের চোটে মুখ বেঁকিয়ে জোড়ে বলে উঠলেন, আহা্...... কত চিন্তা আমার জন্য, আমার শরীরের জন্য, আর আমার মনের জন্য কোনো চিন্তা নেই! না.... আর সহ্য হচ্ছেনা, এবার আমি গৃহত্যাগি হবো, ভবঘুরে হবো, যে দিকে দুচোখ যায় সে.... দিকে চলে যাব।
-------------রায় গিন্নি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠলেন, তা.... ব্যাগপত্র গুছিয়ে দেবো, কখন বেরোবে?
রায় বাবু রায় গিন্নির মুখের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ চলে গেলেন পোশাক পাল্টাতে। আর রায় গিন্নি রায়বাবুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হেসে উঠলেন।