বকুল প্রিয়া
বকুল প্রিয়া
প্রিয়...........,
যতদূর মনে পড়ে এটা তোমাকে লেখা আমার পঁচিশতম চিঠি। যতবার চিঠি লিখতে বসি ততবার ভাবি আর লিখবনা, কিন্তু না... লিখে যে.... থাকতেও পারিনা!!! আমি জানিনা আমার চিঠি আদৌও তোমার কাছ অবধি পৌঁছায় কিনা?? অথবা চিঠি পেলেও সে... চিঠি তুমি পড়ো কিনা??? হয়তো সেই চিঠির স্থান হয় তোমার ঘরের কোনের ডাস্টবিনে। তবুও লিখি, তোমার পছন্দের রঙের নীল খামে পুরে পাঠাই তোমার ঠিকানায়। আজও যখন আমাদের গ্রামের বড় রাস্তার ওপর অতীতের স্মৃতি বহন করে দাঁড়িয়ে থাকা বকুল গাছের পাশ দিয়ে যাই, তখন সেই প্রথম দিনের স্মৃতির কথা মনে পড়ে।
কি গো... মনে আছে তোমার??? আমি লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়ে দুইদিকে দুই বেনি ঝুলিয়ে স্কুল থেকে রোজ ঐ..... পথ দিয়ে বাড়ি ফিরতাম, আর তুমি রোজ বকুল তলায় বসে থাকতে আমার ফেরার অপেক্ষায়। অবশ্য সে.... কথাটা পরে শুনেছি তোমার মুখ থেকে। চোখা চোখি হত কেবল আমাদের, আর ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠতো আলতো হাসি। তারপর আস্তে আস্তে কথা শুরু হলো।
মনে পড়ে নিজের হাতে বকুল ফুল কুড়িয়ে মালা গেঁথে আমার খোঁপায় গুজে দিয়ে ছিলে যত্ন করে, কারন বকুল ফুল আমার প্রিয় ছিল। মুঠোভরা ফুল নিয়ে তুমি আমার সামনে ধরতে আমি প্রানভরে বকুল ফুলের গন্ধ টেনে নিতাম। তুমি ভালোবেসে আমার নাম দিয়েছিলে বকুল প্রিয়া। জানি আজ আর এই সব দিনের কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে, কিন্তু ঐ..... দিন গুলো আমি কিছুতেই ভুলতে পারিনা!!! রঙিন পর্দার ওপর প্রতিচ্ছবি হয়ে শুধু ভেসে ওঠে চোখের সামনে।
বহুবছর আগে এইরকম আজকের দিনে আমাদের প্রথম একসাথে চলা শুরু হয়েছিল, কিন্তু সেই চলা যে... এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি!!! আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম ছুটেও গেছিলাম সমস্ত কিছুকে উপেক্ষা করে তোমার কাছে, কিন্তু তুমি আমাকে গ্রহন করোনি!!! ফিরিয়ে দিয়েছিলে, আলাদা করে দিয়েছিলে আমাদের চলার পথ। তখন তোমার মনে নতুন করে বসন্তের আগমন ঘটেছিল, তোমার হৃদয় কানন রঙিন রঙিন ফুলে ভরে উঠেছিল, আর আমি বসন্তের ঝড়াপাতা হয়ে ঝড়ে গেছিলাম তোমার হৃদয় কানন থেকে। সেইদিন থেকেই আমি একা চলতে শিখে গেছি, আজও চলেছি তাই একা। অপরিনত আমার প্রথম প্রেম না.... হয় কাহিনি হয়েই বেঁচে থাক মনের মাঝে ।
এখন সে... সব কথা থাক, সত্যি আমিও কি... লিখতে গিয়ে, কি...লিখে ফেলছি!!!! তুমি ভালো থেকো। ভালো থাকুক তোমার ভালোবাসা। জানো সত্যি বলছি এতগুলো পুরনো কথা লিখতে চাইনি, কিন্তু আজকের এই দিনে বারবার সেই কথাগুলো মনে পড়ছে, তাই না... চাইতেও লিখে ফেললাম। ও... হ্যাঁ... আর একটা কথা তুমি বলতেনা... আমি খুব সুন্দর কবিতা লিখি, জানিনা সেটা মন থেকে বলতে, নাকি মন রাখতে বলতে, সে.... যাই হোক আমি লেখার শেষে একটা কবিতা লিখলাম, পড়ো আর কেমন হলো অবশ্য চিঠি লিখে জানিও। যদি আমায় চিঠি লিখতে ইচ্ছে না.....হয়, তাহলে বাতাসে অথবা নীল আকাশের ভাসমান মেঘেদের গায়ে লিখে দিও তোমার না.... বলা সব কথা আমি ঠিক খুঁজে নেব!!! ভালো থেকো....।।
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
যতদূর মনে পড়ে তোমার সাথে আমার
প্রথম দেখা বকুল গাছের তলে,
পুস্প বৃষ্টির মত ঝড়ে পড়েছিল ফুল
দমকা হাওয়ার তালে,
একটি একটি করে কুড়িয়ে আমার
আঁচল দিয়েছিলে ভরে,
মালা গেঁথে ছিলে তুমি নিজের হাতে
আমার খোপার তরে,
বকুল ফুল যে... আমার বড্ড প্রিয়,
বতাস বয়ে বেড়ায় তার সুন্দর গন্ধ,
আপন গন্ধে সে... ভোলায় মন প্রান,
বকুল প্রিয়া দিয়েছিলে তুমি মোর নাম।
যতদূর মনে পড়ে বসন্ত যখন
দোড় গোড়ায় এসে নাড়ল কড়া,
শুনতে পেলাম আমার হৃদয় কাননে
তোমার পদধ্বনি,
সুক্ষ অনুভূতির জালে জড়িয়ে
কোন সে..... অচেনা বাঁধনে বাঁধা
পড়লাম আমি,
ভেসে গেল মন প্রেমের জোয়ারে,
তুমি হলে দেবতা আমার
ভালোবাসার মন মন্দিরে।
যতদূর মনে পড়ে শ্রাবনের
এক উদাসী বিকেলে,
প্রবল দূর্যোগকে অবহেলা করে,
আমি ছুটে গেছিলাম শূন্য হাতে
তোমার দ্বারে,
কিন্তু হাত আমার হয়নি পূর্ণ!
বন্ধ হয়েছিল তোমার দ্বার
আমার প্রবেশের তরে,
অজানা কোন এক কারন
আমি তোমার ভালোবাসার শিকড়
থেকে হয়েছি তখন ছিন্ন,
অঙ্কুরিত হয়েছে সেথায়
নতুন প্রেমের চারা,
অপরিণত রয়ে গেল আমার প্রথম প্রেম,
সে.. হল শুধুই পুরাতন কাহিনি,
তবুও হৃদয় মাঝে আজও
স্পষ্ট রয়েগেছে তার চিহ্ন।
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
ইতি.......
তোমার বকুল প্রিয়া।
.............সমাপ্ত...........
✍শিপ্রা চক্রবর্তী