আমি যে কে তোমার...
আমি যে কে তোমার...
ভোরের হাল্কা আলো ছড়িয়েছে প্রকৃতির বুকে। লাল হাস্যজ্বল মুখ নিয়ে উঠছে সূর্য পাহাড়ের বুক ভেদ করে। রাস্তার ধারে ধারে কত বুনোফুল মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। সূর্যের উষ্ণ স্পর্শ ছুঁয়ে যাচ্ছে ওদের সৌন্দর্যকে। ঘাসের মাথার ওপর বিন্দু বিন্দু শিশিরকনা জমেছে। সূর্যের আলোর ছটায় তারা নিজেদের উজ্জ্বল আলো বিচ্ছুরিত করছে। পাহাড়ের আঁকা বাঁকা পথ দিয়ে ছুটে চলেছে গাড়ি আর গাড়ির জানলার কাঁচ দিয়ে মাথা বার করে শীতল হাওয়ার স্পর্শ নিয়ে বাইরের এই অপরূপ সৌন্দর্য দুচোখ ভরে দেখে চলেছে তিয়াশা। তিয়াশার এখন নিজেকে প্রজাপ্রতির মত মনে হচ্ছে। আর তারসাথে মনে হচ্ছে এই সুন্দর সুন্দর নাম না.... জানা বুনোফুল গুলোকে তুলে নিতে মুঠোভরে। তিয়াশার মন আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে। আর এই গোলে গোলে পাহাড়ের গা...... বেয়ে এগিয়ে চলা গাড়ির গতি কেমন যেন দোলনার মত দুলছে বলে মনে হচ্ছে তিয়াশার। কিন্তু এইভাবে বেশিক্ষণ সৌন্দর্য উপভোগ করা হলোনা তিয়াশার, কারন মার বকা খেয়ে চুপচাপ বসে পড়তে হল গাড়িতে।
------------শ্রীতমা দেবী বলে উঠলেন, ঐ..... ভাবে কেউ মাথা বার করে জানলা দিয়ে। পাশ দিয়ে কত গাড়ি যাচ্ছে এইটুকু সরু রাস্তা একটা দুর্ঘটনা হতে কতক্ষন। তুই কি... আর বড় হবিনা..... সারাজীবন ছোট হয়েই থেকে যাবি!!!
----------তাপস বাবু বলে উঠলেন, ওহ্.... শ্রী ঠিক আছে আর বকতে হবে না....। মেয়েটা একটু প্রানখুলে প্রকৃতিকে উপভোগ করছিল, করুকনা শহরের বুকে এই রকম অপরূপ সৌন্দর্য তো.... আর দেখতে পায়না।
-----------তিয়াশার ঠোঁটের কোনে আলতো হাসি ফুটে উঠল বাবার কথায়। এবং সাথে সাথে বাবাকে জড়িয়ে ধরে তিয়াশা বলে উঠল, আই.... লাভ.... ইউ..... পাপা। তিয়াশা সামনে তাকিয়ে দেখলো গাড়ির সামনের সিটে বসে থাকা মানুষটার দুটো চোখ ওকেই দেখছে, এবং ঠোঁটের কোনে লেগে আছে হাল্কা হাসি। তিয়াশা মানুষটাকে উদ্দেশ্য করে মুখটা বেঁকালো, সাথে সাথে মানুষটার মুখের হাসি আরও চওড়া হয়ে গেল। তিয়াশা ভালো করে লক্ষ্য করেছে যবে থেকে এই মানুষটার সাথে দেখা হয়েছে, এবং দিদিয়ার বাড়ি আসার কথা হয়েছে, তবে থেকেই এই মানুষটা ওর প্রতি একটু বেশিই খেয়াল রাখছে। সেদিন তো দিদিয়ার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে বলে উঠল আমি তোমাদের নিতে যাব। তবে মানুষটিকে যে.... তিয়াশার খারাপ লাগে তা... কিন্তু নয়!!! বরং এত সুন্দর গুছিয়ে কথা বলে, আর সবথেকে বড়ো কথা এত সুন্দর গান গায় শুনলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। কিন্তু মানুষটির একটাই সমস্যা প্রানখুলে হাসে কম, একটু বোদ্ধা বোদ্ধা টাইপের মানসিকতা এবং সবসময় সিরিয়াস, এটার জন্য তিয়াশার ঠিক মেলেনা কারন তিয়াশা চঞ্চল, প্রানবন্ত একেবারে ফিনিক্স পাখির মত। নির্দিষ্ট গন্তব্যে এসে গাড়িটা থামল। এবং গাড়ি থামার সাথে সাথে তিয়াশা ঝটফট গাড়ি থেকে নেমে ছুটে গিয়ে দিদিয়াকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলে উঠল.........
--------আই.... মিস.... ইউ... সো... মাচ.... দিদিয়া।
----------পাশ থেকে নিলাঞ্জন বলে উঠল, শুধু দিদিয়াকে মিস করলে হবে শালি সাহেবা, এই অধম জিজুটার কথাও তো... একটু ভাবতে হবে।
----------তিয়াশা চোখ মুখ পাকিয়ে বলে উঠল, তোমার কথা ভাববো কেন??? তোমার জন্যইতো সব হয়েছে, তুমিই তো.... আমার দিদায়াকে আমার থেকে এত দূরে নিয়ে চলে এসেছো, আমি দিদিয়াকে খুব মিস করছি, এর জন্য তোমার ওপর আমার খুব রাগ।
-----------নিলাঞ্জন হাসি হাসি মুখে বলে উঠল, তা..... তোমার দিদিয়াকে মিস যাতে করতে না.... হয় তার উপায় আমার কাছে আছে, বলোতো ব্যাবস্থা করি তাহলে!!! তোমরা একসাথে থাকতে পারবে।
---------তিয়াশা বলে উঠল, তাই....!!! তা.... কি ব্যবস্থা শুনি, আমি রাজি খুব মজা হবে তাহলে।
----------কথাটা শুনে নিলাদ্রি বিষম খেলো, এবং জোড়ে কেশে উঠল।
-----------তিথি বলে উঠল, কথা না..... শুনেই যখন রাজি হয়ে গেলি তখন আর কিসের চিন্তা, আর বাকি রইল ব্যাবস্থার কথা পড়ে শুনে নিবি তিয়ু তোর জিজুর কাছ থেকে, এখন ভীতরে চল। চলো পাপা, মা ভীতরে আর নিলাদ্রি তুমিও এসো।
---------নিলাদ্রি বলে উঠল তোমরা যাও বসো আমি একবার চট করে ঘুরেই আসছি বৌমনি একটা কাজ আছে।
-----------তিথি বলে উঠল, আচ্ছা......., তাড়াতাড়ি এসো দেরী করোনা।
-----------নিলাঞ্জন বলে উঠল, তা... আর বলতে আমার ভাই এখন কোনমতেই দেরী করবে না.... আসতে, তার ওপর রাজি শুনলো যখন তখনতো আর কথায় নেই!!! কিরে নিলু তাইতো আমি ঠিক বলছি।
----------তিয়াশা পিছন ঘুরে অবাক বিস্ময়ে সবার দিকে তাকিয়ে দেখল সবাই ওরদিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
-----------তিথি বলে উঠল চলো চলো ভীতরে চলো। সবাই একসাথে ভিতরে ঢুকে পড়ল। আর নিলাদ্রি মনে মনে বলে উঠল, তুই ঠিকই বলেছিস দাদা বাড়ি আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরতেই হবে।
*******************************
হাসি ঠাট্টা, গল্প, মজা করতে করতে কখন যে প্রকৃতির বুকে সন্ধ্যা নেমে এসেছে বোঝাই যায়নি। তিয়াশা পাহাড়ের কোলে সন্ধ্যার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে। হাল্কা হাওয়ায় তিয়াশার রেশমের মত চুলগুলো উড়ে চলেছে। তিয়াশা এক দৃষ্টিতে দূর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে গুনগুন করে আপন মনে গান গাইছে।
------------হঠাৎ করে পিছন থেকে আওয়াজ ভেসে আসলো, তোমাকে বৌমনি নিচে ডাকছে।
-----------তিয়াশা পিছন ঘুরে বলে উঠল, ও....... আপনি এসেছেন, ভালো হয়েছে আমি আপনার কথাই ভাবছিলাম।
--------------কথাটা শুনে নিলাদ্রি আবার বিষম খেল, আর নিলাঞ্জন বলে উঠল, তাই ছোটো গিন্নি তুমি আমার ভাইএর কথা ভাবছিলে বুঝি, তা..... কি ভাবছিলে শুনি????
-------------তিয়াশা বলে উঠল বিষম খাওয়ার মত কথা বলেছি বলে আমার তো.... মনে হচ্ছে না....!!! জিজু তোমার ভাই খালি খালি বিষম খায়..... কেন বলতো???
-----------নিলাঞ্জন নিলাদ্রির কাঁধে হাত দিয়ে বলে উঠল, ও..... তুমি ঠিক বুঝবেনা ব্যাপারটা!!!! সময় করে তোমাকে বুঝিয়ে বলবো তার আগে বল কি.... কথা ভাবছিলে???
--------"তিয়াশা আনন্দ নিয়ে বলে উঠল, ভাবছিলাম এই সুন্দর সন্ধ্যার পরিবেশে বোদ্ধাবাবু যদি একটু গান শোনাতেন খুব... ভালো হতো। বলেই তিয়াশা নিজের মুখটা চেপে ধরল, কারন তিয়াশা বুঝতে পেরেছে না........ চাইতেও ওর মুখদিয়ে ওর দেওয়া নামটা বেড়িয়ে পড়েছে।
----------নিলাঞ্জন হো.... হো..... করে হেসে উঠে বলল, একদম ঠিক নামকরন করেছো ছোটো গিন্নি বোদ্ধাবাবু। আমার ভাইএর ক্যারেকটারের সাথে দারুণ ম্যাচ খাচ্ছে।
----------তিয়াশা সাথে সাথে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল, নামকরনটা ভালো হয়েছে বলছো জিজু, একদম মিলেগেছে তাই না....!!! এই তিয়াশা মুখার্জ্জী কারোর ভুল নামকরন করতেই পারেনা, নামকরনের ব্যাপারে আমার পি এইচ ডি করা আছে।
-----------নিলাঞ্জন বলে উঠল, একদম দারুণ নামকরন হয়েছে, তা....... এই রকম নামকরন কজনার করা হয়েছে??? তা..... কটা বয়ফ্রেন্ড আছে।
-----------তিয়াশা বলে উঠল, সে... অনেক জনের নামকরন করেছি, তবে বয়ফ্রেন্ড এখনও অবধি নেই একজন প্রোপজ করেছিল তার নাম দিয়েছি গামলা, তার বেশ নাদুস নুদুস চেহারা ছিল। সে..... নিজের এই রকম নাম শুনেই পালিয়েছে। আর বিরক্ত করতে আসেনি।
------------নিলাঞ্জন বলে উঠল, ওহ্.... বেঁচারা কি দুঃখ পেয়েছে মনে, তবে যা..... হয়েছে ভালোই হয়েছে, না... হলে যে কি... হতো!!! তা.... তিয়াশার বোদ্ধাবাবু কি..... তিয়াশার জন্য একটা গান গাইবে????
----------নিলাদ্রি তিয়াশার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, গাইতে তো.... হবেই দাদা, তোমার ছোটোগিন্নি, আর বিড়বিড় করে বলে উঠল, এবং আমার একমাত্র হবু গিন্নির শুনতে ইচ্ছে হয়েছে বলে কথা।
-----------তিয়াশা বলে উঠল, এই আপনি বিড়বিড় করে আমাকে উল্টোপাল্টা বলছিলেন নাকি!!! যা... বলবেন জোড়ে বলবেন, ঐ.... বিড়বিড় করে বলা আমার একদম পছন্দের নয়।
----------নিলাঞ্জন বলে উঠল, হ্যাঁ.... নিশ্চয়ই জোড়ে বলবে একদিন সময় সুযোগ বুঝে এখন গানটা শুরু কর।
------------তিয়াশা বলে উঠল, কিইইই...... জোড়ে কথা বলার জন্য সময় সুযোগ দিনক্ষন লাগে নাকি??? সেটাতো জানা ছিলনা। আমি তো..... সব সময় যা.... মন চায় সেটাই বলি এবং জোড়ে।
----------নিলাঞ্জন তিয়াশার কাঁধে হাতদিয়ে বলে উঠল, লাগে লাগে ছোট্ট গিন্নি বিশেষ বিশেষ কথা বলতে দিনক্ষন, সময় সুযোগ লাগে। গানটা শুরু কর তাড়াতাড়ি নিলু।
নিলাদ্রি গান গাওয়া শুরু করল.......
"ভালোবেসে...., সখী....., নিভৃতে.... যতনে
আমার....... নামটি লিখো-....- তোমার
মনের..... মন্দিরে........
..................................
আমার.....স্মরণ.... শুভ...-সিন্দুরে
একটি বিন্দু..... এঁকো-- তোমার
ললাট.........চন্দনে........
........................।"
******************************
সময় স্রোতে পার হয়ে গেছে মাঝের অনেকগুলো দিন, আর একদিন পরেই তিয়াশারা ফিরে যাবে তাই আজ সবাই মিলে একসথে ঘুরতে বেরোবে চারপাশের প্রকৃতিক সৌন্দর্যকে দেখতে। এই কদিনে তিয়াশা আর নিলাদ্রির মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। আজ নিলাদ্রি ওদের সাথে যাবেনা বলেছিল প্রথমে তাই তিয়াশার মন খারাপ হয়ে গেছিল।
--------তিয়াশা নিলাদ্রির হাত ধরে বলে উঠেছিল, তুমি যাবে না.... আমাদের সাথে কেন???? তুমি গেলে খুব ভালো হতো, আমার মনখারাপ লাগছে। তিয়াশার হাসিবিহীন মুখ এবং উদাসী কন্ঠস্বর শুনে নিলাদ্রির মনটা কেমন করে উঠেছিল, তাই তিয়াশার মুখে হাসি ফেরাতে নিজের কাজ বাতিল করে নিলাদ্রি যেতে রাজি হয়ে যায়। আর এই নিলাদ্রির যাওয়ার কথা তিয়াশার মনে এতটা আনন্দ দেয় যে..... তিয়াশা নিলাদ্রিকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে, থ্যাঙ্ক.... ইউ..... বোদ্ধাবাবু, আই.... লাভ..... ইউ।
নিলাদ্রি এতটা আশা করেনি তাই ঘটনার আকস্মিকতায় কি... করা উচিৎ, এবং কি.... বলা উচিৎ সেটাই ভুলে যায় এবং চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, তবে পরিস্থিতি বেশিক্ষন স্থায়ি হয়নি, তিয়াশা নিজের ভুল বুঝতে পেরে আর এক মুহুর্ত ওখানে না.... দাঁড়িয়ে ছুটে পালায়। আর নিলাদ্রি তিয়াশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ধীর স্বরে বলে ওঠে.........
------------আই... লাভ... ইউ... তিয়ু.... মাই.... লাভ, তোমার মুখের হাসির জন্য আমি সবকিছু করতে পারি। তোমার এই প্রানখোলা হাসি, চঞ্চল স্বাভাব প্রথমদিন দেখেই যে..... আমি তোমাকে আমার হৃদয়ে স্থান দিয়ে দিয়েছি।
ঐ ঘটনার পর তিয়াশা আর নিলাদ্রির সামনে আসেনি লজ্জায়। এবং নিজেই নিজের মনের সাথে ভালোবাসা স্বীকারের হার জিতের খেলায় নেমেছে। তবে শেষ পর্যন্ত মন স্বীকার করে নিয়েছে ও ভালোবেসে ফেলেছে বোদ্ধাবাবুকে। কবে কখন কে..... জানে???? হয়তো সেই প্রথম দিন দিদির বিয়ের সময় যখন দুপক্ষের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল জুতোচুরি এবং ঘর ধরার টাকা নিয়ে। অথবা সেই বাসর ঘরে যখন নিলাদ্রি গেয়ে উঠেছিল.....
"আমি....... তোমার সঙ্গে বেঁধেছি...
আমার প্রাণ.....সুরের বাঁধনে-....-
তুমি জান না......,
আমি... তোমারে পেয়েছি ......
অজানা সাধনে........॥
সে......................,
রঙিন...... ছায়ার আচ্ছাদনে....॥
তোমার....... অরূপ মূর্তিখানি....
......................"।
তার সেই সুন্দর কন্ঠে গানে, হয়তো সেইদিন থেকেই ওর মনে ভালোবাসার বিজ রোপিত হয়েছিল, যা...... সুপ্ত অবস্থায় ছিল। তিয়াশাকে একভাবে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিথি বলে উঠল.........
----------কিরে তিয়ু কি... হল তোর রেডি হয়েনে???
----------তিয়াশা ভাবনার জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে বলে উঠল, দিদিয়া তুই কখন এলি ঘরে???
-----------তিথি বলে উঠল তুই যখন গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিলিস তখন, তা..... কার চিন্তা করা হচ্ছিল কেষ্ট ঠাকুরের বুঝি???
---------তিয়াশা বলে উঠল, কেষ্ট ঠাকুরের চিন্তা কেন করতে যাব, আমিতো বোদ্ধাবাবুর চিন্তা করছিলাম, বলেই তিয়াশা পিছন ঘুরে মুখটা চেপে ধরল। এখন তিয়াশার নিজেকে নিজের চড় মাড়তে ইচ্ছে হচ্ছে।
---------তিথি তিয়াশার মাথায় গাট্টা দিয়ে তিয়াশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে উঠল, তা.... কি চিন্তা করা হচ্ছিল আমার দেওরকে নিয়ে??? তা...... আমার দেবরানী হওয়ার সখ হয়েছে বুঝি আমার তিয়ুর!!! তাহলে তোর জিজুকে বলি সে... কথা।
------------তিয়াশা তিথিকে জড়িয়ে ধরে মুখ লুকালো তিথির বুকের মাঝে।
----------তিথি বলে উঠল, থাক আর লজ্জাবতী লতা হতে হবেনা!!!! তাড়াতাড়ি রেডি হয়েনে নিলাদ্রির কিন্তু লাল রঙ খুব পছন্দ।
*******************************
তিয়াশা লাল রঙে নিজেকে সাজিয়ে তুলল। তিয়াশার চোখে মুখে আজ এক উজ্জ্বল আনন্দের ঝিলিক ফুটে উঠছে। হৃদয় কাননে প্রথম বসন্তের আগমনে এইরকম হয় বুঝি। এক অদ্ভুত ভালোলাগার অনুভূতি ছড়িয়ে আছে তিয়াশার মন জুড়ে। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ওরা বেড়িয়ে পড়ল। তিয়াশা একবার তাকিয়েছে নিলাদ্রির চোখের দিকে, কিন্তু সেই দৃষ্টি বেশিক্ষন স্থায়ী হয়নি, একরাশ লজ্জা ঘিরে ধরেছে তিয়াশাকে। সবাই মিলে একসাথে ঘুরে খাওয়া দাওয়া করে বাড়ি ফিরল। কাল রাতে তিয়াশাদের বাড়ি ফেরার টিকিট আনন্দ, মজাতে পনেরোটা দিন যে...... কিভাবে কেটে গেল বোঝাই গেলনা। ঘোরা ঘুরির ক্লান্তি থাকা সত্বেও তিয়াশার চোখে ঘুম আসলোনা, চোখ বন্ধ করলেই তিয়াশার চোখের সামনে ভেসে উঠছে সন্ধ্যাবেলার বাসের দৃশ্য, আর মনটা একটা ভালো লাগার অনুভূতিতে ভরে উঠছে। তিয়াশা ভাবেনি এইভাবে ওকে ভিড়ের মাঝে নিজের বাহুবন্ধনে আগলে রাখবে বোদ্ধাবাবু। যখন বাসের ঝাকুনিতে বারবার তিয়াসার মাথা নিলাদ্রির চওড়া বুকে আঘাত খাচ্ছিল এবং তিয়াশা নিলাদ্রির চোখের দিকে তাকাচ্ছিল তখন নিলাদ্রি মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওকেই দেখছিল। আর কানে কানে যখন নিলাদ্রি বলে উঠল, ভয় নেই তিয়ু আমি আছি রিলাক্স করে দাঁড়াও। প্রত্যেকটা শব্দ তখন মনের মধ্যে এক অদ্ভুত আলোড়ন তুলেছিল। তিয়াশা বিছানা ছেড়ে উঠে জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়াল, জানলার পাল্লাটা খুলে দিল সাথে সাথে একরাশ ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে গেল তিয়াশার শরীর। তিয়াশা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল চাঁদ তখন ব্যস্ত মেঘেদের সাথে লুকোচুরি খেলায়। কালকে চলে যাওয়ার কথা মনে পড়লেই কষ্ট হচ্ছে তিয়াশার, আর এই কষ্টটা শুধুমাত্র দিদিয়া আর জিজুর জন্য নয়, সাথে বোদ্ধাবাবুর জন্যও। বিরহে ভালোবাসা বাড়ে ঠিকই কিন্তু বিরহজ্বালা সহ্য করাও কঠিন।
তিয়াশার আকাশকে দেখার মাঝেই ফোনের আলোটা জ্বলে উঠল। তিয়াশা জানলাটা বন্ধ করে খাটে বসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল ম্যাসেজ ঢুকেছে আর স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে বোদ্ধাবাবু নামটা। তিয়াশার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। তিয়াশা ম্যাসেজটা খুলে দেখল লেখা আছে........
তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে
তিয়ু একবার ছাদে আসবে আমি
অপেক্ষায় আছি।
তিয়াশা দুষ্টুমি করে ম্যাসেজের
রিপ্লাই দিল না..........,
এখন যেতে পারবনা........!!!
খুব ঘুম পাচ্ছে,
সকালে দেখে নিও..... আমাকে।
সাথে... সাথে উত্তর এল স্যরি... তিয়ু,
ডির্স্টাব করার জন্য।
ঘুমিয়ে পড়ো।
গুড......নাইট..... সুইট..... ড্রিম।
---------------ম্যাসেজটা পড়ে তিয়াশা রাগে গজগজ করে বলে উঠল, সাধে বোদ্ধাবাবু বলি সবেতেই সিরিয়াস। তিয়াশা আবার লিখতে শুরু করল..........
তবে যেতে পারি ছাদে!!!!
যদি আমাকে এসে নিয়ে যাওয়া হয়
তবে.......।
সাথে.... সাথে উত্তর এলো,
আই..... লাভ..... ইউ..... তিয়ু.....
মাই..... লাভ....., আমি আসছি এক্ষুনি..........।
ম্যেসেজটা পড়া শেষ হওয়ার আগেই দরজায় হাল্কা টোকা পড়ল। তিয়াশা খাটে মোবাইলটা রেখে দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলল, সাথে সাথে নিলাদ্রি ঘরে ঢুকে তিয়াশাকে কোলে তুলে নিল। তিয়াশা দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল নিলাদ্রির গলা। ছাদের ঠিক মাঝখানে নিলাদ্রি তিয়াশাকে নামালো। নিজের দুই হাতের মাঝে তিয়াশার মুখটা নিয়ে কপালে আলতো করে ছুঁয়ে দিল নরম ঠোঁট। তিয়াশা খামচে ধরল নিলাদ্রির জামা। নিলাদ্রি এক ঝটকায় তিয়াশাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কান্নাভেজা গলায় বলে উঠল.........
-----------আই.... লাভ.... ইউ.... তিয়ু। আই.... মিস.... ইউ.... সো..... মাচ।
-----------তিয়াশা পরম শান্তিতে নিলাদ্রির বুকে মাথা রেখে বলে উঠল, আই.... মিস... ইউ..... অলসো..... বোদ্ধাবাবু।
***************************
খুব সুন্দর করে অর্কিড আর গোলাপের সাজে সেজে উঠেছে বাড়ির সামনের গেট। বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে নিলাদ্রি ওয়েডস তিয়াশা।
-------------নিলাঞ্জন ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠল, কই...... দেখি আমার ছোটো গিন্নিকে কেমন লাগছে দেখতে।
------------তিয়াশা সাথে সাথে সিংহাসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠল, চলে এসেছো তোমরা!!!
-----------নিলাঞ্জন ভালো করে পা...... থেকে মাথা পর্যন্ত তিয়াশাকে দেখে বলে উঠল, বাহ্...... দারুণ লাগছে দেখতে আমার ছোট গিন্নিকে, ভাবছি বিয়ের পিঁড়ি থেকে তোমার বোদ্ধাবাবুকে সরিয়ে আমিই বসে পড়ি।
----------তিয়াশা হো..... হো..... করে হেসে বলে উঠল, তাহলে তোমার ছোটগিন্নিকে সরিয়ে তোমার গিন্নি পিঁড়িতে বসে পড়বে।
---------নিলাঞ্জন হাসতে হাসতে বলে উঠল, এটা একদম খাঁটি কথা বলেছ, তবে তোমার বোদ্ধাবাবুও কম জাননা, তখন থেকে তাগাদা দিচ্ছে বিয়ে করতে আসার জন্য।
সমস্ত নিয়মকানুনের মধ্যে দিয়ে গোধূলি লগ্নে আজ দুটি ভালোবাসার মানুষ একে অপরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো। শুরু হলো নতুন করে পথ চলা একে অপরের পাশে থেকে সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না সবকিছুকে ভাগ করে নেওয়ার অঙ্গীকার।
-------------তিয়াশা নিলাদ্রির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল তাহলে একটা গান শুরু হোক বোদ্ধাবাবু আপনার গলায়......,
---------নিলাদ্রি বলে উঠল, জো.... হকুম.... মেরে..... আকা....।
সবাই হো.... হো.... করে হেসে উঠল। তিয়াশা নিলাদ্রির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকল। নিলাদ্রি তিয়াশাকে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে গেয়ে উঠল................
"কেন.... আর... সরে আছো.... দূরে...,
কাছে.... এসে হাত.... দুটো ধরো......
শপথের .... মন কাড়া ......সুরে
আমায়..... তোমারি তুমি...... করো
ও.. ................
তোমারি স্বপ্ন ......দুচোখেই আমি...
আঁকবো........
চিরদিন...... তোমারই তো.... থাকবো
তুমি .....আমার আমি...... তোমার
আমি যে ....কে......
তোমার ..... তুমি তা..... বুঝে নাও"।

