রঙিন মুহূর্ত
রঙিন মুহূর্ত
-"কাল তো দোল মা। অন্যবার কত আনন্দ করি। গতবার তো এতক্ষনে পৌঁছে গেছি খোয়াইতে। আর এবার..."
-"সময় যে সব সময় এক থাকে না রে মা। ইনফেকশনটা যে রক্তে ছড়িয়ে গেছিল তোর।"
করবী শুকনো হেসে বললো -" রক্ত, লাল রক্ত, লাল মাটি, লাল পলাশ, লাল আবির, লাল লিপস্টিক আমার সেই বড্ড প্রিয় লাল আজ কেমন যেনো নীল,ঘন নীল, নীল বিষন্নতায় অন্তরীণ সব অনুভূতি। "
দেবী মেয়ের চুলে আস্তে আস্তে বিলি কাটতে কাটতে বললেন -" মন ভালো কর মা। রবি ঠাকুরের সেই কথাগুলো স্মরণ কর - 'রঙ যেন মোর মর্মে লাগে,আমার সকল কর্মে লাগে।'
করবী মুখ ফিরিয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে রইল।
দেবী আবার বললেন -" জানলার বাইরে আকাশটা দেখ একবার।দেখ কেমন নানা রঙে রঙিন হয়ে আছে সারা আকাশ ।"
চুপ করে রইল করবী।
দেবী ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে করবীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন -" আমার ফোনটা একবার নে। ক্যামেরায় সেলফি মোডটা অন করে দেখ আকাশ থেকে ঠিকরে আসা ফাগ রঙা আলো কেমন আলতো করে ছুঁয়ে গেছে তোর চিবুক, তোর গাল, তোর কপাল, তোর দুচোখের পাতা।"
করবী মায়ের কথাগুলো শুনতে শুনতে চেয়ে রইল ক্যামেরায় ফুটে ওঠা তার বাসন্তী রঙা মুখের দিকে। নিজের অজান্তেই আস্তে আস্তে একটা নিবিড় প্রশান্তির হাসি যেনো ছড়িয়ে পড়লো মুখ জুড়ে। করবী ধীরে ধীরে বলতে লাগলো-"এই তো সেই রং মা। এতো সুন্দর, এতো রঙিন আমি যে নিজেকে আগে কখনো দেখিনি। আমার কষ্টগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে মা। এত সুন্দর বসন্ত যাপন অমি যে আগে কোনদিন করিনি।"
দেবী ফোনটা হাত থেকে নিয়ে বললেন - " প্রকৃতি এমনই উদার, এমনই অকৃপণ। শুধু আজ নয়, সেই সূর্য ওঠার সময় থেকে প্রতিদিন নিত্য সুন্দরের উপাসনায় সে সাজিয়ে তোলে তার সৃষ্টি, তার কৃষ্টি। আসলে কোনো উৎসবেরই যে কোনো নির্দিষ্ট দিন হয় না মা। সবই যে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। দিন ক্ষণ তো মানুষের বানানো নিয়ম রে মা । তারা সব কিছুকেই ধরে বেঁধে রাখতে চায়। প্রকৃতি তা মানবে কেনো? সে যে উদ্দাম, সে যে চঞ্চল। তাই তো আজ যে আলো তোর চিবুক ছুঁয়ে চুমো খাচ্ছে গালে ,সেই আবার একই সাথে বাতাসের তালে তালে সুদূর সাহারায় বালির নক্সা বুনছে। আজ যে বাতাস ঐ সামনের শিমুল গাছে তিরতির করে দোল দিচ্ছে সেই এখন জামনগরের আকাশে একঝাঁক পরিযায়ী পাখিদের হয়ত পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে। আজ দুপুরে তোকে হসপিটালে দেখতে আসার সময় যে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি হল সেই কয়েক লক্ষ যুগ আগে হয়ত নদী পথ বেয়ে পেট্রার গুহাগুলোতে মাটি আর পাথরে মেশা খনিজের সাথে ভাব করে এঁকে রেখেছে নানা রঙের কোলাজ। এসব কোনোটাই মা তিথি নক্ষত্র মেনে হয়নি। "
- " সত্যিই তো। এমন করে তো ভেবে দেখিনি কোনদিন। মা যবে ছুটি পাবো, আমরা সেদিন তবে আবির খেলবো বাড়ি গিয়ে। তুমিই তো বললে উৎসবের কোনো দিন হয় না।"
-"একদম সোনা। তাই হবে। আর মন খারাপ করিস না। খেয়ে নে স্যুপটা। জুড়িয়ে গেছে এতক্ষনে।"