STORYMIRROR

Piyali Mukherjee

Abstract Inspirational

4  

Piyali Mukherjee

Abstract Inspirational

রাখিবন্ধনের সত্যি 🏵️

রাখিবন্ধনের সত্যি 🏵️

8 mins
380

#সত্যিই ইতিহাস 


গল্প আছে অনেক, পৌরাণিক আর ঐতিহাসিক। আর কিছুটা সামাজিক। রাখিবন্ধনের ইতিহাস তাই তৈরি করে অনেক কথা, তথ্য আর বিজ্ঞান এবং লোকশ্রুতির ইতিকথা।

রামায়ণ অনুযায়ী, ভগবান রাম সমস্ত বানর সেনাদের ফুল দিয়ে রাখি বেঁধে ছিলেন। সেটাই হলো রাখিবন্ধনের প্রথম ইতিহাস। 


এরপরের গল্প অন্যরকম। গল্পটা পৌরাণিক । দৈত্যরাজা বলি ছিলেন বিষ্ণুর ভক্ত। বিষ্ণু বৈকুণ্ঠ ছেড়ে বলির রাজ্য রক্ষা করতে চলে এসেছিলেন। বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষ্মী স্বামীকে ফিরে পাওয়ার জন্য এক সাধারণ মেয়ের ছদ্মবেশে বলিরাজের কাছে আসেন। লক্ষ্মী বলিকে বলেন, তাঁর স্বামী নিরুদ্দেশ। যতদিন না স্বামী ফিরে আসেন, ততদিন যেন বলি তাঁকে আশ্রয় দেন। 

বলিরাজা ছদ্মবেশী লক্ষ্মীকে আশ্রয় দিতে রাজি হন। শ্রাবণ পূর্ণিমা উৎসবে লক্ষ্মী বলিরাজার হাতে একটি রাখী বেঁধে দেন। বলিরাজা এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে লক্ষ্মী আত্মপরিচয় দিয়ে সব কথা খুলে বলেন। এতে বলিরাজা মুগ্ধ হয়ে বিষ্ণুকে বৈকুণ্ঠে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। বলিরাজা বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেন। সেই থেকে শ্রাবণ পূর্ণিমা তিথিটি বোনেরা রাখীবন্ধন হিসেবে পালন করে।

 

এবার বলবো মহাভারতের কথা। সুভদ্রা হলেন কৃষ্ণের ছোট বোন, কৃষ্ণ সুভদ্রাকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। তবে আপন বোন না হয়েও দ্রৌপদী ছিলেন কৃষ্ণের অতীব স্নেহভাজন। একদিন সুভদ্রা কিছুটা অভিমান ভরে কৃষ্ণকে প্রশ্ন করেন, এর কারণ কী। উত্তরে কৃষ্ণ জানান, ‘যথা সময়ে এর কারণ তুমি বুঝতে পারবে ‘। এর কিছুদিন পর শ্রীকৃষ্ণের হাত কেটে রক্ত ঝরছিল, তা দেখে সুভদ্রা রক্ত বন্ধ করার জন্য কাপড় খুঁজছিলেন, কিন্তু কোথাও কোনও পাতলা সাধারণ কাপড় পাচ্ছিলেন না, এর মাঝে দ্রৌপদী সেখানে এসে দেখেন কৃষ্ণের হাত থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে। সেই ঘটনা দেখামাত্রই বিন্দুমাত্র দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে নিজের মূল্যবান রেশম শাড়ি ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাত বেঁধে দেন, কিছুক্ষণ পর রক্তপাত বন্ধ হয়। তখন শ্রীকৃষ্ণ বোন সুভদ্রাকে ডেকে বলেন- ‘এখন বুঝতে পেরেছ কেন আমি দ্রৌপদীকে এত স্নেহ করি ?’ সুভদ্রা তখন বুঝতে পারলেন, ভক্তি ও পবিত্র ভালবাসা, আর শ্রদ্ধা কী জিনিস ! দাদা কৃষ্ণের চেয়ে মূল্যবান বস্ত্র নিজের কাছে বেশি প্রিয়, এটা ভেবে সুভদ্রা দারুণ লজ্জিত হয়ে পড়েন। কোনো বোন তার ভাইয়ের কোনও রকম কষ্ট, অমঙ্গল সহ্য করতে পারে না। ভাইয়ের কষ্ট দূর করার জন্য সে সর্বোত্তম চেষ্টা করে। অন্যদিকে ভাইও তার বোনকে পৃথিবীতে সর্বাধিক স্নেহ করে, সারাজীবন তাকে রক্ষা করে থাকে, যে রকম শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে রাজসভায় চরম কলঙ্ক থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাই, কৃত্রিমতা, যান্ত্রিকতার এই বর্তমান যুগে ভাই-বোনের মাঝে ভালবাসা ও শ্রদ্ধার বড় অভাব। 


রাখীবন্ধনের দিন গণেশের বোন গণেশের হাতে একটি রাখি বেঁধে দেন। এতে গণেশের দুই ছেলে শুভ ও লাভের খুব হিংসে হয়। তাদের কোনও বোন ছিল না। তারা বাবার কাছে একটা বোনের বায়না ধরে। গণেশ তখন তাঁর দুই ছেলের সন্তোষ বিধানের জন্য দিব্য আগুন থেকে একটি কন্যার জন্ম দেন। এই দেবী হলেন গণেশের মেয়ে সন্তোষী মা। সন্তোষী মা শুভ ও লাভের হাতে রাখি বেঁধে দেন। এভাবে রাখিবন্ধনের আরও একটি পৌরাণিক কাহিনীর সৃষ্টি হয়। 


আরেকটি জনপ্রিয় ঘটনা মধ্যযুগীয় ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়, যখন গুজরাটের বাহাদুর শাহের আক্রমণের অধীনে থাকা মেবারের রানী কর্ণাবতী হুমায়ুনের কাছে একটি রাখী পাঠিয়েছিলেন এবং তাঁর সাহায্য চেয়েছিলেন। ইঙ্গিতটি সম্রাটকে স্পর্শ করেছিল এবং রাখীর জবাবে, মুঘল রাজা তাঁর সামরিক বাহিনী নিয়ে রানীকে বাঁচাতে ছুটে আসেন।

রক্ষা বন্ধন সম্বন্ধে আরেকটি বিখ্যাত গল্প দেখা যায় যখন যমুনা, নদীর দেবী, মৃত্যুর দেবতা যমকে রাখী বেঁধেছিলেন। এই অঙ্গভঙ্গি যমকে স্পর্শ করেছিল এবং তিনি তাঁকে একটি বর দিয়েছিলেন যে , কোনও ভাই যে তাঁর বোনের কাছ থেকে রাখী পেয়েছেন এবং তাঁকে নিঃশর্তভাবে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন , তিনি অমরত্ব লাভ করবেন।

এবারে বলবো এক অন্যরকম ইতিহাস। এক সত্যিকারের সামাজিক ইতিহাস। সে এক উত্তাল সময়। ১৯০৫-এর ১৯ জুলাই। ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব ঘোষণা করলেন। অবিভক্ত বাংলাকে শোষণ করা সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ক্রমশ। তাই শুধু এবং শুধু্মাত্র প্রশাসনিক কারণে ইংরেজ শাসকরা ঠিক করলেন, ধর্মের ওপর ভিত্তি করে ভাগ করা হবে বাংলাকে। হিন্দু জনসংখ্যার আধিক্যযুক্ত অঞ্চল আলাদা করা হবে মুসলিম অধ্যুষিত বাংলা থেকে। বাংলার মুসলিমদের এমন মগজ ধোলাই ততক্ষণে হয়ে গেছে, তারা প্রায় খুশি মনেই মেনে নিয়েছে প্রস্তাব।                       তখনকার অবিভক্ত বাংলা মানে কিন্তু বাংলা, বিহার, আসাম, শ্রীহট্ট সবটা মিলে। তত দিনে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে বাংলা। ইংরেজদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাকে ভাগ করে দিয়ে বিদ্রোহের গতি কমিয়ে আনা। অতএব পাশ হয়ে গেল বঙ্গ ভঙ্গের প্রস্তাব। তখন শ্রাবণ মাস। ১৬ আগস্ট। কাকতালীয় ভাবে সেটা ছিল রাখী পূর্ণিমা। হিন্দু ঘরের মেয়েরা তাদের ভাই-এর হাতে পরাবে রাখী। অন্যরকম রাখী বন্ধনের কথা মাথায় এল রবীন্দ্রনাথের। ভাই-বোনের নয়, রাখীবন্ধন হয়ে উঠল হিন্দু-মুসলিমের সম্প্রীতি উৎসব। এ ধর্মের মানুষ ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে হাতে রাখী পরিয়ে দিচ্ছে যার হাতে, তার ধর্ম আলাদা। হাতে হাত রেখে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দিকে ছুঁড়ে দেওয়া হল প্রতীকী প্রতিবাদ। একটা মানুষের ডাকে ধর্ম নির্বিশেষে সারা বাংলা এক হয়েছিল সে দিন। প্রতিবাদের ভাষা, চরিত্র বদলেছে ক্রমশ। দীর্ঘ ৬ বছর পর ১৯১১ সালে ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ বাধ্য হয়ে রদ করে দেন বাংলা ভাগের প্রস্তাব। এক অন্যরকম ইতিহাস তৈরী করার কথা অন্য কেউ যা পারেননি, তা রবীন্দ্রনাথ পেরেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথের রাখি বন্ধন উৎসব নিঃসন্দেহে সেই সময়ের একটি রাজনৈতিক কার্যক্রম। তবে সেইসঙ্গে এক নতুন কাজও বটে। গাড়ি হাঁকিয়ে সাহেবি কেতায় মিটিং করা আর নয়। বাংলাকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে গেলে ধরে রাখতে হবে বাংলার সংস্কৃতিকে। ছুঁইয়ে দেখতে হবে বাংলার রূপ-রস-গন্ধকে। তাই ঠিক হল সকাল সকাল জগন্নাথ ঘাটে স্নান সেরে সকলে সকলের হাতে রাখি পরিয়ে দেবে। আর পুরো রাস্তাটাই যাওয়া হবে পায়ে হেঁটে। রবীন্দ্রনাথ একাই নন, ঠাকুরবাড়ির যেসব তরুণের তখন গাড়ি ছাড়া মাটিতে পা পড়তো না, তাঁরাও চললেন পায়ে হেঁটে। তার সঙ্গে সঙ্গে আবার চলল চাকররাও। চাকরে মনিবে এক ঘাটে স্নান! শুনে অনেকেই আঁতকে উঠেছিলেন। আবার অনেকেই বুঝেছিলেন, ব্রিটিশ সরকার একটা কাল্পনিক বিভাজন তৈরি করে বাংলা ভাগ করতে চাইলেও রবীন্দ্রনাথ একেবারে বিভেদের মূলে আঘাত করেছেন। 

গঙ্গাস্নানের পর প্রকাশিত হল সেদিনের ইশতেহার ‘বঙ্গচ্ছেদে রাখীবন্ধন’। তাতে সাক্ষর করলেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, বিপিন চন্দ্র পাল প্রমুখ। সেইসঙ্গে স্থির হল, বাঙালির ঐক্যের কথা স্মরণে রেখে প্রতি বছর এই দিনটি রাখি বন্ধন উৎসব হিসাবে পালিত হবে।

এরপর শুরু হল শোভাযাত্রা। রবীন্দ্রনাথের সেই অমর বাণী ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ যেন প্রাণ পেল দীনেন্দ্রনাথের গলায়। এর মধ্যেই হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পথের ধারে দেখা গেল একদল ঘোড়াকে দলাই-মলাই করছেন কয়েকজন সহিস। ধর্মে তাঁরা প্রত্যেকেই মুসলমান। অথচ সেসব কিছুই না ভেবে রবি ঠাকুর সোজা চলে গেলেন তাঁদের কাছে। সঙ্গে যোগ দিলেন বাকিরাও। সহিসদের হাতে রাখি পরিয়ে দেওয়া হল প্রথমেই। এরপর প্রাথমিক বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই তাঁদের কোলে তুলে নিলেন সবাই। জগন্নাথ ঘাট থেকে শোভাযাত্রা ধরে যে অপূর্ণতাটুকু থেকে গিয়েছিল, সেটা যেন একটি মূহূর্তেই ঘুচে গেল।

এরপর হয়তো সবাই ঠাকুরবাড়ির দিকেই ফিরে যেতেন। কিন্তু বাদ সাধলেন রবীন্দ্রনাথ। ঠিক করলেন চিৎপুরের বড় মসজিদে ঢুকে রাখি পরিয়ে দেবেন প্রত্যেকের হাতে। এমন একটা পরিকল্পনা বোধহয় রবীন্দ্রনাথ বলেই নিতে পেরেছিলেন। মসজিদে ঢুকে রাখি পরাতে গেলে একটা রক্তারক্তি বেঁধে যাবে নিশ্চই। কিন্তু সেদিন কী হয়েছিল? অবনীন্দ্রনাথের জবানিতে, তিনি নিজে ভয় পেয়ে আগেই সরে পড়েছিলেন। কিন্তু বাকিরা সেদিন যথারীতি ঢুকে গিয়েছিল মসজিদের ভিতর। তারপর সামনে মৌলবি এবং অন্যান্য যাঁদের পেলেন তাঁদের প্রত্যেকের হাতে পরিয়ে দিলেন রাখি। না, রক্তারক্তি কিছুই হয়নি। প্রত্যেকেই তখন মেতে উঠেছিলেন মৈত্রীর মেজাজে। আর সেই দিনটাই তো আগামী সময়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নতুন রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছিল।

রবীন্দ্রনাথের রাখি বন্ধনের সেই আহ্বান আজও সমানে বহমান। আর দেশভাগের এত বছর পরেও সেই রবীন্দ্রনাথের গানই মিলিয়ে রেখেছে দুপারের মানুষকে। 

"বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল। পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, হে ভগবান। " 

এর পরের গল্প সত্যের জয়।                   রোজ শেষ ট্রেনেই বাড়ি ফেরে মানসী। আজ অফিসের কাজ সেরে বেরতে যাবে এমন সময় অফিসের কেরা কিনী এসে ডাক দিল জরুরি তলব , স্যারের ঘরে একবার যেতে হবে। কাঁধের ব্যাগটা নামিয়ে অফিসের ঘরে ঢুকতেই হাতে তুলে দিল দুখানা ফাইল। কমপ্লিট করে তবেই আজ তার ছুটি। একদিকে ট্রেনের সময় এগিয়ে আসছে, অন্যদিকে অফিসের কাজ ।      

কিন্তু বরাবরই নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন মানসী কাজকেই বেছে নিল। এদিকে বাড়িতে তার ছোট ভাই তার আনা রাখি পড়বে বলে অপেক্ষায় বসে রয়েছে। বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিল যে, রাখি ভাই কাল পড়বে। আজ যেন ঘুমিয়ে পড়ে, অফিসের জরুরি কাজে আটকে গেছে। বাড়ি পৌঁছাতে তার দেরি হবে। ফোনটা কেটে কাজে মন দেয় সে। কিন্তু শেষ হতে ঘড়ির কাঁটা প্রায় ন'টা পেরিয়েছে। রাতের শেষ ট্রেন যে তার মিস হয়েছে বুঝতে পেরে ওলা বুক করবে ভাবে। কিন্তু এতটা রাস্তা ওলায় একা রাতে যেতে ভয় করে। ফোন করে তার ভালোবাসার মানুষটিকে। কিন্তু সেই মুহূর্তে তার পক্ষেও আশা কষ্টকর বলে জানিয়ে দেয় অমিতাভ। শেষে অগত্যা ওলা বুক করে।                                   

খালি রাস্তা । ঝিরঝিরে বৃষ্টি। তার মধ্যে একা মানসীর যেন ভয়- ভয় করে। গাড়ির ড্রাইভারের প্রতিটা কথাই যেন ব্যঙ্গ মনে হয়। হঠাৎ দেখে গাড়ির ড্রাইভার তার বাড়ির দিকের রাস্তার পরিবর্তে আরো ফাঁকা একটা রাস্তা ধরে। মানসী গাড়ির এক কোণ থেকে চেঁচিয়ে রাস্তা পরিবর্তন করতে বললে সে জানায় মোবাইল লোকেশনে যে রাস্তা দেখাচ্ছে সেই রাস্তা ধরেই তিনি যাবেন। কিছুদূর যাবার পর গাড়িটা হঠাৎ খারাপ হয়। মানসী আরো ভয় পায় । কোনো কিছু না বুঝতে পেরে অমিতাভকে লোকেশন পাঠায় ও চেঁচিয়ে গাড়ি থামানোর কারণ জানতে চায়। 

কিন্তু ড্রাইভার ছেলেটি কিছু বলার আগেই ও হঠাৎ বুঝতে 

পারে যে সে তার পাড়ায় ঢুকে গেছে। আর কিছু না বলে দ্রুত মানসী বাড়ির দিকে রওনা হয়। কিছুদূর গিয়ে পিছন ফিরে দেখে গাড়িটা যেন তাকে ফলো করছে। আর সামনে অমিতাভ দাঁড়িয়ে। দৌড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় ওর কাছে । আর দেখিয়ে দেয় ফলো করা গাড়ির ড্রাইভারটিকে। অমিতাভ গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভারের কলার চেপে ধরলে সে জানায় , " অন্য দু-তিন জন ছেলে অফিসের পেছন থেকে দিদিকে ফলো করেছিল। এখনও হয়তো একটা বাইক গাড়ির পেছনে আছে। তাই অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে এলাম যাতে ওরা আমাদের গাড়ি দেখতে না পায়। গাড়ি দিদির দেওয়া লোকেশনে ঢুকে পড়েছে দেখে আমি কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম। গাড়িটা যদিও একটু বিগড়োচ্ছে, কিন্তু ও সারাই করে নেবে-খন। দু বছর আগে আমার বড়ো দিদিও রাতে অফিস থেকে ফেরার পথে এরকম কিছু জানোয়ারের শিকার হয়। ওই দিদিও আমার দিদিরই বয়সি হবে তাই...." বলে কেঁদে ফেলে সে।

 অমিতাভ দ্রুত এগিয়ে গিয়ে দেখল যে সত্যিই একটা বাইক মানসীর বাড়ির গলিতে দাঁড়িয়ে , আর তাদের দেখেই ঘুরে চলে গেল। মানসীও এতক্ষণ করা নিজের আচরণে অত্যন্ত লজ্জিত হল। আর তার অফিস ব্যাগে ভাইয়ের জন্য কেনা রাখিটা পরিয়ে দিল। 

এরপর ব্যাগ খুলে গাড়ি ভাড়া মেটাতে যাবে , চোখ পড়ল মোবাইলে অ্যাপে নাম লেখা আশরফ আলম। মনে মনে ভাবল সে, রবীন্দ্রনাথ "রাখি বন্ধন" শুধু রক্ষার জন্য করেন নি, করেছিলেন মৈত্রী স্থাপনের জন্য। আজ সে সেটাই স্থাপন করতে পেরে খুশি হলো এবং তাকে বিদায় জানাল।।


(কলমে -পিয়ালী মুখোপাধ্যায়)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract