রাই -পদাবলী (পর্ব -২)🌼
রাই -পদাবলী (পর্ব -২)🌼
প্রিয় ভানুসিংহ,
আবার তোমায় চিঠি লিখতে বসলাম। জানো, আজ সকাল থেকে একটানা বৃষ্টি চলছেই, কখনো আস্তে, কখনও খুব তীব্র ভাবে। ঠিক যেন তোমার -আমার সম্পর্কের টানাপোড়েনের গল্প। আমার খুব মনে পড়ে সেদিনের কথা। ভানু, তোমার কি মনে পড়ে ?
মনে আছে সেই দ্বিপ্রহরে হঠাৎ বৃষ্টির আগমনের কথা। তুমি হয়ে উঠেছিলে চঞ্চল। বৃষ্টিকে পেয়ে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলে সুখের নীড়ে। আমি নির্বাক চোখে তাকিয়ে দেখছিলাম তোমার ইচ্ছেপনা। কত সজীবতার সেই অম্লান হাসি। এখনো মনে পড়ে...
কলেজ থেকে ফেরার পথে যানবাহনহীন সড়কে শুধুই নীরবতা। শুধুই টুপটাপ শব্দে মুখরিত চারিপাশ। কোথাও কোন মানুষ নেই। একান্ত নীরবতা। তুমি বাহানা করেছিলে, চলো না ভিজি, আজ দুজনে এক সাথে। 'না' করতে পারিনি। তোমার মনের আলপনায় নিজেকে রাঙিয়ে ছিলাম। ভেজা ভেজা তোমার শরীরে যেন সুখের পরশে আমাকে টানছিলো। হঠাৎ তোমার বুকে আমাকে জড়িয়ে আমার অভিপ্রায়টুকু করেছিলে পূর্ণ। কত কবিতা লিখতে পরিমার্জিত ভাষায় কতগুলো শব্দের সংমিশ্রণে। পড়তে পড়তে আমি বিভোর হয়ে তোমাতেই মিশে যেতাম।
একবার তুমি খুব ছেলেমানুষি করেছিলে রাত কাটাবে আমার সাথে, করে দেবে আমার স্বপ্নগুলোর পূরণ। আমি কিন্তু তোমায় সেদিন প্রশ্রয় দিইনি। বর্ষার রাতে সত্যিই সেদিন আমার মনও তোমাকে খুব চেয়েছিলো। একসাথে রাতভর গল্প করবো, তোমায় ছুঁয়ে রঙিন করে দেবো স্বপ্নের ঠিকানা। লোকে যা বলবে বলুক গিয়ে, কারো কোনো কথাই শুনতে সেদিন মন চায়নি। কিন্তু না, করিনি সেদিন অমন কিছু।
আসলে, ছন্নছাড়া এই জীবনে তোমার এবং আমার ভালোবাসা ছিল পরম পবিত্র। সেটাকে এভাবে নষ্ট করে দিতে মন চায় নি। আজ ভীষণ মনে পড়েছে তোমায়। তোমার লেখা বর্ষার উছলতায় ঘেরা কবিতার চরণে চরণে তোমায় পাশে পেয়েছি। কিছু কথা অনুভবে যেন আজও খেলা করে আমার আকাশে। কিছু কথা তাই রেখেছি বন্দি করে ডায়েরীর শূন্য পাতায়।
আচ্ছা, তোমায় কি এখন আর বর্ষার মায়া স্পর্শ করেনা? নাকি ভুলে গেছ অতীতের খেয়ালীপনা ? নাকি হয়তোবা এখনো মনপাড়ায় অমলিন শুধুই ভাবনা আর হয় না ? ভাবনা দিয়ে শ্রাবণ দিনে লেখো না আর কোনো কবিতা? নাকি এখন তবে জীবন সুখের পাতায় পাতায় মায়ায় জড়ানো তোমার কবিতারা ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে !!
বেশ অনেকদিনই ড্রইং রুমে বসে নির্বাক ভাবে তাকিয়ে দেখেছি বারান্দায় , বাগানের মাটিতে পড়া ফোঁটা ফোঁটা জলরাশি। টুপটাপ শব্দে মাটিতে পড়ে জলের স্রোত তৈরি করে। তোমার প্রিয় ফুল কদমের অগুন্তি সমারোহ ছিলো আমার এই বাড়ীতে, আমার চোখের আঙিনায়। সত্যিই তোমার মতই সুন্দর কদমের বৃষ্টি ভেজা হাসি।
বেশ অনেকদিন হলো এখন তুমি বিদেশে। আচ্ছা, ওখানে কি এমন করেই বর্ষা আসে ??!!
তবে প্লিজ এবার যখন আসবে, তখন বর্ষা এলে তোমার শহরে ভিজো। লিখো কিছু কথামালা আমাকে ঘিরে। আর পাঠিয়ে দিয়ো চেনা ঠিকানায়।
ইতি - তোমার........
(চলবে......
(কলমে -পিয়ালী মুখোপাধ্যায়)
