Piyali Mukherjee

Abstract Inspirational

4.0  

Piyali Mukherjee

Abstract Inspirational

রাই -পদাবলী 🌼(পর্ব - ৩)

রাই -পদাবলী 🌼(পর্ব - ৩)

4 mins
258



প্রিয় ভানুসিংহ,


জানো, আজ শহর জুড়ে বর্ষা নেমেছে। এখন সেপ্টেম্বর। কিন্তু বৃষ্টি আছে। ভাদ্রের শেষ বৃষ্টি।

আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই শ্রাবণ ঘনিয়েছিল আমার শহরে।

তুমুল বৃষ্টি পড়ছে সেই শেষবিকেল থেকে। এখন কিছুটা জলের বেগ ধরে এসেছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি ১২-তলায় আমার ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে… ঝাপসা হয়ে যাওয়া একটা শহরকে দেখছি উঁচু থেকে… রাস্তায়, বাড়ির ছাদে, স্কাইক্র্যাপারে সর্বত্র লেগে রয়েছে জলছাপ! জানালার কাঁচে গড়িয়ে পড়ছে জল… যেন ধুয়ে দিচ্ছে শহরটাকে। নিয়ন আলোয় মায়াবী লাগছে সবকিছুই।

আমিও কফিমগ হাতে নিয়ে উপভোগ করছি এমন একটা সন্ধ্যা। কবিতার বই নিয়ে বসে পড়া যেত যদিও এমন সময়ে… বাইরের ঝিরিঝিরি বৃষ্টির শব্দ আরও কাব্যময় করে তুলতো পরিবেশটাকে। কিন্তু ভালো লাগলো না। মনে হলো বৃষ্টির শব্দকে বরং উপভোগ করি। 

আমি এখানে একা। তাই আজ বোধহয় আড়ম্বর করে তোমাকে মনে করা যায় ! সাউন্ড সিস্টেমে প্রিয় গান চালিয়ে দিলাম… "এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়......"

শুনতে শুনতে আমিও ঘোরের মধ্যে অতীতের দিনে ফিরে যাচ্ছি। আজকাল অতীত আর যখন তখন সামনে এসে দাঁড়ায় না। আমার শহরেও বর্ষা আসেনা সেভাবে। মাঝেমধ্যে অতীতকে আমন্ত্রণ জানালে সে আসে… বিরহ ছড়িয়ে দিয়ে যায়। বিরহের একটা সুগন্ধ আছে যা আমাকে মাতাল করে রাখে। হঠাৎ মনে হল লেখা পাচ্ছে ভীষণ… খাওয়া, ঘুমের মতোই লেখাও আসলে কখন যে ভীষণভাবে বেরিয়ে আসতে ব্যাকুল হয় তা অন্যেরা বুঝবে না। তাই লিখতে বসলাম। একটা চিঠি লিখবো ভাবলাম…

মনে পড়ে যাচ্ছে, এমনি একটা বর্ষার সন্ধ্যায় আজ থেকে বছর সাতেক আগে তোমার সাথে বকবক করে তোমার ভিডিও গেম খেলা পন্ড করে দিয়েছিলাম আমি ! তোমার বাড়িতে সেদিন খিচুড়ি হচ্ছিলো আর তার সুবাসের কথা তুমিই ফোনের ওপার থেকে বলেছিলে আমাকে।

 তাও জানো, অনেক ফিকে হয়ে গেছো তুমি ঐ বৃষ্টিতে দূরের স্ট্রিটলাইটের মতোই… আর আমিও হয়তো পুরোপুরি মুছে গেছি তোমার স্মৃতি থেকে। ঐ বর্ষা ধুয়ে দেওয়ার পরে রাস্তায় যেমন একবিন্দু ধূলো জমে থাকেনা তেমনি। আমি অভিযোগ করছিনা, বাস্তবটা বলছি। এই চিঠি কেউ যদি দেখে ভাববে এটাও আমার কোনো একটা সৃষ্টি !

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের একটা বৃষ্টির কবিতা মনে পড়ছে জানো… “বৃষ্টি নামল যখন আমি উঠোন-পানে একা, / দৌড়ে গিয়ে ভেবেছিলাম তোমার পাবো দেখা। … কিন্তু তুমি নেই বাহিরে – অন্তরে মেঘ করে / ভারি ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের মধ্যে ঝরে!”

কি? কেমন লাগলো?

কি বলছো ? আমার লেখা কবিতা কই ?

বেশ, এই চিঠির শেষে আমার লেখা একটা বৃষ্টির কবিতা না হয় পাঠাবো তোমাকে। জানিনা সেটা কবিতা হবে কিনা ! তুমি জানো তোমাকে না বলতে পারা কথাগুলোই আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়াতো… তারপর নিজেকে শান্ত করতে বুকের ভিতরে জমে থাকা কথার পাহাড় উগরে দিয়েছিলাম সাদা পাতাতে, অদ্ভূত এক মুক্তি মিলেছিল লিখে ফেলার পরে। অনুভূতি কখন শব্দ হয়ে ধরা দিলো বুঝিনি।

এই চিঠি লেখার মাঝে উঠেছিলাম একবার।

এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি নিয়ে ব্যালকনিতে বসলাম আবার বর্ষা উদযাপন করতে। বৃষ্টির ছাঁট নেই। আচ্ছা, আমার হাতে গোনা কয়েকটা বই প্রকাশিত হয়েছে, একটাও পড়েছো তুমি? আমার লেখা বোধহয় তোমার ভালো লাগবে না!

আচ্ছা , তুমি এখনো সিনেমা দেখো ? আগে তো ভীষণ পছন্দ করতে ! আসলে তুমি তো শুধু একটা ‘তুমি’ নও, তোমার সাথে জড়িয়ে আছে অজস্র মুহূর্ত, বেশ খানিকটা সময়, অনেকগুলো স্মৃতি। তুমি আসলে লেগেছিলে ক্যালেন্ডারের অনেকগুলো তারিখে, তুমি জড়িয়ে ছিলে বেশকিছু অন্য মানুষের নামের সাথে, তুমি লেগে আছো বেশ কিছু গানের লাইনে, তুমি জড়িয়ে থাকবে কয়েকটা কবিতার গায়ে। তুমি আসলে একা একটা মানুষ ছিলে না কোনোদিনই… অন্য অনেককিছুর জন্যও তোমার কথা মনে পড়বে। এসব আমি জানতাম।

 তুমি হয়তো মানবে না, বলবে, এই অসীম পৃথিবীর কতটুকু জায়গায় তোমার অস্তিত্ব? হয়তো বলবে এতবড়ো জীবনকালে কটা বর্ষা আমরা কাটিয়েছি একসাথে তাই যে তোমাকে ভোলা যাবে না কিছুতেই? হয়তো কথাটা খুব একটা ভুল নয় ।

কারণ এখন তো আদিত্য এসে ভাগ বসিয়েছে ক্যালেন্ডারের বেশ কিছু তারিখে । যেগুলোর গায়ে সেও লেগে আছে, সেও লেগে গেছে অনেকগুলো গানের সাথে কিংবা কিছু কবিতাতেও।

তোমার সাথে যতগুলো দিনরাত্রি মনে মনে যাপন করেছি বাস্তবে ওর সাথে সংসার করছি তার থেকে আরও কটা দিন বেশী।

আজ থেকে বছর ছয়েক আগের এক বর্ষা আমাকে শিখিয়েছে মেনে নিতে। আর তখনি মনে হল বন্ধুবিচ্ছেদ তো আগেও কতবার হয়েছে… মাধ্যমিকের পরে যখন স্কুল বদলানো হল, তারপর উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে, আবার কলেজ শেষে, আরও কতবার কতভাবে… প্রতিবার হারিয়েছি কিছু বন্ধুকে। প্রতিবারই কষ্ট পেয়েছি তো… মনখারাপ হয়েছে… তাহলে এবারও সামলে নেবো ঠিক।

আচ্ছা, আজ আমি আসি। অনেক ভুলভাল বকলাম।আমি জানি তোমার জীবনেও এমন কেউ আছে যে আমার মতো হাবিজাবি বকে না। আর বেশি কথা না বাড়িয়ে আমার লেখা একটা কবিতার মতো কিছু একটা লিখে চিঠিটা শেষ করছি…

"তোমার জন্য বৃষ্টিমাখা সন্ধ্যা দিন!

আমার চিঠি নিয়ে যাবে আলাদিন…

বুকের ভিতরে বৃষ্টি নামে ঝমঝমিয়ে

তোমারও কি চোখের কোলে মেঘ জমে?

কালো মেঘে ঝাপসা যেন ধূসর দিন

মেঘলা দিনে মনটা কেমন সঙ্গীহীন!

বর্ষা ঘনাক আকাশ জুড়ে রাত্রি ভোর

মনখারাপরা পথের বাঁকে সঙ্গী মোর… "       

  ইতি, ............

(কলমে -পিয়ালী মুখোপাধ্যায়) 

  



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract