STORYMIRROR

Piyali Mukherjee

Abstract Inspirational

3  

Piyali Mukherjee

Abstract Inspirational

বসন্তের রঙ লাল

বসন্তের রঙ লাল

3 mins
14


চৈত্র শেষের রোদে পুড়ে খাক হচ্ছে সব,

মাটি পুড়ে ফুটি-ফাটা, মরুময় পৃথিবীতে 

প্রবল রোদ খাওয়া গাছও তখন মৃত প্রায়,

তবু্ও চৈত্র আসে,আসে কালো মেঘরাজি

তোলে ভীষণ ঝড়, বিলিয়ে দেয় সোঁদা গন্ধ

শুকনো খড়কুটো পাতা, যা কিছু পুরনো 

উড়ে যায় দিকশূন্যপুরে---


কোথা থেকে চলে আসো তুমি

রোদ পোড়া হাওয়ায় তোমার চেনা গন্ধ

মিলিয়ে যায় , হারিয়ে যাওয়া ছোটবেলাগুলো

ফিরে পেতে ইচ্ছে করে আবার,

বুকে জড়িয়ে তুলে রাখতে ইচ্ছে করে

আবার পুরানো ট্রাঙ্কে।.......

চৈত্রের শেষ, বসন্তের রঙও শেষ। শেষ শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার গল্প । এখন থেকেই গরম হাওয়ার ঝলকানিতে প্রকৃতি একেবারে রুক্ষ, শুকনো, শান্ত। বসন্তের হৈ-চৈ, আনন্দে মাতোয়ারা প্রাণ যেন সময়ের সঙ্গে লড়াইতে ক্লান্ত। 

ঠিক যেমন উড়নচণ্ডী তকমা পাওয়া এক মেয়ে একটা সময়ের পর এসে খুব শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তেমনই, আসলে তখন তার বসন্তের দিনের শেষ। মন বলে পালাই, পালাই ; দূরে সুদূরে কোথাও। পাহাড়ি পথ বেয়ে পাইন আর ওক গাছের ছায়ায় ছায়ায় পথ চলতে ভালো লাগে তখন। তবে দুরন্ত স্বভাব যেন ডুব দিয়েছে একদম ভিতরে। চোখে মুখেও এতটুকু ভাব তার নেই। হঠাৎ করেই দেখলে মনে হয়, এ মেয়ে তো এমনি শান্ত আগে ছিল না। তবে কী হঠাৎ করেই কোনো ঝড় এসে ওকে একবারে শান্ত করে দিলে?

আসলে তা নয়। উড়নচণ্ডী মেয়েটা একটা সময় পেরিয়ে এসে চুপ করে কত কী ভাবে! পাখির ডানায় রোদ লাগলে যেমন সে আরো উপরে উড়তে চায়। ঠিক তেমন করেই। সে তখন নীচের দিকে চায়ই না। উপরে গিয়ে হয়ে ওঠে আরো শান্ত, দীপ্ত। গ্রামের যেই মেঠো পথে দৌড় দিত ওই মেয়ের শৈশব, আজ সেই পথ দিয়ে চললে, পথের ধারের এক এক বনফুল অবধি ওর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে। শৈশবেও তো ছিল এরা। কই! এমনি করে ধরা তো দেয়নি। আরো অবাক হয়ে চেয়ে থাকে সে আকাশের দিকে। গভীর নীল আকাশটা যেন ইতিহাসের পাতার মতো। এক একটা গল্প ওতে লেখা যত্ন করে। মেয়েটা চেয়ে থাকে। কত কী ভাবে। ওর পরিচিত পরিসরের মানুষ ওকে দেখে একটু অবাক হয়। দুরন্ত স্বভাবকে যে আপনা হতেই শান্ত হতে শিখিয়েছে, সে কী আর যেমন তেমন মেয়ে?!!..

মেয়েটা এভাবে চলতে চলতে একদিন, প্রতিদিনের হারিয়ে যাওয়া একমুঠো জীবনের শেষ পাতায় লেখা চিঠির মতন হয়ে যায়। রং হারায়, বাস্তবতা হারায়, শুধু বিবর্ণ ছবিতে মুখ লুকায়।


তিরিশ বছর আগের

প্রেম-বেলার বিবর্ণ জামাটি রোদ খায়,

রোদ খায় ছোট্ট মেয়ের ছোট্ট বেলার

খেলনা বাটি, মেলায় কেনা ঝুমঝুমি পুতুল , 

ফেলে রাখা তালপাতার বাঁশি।

 মায়ের মলিন লাল পেড়ে শাড়ি,

ন্যাপথলিনে হারিয়ে যাওয়া মায়ের মা-মা গন্ধ

সব কিছু পড়ে মনে।

ঠিক যেন চৈত্র সংক্রান্তির শেষের দিন,

তুমি পুড়ছো শীর্ণ শুখা নদীর মতো

যেখানে জীবনের রেখাগুলো শুকিয়ে যায়

ঊষর মরুভূমির মধ্যে ।


বয়স লুকাতে চেষ্টা করে না সে। বরং অভিনয় করে, অভিমান করে জানিয়ে দিতে ভালোবাসে সবাইকে। রঙ মাখে না সে, চুলে পাক ধরে। আর অপেক্ষা করে কখন আবার নামবে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। আবার নতুন হবে সে। আবার বাঁচবে। আর হারবে না, নিজেকেও হারিয়ে যেতে দেবে না আর.... শুধু নতুন বসন্তের হলুদ রঙে, বৃষ্টির সবুজে নিজেকে সামলে নিয়ে আবার পথ চলা শুরু করবে। আবার স্বপ্ন দেখবে, লিখবে কবিতা, মনপ্রাণ শান্ত করবে দিনের শেষে, জীবনের পথচলার শেষে,.......


এমনই সময়ে আসে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি,

উন্মাদের মতো ভিজতে ইচ্ছে করে

আর দেখতে ইচ্ছে করে ভিজে যাওয়া

কবিতার ছবিগুলো।।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract