পূত্রব্য
পূত্রব্য
দিত্বিয় এর পরে
.......
ভগবানই যে একমাত্র ভরসা এখন তাদের ,যদি পারমিতা সত্যিই বেঁচে থাকেন। কেনো যে নীলাদ্রির মধ্যে একটা সিক্সথসেন্স কাজ করছে যে পারমিতাদেবী আর হয়তো বা বেচেঁ নেই। বা থাকবেন না পৃথিবীতে আর অপারেশনের পর" । পুরোটাই যে একটা নাটক হাসপাতাল কর্তপক্ষের ১০ লাখ বা তারও বেশি টাকা আদায় করবার জন্য পার্টির থেকে।। ছি: ছি: নিলাদ্রী এইসব কেনো ভাবছে? কোনো ডাক্তার কী এতো নিচে নামতে পারে? মৃত মানুষকে নিয়েও ব্যাবসা করতে পারে কোলকাতার কোনো প্রাইভেট হাস্পাতাল ? পারমিতা নিশ্চয় ঠিক হয়ে যাবেন। অপারেশনও সাকসেফুল হবে। কিন্ত নীলাদ্রির মধ্যে একটা সিক্সথসেন্স যে কেনো কাজ করছে গতকাল রাত থেকেই কে জানে? যেটা সে কারুর সাথেও শেয়ার করতে পারছে না।
নিলাদ্রীরা সকলেই হাস্পাতালের পাঁচ তলায় OTর কাছে অপেক্ষা রত। অন্য কোনো অপারেশন আজকে নেই বলে বোধকরি সেখানে পার্টি হিসেবে একমাত্র নিলাদ্রীরাই আছে। ও টির বাইরের সি .সি টিভি স্ক্রীনে OT র ভেতরটাও এখন দেখা যাচ্ছে। পারমিতাকে OT টেবিলে শোয়ানো। পারমিতার মাথাটাই শুধু দেখা যাচ্ছে। মুখের নীচে থেকে সমস্ত শরীর একটা পার্টিশান দিয়ে ঢাকা । মাথার ওপরে বিশাল অপারেটিং striotechtic মাইক্রোস্কোপ ফিট করা। আরো নানারকম মেশিনপত্র। তার মাথার কাছে বেশ কয়েকজন সার্জন আর আনস্থেটিস্ট ডাক্তার ধরা চুরো পড়ে গম্ভির মুখে , কখনো বা হেসেহেসেই কথাবার্তা বলছেন। মহিলা আনস্থেটিস্ট পারমিতাকে জেনেরাল অ্যানাসথেসিয়া দেবার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন। তদারকী করছেন সব কিছুই রুটিন মাফিক। পারমিতার মাথার সমস্ত চুল গতকাল রাতেই হাসপাতালের নাপিত কামিয়ে সম্পূর্ণ ন্যাড়া করে দিয়েছে। বড় নিউরোসার্জন আর তার অ্যাসিসট্যান্ট সার্জন OT ড্রেস পড়ে বেসিনের সামনে সাবান দিয়ে হাত ধুছেন আর হেসেহেসে কি সব কথা বলছেন নিজেদের মধ্যেই। ও টির ভেতরের কথা যাতে শোনা না যায় তার জন্য সিসিটিভির সাউন্ড সিস্টেম অফ করা আছে। সিস্টার সার্জনকে ড্রেস পড়তে সাহায্য করলেন। দুজন অ্যাসিসট্যান্ট সার্জন এম আর আই আর সি টি আঞ্জিওর সামনে দাড়িয়ে কিসব দেখছে। অপারেশন শুরু হবার পর সিসিটিভিও বন্ধ করে দেওয়া হোল। সেখানে এখন একটা টিভি চ্যানেল চলতে শুরু করলো আর নানা রকম হেলথ পণ্যের বিজ্ঞাপন হাসপাতালের সুনামের তালিকা আর বিজ্ঞাপণ।
প্রায় সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পারমিতাকে বার করা হলো
ও টি থেকে ট্রলি করে। সারা মাথা আর মুখজুড়ে ব্যান্ডেজ পারমিতার। মুখে অক্সিজেনের মাস্ক। চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে ।বোজা। দুই হাতের শিরায় তিনটে স্যালাইনের বোতল ঝুলছে। পায়ের দিকে একটা ।পারমিতার সাথে সাথে দুজন জুনিওর সার্জন ( রেসিডেন্ট সার্জন হবে ) নিউরো আই সি ইউ তে যাচ্ছেন বিছানায় দিয়ে পোস্ট অপারেটিভ অর্ডার লিখে দিতে. বাড়ির সবাই একরকম প্রায় ছুটে গিয়েই পারমিতাকে দেখলো। পারমিতা একইরকম ভাবে চোখ বন্ধ করেই রয়েছেন। পারমিতা কে নিয়ে ওয়ার্ড বয় লিফটে নেমে গেলো। পরের লিফটে রিনি মিমি আর অর্পিতা নামলো।
বড় নিউরোসার্জন ড্রেস করে ও টি থেকে বের হলে সমর,বিশ্ব আর নীলাদ্রী তাড়াতাড়ি করে কাছে এগিয়ে যেতেই উনি বললেন "হেমাটোমাটা মানে ক্লট টা অনেক গভীরে ছিলো আর বড় ছিলো। তাই সময় নিলো একটু বেশী। বিশ্ব জিজ্ঞেস করলো
-" মা ঠিক হয়ে যাবেন তো ডাক্তারবাবু?" নিউরো সার্জন মিষ্টি হেসে উত্তর দিলেন " আশা তো করি সেইরকম। কিন্তু বলাতো আর যায় না। এটা তো আর অঙ্ক নয়, যে দুয়ে দুয়ে মিলে চার হয় সবসময়। এখানে কখনো তিন ও হতে পারে আবার কখনো পাঁচ ও হতে পারে। সবটাই এখন ভগবানের দোয়া। বয়েসতো হয়েছে ওনার বেশ আর এসব ক্ষেত্রে যে আবারও ভেতরে ব্লিডিং হতে পারে, আগেই সেটা বলেছি আপনাদের। তাই Shunt একটা করে দিয়েছি। এখন বাদবাকি পুরোটাই ভগবানের হাতে। আর আপনাদের ভাগ্য " "হ্যা আপনারা টাকা পয়সা জমা করে দিয়েছেন তো রিসেপশনে? এখন কিছু নতুন ওসুধ লাগবে কিনে দেবেন ঠিকঠাকভাবে। "
-"হ্যা ডাক্তার বাবু পুরোটাই পেমেন্ট করে দিয়েছি আমরা, গত পরশু থেকে আজ পর্যন্ত যা বিল হয়েছে আচ্ছাআপনি কি আবার দেখবেন মাকে আজকে ? " উদ্বিগ্ন সমর জিজ্ঞেস করল।
-"না। আমার জুনিওররাই থাকবে। প্রয়োজন হলে ওরা আমাকে ডেকে নেবে ফোন করে। আর আজকে রাতে ওনাকে দেখার তেমন কোনো প্রয়োজনও হবে না। উনি আগের মতোই কোমা স্টেজএই থাকবেন এখন। আপনাদেরও কাউকে আজকের রাতে থাকবার দরকার নেই। ওনার অ্যাটেনডেন্ট আছে তো রাতের। উনি থাকলেই হবে । বাড়ি চলে যান বরং আপনারা"
পারমিতাকে তার নিউরো আই সি ইউর বেডে চারজন মিলে ধরাধরি করে বেডে দিয়ে পেপ ভেন্টিলেশনে এর যাবতীয় নল, কার্ডিয়াক মনিটরিং লিড গুলো সবই আগের মতন করেই আবারও লাগিয়ে দেওয়া হোল আর চালু করে দেওয়া হলো । পারমিতাও আবার মেকানিকাল ভেন্টিলেশনেই শ্বাস প্রশ্বাস নিতে লাগলেন। কার্ডিয়াক মনিটরিং এ লিড নম্বর ২ তে আবারও ই সি জি r QRS কমপ্লেক্স মনিটরিং হতে শুরু করল। পালস অক্সিমিটারে অক্সিজেন
সেচুরেশন, পালস রেট আর বিপ বিপ আওয়াজ । জুনিওর নিউরোসার্জন আর অনস্থেটিস্ট সবকিছু দেখাশোনা করে নিলেন ও নোট করলেন ট্রিটমেন্টশিট। তারপরে সিস্টার স্টাফ নার্সএর ঘরে গিয়ে পোস্টঅপ অর্ডার লিখলেন। লেখা শেষ করে সিস্টারের কানে চুপি চুপি ফিসফিস করে কি সব বললেন। সিস্টার স্টাফ নার্সের মুখ দিয়ে শুধু বেরহোল " ও ম্যাই গড।" "তাই নাকি"? " হলো কখন? ,O T টেবিলে?" ঠিক আছে! ঠিক আছে! সেটা ম্যানেজ হয়ে যাবে। কিন্তু ডিক্লেয়ারটা করবেন কখন ? নাকি ভেন্টিলেশনে রাখবেন আরো দিন দুয়েক ?
-" সেটা স্যারই বলে দেবেন ম্যানেজমেন্টের সাথে কথা বলে" । জুনিওর সার্জন উত্তর দিলেন। পার্টি যেনো কোনোভাবেই আগে টের না পায়। আর ওষুধ গুলো এনে দিতে বলবেন পার্টি কে। Biochemistry ইনভেস্টিগেশন গুলোও যেনো করা হয়।
-"না না পাবে না। আর এটাতো নতুন নয় এখানে। মাঝে মধ্যেই হয় । কম দেখালাম নাতো আপনাদের ইউনিটে " মাঝে কিন্তু এক দুবার এসে দেখেও যাবেন পেশেন্টকে আপনারা । পার্টি মিট করে বুঝিয়ে দেবেন ঠিকঠাকভাবে যাতে ঝামেলা না হয়। "
- "নিশ্চয় নিশ্চয় স্যার ইনস্ট্রাকশন দিয়ে গেছেন"
সেদিন রাতের বেলা নিউরো আই সি ইউর সামনের বারান্দায় চেয়ারে বিশ্ব আর নীলাদ্রির ছোট যমজ ভাইদের একজন রানা রাতে বসেই ছিলো। বেশ মশা সেখানে। বিশ্ব রানাকে কয়েকবারই বলেছে পার্টিদের জন্য ঘরে চলে যেতে। ওখানে এত মশা নেই। দুজনেরই ঘুমে চোখ বুজে আসছে। রানা কিন্ত মাঝে মধ্যেই বিড়ি ধরাচ্ছে নিজেকে জাগিয়ে রাখতে। বার দুয়েক জুনিওর নিউরোসারজন তাদের সামনে দিয়েই এসে দেখে গেছেন পারমিতাকে। একবার রাত ১১:১৫ তে এসেছিলেন আর একবার ভোর রাত তিনটার সময়। পারমিতার অবস্থার নাকি অবনতি হয়েছে খুবই । ওনারা নাকি চেষ্টা করছেন আপ্রাণ। ভোর রাতের দিকে দু তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টও হয়ে গেছে । লাইফ সাপোর্টে রাখা আছে পারমিতাকে। বিশ্ব ভোর হতেনাহতেই সমরকে টেলিফোনে জানিয়েছে সংবাদ টা। নিলাদ্রী, রিনি আর মিমি তখনও ঘুমোচ্ছে। সমর একবার ভাবলো নীলাদ্রীকে ঘুম থেকে উঠিয়েই খবরটা দেবে কিনা। সমর ঘড়িটা দেখলো দেওয়ালে। ভোর পাঁচটা বাজতে এখনও মিনিট ১৮ বাকী। সমর একবার চিন্তা করলো নিজেই ড্রাইভ করে সে চলে যাবে কিনা হাসপাতালে? তারপর ঠিক করলো না সবাই ঘুম থেকে জেগে উঠলে বলবে যে মায়ের অবস্থা ভালো নয় ।তিন বার হার্ট এ্যাটাক হয়ে গেছে কালকে ভোর রাতথেকে । লাইফ সাপোর্টে আছেন উনি। সমর উঠে বাথরুমে গেলো। দাত ব্রাশ করে মুখ ধুলো। তারপর রান্না ঘরে গিয়ে নিজের জন্য চা বানালো। মাথার ভেতরে টিপ টিপ করছে। এই সময় চা আর সিগারেট দরকার তার। মিমির মা বেঁচে আছেন তো? তাদের কাছে বড় ভরসার জায়গা পারমিতা দেবী।
সাতটা নাগাদ সবাই ঘুম থেকে উঠলেই সমর সংবাদটা সবাইকে জানালে, প্রথমেই কিন্ত মিমি ডুকরে কেঁদে উঠলো " এই দিদি মা আর নেইরে…." প্রায় সাথে সাথেই রিনিও কেঁদে উঠলো বিছানায় আধশোয়া অবস্থায়। কাদতেঁ কাদতেঁই রিনি জিজ্ঞেস করল " হ্যাগো মাকে শেষ দেখতে পারবোতো? কী বললো ভাই ? মা বেঁচে আছে তো? "
নিলাদ্রী ভাবলো গত পরশু দিন সন্ধেয় যখন পারমিতার বেডের কাছে সে গেছিলো তখনই মনে হয়েছিলো পারমিতা আর বেঁচে নেই। কিন্তু সেটাতো আর কাউকেই বলা যায় না। অপারেশন করাটা একটা আইওয়াশ হসপিটালের এবং পার্টির কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা খিচে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয় সেটা নীলাদ্রী প্রথম থেকেই বুঝতে পারছিল। কিন্তু নামি একটা বেসরকারী হাস্পাতাল যে এমনটা করতে পারে সেটা তার ধরণার মধ্যে ছিলো না এটা কোলকাতা বলেই সম্ভব হয়তো।
সমর ,নীলাদ্রি, রিনি আর মিমি ওরা লেকটাউন থেকে যখন হাসপাতালে পৌঁছালো, তখন সকাল পৌনে নয়টা বাজে। বিশ্ব আর রানাকে খুবই বিধ্বস্ত লাগছিল দেখতে । নীলাদ্রী জিজ্ঞেস করলো " ডাক্তাররা কিছু বলেছেন নাকি আর " রানাই ঘাড় নেড়ে বললো " না" ভেতরেই তো যেতে দিচ্ছে না আর।_" আইসিইউর ভেতরের জুনিওর ডাক্তারবাবুরা নার্সরা তখনও নতুন করে আর কিছুই বলেননি। শুধু অ্যাটেনডেন্ট বাইরে এসে একবার বলেছেন ডাক্তার বলেছেন আবার ব্রেইনস্টেম এভোক পোটেনশিয়াল টেস্ট করা হবে বেচেঁ আছেন কিনা সেটা জানতে। ওরা একজন পারমিতাকে দেখতে আই সি ইউর ভেতরে ঢুকতে অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু অনুমতি মেলে নি। বড় ডাক্তারবাবু অনুমতি দিলে তবেই নাকি ভেতরে যাওয়া যাবে। এর মধ্যে কিন্ত বেশ কয়েকজন সুটেড বুতেড টাইপড়া ডাক্তারবাবুই আইসিইউর ভেতরে গেছেন রোগী দেখতে । তারা বাইরে বেরোলেই সমর আর নীলাদ্রী ছুটেগেছে তাদের কাছে "ডাক্তার বাবু ২৮ নম্বর বেডের রোগিনী কেমন আছেন? বেঁচে আছেন তো?" কেউ বলেছেন " উনি তো আমার রোগী নন! " কেউ বা বলেছেন "আমি তো ওনাকে দেখিনি ! যার রোগী তিনি আসলে ওনাকেই জিজ্ঞেস করুন"। নীলাদ্রীও এইহাসপতালের কান্ডকারখানা দেখে বেশ অবাকই হচ্ছিলো। এটা কেমন ব্যবহার রোগীর পার্টির সাথে? ওদের ইউ কের এন আই এইচ এর কোনো হাসপতালে এটা সম্ভব নয়। বিশ্ব, রানা আর সমর তো রাগে গজগজ করছিলো। ওরা সবাই আইসিইউ সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। রিনি আর মিমি চোখ মুছছে ক্রমাগত রুমাল দিয়ে চেয়ারে বসে। রিনির গলা প্রায় বসে গেছে। এর মধ্যেই অলিভার ফোন এলো রিনির কাছে। রিনিও ধরা গলায় কথা বলল মেয়ের সাথে। কেঁদে ও ফেললো। নিলাদ্রীর সোদপুর বাড়ি থেকে রাজামশাই ফোন করলো নিলাদ্রীকে। নিলাদ্রী বললো মনে হচ্ছে মারা গেছেন উনি। তবে এখনও ডাক্তাররা বলেনি কিছু। রাজা জিজ্ঞেস করলো সে আসবে কিনা। নিলাদ্রী বললো এখন নয়। দরকার মত জানাবে সে।
*8এগারোটার কিছু আগে বড় নিউরোসার্জন ডাক্তার বাবু ওয়ার্ডে ঢুকতে গেলে নিলাদ্রীই এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো " ডাক্তার বাবু ২৮ নম্বর বেডের রোগিনী বেঁচে আছেন তো? "
ডাক্তারবাবু একবার গম্ভীর চোখে নিলাদ্রীকে দেখে নিয়ে বললেন " আগে তো ভেতরে গিয়ে দেখি। তবে ভোর রাত থেকে ওনার অবস্থা খুবই সংকটজনক ছিলো।" উনি চলে গেলেন। নিলাদ্রীরা বাইরে উক্কণ্ঠা নিয়ে কেউ দাড়িয়ে রইলো বা কেউ বেঞ্চে বসে রইলো।
আরো প্রায় এক ঘন্টার মতই লাগলো হাসপাতালের পক্ষ থেকে পারমিতার মৃত্যু হয়েছে সেটা ঘোষণা করতে। আর তাদের মা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন শুনেই রিনি ,মিমির আর অর্পিতার কান্নার রোল উঠল নিউরো আই সি ইউর সামনে বারান্দায় চেয়ারে বসে বসেই। অর্পিতাতো মিমির কাধে মাথা রেখে এমন ভাবে কাদতেঁ শুরু করলো যেনো তারই মাতৃবিয়োগ হয়েছে। নীলাদ্রী মনে মনে বললো ঢং বিশ্ব আর সমর কিছুটা স্তম্ভিত। রানাও মুখ নিচু করে বসে রইল। নিলাদ্রীই প্রথমে নিউরো আই সি ইউর ওয়ার্ডের ভেতরে গেল। পারমিতার পুরো শরীরটাই মুখ থেকে পা পর্যন্ত সাদা চাদরে ঢাকা। মনিটরগুলো তে কোনো রিডিং আর নেই। পাশের ইসিজি মনিটরে একটা সোজা লাইন রেকর্ড হয়ে চলেছে। অক্সিজেন মাস্ক বোধহয় এখনো লাগানো রয়েছে। নীলাদ্রী কিছুক্ষন দাড়িয়ে পারমিতার মৃত শরীরটা দেখল একভাবে। একজন নার্স এসে নিলাদ্রীকে ওদের ঘরে ডাকলে নিলাদ্রীও তার পেছনে পেছনে গেলো। বেশ রাসভারী মহিলাই তিনি মনে হলো নীলাদ্রীর। উনি বললেন " দেখুন বডি পেতে পেতে আপনাদের আরো ঘন্টা চারেক লাগবে" এতো সময় তো বেডটা ধরে রাখতে পারবো না। অন্য রোগীর চলে আসবে। একঘন্টা পরে আমরা ডেথ কনফার্ম করে বডি কোল্ড রুমে পাঠিয়ে দেবো। এর মধ্যে আপনারা হসপিটালের বিল যা বাকি আছে রিসেপশনে গিয়ে পরিশোধ করে দিন আর কাগজ পত্র সব বুঝে ঠিক করে নিয়ে নিন। চার ঘণ্টা পরে ডেথ সার্টিফিকেট পাবেন। হ্যা গত কাল থেকে এখন পর্যন্ত আপনাদের বিল আরো দুই লাখ হয়েছে।
নিলাদ্রী শুনে কিছু না বলেই বেড়িয়ে এলো। পারমিতা যে বেঁচে নেই সেই সন্দেহটা নিলাদ্রী কিন্ত অনেক আগেই করেছিলো। সেই পরশুদিন সন্ধ্যায় পারমিতা কে বেডে দেখতে গিয়েই তার সন্দেহ হয়েছিল। সবটাই যে হাসপাতালের আই ওয়াশ ছিলো সেটা সে বুঝে গেছিলো। বাদবাকীটা হাসপতালের টাকা কামানোর পদ্ধতি । কিন্তু নিলাদ্রী কাউকেই সেটা বলতে পারেনি। বলাও সম্ভব ছিলো না তার পক্ষে। কে তাকে বিশ্বাস করতো সেটা বললে? এতো সেনসেটিভ ইস্যু ছিলো সেটা । প্রাইভেটে হেলথ কেয়ার সিস্টেম কোলকাতাতে যে এমন ভাবে পচন ধরেছ সেটা নিলাদ্রী লন্ডনে বসেই জানতো। তবে ডেড বডি নিয়েও যে এতো করাপশন হতে পারে সেটা ধারণার বাইরেই ছিল তার।
অধ্যায় তিন
নিজেদের আয়নায় নিজেকে দেখা শেখ
এটা কিন্তু ঘটনাই আজকের সমাজে, যে যারা প্রাইভেট হাস্পাতালগুলোতে, প্রাইভেট নার্সিংহোমে, ডাক্তারি প্রফেশনটাকে আজকে ২০২৩ সালে দাড়িয়ে সেবামূলক বা কোনো নোবেল প্রফেশন বলে মনে করছেন ,তাদের আমার মনেহয় স্পষ্টকরে এটা জেনে রাখা ভাল, যে মুহূর্ত থেকে আপনারা , মানে ভারতীয় সমাজব্যবস্থা, ভারতীয় বিচারবিভাগ, পার্লামেন্টে বিল এনে ডাক্তারীকে, এবং ডাক্তারদের ভারতীয় ক্রেতাসুরক্ষা আইনে, আদালতে অভিযুক্ত করতে শুরু করেছেন, সেই মুহূর্ত থেকেই আপনারাই ডাক্তারীকেও অন্যসকল পেশার মতই স্রেফ একটা পণ্য পেশাতেই পরিণত করেছেন। আর দশটা পাঁচটা পেশার মতই, এটাও কোনো ডাক্তারের বা কোনো হেলথকেয়ার ইনস্টিটিউটে ( সেটা সরকারী বা আধাসরকারী বা বেসরকারী যাইহোক না কেনো) কর্মরত ডাক্তারের অনেক কয়েকটি বছরের অর্জিত শিক্ষা আর অনেক বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োগের বিনিময়ে পারিশ্রমিক অর্জন করা ধরা হবে। ঠিক আপনি বা আপনারা সবাই যেমনভাবে টাকাপয়সা রোজগার করেন, ঠিক তেমনই। আপনার কাছে যদি কোনো ডাক্তার বাবু আপনার কোনো অর্জিত জ্ঞান ও অর্জিত পেশাগত পরিষেবা নিতে যায়, আপনি কি ফ্রিতে বা কমদামে ডাক্তারদের সেটা প্রদান করেন? না কেউই আপনারা সেটা কখনও করেননি, আর করেনও না, আর করবেনও না। সরকারী বা আধাসরকারী বা কোনো কোম্পানিতে আপনি কোনো কাজ বা কোনো পরিষেবা দিলে আপনি তার জন্য হয় কোনো ফিক্সড স্কেলে বা কনসোলেটড মাইনে পান, নয়ত বা নিজের ঠিক করাই ফিস নেন, বা লাভ রেখে বিক্রি করে পরিষেবা বা জিনিসের জিনিসের দাম নিয়ে থাকেন। তাই না? ডাক্তারদের বিনেপয়সায় খাদ্য ,বস্ত্র ,বাসস্থান তাদের স্ত্রী, সন্তান , মা, বাবা ,ভাই ,বোনের বা তাদের পরিবারের লোকজনের খাদ্য, পরিধান, বাসস্থান ,শিক্ষা, যানবাহন , সামাজিক সুরক্ষা কিছুই কিন্তু আপনি বা আপনারা বা সমাজের কেউই দেন না। তাহলে আপনিই বলুন ,আপনার জন্য ডাক্তাররাইবা বিনে পয়সায় বা কম পয়সায় তাদের অর্জিত জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা দিয়ে আপনাদের পরিষেবা দেবে এটা আপনাদের আশা করেন কী ভাবে? আপনারা সবাই হয়তো বলবেন যে ভারতবর্ষের আমজনতার দেওয়া করের টাকায় নাকি ডাক্তারিটা পড়ানো হয়। এইরকম একটা অসত্য মিথ তৈরী করে রেখেছে রাজনৈতক নেতারা এবং সংবাদপত্রগুলো আমজনতার কাছে। সত্যি কথাটা হলো, "না" , আপনাদের জনসাধারণের কোনোরকম করের টাকাতেই ভারতবর্ষে কোথাও কিন্তু ডাক্তারি পড়ানো হয় না। ওটাও একটা রাজনৈতিক বুলি, মিডিয়ার তৈরি মিথ্যাভাষণ বা বিষ্ঠা যেটা কিন্তু জনসাধারণ খুবই ভালো খায়। ওই কথার মধ্যে সামান্য সত্যতাও যদি থাকত, তাহলে যেকোন সরকারি বা আধাসরকারী ,বা আই. আই .টি ,বা আই. আই. এম বা আইনের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পাশ করা ভারতবর্ষের সব ইঞ্জিনিয়ার, সব আইনজীবি, সব জাজ, সব ম্যানেজমেন্ট , সব রকমের পেশাদাররা, এমন কি জেনেরাল স্ট্রিমে
( BA, BSC B.com ,MA, MSc M.com , CA , PhD) যারা পড়ছেন , যারা আই এ এস, আই পি এস, হয়েছেন তারাওতো সবাই আপনাদের জনসাধারনের করের টাকায় পড়েছেন। প্রাইভেটে মেডিক্যাল কলেজে ছেলেমেয়েদের পড়িয়েছেন কখনো ? শুধু এমবিবিএস এ ভর্তি হতেই এখন কত টাকা লাগে? এক কোটি টাকা বা বেশী। তারপর তো আছে অন্যান্য খরচ। কত কর দেন মশাই আপনারা? ওইসব পেশার লোকজনদের সেবা-টেবা করতেই হবে,এসব বলতে যাবেন তো, দেখব একবার!; ওই একই যুক্তির অনুসারেই, আপনি যে শিক্ষা পেয়েছেন, সেটাতেতো তাহলে ডাক্তারদেরও দেওয়া করের টাকা ঢুকে আছে। শোধবোধ, কেমন তাহলে ?
তাহলে একজন ডাক্তারবাবু তার চেম্বারে রোগী দেখার কনসালটেশন ফিস্ কত করবেন, প্রতি রোগীর জন্য, দিনে উনি কত রোগী দেখবেন, সেটা ভারতবর্ষে তার অর্জিত NMC দ্বারা রেকোগ্নিসড ডিগ্রি অনুসারে, সেটা উনিই না হয় ঠিক করবেন। অন্যথায় সেই রাজ্য সরকারের হেলথ ডিপার্টমেন্ট বিল এনে আইন করে বা সেই রাজ্যের স্টেট মেডিক্যাল কাউন্সিল ঠিক করে দেবেন ( যেহেতু কোনো ডাক্তারকে কোনো রাজ্যে প্র্যাক্টিস করবার অনুমতি দেয় এই স্টেট মেডিক্যাল কাউন্সিল বা নেশানাল মেডিক্যাল কাউন্সিল, দিল্লী) ।এতে কিন্ত আপনার বা আপনাদের কারুর কিছুই বলার নেই। কিন্তু সেটা ওনার চেম্বারের সামনে বা নার্সিং হোমের বা প্রাইভেট হাসপাতালের বোর্ডে লিখে রাখা উচিত। ঠিকমত ভাবে ডিসপ্লে করা উচিত ,যাতে আপনি বা আপনার পরিজনরা ঠিক করতে পারেন আপনি কার কাছে যাবেন এই হেলথ বাজার থেকে, আপনার স্বাস্থ্য কিনতে, যদি আপনি বেসরকারিভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ক্রয় করেন পয়সার বিনিময়ে ,স্বাস্থ্যনিয়ে ব্যাবসাকারীদের স্বাস্থ্য দোকান থেকে ।ঠিক যেমন গ্রসারি দোকান থেকে, বাজার থেকে, আলু, পটল ,দুধের ,মাছ , মাংসের দোকানে গিয়ে, বা গহনার দোকানে গিয়ে আপনি পয়সা দিয়ে বাজার করেন বা সোনা কিনেন। পয়সা খরচকরে আপনি যদি সঠিকমত পছন্দ অনুসারে যে স্বাস্থ্য আপনি কিনতে গেছিলেন বা কিনেছেন সেই জিনিষটা না পান বা ঠিকঠাকভাবে পরিষেবাটা না পান ,বা এই পরিষেবা পেতে গিয়ে, কোনো রকম হয়রানীর শিকার হন বা স্বাস্থ্য পণ্য বিক্রির দাম যদি স্বাস্থের দোকানদার বেশী নেয় , অকারণে নেয়, বা চিকিৎসাকরতে গিয়ে রোগীর কোনো ক্ষতি হয়, তবে প্রাইভেটে স্বাস্থ্য নিয়ে যারা বিজনেস করছেন বা পয়সার বিনিময়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা যারা দিচ্ছেন সেই ডাক্তারবাবুরা বা নার্সরা বা প্রাইভেট হাসপাতালগুলো বা কোনো নার্সিং হোমের বিরুধ্যে আপনি ক্রেতাসুরক্ষা আইন অনুযায়ী মামলা করতেই পারেন কোর্টে। এটা লন্ডন, কানাডা , অস্ট্রেলীয়, আমেরিকা আর সমস্ত উন্নত ও সভ্য দেশেই এই আইনটা রয়েছে। ভারতবর্ষেও আছে। মামলা করতে পারেন, যদি আপনি মনে করেন যে প্রাইভেটহাসপাতালগুলোতে বা নার্সিংহোমগুলোতে পরিষেবা বা রোগনির্ণয় বা চিকিৎসাগত ভাবে কোনোরকম ত্রুটি রয়েছে বা আপনার কাছ থেকে বেশি দাম আদায় করা হয়েছে বলে মনে করেন তবে আপনি আবারও সেই ক্রেতাসুরক্ষা আইনের সাহায্য নিতে পারেন। আপনার ক্ষোভ বা কমপ্লেইন আপনি লিখিত ভাবে রাজ্যের হেলথ ডিপার্টমেন্টের অধিকর্তা , বা নেশনাল্ মেডিক্যাল কমিশন ,বা রাজ্যের স্টেট মেডিক্যাল কাউন্সিল কে সমস্ত ডকুমেন্ট দিয়ে লিখিত ভাবে অবশ্যিই জানান এবং সেটা যে জমা দিয়েছেন তারও প্রমাণ রাখুন।
সব পেশায়, আপনিও যে পেশায় আছেন সেটাতেও, বেশ কিছু সংখ্যক অসাধু মানুষ তো থাকবেই। আপনার বিষ্ঠা ল্যাবে টেস্ট করলে আপনার সাধুতাও হয়তো বা পরখ হয়ে যাবে। আপনার অসন্তোষ থাকলে, আপনার সন্দেহ হলে কোনো কিছুতে, আপনার হাতে আইনগ্রাহ্য প্রমাণ থাকলে শুধু ডাক্তার কেন, যে কোন পেশাদারের বিরুদ্ধে আপনি সঠিক জায়গায় অভিযোগ করুন। চাইলে সেই ডাক্তারকে ছাড়ুন, অন্যত্র পরামর্শ নিন, পুরো দক্ষিণ প্রদক্ষিণ করে আসুন,সেসব ঠিকই আছে। কিন্তু এটাও মনে রাখবেন যে আপনি বা আপনাদের মত লোকজন ডাক্তারদের যতটা ভালনারেবল আর একা ভাবতেন, এখন তারা ততটা নয় কিন্তু। তারাও এখন সংগঠিত, আইন সচেতন।
পশ্চিমবঙ্গের প্রাইভেট হেলথকেয়ার হসপিটাল ও নার্সিংহোম গুলোতে কী কী ভাবে করাপশন করা হয় সেগুলো মোটামূটি এইরকম
১) সাধারণত ওভারচার্জ করা হয় বিলে, কমকরে তো প্রায় ৪০০% বেশী চার্জ করাটা খুবই সাধারণ ঘটনা ( ভেন্টিলেটর , ডায়াগনস্টিক, এবং মেডিসিনের বিলিংয়ে করে প্রাইভেট হাসপাতালের ম্যানেজমেন্ট দলবল এবং এই ওভারচার্জ কিন্তু ডাক্তার এবং রোগীর সম্পর্কের অবনতি করে প্রায়সই।
২) এই ৪০০% ওভার চার্জিং এর মধ্যে ৪০ থেকে ৬০% করাহয় নানারকম ল্যাবরেটরির টেস্টগুলোতে তারমধ্যে যেমন আছে প্যাথলজির টেস্ট, বায়োকেমিস্ট্রির টেস্ট আছে তেমনিই আছে ইউ. এস. জি, সিটি স্ক্যান ,এম আর আই টেস্ট , ই ই জি, এমনকি পেট টেষ্ট ও
২) রেফারাল সিস্টেমে । কোনো একজন ডাক্তার যত বেশি টেস্ট করাবেন আউটডোর থেকে বা ভর্তি থাকা রোগীর তত বেশি ইনসেনটিভ টাকা বা কমিশন তার প্রাপ্য হবে । এটা প্রায় ৩০ থেকে ৪০% এর কাছাকাছি প্রায় । এটা সাধারণতো কোনো স্পেশালিস্ট ফিজিশিয়ান বা সার্জনরা পান বা কোনো জেনেরাল ফিজিশিয়ানও যিনি কোনো রোগীকে রেফার করেন কোনো প্রাইভেট নার্সিং হোম বা হাসপাতালের আউটডোর বা ভর্তি করতে।টাকা দিয়ে খাম চলে আসে নিয়ম করেই
৩) সম্পূর্ন অপ্রয়োজনীয়ভাবেই প্যাথলজিক্যাল টেস্ট বা বায়োকেমিস্ট্রি টেস্ট বা রেডিওলজির টেস্ট করানো ৬০ থেকে ১০০% এটা বেশি করা হয়ে থাকে আইসিইউ তে ভর্তি থাকা রোগির ক্ষেত্রে।
৪) সামান্যতম সুযোগ থাকলেই রোগীকে মেকানিকাল ভেন্টিলেশনে দেওয়া এবং ভেন্টিলেশনে রেখে দেওয়া ।এটা প্রায় ১০০% এবং সেটা রোগীর কোনোরকম অনুমতি বা কনসেন্ট ছাড়াই যে তিনি আদৌ ভেন্টিলেশনে গিয়ে মৃত্যুকে বরণ করবেন না স্বাভাবিক এবং dignified মৃত্যুকে বেছে নেবেন।
৫) মেডিসিনের বিলে
৬) অবজারভেশন রেখে হার্ট অ্যাটাক এর নাম করে সেই রকম সিম্পটম থাকলেই
৭) অপ্রয়োজনে সিজার ডেলিভারি করানো বেসরকারি হাপাতালে এগুলো হয় প্রায় ৭০% ভর্তি হওয়া বা ও পি ডি দেখানো রোগীদের মধ্যে
,৮। আই সি ইউ তে ভেন্টিলেশনে থাকা কোনো রোগী মারা গেলে, সেই মৃত রোগীকে ভেন্টিলেশনে রেখে দিয়ে বিল বাড়ানো প্রায় ৩০-৪০% রোগীর ক্ষেত্রে।
কোভিদ ১৯ এর সময়ে প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোর লভ্যাংশ ছিলো প্রায় ৪০০%এর ও অনেক গুণ বেশী এই পদ্ধতিতে।
৯) মৃত্যুর পর রোগীর বিল পেমেন্ট বকেয়া থাকলে প্রাইভেট হাস্পাতালগুলো মৃতের দেহ আটকে রাখে যতক্ষণ না সেই বিল পরিশোধ করা হচ্ছে ।সম্পূর্ণ বেয়ানি ভাবেই এটি একটি জঘন্য ধরনের অপরাধ মূলক ও শাস্তি যোগ্য কাজ। কোনো প্রাইভেট হাসপতালে মৃত্যু হলে হাসপাতাল কর্তপক্ষের উচিত সেই মৃতদেহ রোগীর বাড়ি পৌঁছে দেওয়া বিল বাকি থাকুক আর না থাকুক। মৃতদেহ মর্গে সংরক্ষণ করবার নাম করেও ইনফ্লাতেড চার্জ ও নেওয়া হয়ে থাকে বেসরকারী হাস্পাতাল গুলো।
১০) সার্জারি বা কোনো ইন্টারভেনশন করতে কনসেন্ট ফরম সাইন করাতে গিয়ে চিটিং বা ফর্জেরি করা
ভারতীয় সমাজে প্রাইভেটে হেলথ কেয়ার সিস্টেমের এই ম্যালপ্র্যাক্টিস কিন্তু আজকে প্রায় ২৫ -৩০ বছর আগেথেকেই চলে এসেছে যখন লাগামহীন প্রাইভেট হেলথসিস্টেম ভারতীয় বাজারে এসেছে এবং এটা এখনতো অর্গানাইজড গ্রুপ হিসেবে কাজ করছে। যদিও বেশির ভাগ ডাক্তাররা এই ম্যালপ্র্যাক্টিস এর সাথে যুক্ত হতে চান না, কিন্তু কিছু কিছু ডাক্তারতো অবশ্যি আছেন যারা অনেক, আরো অনেক, টাকা রোজগারের ধান্দায় এবং বিলাসবহুল জীবন কাটাবার জন্য এই সকল প্রাইভেট হাসপাতালের ম্যানেজমেন্ট দলবলের এর সাথে হাতেহাত মিলিয়ে এইধরণের ম্যালপ্র্যাক্টিস গুলো করেন। কোনো কোনো ডাক্তারবাবু একরকম বাধ্যই হন এইসব করতে নিজেদের ওই হাসপাতালগুলোতে অস্তিত্ব রক্ষার , টিকিয়ে রাখার কঠিন প্রশ্নে আর কিছুটা ওই হাসপাতালগুলোতেই কাজ করতে করতে তৈরী হওয়া কুস্বভাবে আর মানসিকতায়। ম্যানেজমেন্টও এই সুযোগ গ্রহণকরে প্রতি ডাক্তারকে তাদের প্রতি কোয়ার্টারে টার্গেট বেধে দেন আর সেই টার্গেটে ডাক্তাররা পৌঁছাতেনা পারলেই তাদের ম্যানেজমেন্ট আঙুল তুলে বলেন " আপনাকে হাসপতালের আর দরকার নেই, আপনি বরঞ্চ অন্য কোথাও নিজের জন্য অ্যাটাচমেন্ট দেখে নিন " এই ধরণের অপমান করতেও তাদের গায়ে লাগে না। ডাক্তারদের এই অবস্থায় নিজেদের নিয়ে যাবার কারণ হলো ডাক্তাররা নিজেই।ম্যানেজমেন্টএর লোকজনের সাথে আপোষে যাওয়া। মেরুদন্ড সোজা রেখে হাস্পাতাল থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারায়। অথবা সরকারী চাকরী কে অবহেলা করা।
এই করাপশন এর জন্য কিন্তু যেসব ডাক্তারবাবুরা এথিক্স মেনেই প্র্যাক্টিস করতে চান তারা কিন্ত বেশিদিন টিকতে পারেন না রাজ্যের প্রাইভেট হাস্পাতাল গুলোতে । প্রাইভেটে হাসপাতালগুলোতে যদি কোনো রোগীর কাছথেকে দেড় লাখ টাকা বিল নেয় তবে ডাক্তারবাবু সেখানে পান মেরেকেটে ২৫০০০ থেকে ৩৫০০০ টাকারও কম। এর ওপরে থাকে ইনসেনটিভ, ইনসেনটিভ পায় জুনিওর ডাক্তার রা যারা প্রাইভেট হাসপাতালের ব্যাকবোন। প্রাইভেট হাসপাতালগুলো বেশি লাভ করে কিন্ত সার্জিক্যাল কেসগুলো করে, সিজার করে,কার্ডিওলজিক্যাল কেস নিউরোলজি কেস , ইনভেস্টিগেশন, আর ভেন্টিলেশনে থাকা রোগির থেকে।
প্রশ্ন ওঠে রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকার কেনো এইসব ঝাঁচকচকে হোটেল বা মল এর মতো হাসপাতালগুলোকে লাইসেন্স বা ব্যবসা করতে পারমিশন দিচ্ছেন কেনো? ব্যাঙেরছাতার মত এইসব প্রাইভেট হাসপাতাল যত্রতত্র গজিয়ে বা উঠতে দিচ্ছেন কেনো এটা জানা সত্বেও যে বেশির ভাগ প্রাইভেট হাস্পাতালগুলো চিট করে জনসাধারণকে এবং এই প্রাইভেটহেলথ কেয়ার সরকারী স্বাস্থব্যবস্থা কে ধ্বংস করে দেয়। এইসব হাসপাতালে ডাক্তার দের ব্যবহার করা হয় তাদের ব্যবসার লাভ করাতে?
অধ্যায় চার
২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কোভিড ১৯ ভাইরাস এর জন্য প্যানইন্ডিয়া বা আংশিক ইন্ডিয়া বা রাজ্যে লক ডাউনের জন্য বাজারে রাজামশাই এবং রাজার স্ত্রী স্বপ্নার মাইক্রোফাইন্যান্স এবং নন ব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানীগুলো থেকে মাইক্রোক্রেডিট ঋণনেওয়া ব্যাবসা এবং স্বপ্নার মা ,জামাইবাবুকে আর তার দিদিদের দেখার জন্য, ও একটি পরিবারকে ঋণগ্রস্ত করে তোলা ।
নীলাদ্রী একটা জার্নাল থেকে পড়ে এটা জেনেছে এটা আজকে ২০২৩ দাড়িয়েও এখনও ভারতবর্ষের অনেকের কাছে একদমই পরিষ্কার ধারণা নেই যে কেনো বেশির ভাগই ইকোনমিস্টরা ও জ্ঞানী গুণীজনেরা বলেন যে পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতবর্ষের প্রায় সমস্ত রাজ্যে দুইদশক ধরে গজিয়ে ওঠা ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলির জনসাধারণের কাছে কোনো রকমের কোলাতেরাল বন্ধক ছাড়াই, কোম্পানিগুলোর বণ্টন করা মাইক্রোক্রেডিট লোন নেওয়াটা আপামর জনসাধারনের জন্য মোটেই কোনো আশীর্বাদ নয়।, এটি তাদের জন্য বরং একটি বড় ধরনের অভিশাপ ৷ তাই এই সব কোম্পানিগুলোকে ভারতীয় সরকারের উচিত অবিলম্বে আইন দ্বারা বন্ধকরা উচিত এবং এইসব ব্যাবসা যারা করছেন তাদের রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চরমতর শাস্তি দেওয়াও উচিত।
মাইক্রোফিন্যান্স এর মাইক্রোক্রেডিট বা ক্ষুদ্রঋণ একসময় মানুষকে (মূলতভাবে ভারতীয় গরীব মহিলাদের) স্বনির্ভর করে,দারিদ্র্য থেকে বের করে আনার জন্য বিশেষভাবেই নাকি জরুরি ছিলো, যেখানে ব্যাংকপরিষেবা তেমনভাবে নেই বা যাদের কোলাতেরাল বন্ধক দেবার ক্ষমতা নেই তাদের জন্য, সেটাই মাইক্রোফাইন্যান্স এবং ননব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি গুলোর মালিকরা বা কর্নধারেরা তদনিন্তন ভারতীয় সরকার এবং জনসাধারণ সকলকে বুঝিয়েছিল ২০০৯ সাল থেকে যখন বাংলাদেশে ড:মোহাম্মদ ইউনিস সাহেব এই মাইক্রোফাইন্যান্স লোন নিয়েই ( ওনাদের গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে ) ২০০৬ সালে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পাবার পর। এরপরে, বাংলাদেশের নোবেল পুরস্কার পাওয়া গ্রামীণব্যাংকেরই উদাহরণ দেখিয়ে বা দোহাই দিয়েই ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় সহয়তায় ২০১২ সালে লোকসভায় বিল এনে একেরপর এক ব্যক্তিগত মালিকানায় বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাইক্রোফাইন্যান্স
( এম. এফ .আই) বা নন ব্যাংকিং ফিনানান্স করোপরেশনস ( এন. বি. এফ. সি) সংস্থাগুলো ভুইফোরের মতই গজিয়ে ওঠে, বিশেষভাবেই গ্রামেগঞ্জে , শহরতলীতে, শহরে, ছোটছোট মহিলা গোষ্ঠীদের ( এইখানে গোষ্ঠীর মানে কোনো পাড়ার ১০ থেকে ২৫ জন বিবাহিতা মহিলার সমষ্টি ) সহজে, কোনো কোলতেরাল কাগজ বা বন্ধক ছাড়াই ক্ষুদ্রঋণ পাইয়ে দিতে ( কিন্তু বেশ চরা সুদে) তাদের বিপসঙ্কুল অবস্থায় পাশে দাড়ানোর নাম করে বা সোশ্যাল সার্ভিসের নাম করে। কিন্তু অনেক মহিলা যারা এই মাইক্রোফাইন্যান্স বা এন. বি. এফ. সি কোম্পানিগুলো থেকে ঋণ নিয়েছেন বা নিয়েছিলেন, তাদের অভিজ্ঞতায় অবশেষে আজ তারা সকলেই বলছেন যে, এই মাইক্রোফাইন্যান্স বা এন. বি. এফ. সি কোম্পানিগুলো তাদের জীবনের জন্য এক প্রচণ্ড রকম অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ভারতীয় নাগরিকের মতে এই অর্থঋনপ্রদানকারী সংস্থা গুলো বা কোম্পানিগুলো এক একটি বড় ক্ষুধার্ত নেকড়ের মত যাদের সুদের টাকার ক্ষিদে মেটানো ঋণ গ্রাহকদের কাছে খুব সহজ কাজ নয়। বিশেষ করেতো দরিদ্রদের জন্য, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পরা নাগরিকদের জন্য তো বটেই , ( নিরক্ষর , অর্ধনিরক্ষর মানুষ, হঠাৎ করেই দুইবছর ধরে চলা কভিদ- ১৯ প্যান ইন্ডিয়া লকডাউনের জন্য চাকরি হারানো মানুষ, ছোট বা ক্ষুদ্রতম ব্যবসায়িক উদ্যোগের মানুষ, প্রান্তিক কৃষক, রিকশা চালক, ভ্যান চালক, অটো রিকশা চালক, প্রান্তিক মানুষ, ছোট ছোট মুদির দোকানদার , স্টার্টআপ ছোট ব্যবসায়ী, রাস্তার ফেরিওয়ালা, দিনমজুর শ্রমিক, চা শ্রমিক,ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য) এবং নীলাদ্রীও মনে করেন, লোকেদের এই ক্ষুদ্রঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলোর মন্দদিক গুলোর সম্পর্কে মানুষকে এখন থেকে আরও অনেক বেশিকরে সতর্ক থাকতে হবেই এদের থেকে কোনো ঋণগ্রহণের আগে। জানতে হবে ওদের অর্থঋণ দেবার পেছনের কারণগুলো । বিশেষভাবেই সতর্ক থাকা দরকার যে ব্যক্তিগতভাবে বা গোষ্ঠীরমাধ্যমে কোনো ক্ষুদ্রঋণ গ্গ্রহণের জন্য নিকট ভবিষ্যতে তার প্রভাব কি হতে পারে তাদের জীবনে বা তাদের সংসারের ওপরে এবং কোনো পাড়ার গোষ্ঠির ভিত্তিতে বিভিন্ন আর্থিক এনজিও/ কোম্পানি/ নন-ব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল কর্পোরেশন(এন.বি.এফ.সি)/সংস্থাগুলো/ কোনো সুদখোর বেসরকারি ঋণ প্রদানকারী কোম্পানি গুলো (কোম্পানী আইন ১৯৫৬ এর অধীনে এরা নিবন্ধিত বা ২০১৩ এর কোম্পানি আইনের ৮ নম্বর ধারায় নিবন্ধিতও হতে পারে আবার নাও হতে পারে ) এবং যাদের কাছে ভারতের কোনো রাজ্যেই অর্থপ্রদানকারী ঋণের ব্যবসা করার জন্য যথাযথ ভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (আর বি আই) অনুমতিপত্র বা রাজ্য সরকারের ক্ষুদ্র ঋণ দেবার জন্য আইনি অনুমতি দেওয়া কাগজপত্র নেই তাদের সম্বন্ধে।পশ্চিমবঙ্গে এইসব ক্ষুদ্রঋণ পাইয়ে দেবার মত কিছু ব্যাংক বা কোম্পানিগুলোর কিছু নাম এখানে দেওয়া আছে যারা এইধরনের ব্যবসাকরে কয়েকশ হাজার কোটি টাকা আয় করে এদের দেওয়া ক্ষুদ্র ঋণের চরাসুদের ওপরে ভিত্তি করে। এরা হলো "বন্ধন ব্যাঙ্ক", "আশীর্বাদ মাইক্রোফাইন্যান্স লিমিটেড", "নিগম সুধা মাইক্রোফাইন্যান্স লিমিটেড" ,"প্রগতি মাইক্রোফাইনান্স কোম্পানি লিমিটেড,( এটা কিন্তু একটা ফ্রড কোম্পানির অন্তর্ভুক্ত) " সোদপুর এর"লোকেনাথ ট্রাস্টস (এর কোনোরকমই বৈধ কাগজ পত্রই নেই)", "দিশারী', "স্বয়ম কৃষি সংস্থা" ,"জনলক্ষ্মী আর্থিক পরিষেবা, "উজ্জ্বীবন", "আদানি ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস", "স্মল ফিনান্স ব্যাঙ্ক", "উৎকর্ষ স্মল ফাইন্যান্স ব্যাঙ্ক", "অরোহন ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস", "ফিউশন মাইক্রোফাইনান্স", "ইকুইটাস", "স্মল ফিনান্স ব্যাঙ্ক", "গ্রামীণকুটা ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস", "ইউজিআরও ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস", "এএসএ ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়া মাইক্রোফাইনান্স লিমিটেড", আন্তর্জাতিক ভারত মাইক্রোফাইনান্স লিমিটেড ", "সরলা উইমেন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি" সেবা, রহরা", ভেদিকা ক্রেডিট ক্যাপিটাল "মোহর, "এস কে এস মাইক্রোফাইন্যান্স লিমিটেড", "ভিলেজ", "শেয়ার মাইক্রোফিন্যান্স", "অন্নপূর্ণা ফাইন্যান্স" , "লক্ষ্মী ফাইন্যান্স "উৎকর্ষ ছোট ফাইন্যান্স ব্যাঙ্ক', "বারাসাত ফাইন্যান্স " "বেলঘরিয়া জন কল্যাণ সমিতি " "ফুইসন মাইক্রো ফাইন্যান্স" ,,"মুহুট ফিন ক্রপ মাইক্রো ফাইন্যান্স " মনপ্পুরম ফাইন্যান্স লিমিটেড, "ফিন বুল এজেন্সি" "মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা ফাইন্যান্স" জানা স্মল ফাইন্যান্স ব্যাংক, ক্যাপিটল কো প্রাইভেট লিমিটেড ইন্ডিয়া, ফাইন্যান্স ব্যাংক লোন ২৪ ঘন্টা, ইত্যাদি ইত্যাদি । ( ভারতবর্ষে প্রায় ৯৬টি বা ততোধিকবেশী বড় ক্ষুদ্রঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে এবং ৩৫,৪৭৩টি এন. বি. এফ. সি কোম্পানি এবং পশ্চিমবঙ্গেও ৪১ টি মাইক্রোফাইন্যান্স কোম্পানি কাজ করছে (২০২১ সালের রেকর্ড হিসাবে ) ,অর্থঋণদাতা ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার থেকে অনুমতি নিয়ে কিংবা সেই বৈধ অনুমতি ছাড়াই এবং এই ধরনের অনেক এম এফ আই /এন. বি. এফ. সি / এনজিও বর্তমানে কাজ করছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ছাড়াও অন্যান্য প্রদেশেও। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের নির্দেশঅনুযায়ী কোনো ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান বা এম.এফ.আই ন্যূনতম ভারতীয় টাকায় ৫ কোটি টাকা মূলধনের সাথেই একমাত্র স্থাপন করা যেতেপারে (এবং তাদের সেই টাকাটা ভারতীয় আর. বি .আইতে জমা রাখতেই হবে এবং তবেই তারা আর বি আই এর ছাড়পত্র পাবে এই ঋণপ্রদানকারি ব্যবসা চালাতে ) এবং তারা ভারতীয় বাজারে টাকা তখনই ধারহিসাবে কাউকে দিতে পারবে, যখন একজন ঋণগ্রহীতার পরিবারের বার্ষিকআয় সর্বোচ্চ ভারতীয় টাকায় ১,২০,০০০ টাকা থেকে সবচেয়ে বেশী ৩ লাখ টাকা হবে। এই ধরনের ক্ষুদ্তম ঋণের সর্বোচ্চ সীমা অবশ্যই একবারই হবে এবং সেটা ঋণগ্রহীতার মাসিক পারিবারিক আয়ের ৫০% হতে হবে।, ১লা এপ্রিল ২০২২ সালের ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নির্দেশিকা অনুসারে ( মেমো নং DoR.FIN.REC.95/03.10.038/2021-22 তারিখ ১৪.০৩.২০২২) ঋণের সুদ প্রতি বছরের হিসাবে, মূল ঋণের সিম্পল সুদের হার( চক্র বৃদ্ধি হারে সুদ কখনোই নয়) অনুযায়ী ১৫% থেকে ২০% এর বেশি হবেনা কিছুতেই। (অর্থাৎ যদি একজন ঋণগ্রহীতা ২০,০০০/ টাকা ক্ষুদ্রতম লোন নেন, তাহলে তিনি মোট ২৪টি কিস্তিতে মাসিক ৯৭০/ টাকা হিসেবে সেই ঋণ পরিশোধ করবেন , যার মধ্যে মূল ঋণের কিছু পরিমাণ এবং কিছু সুদের পরিমাণ ঋণ উভয়ই থাকবে ( অনুচ্ছেদ ৬.৩ এর অনুচ্ছেদ ii অনুসারে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার নির্দেশিকা ও আদেশ অনুসারে ১৪.০৩.২০২২ তারিখে, যেটা উপরে উল্লিখিত করা হয়েছে) এবং তাদের অবশ্যই আর .বি. আই এর কাছথেকে বাজারে কোনো ব্যক্তিকেই ঋণ দেবার অনুমতি স্বরূপ কাগজ বা অ-ব্যাঙ্কিং কোম্পানির অর্থঋণদাতা হিসাবে বাজারে কাজকরার ছাড়পত্র বা অনুমতি থাকতেই হবে এবং রিজার্ভ ব্যাংকের নির্দেশ অনুসারেই কাজ করতে হবে । এম. এফ. আই বা ক্ষুদ্রঋণদাতা কোম্পানিগুলো জাতীয় ব্যাংক থেকে তাদের ব্যবসার জন্য ঋণ নিতেই পারে এবং তারা প্রতি বছর তাদের সেই ঋণের জন্য সর্বোচ্চ শুন্য থেকে ১৪% সুদ প্রদানকরে জাতীয় ব্যাংকগুলোকে । বেশিরভাগ এই অর্থঋণ প্রদানকরি ( মানি লেন্ডিংকারি), হয় এম. এফ. আই বা এন. বি. এফ. সি কোম্পানি বা সুদখোর প্রাইভেট অর্থঋণদাতারা ভারতীয় আইনদ্বারা বেআইনি (আর.বি.আইয়ের অনুমতি বা নিবন্ধন ছাড়া এবং আরবিআই নির্দেশিকা অনুসরণ নাকরে বা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মানি লেন্ডিং আইন -১৯৪০ অনুসরণ না করে) ভাবে যদি অর্থলেনদেনে যুক্ত থাকেন, তাহলে পাড়ার জনসাধারণ বা ঋণগ্রহীতারই উচিত অবশ্যই ওইসব কোম্পানির নামে বা কোম্পানির লোকের নামে স্থানীয় থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি বা এফ.আই.আর দ্বারা স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করা যেহেতু তাদের এই কাজ সম্পূর্ন ভাবেই ভারতবর্ষে বেআইনী এবং একটি ক্রিমিনাল অফেন্স।
২০১২ সাল থেকেই, আর .বি .আই এর মাইক্রো ফাইন্যান্সের জন্য বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই অনেক ক্ষুদ্রঋণপ্রদানকরি সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে (শহুরে অঞ্চলে, আধা-শহুরে অঞ্চলে, গ্রামেগঞ্জে) বৃদ্ধি পেয়েছে,এবং দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের জীবনব্যাপী দুর্দশা ও কষ্ট, ক্ষতি, তাদের পরিবারকে অপূরণীয়ক্ষতির মধ্যে ফেলেই লোকজনকে ঋণপ্রদান করছে এবং এই ঋণ ( একবারে ৫০,০০০ টাকা এর জন্য ধরে নিন ) দিয়েছে কিন্তু কেউ বা বাৎসরিক, কেউ বা মাসিক ভিত্তিতে, বিশাল অঙ্কের অবৈধ শতাংশ সুদের সাথে । (এম. এফ .আই/এন. বি .এফ. সি) সে ক্ষেত্রে এইসব ক্ষুদ্র ঋণদাতাদের সুদের হার বার্ষিক ৩০% থেকে এমনকি ২০০% সাপ্তাহিক বা মাসিক পর্যন্ত যদি পরিবর্তিত হয়ে থাকে বা ধার্য করে থাকে, তবে সকলেই জেনে রাখুন, ভারতীয় ফাইন্যান্স আইন কখনোই এই ধরনের ঋণ দেওয়া বা নেওয়ার পক্ষে অনুমতি দেয় না। ক্ষুদ্রঋণপ্রদানকারী সংস্থার জন্য আর. বি. আই দ্বারা, নির্দেশিত সুদের স্তরের (আর. বি .আই এর কাছে নিবন্ধিত এম. এফ .আই সংস্থাগুলির জন্য সর্বোচ্চ ২০% বার্ষিক সুদ নিতে পারে) ছাড়িয়ে খুব বেশি সুদের চার্জসহ কোনও ঋণগ্রহীতাকে অবৈধ অর্থ ধার দেওয়া (বার্ষিক ভিত্তিতে এবং সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিত্তিতে কখনও নয়) সর্বাধিক ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলি আজ এইভাবে অসম্ভব লাভজনক বিজনেস হাউসে পরিবর্তিত হয়েছে এবং এরা আজকের ভারতীয় সমাজে বরং বড় ধরনের অর্থ শোষক হয়ে উঠেছে। তাদের লক্ষ্য, মূল এবং সুদের অর্থকে নিজেদের মুনাফা হিসাবে তৈরি করা, তাদের সুদেরহার দ্বারা দরিদ্র ,নিন্মবিত্ত জনগণকে ক্রবর্ধমানভাবে শোষণ করা, গোষ্ঠীর মাধ্যমে একাধিক ঋণ ( একএকটি দলে দরিদ্র মহিলা বা পুরুষদের সংগ্রহকে গোষ্ঠী বলা হয়) যথাযথ পরিশ্রম ছাড়াই ঋণগ্রহীতাকে সহজে অর্থঋণ দেওয়া কেবলমাত্র নিজেদের স্বার্থে, স্বচ্ছতার অভাব, আর.বি.আই নিয়ন্ত্রণছাড়া এবং হুমকি দিয়ে ঋণ পুনরুদ্ধারের জন্য যতরকম জবরদস্তিমূলক পদ্ধতি আছে সেগুলোকে মোচড়ায় ব্যবহার করা, ঋণগ্রহীতার বাড়ির সামনে নানাবিধ উপদ্রব সৃষ্টি করা বা আদালতে কেস দায়ের করা একজন প্রতারক বা ঋণশোধ খেলাপি হিসাবে সেই ঋণ গ্রাহক/ গ্রহীতার নামে মামলা করা বা তাদের কোম্পানির ঋণ পরিশোধের শর্তাবলী অনুসরণ না করার জন্য । আর. বি. আই বিধি ২০২২ অনুযায়ী, সমস্ত ঋণপুনরুদ্ধার এজেন্টকে (RA) কিন্ত অবশ্যই স্থানীয় পুলিশের কাছে ওই বিধির ৭.৫.১ থেকে ৭ .৫.৫ ধারায় বর্ণিত সব মানদণ্ডগুলি পূরণ করতেই হবে , রাখতে হবে সঙ্গে তার সেই কোম্পানির আইডেন্টিটি কার্ড, পরিচয় যাচাইকরণ এর জন্য স্থানীয় থানা থেকে প্রশংসা পত্র এবং ঋণ গ্রহীতাদের কাছথেকে ঋণ আদায়ের অনুমতির কাগজ এবং সেগুলো ছাড়া কোনভাবেই কোনো ব্যক্তিকে ফিল্ড ঋণ উদ্ধারকারী ওয়ার্কার বা RA হিসাবে ঋণপ্রদানকারী আর্থিককোম্পানিগুলো নিয়োগ করতে পারবেনা বা কোনো RA কে কোনো ঋণ গ্রহণকারীর বাড়িতে পাঠাতেও পারবে না ( সকাল ৯ টাথেকে সন্ধ্যা ৬ টার পরে তারা যেতে পারবেন না , বাড়িতেও প্রবেশ করতে পারবেন না ),পাঠাতে পারবে না সেই ব্যক্তির কাজের জায়গায় বা কোনো মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়াতে সেই ব্যক্তি যে ঋণশোধ করতে অক্ষম সেটাও ছাপাতে পারবে না। এটাও দেখাগেছে যে ক্ষুদ্রঋণপ্রদানকরি সংস্থাগুলো প্রায়শই তাদের কোম্পানির নথি হিসাবে ঋণগ্রহীতার স্বামীর কাছেথেকেও তার স্বাক্ষরিত কাগজ নেয় ( যেটা বেআইনি) এবং ঋণগ্রহণ ও পরিশোধের একটি নোটবুক কোম্পানির নিজেদের হেফাজতেই রাখে ( সেটা ঋণগ্রহীতার সাথে কখনই দেয় না )। সেই কারণেই একজন ঋণগ্রহীতা মহিলা বা তার স্বামী কখনই জানেননা যে কতটা মূলঋণ এবং কতটা সুদ তারা তাদের নেওয়া ঋণের জন্য ক্লিয়ার করেছেন এবং তারা ক্রমশই ঋণের পরে ঋণের ফাঁদে আটকে পড়েন । নিলাদ্রির মতে, অনেক সভ্য ও সচেতন মানুষের মতামতে, এই সমস্ত ক্ষুদ্রঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলি সত্যিসত্যিই আজকে ২০২৩ এর আর্থ-সামাজিক ভাবে দরিদ্রশ্রেণীর লোকদের জন্য বড় রকমের একটা অভিশাপ, যারা হয়তো বা তাদের স্ত্রী সন্তানের, বাবা মা ভাই বোন বা আত্মীয়স্বজনের চিকিৎসার জন্য ( প্রাইভেট হাপাতালে), বা ক্ষুদ্র ব্যবসা চালানোর জন্য বা তাদের পরিবারকে চালানোর জন্য বা সাহায্য করার জন্য তাদের নগদঅর্থের প্রয়োজনেই এদেরথেকে ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণ গ্রহণের পূর্বে তাদের হয়তো বা একটি ছোট ব্যবসা ছিল, যেখানথেকে তারা তাদের পূর্বের জীবিকা অর্জন করতেন, এবং তারা সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েই ক্ষুদ্রঋণ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন , রাজ্য বা / প্যান ইন্ডিয়া লকডাউনের ( কভিড-১৯ ভাইরাস) সময়কালে। সেইসময় তারা যে ভীষণ অর্থনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন ,তখন তারা ব্যক্তিগত ঋণ বা গোষ্ঠীর মাধ্যমে সাপ্তাহিক/ বা মাসিক খুববেশি শতাংশের সুদের সাথে ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছিল। গ্রামের বা শহরতলীর, কোনো পাড়ার ১২ থেকে ২৪ জনের অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত বা অর্ধনিরক্ষর বিবাহিত মহিলা এবং দরিদ্র পুরুষদের এম. এফ. আই বা এন. এফ. বি. সি কোম্পানির ট্রেনিংপ্রাপ্ত ও বেতনভোগী ফিল্ড এজেন্টস, লোন অফিসার বা দালালেরা প্রথম টার্গেট করে তাদেরই এবং তারা একএকটা করে গোষ্ঠি তৈরি করে দেয় এইসকল অভাবী লোকদের দিয়ে বা তাদের স্বল্প শিক্ষিত/কম বুদ্ধিমতী স্ত্রী, সন্তানদের দিয়ে ঋণ তোলার জন্য প্রলোভিত করে সেই গোষ্ঠীর একজনকে যার খুব প্রয়োজন সহজে পাওয়া অর্থের। যদি সেই একজন ব্যক্তি বা মহিলা সময় মত নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে না পারেন তবে গোষ্ঠীর অন্যকেউ তার হয়ে সেই সংস্থার কাছেই আবারও ঋণ করে, তার ঋণ শোধ করবার জন্য । এইভাবেই গোষ্ঠীর সবাই একসময় ঋণের চক্রবুহের মধ্যে জড়িয়ে পড়েন আর সেই ঋণপ্রদানকারি সংস্থাটি গোষ্ঠীর সবার কাছ থেকেই চরা সুদ আদায় করেই চলে। প্রায় দুবছর ধরে কভিদ ভাইরাস এর কারণে প্যান ইন্ডিয়া লকডাউন থাকার জন্য, যাদের বাড়ির পুরুষরা তাদের চাকুরী হারিয়েছেন অথবা (২০১৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০২২ এর অক্টোবর পর্যন্ত কোভিড - ১৯ মহামারী সময়কালে ) তাদের ছোটব্যবসায় বা চাষাবাদে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ,বা, লকডাউনের জন্য ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তাদের ক্ষুদ্রঋণ বা গোষ্ঠীঋণের সুবিধে, অসুবিধাগুলো এবং ঝুঁকির সম্পর্কে ভুল বুঝিয়ে, তাদের স্ত্রীদের দিয়ে এইসব ঋণ নিতে প্রবাভিত করেছে এই সব সংস্থার ফিল্ড এজেন্টরা। এদের কিন্ত রাষ্ট্রের হাতে কড়া ধরনের চরম শাস্তি হওয়া সত্যিই ভীষণ ভাবে জরুরি। এই ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলি এইভাবেই পশ্চিমবঙ্গ/ভারতের শহুরে, শহরতলির, গ্রামের লোকদেরকে অতিউচ্চ ও অস্বাভাবিক সুদের হারে (>২৫% থেকে ৩৫% বার্ষিক এবং প্রাইভেট সুদখোরদের দ্বারা ১২০% থেকে ২০০% মাসিক বা সাপ্তাহিক সুদেরহারে সহজে ঋণ গ্রহণের জন্য প্রলুব্ধ করে অর্থঋণদাতারা । কোভিড- ১৯ মহামারী যখন ( ২০২৩ ) প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, যখন সব দোকান বাজার খুলেছে, এই ক্ষুদ্রঋণসংস্থাগুলির বেতনভোগী ঋণ পুনরুদ্ধার এজেন্টদের ( RA) /দালালরা ঋণ গ্গ্রাহক/ গ্রহীতাদের বাড়ির দরজায় গিয়ে প্রচণ্ড চাপ দিচ্ছে, সেই ব্যক্তিদের/পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে ,এই ঋণ সুদসহ পরিশোধ করতে । এর ফলে, ঋণ গ্রাহক/ গ্রহীতা তাদের নিজেরনামে/অথবা নিজেরনামের পরবর্তীতে গোষ্ঠীর অন্যসদস্যদের নামে (যেমন গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মধ্যে ঋণ নিতে আবদ্ধ হয়) সেই কোম্পানির কাছেই এবং তারপরে বাইরের প্রাইভেট ঋণপ্রদানকারীদের কাছ থেকে আবারও ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন এবং এর ফলস্বরূপ তার পাড়াপ্রতিবেশীদের কাছ থেকেও ঋণ ক্রমাগত নিতেই থাকেন এবং সুদখোর দুষ্টচক্রের খপ্পরে পড়েন এবং এই সব দুষ্ট চক্রের ঋণপ্রদানকারীসংস্থার লোকেরা কেবল এইধরনের ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু ঋণ গ্রহীতার/ গ্রাহকের ধারকরা ঋণের মূল পরিমাণ কখনই পরিশোধ করা আর হয়ে ওঠেনা । শেষ পর্যন্ত মহিলারা তাদের বিয়েতে পাওয়া স্বর্ণঅলঙ্কার সহ তাদের সমস্ত ছোটখাটো সম্পদ বিক্রি বা বন্ধক রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনকি তাদের বাসনপত্রও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে এবং গার্হস্থ্য কলহের , স্বামীর বা পরিবারের বা পাড়া পড়শীর দ্বারা মারধোর গালিগালাজ এর মুখোমুখিও হতে হচ্ছে তাদের।
" …আমার দু দুটি এম. এফ. আই থেকে নেওয়া ঋণের সুদ মেটাতে গিয়ে একটির কাছ থেকে অন্য একটি ঋণ নিতে হয় ও এরপরে প্রাইভেট অর্থঋণদাতাকে তাদের দেওয়া ঋণের শুধুমাত্র সুদের অংশ পরিশোধ করার জন্য, ঋণের পর ঋণ নিতে হয়েছে ২০১৯ সাল থেকে। এর ফলে আমাকে আমার বিয়ের পাওয়া অলঙ্কার, আমার মেয়ের সোনার অলঙ্কারও বিক্রি করতে হয়েছিল।, আমাদের সংসারে প্রতি মাসেই আমার বড় ভাসুরের দেওয়া প্রতি মাসের টাকাও আমাকে চুরি করতে হয়েছে…"- মিসেস স্বপ্না ভট্টাচার্য -ঋত্বিক ভট্টাচার্যের( গল্পের চরিত্রের রাজা মশাই) স্ত্রী - একজন বিবাহিত ৪৮ বছর বয়সী, স্কুলে মাধ্যমিক পাসকরতে না পারা, অল্প শিক্ষিত , মধুমেহ রোগীগ্রস্ত এক মহিলা, - এক ২০ বছর বয়সী কন্যার মা, একজন এম. এফ. আই গোষ্ঠীর সদস্য মহিলা ঋণগ্রহীতা- ঠিকানা- ৭/৫১ পূর্বপল্লী গ্রাম, পোস্ট অফিস- সোদেপুর, জেলা-24 পরগনা (উত্তর), থানা -খড়ধা, কলকাতা -১১০ , একটি বিষণ্ণ হাসি দিয়ে আমাদের বলেন এবং তারপর বুকফাটা কান্নায় ফেটে পড়েন। "….আমাকে প্রথমবার "বন্ধন ব্যাঙ্ক" থেকে মাইক্রোফাইনান্স লোন (৬০,০০০ টাকা) নিতে হয়েছিল, তারপরে নিতে হয় আশীর্বাদ মাইক্রোফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে,(৩৫,০০০টাকা) ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ( আমার এই ঋণ নেওয়াটা কিন্তু শুধুমাত্র আমার স্বামী ঋত্বিকের( রাজা মশাইয়ের ) জ্ঞাতার্থেই তখন ছিল( যেহেতু তারও সই লেগেছিল) এবং আমার সোদপুর এর শ্বশুরবাড়ির অন্যসদস্যরা আমার এই ঋণনেওয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভাবেই অন্ধকারে ছিলেন। আমি এই ঋণ নেই , আমাদের বাড়ির লাগোয়া বঙ্কিমপল্লী পাড়াতে ' বন্ধন ব্যাংকের" একটি গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার পর। পানিহাটি পৌরসভাকেন্দ্রের অন্তর্গত সোদেপুরে আমাদের এলাকার "বাঙ্কিমপল্লী"-এর গোষ্ঠী থেকে সহজে ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে প্রলোভন দেওয়া হয়েছিল এবং সোদপুর ও খড়দহ, পানিহাটি ও খড়দহের বন্ধন ব্যাঙ্ক ও আশীর্বাদ মাইক্রোফাইন্যান্স লিমিটেডের ফিল্ডএজেন্টদের দ্বারা অনেকেই এই ভাবে এখনও প্ররোচিত হচ্ছে এবং গোষ্ঠী সদস্যদের দ্বারাও ভুল বোঝানো হয়েছে আমাদের।
আমার ৮৪ বছর বয়সী মা (মিসেস শান্তি অধিকারী, প্রয়াত অনিল অধিকারীর স্ত্রী, যিনি একা থাকেন একটা ছোট ফ্ল্যাটে ) কে খাওয়ানো, দেখভাল করা এবং ওনার চিকিৎসার জন্য এবং আমার দুই বোনের (কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তীর স্ত্রী সবিতা চক্রবর্তীর পরিবারের )পাশে দাড়ানো ও দেখাশোনা করা এবং কভিদে আমার বড় জামাইবাবু প্রয়াত রাজু দের স্ত্রী বন্দনা দের ,পরিবারের জন্য কভিড-১৯ (২০২০ -২২) এর লকডাউন সময়কালে. এম. এফ. আই দুই কোম্পানির মাসিক কিস্তি আর সুদ মেটাতে, আমাকে সোদপুর লোকনাথ ট্রাস্টের (মালিক মিঃ তপন সাহার) কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়েছিল আরো অনেক চরা সুদে। এর পরে ক্রমাগত ভাবেই আমি নিগম সুধা মাইক্রোফাইন্যান্স ট্রাস্টের মালিক চন্দন সাহা, ইউনিটি ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, প্রগতি, বেরবেরী দেশারি, জীবন উত্তান মাইক্রোফাইন্যান্স লিমিটেড অপারেটিং, এইরকম ভাবে প্রায় ২২ জনের কাছ থেকেও আমাকে ঋণ নিতেহয় , নিজের নামে বা গোষ্ঠীর অন্য মহিলাদের নামে। (আমি কিন্তু জানতামই না যে এই এম.এফ. আই/এন.বি.এফ.সি কোম্পানি গুলো / এবং সুদখোর অর্থ ঋণদাতারা আর.বি.আই-এর অনুমতি ছাড়াই, আইন অনুসারে , অবৈধ অর্থ ঋণদাতাসংস্থা, যারা সোদপুর, ২৪ পরগনা (উত্তর), কলকাতা-১১০, বা খরদহ, আগারপারা এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে এখনও কিন্ত কাজ করছে। আমি বর্তমানে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা ঋণের ফাঁদে আটকেপড়া একজন বিবাহিত ডায়াবেটিক মহিলা। এ ছাড়াও আমার স্বামী ঋত্বিক ভট্টাচার্য, বি.কম (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) ডিগ্রিধারি, ৫০ বছর বয়সী (তিনি ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বাইপোলার মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন- স্কিজয়েড বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার ছিল ওনার এবং এসএসকেএম হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি ইনস্টিটিউটে ওনার চিকিত্সা করাও হয়েছিল- অ্যান্টিসাইকোটিকস ওষুধ লিথিয়াম, রিস্পেরিডোন, ভালপ্রোয়েট, এসএসআরআই ওষুধ দিয়ে,এখন তার জ্যেষ্ঠভাই এমডি ডাক্তার দ্বারা ওনার ওষুধ চলে ।) তিনিও এই এন. এফ. বি . সি কোম্পানির দেওয়া ঋণের ফাঁদে পড়েছিলেন এবং অন্যদের থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়েছিলেন (নন-ফাইনান্সিয়াল ব্যাঙ্কিং কোম্পানি/সংস্থা থেকে যখন ২০২০-২০২১ সালে তার ছোট ব্যবসা একটি স্টার্ট আপ ব্যবসায়িক ইউনিট (আমাদের বাড়ির উঠোনে সে তার একটি ওয়াসার এর ছোটকারখানা করেছিল তার পুনর্বাসন প্রোগ্রাম হিসাবে - একবার ২০১১ সালে ) কোভিড -১৯ এর জন্য প্যান ( ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ) বা আংশিক লকডাউন সময়কালে উনি ওনার ব্যবসার লোকসানের মধ্যে পড়েন (কারণ লকডাউনেও ওনাকে, তার কারখানার ৪ জন শ্রমিকদের বসিয়েবসিয়ে মাসিকবেতন এবং পুজোর বোনাস দিতে হয়েছিল , আর একজনের ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুলের মেশিনে কাজের সময় ক্ষতি হবার জন্য তাকে অনেক টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল, ঋণ করেই), যদিও তিনি কোভিডের লক ডাউনের জন্য স্থানীয় বাজারে তার ছোট কারখানায় তৈরি পণ্যগুলো সব বিক্রি করতে পারেননি এবং এই এন বি.এফ.সি কোম্পানিগুলিতে তার ঋণের পরিমাণ এখন ১০ লক্ষ টাকায় পৌঁছেছে (যেহেতু তিনি ২০২০ সাল থেকে কোম্পানি থেকে নেওয়া ঋণের ই এম আই দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং এখন তাকে ২০শে মার্চ ২০২৩ এই ঋণের নিষ্পত্তির জন্য আইনআদালতের দ্বারা তলব করা হয়েছে কোম্পানির পক্ষ থেকে )। আমরা দুজনেই এখন এম.এফ.আই এবং এন.বি.এফ.সি ঋণের জন্য বড় আর্থিক সমস্যায় রয়েছি কারণ তাদের ঋণ পুনরুদ্ধার এজেন্টরা এবং পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রের কর্মীরা প্রায় প্রতিদিনই আমাদের বাড়ির দরজায় কড়ানাড়ছে এবং আমরা ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে দিনরাত উভয় সময় অতিরিক্ত কাজ করে প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছি। যেটা আমি এখন মর্মে মর্মে বুঝতে পারছি যে আমরা আমাদের জীবনে আমরা দুজনেই একটি সবচেয়ে বড় ভুল করেছি, বন্ধন ব্যাঙ্ক এবং আশীর্বাদ মাইক্রোফাইন্যান্স লিমিটেডের ফিল্ড এজেন্টদের কথা বিশ্বাস করে যে ক্ষুদ্রঋণগুলি দরিদ্র মহিলাদের এবং তাদের পরিবারের ক্ষমতায়নে সব সময় সহায়তা করছে৷ বরং আজকে আমি জানি যে এই ক্ষুদ্রঋণগুলো দরিদ্র পরিবারের জন্য একটি বড় ধরনের অভিশাপ। আমাকে আমাদের রান্নাঘরের বাসন বিক্রি করতে হয়েছিল, ঋত্বিকও( রাজা মশাই ) তার ব্যবসার জন্য কেনা সমস্ত মেশিন বিক্রী করেছে এবং কখনও কখনও আমাকে কয়েক দিনের জন্য আমাদের খাবার এবং প্রায় পাঁচ / ছয় মাস ধরে আমাকে ডায়াবেটিস এর সুগার নিয়ন্ত্রণ রাখার ওষুধও অস্বীকার করতে হয়েছিল ( ওষুধ কেনার টাকা না থাকার জন্য), যদি না আমার বড় ভাসুর-, একজন এমডি ডাক্তারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতি মাসে ২৩,০০০/ টাকা মাসিক আর্থিক সহায়তা না পাওয়া যেত আমাদের সংসারের জন্য। উনি পেশায় প্যাথলজির ডাক্তার ছিলেন (বর্তমানে একজন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারী পেনশনপ্রাপক)। উনি তার ব্যাঙ্কের পাওয়ার সুদের অংশ প্রতি মাসেই পাঠিয়ে দেন আমাদের খাওয়ানোর জন্য , আমাদের জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য, যাতে আমরা এই ঋণগুলি পরিশোধ করতে পারি। ( বলতে এখন বাধা নেই আমি সকলের অজ্ঞাতে, আমার বড়ভাসুরের পেনশন থেকে পাঠানো আমাদের সংসারের জন্য টাকা থেকে প্রতি মাসে ৮০০০ থেকে ১০০০০ টাকা প্রকিত অর্থেই চুরি করে নিয়ে আমার করা ঋণ এর সুদ আমার মেজোদিদির সংসার আর আমার মায়ের দেখভাল করতে, ২০১৯ থেকে সংসারের সবাইকে কিছুটা ভালো রাখার থেকে বঞ্চিত করে।)
এই লেখকের কাছে কলকাতা, হাওড়া, কোচবিহার, নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ ( রেফারেন্স -১২), নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলায় এই ধরনের অনেক সত্যি কাহিনী (এই লেখকের দ্বারা অন্তত ৫৫ টি রেকর্ড করা কেস হিস্টোরি) রয়েছে যা এখানে সবগুলো লিপিবদ্ধ করা সম্ভবও নয়।
একসময় ক্ষুদ্রঋণ ছিল হয়তোবা মানুষকে দারিদ্র্য থেকে তুলে আনার জন্য, কিন্তু হাওড়ার মহিলারা,
( শিবপুর নির্বাচনী এলাকায় - ), পানিহাটি কেন্দ্রে, পূর্ব বর্ধমানের বেলডাঙ্গা গ্রামের মহিলারা বলছেন যে এটি এখন তাদের জন্য একটি বড় অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এমনকি পুরো গ্রামের অনেক পরিবার, যারা ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদে পড়ে রয়েছে।
এই শহর, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, ভারতের অবৈধ ক্ষুদ্রঋণ বা এনবিএফসি - এম এফ আই শিল্পের এজেন্ট/ক্ষেত্রকর্মীদের দ্বারা ছেয়ে গেছে। বাস্তবে এম. এফ .আই বা এন. এফ. বি .সি কোম্পানিগুলো দরিদ্র মহিলাদের ক্ষমতায়নের পরিবর্তে , ক্ষুদ্রঋণসংস্থাগুলি থেকে পাইয়ে দেওয়া ঋণ তাদের জীবনকে গভীরতম সমস্যায় ফেলছে, কারণ ঋণ গ্রাহক/ বা গ্রহীতারা তাদের নেওয়া ঋণ পরিশোধের জন্য অন্যান্য এম. এফ. আই ইনস্টিটিউট বা বেসরকারী / প্রাইভেট সুদখোর ঋণদাতাদের থেকে ঋণ নিচ্ছেন বা নিয়েছেন কিনা তা খুঁজে বের করার কোন ব্যবস্থাই নেই এই সংস্থাগুলোর। তাই ঋণগ্রহীতা/ গ্রাহক এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্যের কাছে যায় বা ব্যক্তিগত/বেসরকারি অবৈধ সুদখোরদের কাছ থেকে অতি উচ্চ সুদে ঋণের পর ঋণ নিতেই থাকে কিস্তির টাকা শোধ করতে । তারা সেটা করতেও বাধ্য। এর ফলে তারা আশীর্বাদ এম এফ আই বা বন্ধন ব্যাঙ্ক থেকে মাত্র ১ .২ লক্ষ টাকা ঋণের জন্য ১৫ থেকে ২০ লক্ষের গুরুতর ঋণের ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে। এই লেখক ব্যক্তিগতভাবে , কিছু লোককে রাতারাতি তাদের ঠিকানা পরিবর্তন করতে, কিংবা সংসার ছেড়ে পলাতক হতে, বিভিন্ন উপায়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে, এই ঋণ থেকে মুক্তিপেতে তাদের সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করতেও দেখেছেন। তিনি এটাও দেখেছেন ক্ষুদ্রঋণও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক অশান্তির ও মারামারি করবার মূল কারণ। ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলি বেশিরভাগ বিবাহিত মহিলাদের ঋণ দেয়। অধিকাংশ বিবাহিত নারীর ঋণ পরিশোধের জন্য তাদের স্বামীর সাথে ঝগড়া হয়। এটি পারিবারিক অশান্তি হিংসা এবং আঘাত, এমনকি মাথায়, শরীরে আঘাতের ও জন্ম দেয়।
তৃণমূল স্তরের অধ্যয়ন থেকে, এই লেখকরা এটা ব্যক্তিগতভাবেই অনুভব করেছেন, যে খুব কম লোকই , (অন্তত ভারতীয় এবং বাংলাদেশ এর প্রেক্ষাপটে) , ক্ষুদ্রঋণের এই উদ্যোগ থেকে প্রকৃতপক্ষে উপকৃত হয়েছেন বা তাদের দারিদ্রতা দুর হয়েছে । এটি বরং ভারতের দরিদ্র পরিবারগুলির উপর ভিত্তি করেই ঋণপ্রদানকারী ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলির লাভজকভাবে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা ,যাদের কয়েকশ হাজার কোটি টাকার নগদ অর্থের প্রয়োজন বাজার থেকে তুলবার। এতটাই লাভ জনক ব্যবসা এটা যা কিন্তু ভারতীয় আইনবিরুদ্ধ।
ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণের জন্য যা ঘটেছিল তার কয়েকটি উদাহরণ নীচে দেওয়া হল যা অনেকগুলো পরিবারগুলিকে ধ্বংস করেছে৷ এই ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলির বেশিরভাগই যথাযথ লাইসেন্সপ্রাপ্ত বা আর. বি. আই দ্বারা নিবন্ধিত নয় বা একটি রাজ্যে তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অধীনে বেশির ভাগেরই লিখিত আপডটেড অনুমতি নেই (সম্প্রতি ৫ কোটি জমা দেওয়ার পরে "উৎকর্ষ ক্ষুদ্রঋণ", "বন্ধন ব্যাঙ্ক" ছাড়া। "বন্ধন ব্যাংক" যদিও ২ লাখ টাকা দিয়ে তাদের ব্যবসা শুরু করেছিল ২০০৯ সালে ( এন বি এফ সি কোম্পানি হিসেবে) এবং তিনজন স্টাফ নিয়ে একটি ছোট
মাইক্রোফাইন্যান্স ইউনিট হিসাবে , এখন ২০২১ সালে সেটাই ভারতীয় বাজারে ৪৪,৭৮৪ কোটি টাকার বন্টন করা ঋণের মালিক এবং তাদের নিজস্ব ৪৩,২৪২ কোটি টাকার মূলধনের মালিক এবং এই বিশাল মুনাফা বন্ধন ব্যাঙ্কের মালিক, মহাশয়" ঘোষের " কাছে কোথা থেকে এসেছে যদি এম এফ আই/ এন বি এফ সি কোম্পানি গুলো সত্যিকারের অলাভজনক সংস্থা হয়ে থাকে এবং দরিদ্র জন সাধারণ মানুষের অর্থনৈিকভাবে উন্নয়নের জন্য কাজ করে থাকে ?? এবং এই ব্যবসার আসল উদ্দেশ্য প্রচুর লাভ করা সুদের মারফৎ গরীব লোকদের ঠকিয়ে? ) এবং এনজিও লাইসেন্স নিয়ে অর্থের সমস্ত অবৈধ লেনদেন বা কোম্পানি আইন ২০১৩ এর ধারা ৮ এর অধীনে বা ১৯৫৬ কোম্পানি আইনের অধীনে এন এফ বি সি লাইসেন্স যা কিন্তু ভারতে অর্থঋণ ব্যবসার অনুমতি দেয় না আর বি আই এর অনুমোদন ছাড়া।
গ্রস লোন পোর্টফোলিওর পরিপ্রেক্ষিতে, পশ্চিমবঙ্গ ভারতের শীর্ষ পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে একটি এবং উচ্চ পরিমাণ ঋণ সহ দশটি জেলার মধ্যে নয়টি—উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি, নদীয়া, বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া এবং কোচবিহার- পশ্চিমবঙ্গের যেখানে এই ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলি তাদের বেতনভোগী ফিল্ড লোক বা এজেন্ট ফিল্ড কর্মীদের মাধ্যমে কাজ করে, সামাজিক বা পারিবারিক কল্যাণের নামে যে কোনও এলাকার নিরক্ষর ,অর্ধশিক্ষিত ,দরিদ্র,বিবাহিত মহিলাদের লক্ষ্য করে তাদের ঋণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন। 25/40 জন মহিলার গোষ্ঠী ব্যবস্থা।
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, "তার রাজ্য-ভিত্তিক টিকিটের আকার এবং সামষ্টিক অর্থনীতি বিশ্লেষণে, সংস্থাটি বলেছে যে প্রতি অনন্য ঋণগ্রহীতার গড় বকেয়া পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম রাজ্যে সর্বোচ্চ, এবং এটি হয়েছে অন্তত গত তিন বছরের মধ্যে মামলা (২০১৯-২০২৩)”। এটি আরও রিপোর্ট করে যে “আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গ উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্রঋণ ঋণ পোর্টফোলিওর ৪০-৫০ শতাংশ একটি বা দুটি প্রতিষ্ঠানের। (sic, বন্ধন, আশীর্বাদ)” এবং এটি ক্ষুদ্রঋণ খাতে ২/ বা ৩টি প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়াতা নির্দেশ করে।
ক্ষুদ্রঋণ ঋণের অসামান্য লাভের পোর্টফোলিওর ক্ষেত্রে তামিলনাড়ু রাজ্য পশ্চিমবঙ্গকে স্থানচ্যুত করে বৃহত্তম রাজ্য হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে৷ ২০২১-২২ FY-এর MFIN মাইক্রোমিটার Q 4 অনুসারে, মাইক্রোফাইনান্স ইনস্টিটিউশন নেটওয়ার্ক (MFIN) দ্বারা প্রকাশিত একটি ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন, ৩১মার্চ, ২০২২পর্যন্ত তামিলনাড়ুর গ্রস লোন পোর্টফোলিও (GLP) ছিল ₹৩৬,৮০৬ কোটি। এর পরেই বিহার (₹৩৫,৯৪১ কোটি) এবং পশ্চিমবঙ্গ (₹৩৪,০১৬ কোটি)। FY২০২২-এর তৃতীয় প্রান্তিকের শেষে, পশ্চিমবঙ্গ ₹৩২,৮৮০ কোটি ঋণের সর্বোচ্চ বকেয়া লাভের পোর্টফোলিও নিয়ে চার্টের শীর্ষে রয়েছে, তারপরে তামিলনাড়ু (₹৩২,৩৫৯ কোটি)।
শীর্ষ ১০ টি রাজ্য (মোট ক্ষুদ্রঋণ বিশ্বের উপর ভিত্তি করে) শিল্পের মোট জিএলপির ৮২.৪শতাংশ গঠন করেছে। পশ্চিমবঙ্গের পরেই রয়েছে কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্র। প্রতিবেদন অনুসারে, ক্ষুদ্রঋণ পোর্টফোলিওর প্রায় ৬৪ শতাংশ ভারতের পূর্ব, উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলে কেন্দ্রীভূত।
মাইক্রোমিটার রিপোর্টের ৪১ তম সংখ্যায় বলা হয়েছে যে ক্ষুদ্রঋণ শিল্প ১১.৩ কোটি ঋণ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৫.৮ কোটি অনন্য ঋণগ্রহীতাকে সেবা দিয়েছে। ৩১ মার্চ, ২০২২ পর্যন্ত সামগ্রিক ক্ষুদ্রঋণ শিল্পের মোট GLP ছিল ₹২,৮৫,৪৪১ কোটি, যা ৩১ মার্চ, ২০২১ পর্যন্ত ₹২,৫৯,৩৭৭কোটি থেকে বছরে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি (YoY)।
ক্ষুদ্রঋণের ঋণদাতা-ভিত্তিক বিতরণ-:
ক্ষুদ্র ঋণের ঋণদাতা-ভিত্তিক বন্টন দেখায় যে ১২ টি ব্যাঙ্কের পোর্টফোলিওর ক্ষুদ্রঋণে পোর্টফোলিওর বৃহত্তম অংশ রয়েছে যার মোট ঋণ বকেয়া ₹১,১৪,০৫১ কোটি টাকা, বা মোট ক্ষুদ্রঋণ বিশ্বের ৪০ শতাংশ। NBFC-MFIs হল ₹১,০০,৪০৭কোটি টাকার বকেয়া ঋণের পরিমাণ সহ ক্ষুদ্রঋণের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রদানকারী, যা মোট শিল্প পোর্টফোলিওর ৩৫.২ শতাংশ। স্মল ফাইনান্স ব্যাঙ্কগুলির (SFBs) মোট ঋণের পরিমাণ ₹৪৮,৩১৪ কোটি বকেয়া আছে, যার হিসাব ১৬.৯ শতাংশ, তারপরে নন-ব্যাঙ্কিং ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলি ( এন. এফ. বি .সি) ৬.৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে৷ অন্যান্য MFIs বিশ্বের ১শতাংশের জন্য দায়ী।
প্রতিবেদনে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে বিশ্বের পোর্টফোলিওতে NBFC-MFI পোর্টফোলিওগুলির অনুপাত ৩১ মার্চ, ২০২২ পর্যন্ত ৪.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫.২ শতাংশে পৌঁছেছে, যদিও ব্যাঙ্কগুলি প্রধান অবদানকারী হিসাবে অব্যাহত রয়েছে। পোর্টফোলিওর ভৌগোলিক বন্টনও ভারতের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের অংশ ৩.৩ শতাংশ হ্রাসের সাথে পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে, যেখানে দক্ষিণ এবং উত্তর অঞ্চলের অংশ প্রতিটি ১.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
“মাইক্রোফাইনান্স ইন্ডাস্ট্রি FY২০২২ -এর চতুর্থ Q3-এ তৈরি মোমেন্টাম, লাভের ভিত্তিতে ভাল অগ্রগতি দেখিয়েছে। পোর্টফোলিওর মান 1Q FY ২০২২-এর শেষের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে, যখন কোভিড-19-এর দ্বিতীয় তরঙ্গ সারা দেশে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছিল,” শ্রী অলোক মিশ্র, সিইও এবং ডিরেক্টর, এম.এফ.আই.এন, তার এক বিবৃতিতে বলেছেন …"মাইক্রোফাইন্যান্সের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবিধানের ঘোষণা, সংগ্রহের দক্ষতা পুনরায় স্বাভাবিককরণের কাছাকাছি করার এবং সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ে এটাই বলা হয়েছে যে এন.বি.এফ.সি এর প্রবিধান একমাত্র আর.বি.আই-এর দ্বারা পরিচালিত কমিটির একক আওতার অধীনেই রয়েছে এবং থাকবে যা অত্যন্ত ইতিবাচক প্রবণতা, যা হয়ত ২০২২-২৩ সালে ভাল বৃদ্ধি দেখতে পাবে, যেহেতু ২০২২-২৩ সালে আরো অনেক অনেক বেশী ঋণ করবেন লোকজন, কভিদ ১৯ মহামারী থেকে ফিরে তাদের ব্যবসার বা চাষ আবাদের পুনর্বাসন করতে গিয়ে এবং কভিদ সময়ের করা ঋণ সুদসহ ফেরৎ দিতে "
সারা বিশ্বে পরিচালিত বেশ কয়েকটি পূর্ববর্তী গবেষণায় এটাই কিন্তু উপসংহারে এসেছে, যে যেখানে যেখানেই ক্ষুদ্রঋণ প্রয়োগ করা হয়েছে, দেখা গেছে যে ক্ষুদ্রঋণকোম্পানিগুলির দেওয়া ক্ষুদ্রঋণ দরিদ্রমানুষ এবং তাদের পরিবারকে দারিদ্র্যথেকে বেরকরে আনার ক্ষেত্রে যতটা আশা করা হয়েছিল ততটা কার্যকর কিন্ত একদমই ছিল না। বরং এটি পরিবারের অনেক সদস্যকে প্রচণ্ড আর্থিক অভিশাপে নিমজ্জিত করেছে এবং MFI/NBFC/ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়া পরিবারগুলিকে ধ্বংস করেছে। আমেরিকান ইকোনমিক জার্নাল অনুসারে: ফলিত অর্থনীতি; ভারত, বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা জনগণের কাছে তাদের ঝুঁকির তুলনায় অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণের উপর মনো-সামাজিক প্রভাবের উপর গবেষণায় কিন্তু যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়নি, বরং দারিদ্র্য থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসার জন্য একটি ছোট ব্যবসায়িক প্রকল্প চালানোর জন্য ঋণ পাওয়ার বিষয়টিকে অত্যধিক ভাবে জোর দেওয়া হয়েছিল, এম.আই.এফ ঋণের নেতিবাচক প্রভাবগুলি অপ্রত্যাশিত ছিল। তাই এই লেখকদ্বয়ের মতে ক্ষুদ্রঋণগ্রহণকারী বা ঋণগ্রহীতাদের চেয়ে ঋণদাতাদের (অর্থাৎ কোম্পানির বা ব্যাংকের মালিক) অনেক বেশি লাভবান হয় বলে মনে হয় ক্ষুদ্রঋণ বাজারে বণ্টন করে । অনেক লোক, যারা ক্ষুদ্রঋণের প্রভাবের মূল্যায়ন করেছেন তারা এটিকে শুধু (?)আর্থিক সাফল্যের উপর ভিত্তি করে করেছেন। এর সামাজিক, পারিবারিক এবং মানসিক প্রভাবের উপর ভিত্তি করে নয়। অর্থাৎ ঋণের সুদ ফেরত দেওয়ার জন্য ঋণ গ্রহণকরি ব্যক্তিদের অত্যধিক মানসিক ও কাজের চাপের মধ্যে থাকতে হয় । পুনরুদ্ধারের ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হয়না কারণ এটি মানসিক আঘাত এবং চাপকে দুর্বল করে। একটি স্থিতিশীল আয় সঙ্গে ঋণ পরিচিতি যেমন একটি বোঝা; এখন কল্পনা করুন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং অনিশ্চয়তার মতো চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা দুর্বল, অভিভূত ব্যক্তিদের ঋণ প্রবর্তন করা। এর প্রভাব তাই শুধুমাত্র ধ্বংসাত্মক হিসাবেই অনুমান করা যেতে পারে।
এই লেখক যদি ২০১০ এর অতীতের দিকে ফিরে তাকান তবে হায়দ্রাবাদ, অন্ধ্র প্রদেশের জেলাগুলিতে ৩০ থেকে ৪৫ জন মানুষ ক্ষুদ্র ঋণের কারণেই আত্মহত্যা করেছে, এম এফ আই দ্বারা ক্ষুদ্রঋণ ঋণ পরিশোধের বাধ্যতামূলক পদ্ধতির কারণে ।.এই আত্মহত্যাগুলি অন্ধ্র প্রদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৪৫ টির মধ্যে রিপোর্ট করা হয়েছে জানুয়ারী ২০১০ থেকে মে ২০১০ এর মধ্য দিনগুলোতে। এখানেও গল্পটি ছিল যে এম. এফ.আই কোম্পানিগুলি মূল পরিমাণের উপর অত্যধিক ভাবে সুদ চার্জ করেছিল এবং ঋণগ্রহীতারা এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিল যেখানে তারা বিদ্যমান ঋণ পরিশোধের জন্য অন্য মহাজনদের কাছ থেকে ধার নিতে বাধ্য হয়েছিল। ঋণগ্রহীতারা তাই ঋণের দুষ্টচক্রে ধরা পড়েছিল যা তারা শোধ করতে না পেরে তাদের জীবন শেষ করতে বাধ্য হয় (রেফ নং- ১১)।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে, ২০২১ সালে, মুর্শিদাবাদ জেলার বিন্দুপাড়া গ্রামের মিঃ সাধন সিনহা (যিনি মাসে ১৫০০০ থেকে ২০,০০০টাকা আয় করতেন) ৪০ বছর বয়সী (রেফ নং ৪,৬ ) ২০২১ সালে আরেকটি শিকারের উদাহরণ। মুর্শিদাবাদে পরিচালিত একটি এম.আই.এফ থেকে ১ লক্ষ টাকা ঋণ এবং ২০২১ সালের মে এবং জুন মাসের জন্য তার ৩৪০০ টাকার মাসিক কিস্তি পরিশোধ করতে অক্ষম ছিল এবং তিনি কয়েকটা দিনের জন্য ভিক্ষা করেছিলেন, কিন্তু ঋণ পুনরুদ্ধার এজেন্টরা (RA) ওনার কথা শোনেননি। রিকভারি এজেন্টরা বাড়ির বাইরে বসে অকথ্য ভাষায় ওনাদের গালিগালাজ করে এবং বকেয়া আদায় না করে ছাড়বে না বলে জানায়। "...আমার স্বামী এতটাই অপমানিত বোধ করেছিলেন যে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন...," কাঁদতে কাঁদতে বললেন ১৮ এবং ১৫ বছর বয়সী দুই ছেলের মা মামনি। ( রেফারেন্স নং- ১২)
২০২০ সালের জানুয়ারীতে ঋণ নেওয়ার সাধনের সিদ্ধান্ত এবং তার পরবর্তীকালে আত্মহত্যা কিন্তু এই সত্যটিকেই ভীষণভাবে তুলে ধরে, যে কীভাবে লক্ষ লক্ষ সাধারণ ভারতীয় কোভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গের দ্বারা ,এবং সরকার ঘোষিত লকডাউন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, এবং কভিদ ১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে অকালবিজয় ঘোষণা করার ক্ষেত্রেও, কেন্দ্রীয় সরকারের অদূরদর্শীতার জন্য মানুষের এই ক্ষতিগুলোকে আংশিকভাবে দায়ী করা হয়েছিল। বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের দেওয়া কভিড গার্ডকে নিচে নামিয়ে বা তুলে দেওয়ায়। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অবশ্য সমস্ত ব্যাঙ্ক এবং সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একটি ঋণ পুনঃস্থাপন বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়ে, সমস্ত ধরণের ঋণ গ্রহীতাদের ত্রাণ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, যদি
ই এম আই বকেয়া ফেব্রুয়ারি 2020 এর আগে ঠিক মত দেওয়া হয়ে থাকে বা চেষ্টা থাকে ঋণ গ্রাহক/ গ্রহীতার (অর্থাৎ প্রথম রাজ্যের বা কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক COVID-19-এর জন্য প্যান ইন্ডিয়া লক ডাউন ঘোষণা করা হয়েছে তার আগে ) কিন্তু, মিঃ সাধনের মৃত্যুর ঘটনা অনুসারে, প্রতিটি ঋণগ্রহীতা কিন্তু এই এম. এফ. আই কোম্পানিগুলির দ্বারা ত্রাণের এই সুযোগ পান নি , শুধুমাত্র তাদের জ্ঞান এবং তথ্যের জানার অভাবের কারণে, কারণ তারা বেশিরভাগই স্বল্প শিক্ষিত এবং দরিদ্র মানুষ। যদিও ঋণ পুনঃস্থাপন কেমন ভাবে হবে সেটা ব্যাঙ্ক বা মাইক্রোফাইন্যান্স কোম্পানি বা
এনবিএফসি-কোম্পানি গুলোর একটি বিশেষাধিকার, সমস্যা হল যে বেশিরভাগ লোক যাদের সুবিধার খুব প্রয়োজন তারা এই বিষয়ে আর.বি.আই নির্দেশাবলী সম্পর্কে জানেন না। সেইসব ঋণগ্রহীতাদের জন্য স্বস্তি ছিল, যারা আর.বি. আই স্কিমের অধীনে ঋণ পরিশোধের পুনর্গঠন বেছে নিয়েছিল। আর.বি.আই কিন্তু তার ২০২৩ এর অর্ডার দিয়ে এম.এফ.আই, এন.বি.এফ.সি, ব্যাঙ্ক এবং সমস্ত ঋণদাতা সংস্থাগুলিকে ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনাগুলি সংশোধন করতে এবং ন্যূনতম ই এম আই সহ ঋণ পরিশোধ করার স্থগিতাদেশের সময়কাল আরও ন্যূনতম দুই বছর বাড়িয়ে দেওয়ার ( ২০২৬ পর্যন্ত )অনুমতি দিয়েছে। আর. বি. আই বলেছে যে সমস্ত এম.এফ.আই, এন.বি.এফ.সি ব্যাঙ্কগুলি মূলঋণ পরিশোধের জন্য কোনও ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে একটি পুনর্গঠন প্রস্তাব পাওয়ার পরে, তাদের অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে ঋণগ্রহীতার আবেদনের বিষয়ে এবং ঋণগ্রহীতার পক্ষেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটি ঘটবে যখন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এবং ঋণগ্রহীতা তার উপার্জনের ন্যূনতম দৈনিক মজুরিতে তার পরিবারের ভরণপোষণের পর ঋণ পরিশোধের জন্য ঋণগ্রহীতার ক্ষমতা অনুযায়ী একটি রেজোলিউশন প্ল্যান তৈরি করতে সম্মত হবে। এর পরে, প্রস্তাবের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে রেজোলিউশন প্ল্যানটি চূড়ান্ত এবং বাস্তবায়িত করতে হবে।
নেশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর থেকে এটাও জানা যায় যে ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত দশ বছরের ক্ষুদ্র ঋণের ও অন্যান্য ঋণের জন্য ভারতবর্ষে শুধুমাত্র ১ লাখ ৯৯ হাজার ১৩২ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছিলেন।
কিছুটা ঋণ নেওয়া হয়তো বা ভালো হতে পারে, তবে সেটা ওপরের বিত্তবান , মধ্যবিত্ত লোকের জন্য। কিন্তু ঋণগ্রস্ত অবস্থা কখনোই বাঞ্ছনীয় নয় ! ঋণ নেবার গুণগত এবং পরিণামগত উভয় প্রভাবই রয়েছে। ঋণের গ্রহণের প্রবণতা, বিশেষ করে বেশি সুদের "ঋণ" একটি সামাজিক বড় উদ্বেগের বিষয়। ঋণের প্রভাব ডিগ্রী এবং মাত্রা উভয় ক্ষেত্রেই পরিবর্তিত হয়। ঋণে থাকা অবস্থা (ঋণী) ব্যক্তিগত এবং আচরণগত অর্থ উভয়কেই কভার করে এবং ইতিবাচক এবং নেতিবাচক ফলাফলের সাথে মিশ্রিত হয়। সামান্য ইতিবাচক প্রান্তে, ব্যাঙ্ক এম এফ আই এর থেকে ঋণের পরিশোধ করবার জন্য সহজে অর্থের অ্যাক্সেস আছে এমন লোকেদের সাময়িক আর্থিক সুস্থতার কিছু সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে, যদি সেই অর্থটি উত্পাদনশীল, লাভ ব্যবসার জন্য ব্যবহার করা হয়। অর্থঋণের নেতিবাচক ফলাফলগুলি হ'ল ঋণগ্রস্ত ভোক্তাদের ত্যাগ, বিশাল যন্ত্রণা এবং মানসিক হতাশা। অনেক সময়, এই ধরনের ঘটনার ফলে বাধ্যতামূলক মাইগ্রেশন হয়, পলাতক অবস্থায় পরিলক্ষিত হয়। পাড়া পড়শী বা আত্মীয়দের থেকে পাওয়া ঘৃণার চরম পরিণতি, আত্মহত্যার প্রবণতাকে প্রায়ই আত্মহত্যায় পরিণত করে এটা সবসমযই মনে রাখা প্রয়োজন ! এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা সম্ভাব্যভাবে একজন ব্যক্তির বর্তমান এবং ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলে। কখনও কখনও ঘৃণার ধাক্কা কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত নেমে আসে। তামিল কৃষকদের সাম্প্রতিক আন্দোলন, খরা ত্রাণ প্যাকেজ এবং ঋণ মওকুফের ঘোষণার জন্য প্রতিবাদ করা, ঋণ-দুর্দশা কী এবং এটি কী করতে পারে তার প্রমাণ!
সম্প্রতি আগরতলার কৈলাশহর পৌর পরিষদের ১৪ নং ওয়ার্ডের দুর্গাপুরে ১০০ জন মহিলা মিলিত হয়ে "বন্ধন ব্যাংক " "আরোহন " "সাথী" ইত্যাদি মাইক্রোফাইন্যান্স কোম্পানি গুলি কিস্তির টাকার দাবীতে যেভাবে তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে যে যে কোম্পানিগুলো সেই সব কোম্পানির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। মহিলাদের বক্তব্য হল তারা বিভিন্ন মাইক্রোফাইনান্স কোম্পানির কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন এবং ঋণ পরিশোধ ও করেছিলেন। হঠাৎ করেই মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে সারা ভারতবর্ষের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েন এবং সব ব্যবসা-বাণিজ্যই বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় মহিলারা বিভিন্ন মাইক্রোফাইন্যান্স থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি।এসব মহিলারা বলছেন তারা এখন ঠিকমতো দুই বেলা ভাত খেতেই পারছেন না, এই অবস্থায় ঋণ পরিশোধ করা তাদের দ্বারা সম্ভব নয়। তাই মাইক্রোফাইন্যান্স কোম্পানির কাছে তাদের আবেদন এখন থেকে কমকরে ছয় মাস পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের জন্য তাদের ধারে কাছে না আসার জন্য। পাশাপাশি তারা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করেছেন যাতে তাদের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া হয় সরকারের তরফ থেকে। তাদের উপর যদি এইভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয় তাহলে তারা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবেন বলে মহিলারা জানিয়েছেন।
ঋণযোগ্যতার ঊর্ধ্বসীমা যেমন বেধে দেওয়া খুব জরুরি, তেমনই যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেন— এবং, ঋণের সহায়তায় যারা নিজেদের সত্যিই অর্থনৈতিক অবস্থার তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি ঘটাতে পেরেছেন — তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করাও জরুরি। তার একটি উপায় হতে পারে। আর্থিক পুরস্কার। কেউ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করলে, এবং সেই একই সময়কালে তার আর্থিক অবস্থায় তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি ঘটলে সরকার তার জন্য কিছু বাড়তি অর্থের ব্যবস্থা করতেই পারে। অন্য দিকে, বিশেষত দরিদ্রতর পরিবারগুলির জন্য সাময়িক ভাবে সুদে ভর্তুকির ব্যবস্থাও করা সম্ভব। মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানি এবং এন বি এফ সি - এম এফ আই ক্ষুদ্র ঋণের সুদের হার ভীষণ রকমই চড়া। সরকারী আদেশ নামার দ্বারা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে এই সুদের হার কমানো যায় কি না ( নন প্রফিট ব্যাংকিং সিস্টেম হিসাবে ) ,সেটাও ভাবা প্রয়োজন। কেউ ঋণ পরিশোধে অপারগ হইলে তাকে সাময়িক ভাবে নিষ্কৃতি দেওয়া যায় কি না, সেটাও কিন্তু দেখতে হবে। সম্প্রতি ওপরে বর্ণিত মুর্শিদাবাদে ক্ষুদ্রঋণ পরিশোধে অপারগ যুবকের আত্মহত্যার যে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটিল, তার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতেই হবে। নইলে, আত্মহত্যার জন্য বা কোনো ঋণগ্রহীতার / গ্রাহকের অধিক পরিশ্রমের ফলে রোগ ও তার জন্য মৃত্যুর দায়ে এম এফ আই বা এন এফ বি সি - এম এফ আই কোম্পানির সি ই ও / অফিসারদের / রিকভার এজেন্টদের সারাজীবনের জন্য হাজতবাস করানো উচিত আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেবার জন্য বা ঋণ গ্রহীতা/ গ্রাহকের পরিবারের কোন সদস্যের মৃত্যুর জন্য এবং পরিবারটি কে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবার জন্য আইন অনুসারে। কারণ এটা আজকে সকলের কাছেই পরিষ্কার যে এই এম এফ আই বা এন বি এফ সি কোম্পানিগুলো কোনো রকম সামাজিক কাজ করতে নয় বরঞ্চ নিজেদের লাভজনক ব্যবসার জন্যি ঋণ দেয় গরীব মানুষগুলোকে। অন্য কোনো মহৎ উদ্দেশ্য এদের মধ্যে নেই এবং আদৌ কখনো ছিল কিনা সেটাই সন্দেহ।
উপসংহারে, আমাদের কাছে এবং দরিদ্রদের জন্য, চাকরী বিহীন ও চাকরী হারানো মানুষ, নিরক্ষর, আধা শিক্ষিত মানুষ, শহুরে, আধা শহুরে, গ্রামীণ গ্রামের মানুষ গুলোর কাছে এই বার্তা দিতে চাই যে মাইক্রোফিন্যান্স বা এন. এফ. বি .সি কোম্পানিগুলি মোটেও আপনাদের জন্য কোনো আশীর্বাদ তো নয়ই বরং এটি আপনাদের বা আপনার পরিবারের জন্য একটি বড় ধরনের অভিশাপ । এই এম এফ আই বা এন এফ বি সি কোম্পানি গুলো যাদের আর বি আই এর অনুমতি নেই মানি লেন্ডিং ব্যবসা করার জন্য সেগুলোকে অবিলম্বেই বন্ধ করা উচিত এবং এম এফ আই বা এন এফ বি সি কোম্পানির মালিক/তাদের ফিল্ড এজেন্টদের (মানি ল্যান্ডারদের) জাতীয়করণকৃত ব্যাঙ্কের বা আর বি আই-এর কাছে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার নিবন্ধিত সংস্থাগুলির জন্য নির্ধারিত আর বি আই ব্যাঙ্কের সুদের হারের বাইরে অতিরিক্ত উচ্চ সুদের হারে ঋণগ্রহীতাদের অবৈধ অর্থঋণ দেওয়ার জন্য দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তিও পেতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারত সরকারের উচিত ক্ষুদ্রঋণ এবং ক্ষুদ্রঋণের অভিশাপ সম্পর্কে জনগণকে আরো সংবেদনশীল করতে আগ্রহী করা, অন্যথায় দরিদ্র লোকেরা আরও দরিদ্র হবে এবং ঋণগ্রহীতা পরিবারগুলি ধ্বংস হয়ে যাবে।
