STORYMIRROR

Prof. Dr. Pranab kumar Bhattacharya

Abstract Others

4  

Prof. Dr. Pranab kumar Bhattacharya

Abstract Others

অবৈধ প্রেম এর চ্যাপ্টার ৫ এবং চ্যাপ্টার ৬

অবৈধ প্রেম এর চ্যাপ্টার ৫ এবং চ্যাপ্টার ৬

17 mins
395


লেখক-:


ডাক্তার (প্রফেসর) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য 

এম.ডি (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) ;এফ আই সি প্যাথলজি, ডব্লু.বি.এম.ইএস (অবসরপ্রাপ্ত)


প্রাক্তন অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান, প্যাথলজি বিভাগ, কলকাতা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন, কলকাতা -700073, পশ্চিমবঙ্গ, এবং জে.এম. এন মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, জেএমএন এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন, চাকদহ, জেলা- রানাঘাট, পশ্চিমবঙ্গ এবং বর্তমানে অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান, প্যাথলজি, জে আই এস মেডিক্যাল স্কুল এবং রিসার্চ, সাঁতরাগাছি, হাওড়া ,পশ্চিমবঙ্গ

ই মেইল করুন -: profpkb@yahoo.co.in (বেশিরভাগ ব্যবহৃত)

prof.pranab@Gmail.com ( কম ব্যবহৃত)


বাসস্থান এর ঠিকানা-:

মহামায়া অ্যাপার্টমেন্ট, ব্লক-বি, ফ্ল্যাট -৩, ২য় তলা, মহামায়াতলা, ৫৪ এন এস সি বোস রোড, পোস্ট অফিস- গড়িয়া, কলকাতা ৭০০০৮৪, পশ্চিমবঙ্গ 


কপি রাইট -: 

Belongs primarily to Prof. Dr. Pranab Kumar Bhattacharya under strict Copyright acts and laws of Intellectual Property Rights of World Intellectual Property Rights organisations ( WIPO) , RDF copyright rights acts and laws and PIP copyright acts of USA 2012 where Prof Dr Pranab Kumar Bhattacharya is a registered member . Please Don't try ever to infringe the copyright of the manuscript to protect yourself from criminal offences suit file in court of law in any places of india and by civil law for compensation in few millions US dollar or in pounds or in Euro in any court of laws in India 



চ্যাপ্টার ৫ এর পূর্ববর্তী অংশের পরের থেকে অধ্যায় ৬

ক্রমশ.....

 অধ্যায় ৫ এর পরবর্তী অংশ....

 কিছুদিন পরেপরেই রোমানা কোলকাতার তাদের হেদুয়ার বাড়ীথেকে অলকদের ছোট জাগুলিয়ার বাড়িতে এসেছিলো। মাঝেমধ্যেই রোমানাতো অলকদের বাড়িতে আসতো । আর অলকের হবুস্ত্রী হিসাবে অলকের বাড়ির সকলেই রোমানাকে মেনেও নিয়েছিলেন। বাড়ীর সকলেই জানতো অলক আর রোমানার বিয়ে হবে। তাই রোমানার এই বাড়িতে যাওয়া আসা নিয়ে কখনও বাড়ির কেউ কিছুই মনে করতো না। পাড়ার লোকজনও তো জেনেই গেছিলো যে অলকের বিয়ে রোমানার সাথেই হবে। কিন্তু অলকের মনেরভেতরে সত্যিই অনেক দ্বিধা আর দ্বন্দ্ব ছিলো রোমানাকে তার জীবনসঙ্গী হিসাবে নিয়ে পথ চলতে। সে মনস্থির করতে পারেনি তখনো। এরপরে সেদিনের রেবার সাথে, তাদের গোপন ডেরাতে দুপুরের সেই ঘটনার পরে অলকও তো নিজের প্রতি নিজের আস্থাটাই হারিয়ে ফেলেছিল। সেও নিজেকে ইম্পো ভেবেছিল। একজন পুরুষমানুষ হিসেবে তার আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা সে হারিয়ে ফেলেছিল।

 একজন পুরুষমানুষ যখন হঠাৎ করেই আবিষ্কার করে, যে সে কোনো পূর্ন বয়স্কা নারীরসাথে সহবাসে অক্ষম তখন তার মনের ভেতরের অবস্থাটা যে কি হয় সেটা একমাত্র সেই মানুষটাই বোঝে। ভেতরেভেতরে যে কী তোলপাড় চলে সেটা একমাত্র সেই জানে। কাউকেই কিন্ত বলা যায়না সেই কথা। এমন কি নিজের মা ,বাবা, ভাই, বোন বন্ধু বান্ধবী বা প্রেমিকাকে ও নয়। অলকও তেমনিই বুঝতে পারছিল তার বাস্তব অবস্থাটা। অথচ সেতো রেবার সৌন্দর্যের প্রতি সত্যিই দৈহিক আকর্ষণ অনুভব করতো। তবে রেবা এতোভাবে সেদিন চেষ্টা করা সত্বেও তার দ্বারা কিছুই হলো না কেন?? কী ভাবলো শেষে তাকে রেবা? নপুংসক। একদিকে যেমন সে সত্যিই রোমানাকে ভালোবাসতো ,অন্য দিকে এক। বিবাহিতা, অথচ স্বামী পরিত্যাক্ত, দুই মেয়ের মা রেবার প্রতিও তার যেমন ভালোবাসা ছিলো তেমনিই শারিরীক আকর্ষনও তো ছিলো। অলক তো এটা জানতোই যে রেবা অল্পশিক্ষিত , বাংলাদেশের থেকে বর্ডার পেরিয়ে রেফুঁজি হয়ে আসা এক মহিলা, স্কুলের গণ্ডিটাও সে পার হতে পারেনি তাদের অভাব আর দারিদ্রতার জন্য। এদেশে এসে। ছোটজাগুলিয়াতে আসার বছর দুয়েকের মধ্যেই তার বিয়ে হয়ে যায় শুধু মাত্র তার রূপ আর সৌন্দর্য দেখে, এই গ্রামেরই উচচবিত্ত ও জোতদার এক চাষির ঘরে। তার স্বামী দেবতাটি, বিভাস কিন্ত গ্র্যাজুয়েট পাস বারাসাত কলেজ থেকে। অলক এটাও জানতো যে রেবার স্বামী তাকে আর ঘরে তোলে না। রেবা তার শ্বশুড়বাড়িতে অত্যাচারিত হত প্রায় প্রতিদিনই তার প্রথম মেয়ের জন্ম দেবার পর থেকেই। দ্বিতীয়বারের সন্তান যখন তার মেয়েই হলো, তখন রেবার ওপরে তার শ্বশুড়বাড়ির লোকেদের অত্যাচার আরও বেড়ে গেছিলো, যেটা রেবা আর সহ্যকরতে নাপেরে ওর স্বামী আর শ্বশুড়বাড়ির লোকেদের নামে বামনগাছি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলো। আর তারপরই রেবাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো বাড়িথেকে, বেরকরে দিয়েছিল ওর স্বামী দেওর, শ্বাশুড়ি ,ননদ এরা সকলে মিলে। রেবা তার কোলের দুমাসের মেয়ে আর তিন বছরের বড় মেয়ের হাত ধরে বেড়িয়ে এসেছিল শ্বশুড়বাড়ি ছেড়ে বাপের বেড়া আর টালির ছাদের কুটিরে। ওদের ডিভোর্স এখনো হয় নি। রেবাই দেয়নি ডিভোর্সটা। রেবা লোকের বাড়িতে রান্নার কাজকরে নিজের দুই মেয়ের আর তার বৃদ্ধ বাবার পেটের ভাত এখন জোগাড় করে। একটা বেড়ার ঘরে থাকে। কিন্তু রেবার যে সৌন্দর্য? সেটাকেতো কিছুতেই আর অলক অস্বীকার করতে পারেনা। যত বড়ই নকশাল আর বিপ্লবী হোক না কেনো সে। যতোই বড় নকশাল পার্টির নেতাই হোক না কেনো সে। রেবাও নিশ্চয় তাকে ভালোবাসে। না হলে রেবাই বা সেদিন দুপুরে তার সাথে শারীরিক মিলনের জন্য, সব জেনশুনেই ,নিজের থেকে, তাদের ডেরাতে তার সাইকেলের পিছনের সিটে বসে যাবে কেনো? কেনই বা সে নিজের হাতেই বা অলককে নগ্ন করাবে? কেনই বা সে নিজেকে নিজেই নগ্ন করে অলকের কাছে এসে দাঁড়াবে? কেনোই বা সে নিজেকে নিবেদন করবে অলকের কাছে। সঙ্গমের জন্য আহ্বান জানবে তাকে। রোমানা আর রেবা দুজনেই যে আবার অলককে ভালোবাসে। রেবা যে সত্যিই ভালোবাসে অলককে সেটা অলকের কাছে সতসিদ্ধ সত্যি ।কিন্তু রোমানাও যে অলকের সাথে ঘর সংসার করতে চায় গুছিয়ে। রোমানা বাচ্চা চায়। তার সন্তানের মা হতে চায়। কাকে ফেরাবে সে? রোমানা চায় অলক তার নকশাল পার্টি, তার বিপ্লব ,তার রাজনৈতিক আদর্শ সব ছেড়ে দিয়ে তাকে বিয়ে করে, ভালো একটা চাকরীবাকরী করে চুটিয়ে তার সাথেই সংসার করুক। অলক তাই সত্যিই কনফিউজড। রেবাকে সে কি বিয়ে করতে পারবে? পারলেও কি রেবার সাথে দাম্পত্য জীবনটা কাটাতে পারবে সে? রেবার চোখে সে যেমন ভালবাসা দেখেছিল তেমনি আবার সেদিন দুপুরে রেবার চোখেই তার পুরুষত্বহীনতার জন্য ঘৃণাও তো দেখেছে সে। রেবা তাকে আর তার সাথে দেখা করতে না করেছে। সেটা অবশ্য অলকের কাছে বড় ব্যপার নয়। রেবার বাবা তাদের পার্টির সদস্য। রেবাও সেটা জানে। রেবা কিন্তু তার পার্টির, তার বিপ্লব, তার রাজনৈতিক জীবনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে না কখনোই সেটা অলক নিশ্চিত। রেবার চাহিদা কিছুই নেই। রোমানার অলকের কাছে অনেক চাহিদা। 

রোমানাকেও কিন্তু অলক একবারেই ঠকাতে চায়নি । আবার সে বলতেও পারছিলোনা রোমানাকে তার সদ্য আবিষ্কৃত, কোনো নারীর সাথে শারিরীক মিলনের অক্ষমতার সেই কথাটা। তার ইম্পটেন্সির কথা। তাই একদিন সে মনস্থির করেছিল যে রোমানাকে এবারে পুরো ব্যাপারটাই সে খুলেই বলবে। রোমানা কী এর পরেও তাকে বিয়ে করতে চাইবে? কোনো উচ্চ শিক্ষিত মহিলা কি এই সব জেনেশুনে বিয়ে করে? রোমানাকে সে এটাও খুলেই বলবে যে রেবারপ্রতি যে সে শারিরীক আকর্ষণ অনুভব করে সেই কথাও । সেদিন দুপুরের ঘটনার কথা। তার শারীরিক ভাবে মিলনের অক্ষমতার কথা। রেবার সাথে যৌণসঙ্গমে অপারাগ হওয়ার কথা, রেবার তাকে উদ্দিপিত করে তোলবার চেষ্টার কথা। আর রোমানার প্রতি তার ভালোবাসা থাকলেও তার প্রতি যে সে কোনো যৌণ আকর্ষণ অনুভব করেনি এই এতো বছরে একদিনের জন্য সেই কথাও।

 তাই রোমানা সেদিন যখন অলকদের বাড়িতে এসেছিলো অলক বাড়ীতেই নিজের ঘরে ছিলো। রোমানা ফোনকরেই আসে এই বাড়িতে । রোমানা বাড়ির সকলের সাথে দেখা করেই অলকের ঘরে এসেছিল। অলকও জানতো রোমানা এসেছে। সে মনেমনে তাই নিজেকে তৈরী করছিলো রোমানার মুখোমুখি হবার জন্য। অনেক ইতঃস্তত করেই আর অনেকটাই সময় নিয়ে রোমানাকে সে সবই খুলে বলেছিল। রোমানাও চুপ করেই শুনেছিল পুরোটাই। রোমানার চোখমুখ ক্রমশই পালটে যাচ্ছিলো। ওর চোখেও ঘৃনাটা ফুটে উঠছিলো সেটা অলক দেখতে পাচ্ছিলো। বিশেষ করে অলক যখন তার শরীরের অক্ষমতার বিবরণটা দিচ্ছিল। রোমানা বিশ্বাস করতেও পারছিল না যে অলক পূরুষ হলেও নপুংশক একটা মানুষ। তাকে নিয়ে রোমানা কি ভাবে ঘর বাঁধবে? কিভাবে সংসার করবে? তাদের সন্তানসন্ততিই বা হবে কি ভাবে? আর রোমানাতো কচি শিশুদের, বাচ্চাদের যে খুব ভালবাসে। রোমানার মা হবারও খুবই ইচ্ছে। রোমানার দিদির ছেলেটাকে পেলে সারাদিন বুকে জড়িয়ে ধরে রাখে। তাকে যতক্ষন পারে ধরে কচলায়। সেই জন্যিতো সে দিদির বাড়ি যায়। 

 সেই রোমানা অলককে বিয়ে করলে যে মা আর হয়ে উঠতে পারবে না তার জীবনে। তখনও টেষ্ট টিউব বেবি আসেনি । অলক যা বলেছে সেটার অর্থতো তাই হয়। মাতৃত্বের স্বাদ সে আর জীবনে পাবেনা অলককে বিয়ে করলে। তার চেয়েও বড় কথা সেও যে রক্ত মাংস দিয়ে গড়া এক পূর্ন নারী। একটা নারী। তারও তো একটা যৌণজীবন রয়েছে। রোমানাতো নিজেই এই কারনের জন্য বেশ কয়েকটি ডিভোর্স করিয়েছে আদালতে। স্বামী নপুংসক বা স্ত্রীর সাথে মিলিত হতে অক্ষম এই কারণে তার ওকালতি জীবনে বেশ কয়েকটা ডিভোর্সের মামলায় সে জয়ীও হয়েছে। আর আজকে কিনা অলক নিজের মুখেই এইসব কি যাতা বলছে? এতোদিন বলেনি কেনো সে তাকে?প্রায় ১২ বছরের সম্পর্ক তো তাদের। লুকিয়ে রেখেছিল তার থেকে? এটাও ঠিক এই বারোবছরের মধ্যে অলক একদিনের জন্যও কিন্ত তার সাথে এতটুক ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টাও করেনি। সেটা কি এই কারণে? নাকি অলক মিথ্যে কথা বলছে রোমানাকে ছেড়ে রেবাকে পেতে? যাতে রেবা তার বিপ্লবী কাজকর্মে কোনো রকম বাধার সৃষ্টি করবে না!

 রোমানা তাই প্রথমে কিন্তু এতোটুকুও বিশ্বাস করতেই চায় নি যে অলোক সত্যি সত্যিই শারীরিক ভাবে এতটাই অক্ষম আর ও সত্যিসত্যিই নাকি রেবাকে ভালোবাসে । সে অলককে জিজ্ঞেস করেছিল যে অলোক সত্যিই কি রেবা কে ভালোবাসে বা রেবার প্রতি অলকের কি এখনো শারিরীক চাহিদা আছে? অলক কেনো আগে কখনো কোনো ডাক্তারকে দেখায় নি? এমনটাতো হতে পারেনা যে ৩০ বছরের একজন পুরুষ তার শরীরে এতোবড় একটা ত্রুটি এই প্রথম সে জানতে পারলো? অন্য যে কোনো ছেলেরা তো ১৫-১৬ বছর বয়সেই জেনে যায় এই সব ব্যপারে

। অলক কি ভাবেই বা রোমানাকে বলতে পারতো যে তার এই প্রবলেমটা হিন্দুহোস্টেলের সময়কাল থেকেই তার গাঁজা, চরস, মদ ,আর বিড়ির খাবার ফল।

 রোমানা এটাও ঠিক বুঝ উঠতে পারছিলো না যে এটা জানবার পরও অলক একজন ডাক্তারকে দেখাচ্ছে না কেনো ? তার এইধরণের শারীরিক প্রবলেম নিয়ে সেই বা নিজের মানষিক ভারসাম্য বজায় রেখেছে কি করে? অলক বোধ হয় তাই তাকে বলেছিলো সে রেবাকেই নাকি জীবন সঙ্গিনী হিসাবে বেছে নিতে চায়। তবে রেবাও এখন বোধকরি অলককে ঘৃণার চোখে দেখে। সেটাই তো স্বাভাবিক ছিলো রেবার জন্য। অন্তত সেইদিন অলকেরতো সেটাই মনে হয়েছিলো। রোমানা এই সব শুনে আদৌ বিশ্বাস করতে চাইছিলো না। সেও নিজেকে ভীষন ভাবে অপমানিত বোধ করেছিলো এবং অলকের গালে চর মেরেছিল এবং বলেছিলো অলক অনেকে আগেই তাকে বলতে পারতো তার এই প্রবলেমটা। সেও এখন আলোককে ঘৃনা করে এবং অলোক যেনো তার সাথে আর না দেখা করে। সেও আর অলকের সাথে যোগাযোগ রাখতে চায় না।

এইভাবে অলক রোমানা আর রেবা দুজনের থেকেই অনেক অনেক দূরে সরে গেছিলো।

এর মধ্যেই নিশিকান্ত কোলকাতা থেকে একদিন অলকদের গোপন ডেরাতে এসেছিল এবং তাকে বলেছিলো যে তাদের নকশাল পার্টি একটা বড় ধরনের অ্যাটাক প্ল্যান করেছে বর্তমান ফ্রন্ট সরকারের পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে এবং এবং সেটা কিন্তু একরকম সশস্ত্র অ্যাটাকই হবে রাষ্ট্র এবং পুলিসের বিরুদ্ধে এবং তাদের পার্টি বারাসাত এলাকায় তাকেই সেই মহান দায়িত্বভার দিতে চাইছেন 

অলক কিন্তু প্রথমেই রাষ্ট্রীয় পুলিসের বিরুদ্ধে এতো বড় একটা সশস্ত্র অ্যাটাক একদমই করতে চাইছিল না। অলক জানত যে এতে আরও অনেক রক্তপাত হবে। কিছু নিরঅপরাধ পুলিশকর্মী মারা যাবেন তাদের অতর্কিত অ্যাকশন। তাদের পরিবার অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত হবে। কেউ বা তার ছেলেকে, কেউ বা তার স্বামীকে ,কেউ বা তাদের বাবাকে,কেউ বা তার দাদা আর ভাইকে হারাবে চির দিনের জন্যই। আর সাধারণ মানুষের মনে নকশাল পার্টি তার আস্থা হারাবে। অলক সাধারণ মানুষের , সাধারণ পুলিশের এই রক্ত ঝরিয়ে বিপ্লব অনার পক্ষে কখনোই ছিলো না। তাই সে নিশিকান্তকে বলেছিলো বিপ্লবের জন্য তাদের এই পথটা ভুল পথ । সে চায় না এই রক্ত ঝরানো বিপ্লবের পথে হাঁটতে।

এতে নিশিকান্ত কিন্তু অলকের ওপরে রুষ্ট হয়েছিল। সে ভেবেছিল যে অলকও তাদের পার্টির কাজকর্ম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে সাংসারিক হতে চাইছে। সে পার্টির নেতৃত্বের ওপরে বিশ্বাস করতে আর পারছে না।নিশিকান্ততো জানতোই রোমানার কথা অলকের জীবনে গত এক যুগ ধরে। এবং রোমানা একদমই চায়না যে অলক নিজেকে এই বিশেষ পার্টির সাথে জড়িয়ে নিজের জীবন জড়ঝরর করে তুলুক বরঞ্চ সে চায় যে অলক তাকেই বিয়ে করে সে একটা সুন্দর ভাবে সংসার শুরু করুক সেটাই সে অলককে বারে বারেই বুঝিয়ে এসেছিল এতো বছর ধরে। সুতরাং রোমানার হাত থেকে অলককে বাঁচাতে হবেই পার্টির স্বার্থে তখন সে অলককে বলেছিলো যে " পার্টির ওপরের নেতৃত্বের নির্দেশ তাকে মেনে চলতে হবেই না হলে পার্টি নেতৃত্ব কিন্তু তাকে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে চিনহিত করবে এবং বিশ্বাসঘাতকদের পার্টি একটাই শাস্তি দেয় সেটা অলক নিশ্চয় এতো বছর ধরে পার্টি করে জানে। 

অলক এতে মানষিক দোটানার মধ্যে পড়ে। সে পার্টির কাছে বিশ্বাসঘাতক হতে চায় না , সে নিশিকান্ত কে ঠকাতে ও চায় না আবার সশস্ত্র বিপ্লব করে সাধারণ মানুষ, সাধারন পুলিশ কর্মী খুন করে বিপ্লব ও আনতে চায় না

নিশিকান্তর থেকে অলক কয়েকদিন সময় চেয়ে নিয়েছিল। নিশিকান্ত রেবার সাথে অলকের সেই দুপুরের ঘটনার কথাটা জানত না। জানত না রোমানার সাথে এরপরের ঘটনা গুলো।

অলক নিশিকান্ত এর কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নিয়েছিল নিজের মনস্থির করতে। নিশিকান্তও সময় দিয়েছিল। কিন্তু দুদিনের মধ্যে তাকে জানতে বলেছিলো। এর পরেই ওরা বারাসাত সুপেরিতেন্দেন্ট অফ পুলিশ এর অফিসে অ্যাটাক করবে রাতে

অলক এই ৪৮ ঘন্টা নিজের সাথে যুদ্ধ করেছিল একদিকে তার পুরুস্বতহীনতার গ্লানি বোধ । রেবা ও রোমানার চোখের ঘৃনা, অন্যদিকে তার আদর্শ তার পার্টি। একদিকে তার বেঁচে থাকা, সংসার করে সমাজের মেইন স্ট্রিম এ ফিরে আসা অন্য দিকে কিছু মানুষের মৃত্য আর হয়তো বা নিজের মৃত্য

আর এই পার্টির বৈপ্লবিক পরিবর্তনের যজ্ঞে নিজেকে না জড়ালে কোনো গভীর রাতে পার্টির কারুর হাতে খুন হওয়া। তাই অলক ঠিক করেছিল যে সে নেতৃত্ব দেবার দায়িত্ব টা গ্রহণ করবে। আর তার পরিণাম স্বরূপ সেদিন থানার পুলিশ অফিসারএর হাতে ,পায়ে গুলি খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো অলক। অলকের বাড়ির লোকজন কিন্তু তাকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করতে চেয়েছিল। কিন্তু অলক নিজেই যায় নি। বাড়ির কারুর ওপরে বোঝা হতে চায়নি সে। এই প্রাইমারী হেলথ সেন্টারের মেল ওয়ার্ডের বিছানায় ট্রেকশন নিয়ে তিন মাস শুয়ে বসে ছিলো সে। আর সেই তিনমাসে আমার সাথে অলকের ঘনিষ্ঠতাও অনেকটাই বেড়েছিল। নকশাল পার্টির রাজনীতি, বাম রাজনীতি, আন্দোলন নিয়ে যেমন ওর সাথে আলোচনা হত আমাদের তেমনিই অলক তার জীবনের কথা বলতে দ্বিধা করেনি আমাকে। যদিও আমি অলকের থেকে ছয় বছরের ছোট ছিলাম। আমি কিন্তু অলককে নাম ধরেই ডাকতাম। অলকও আমাকে ডাক্তার বলেই সম্বোধন করত। অলক ক্র্যাচে ভর করে হাটতে শুরু করলে আমি x ray প্লেটে ক্যালাস ভালো রকম তৈরি হয়েছে দেখেই আমি ওকে ডিসচার্জ করে দিয়েছিলাম। ওকে ওর দাদা এসে বাড়ি নিয়ে গেছিলো। তার পরেই অলকের পাঠানো নিমন্ত্রণে আমি ওদের বাড়ি যাই। ওদের বাড়ীর অনেকের সাথেই আমার আগে পরিচয় হয়ে গেছিলো। অলকের কাছ থেকেই মার্ক্সীয় ইকোনমিকস, দাস ক্যাপিটাল সম্বন্ধে খুবই সামান্য ধারণা হয়েছিল আমার । অলক খুবই সহজ করে বুঝিয়ে দিত আমাকে দাস ক্যাপিটাল বইটার অনেক কিছুই। 

প্রশ্ন হলো রেবাকি অলকের সাথে দেখা করতে গেছিলো যখন অলক ভর্তি ছিলো হাসপতালে? আমি সেটা জিজ্ঞেসও করেছিলাম অলককে। অলক কিন্ত জানতো যে রেবা আমার আর ডাক্তার লাহার কোয়ার্টারে সকালে কাজ করতো, রান্নাবান্না থেকে সব কাজই। আমি একদিন অলককে জিজ্ঞেস করতে অলক চুপ করে ছিলো বেশ কিছুক্ষন। তারপরে বলেছিলো যে রেবার বাবা তাকে কয়েকদিন দেখতে এলেও রেবা কিন্ত নিজে একদিনও দেখতে আসেনি অলককে। অলক অবশ্যি আশা করেছিল যে রেবা তাকে দেখতে আসবে। কিন্তু আসেনি। রেবা জানতো যে অলক ভর্তি ছিলো মেল ওয়ার্ডে এই প্রাইমারী হেলথ সেন্টারে। রোমানা অবশ্য সেই তিন মাসে দিন চারেক এসেছিলো অলককে দেখতে। রোমানা অলক দের বাড়িতেও গেছিলো আগে যেমন যেত


           

              অধ্যায় ছয়

   পশ্চিমবঙ্গে নকশাল আন্দোলনের একটি রূপরেখা


ভারতবর্ষের নকশাল আন্দোলন একটি বাম কমিউনিস্ট আন্দোলনেরই নাম। বিংশ শতাব্দীর সপ্তম দশকে ১৯৭১ সাল থেকে উত্তর পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির নকশালবাড়ি নামে একটি গ্রাম থেকে এই আন্দোলন শুরুহয়ে এটি ধীরে ধীরে উড়িষ্যা, বিহার ,অ্যাসাম, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় এবং অন্ধ্র প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। ক্রমে এটি একটি মানুষ খুন খারাপি( ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সালের হিসাব মত প্রায় ৯০০০ জন সাধারণ মানুষ খুন হয়েছিলো এদের হাতে বিপ্লবের নামে) এবং রাষ্ট্রের আগাইনস্স্টে সন্ত্রাসবাদী এক আন্দোলনের রূপ নিয়েছিল নকশাল আন্দোলন। নকশাল বা নকশালবাদী বলতে উগ্র লেফটিস্ট বা উগ্র বামপন্থী দলগুলোকেই নির্দেশ করা হত তখন । এসব দলের জন্ম হয়েছিল চিন-সোভিয়েত ভাঙনের সময়। মতাদর্শগত ভাবে নকশাল পার্টির প্রায় সব লোকজনেরা চীনের মাও সে তুং-এর সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবের পদাঙ্ক অনুসরণকারী ছিলেন। নকশাল আন্দোলনটা কিন্তু সর্বপ্রথম শুরুই হয়েছিল এই পশ্চিমবঙ্গেই ১৯৭১-৭২ সালে । পূর্ব পাকিস্তানের সাথে ভারতবর্ষের মুক্তিযুদ্ধের ফলে কয়েক লাখ লোক তখন পূর্বপাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু হয়ে পশ্চিমবঙ্গের সীমানাপেরিয়ে ভেতরেঢুকে পড়েছিল রিফুঁজি হিসাবে। ওদিকে মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতবর্ষের সহায়তায় বাংলাদেশ তৈরিহয় শেখ মুজিবর রহমানের হাত ধরে। এই বাংলাদেশের যুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে আসা রীফুজিদের থাকার জন্য জমি এবং জীবন ধারণের জীবিকা দিতে এখনকার জমিরমালিকদের ওপরে চাপ সৃষ্টির মাধ্যমেই নকশালপার্টির আন্দোলন এবং বামফ্রন্ট সরকারের আন্দোলন শুরু হয়েছিলো হত দরিদ্রদের মূলধন করে বিশেষ করে অনুন্নত জায়গাগুলোতে। যার মধ্যে ছোট জাগুলিয়াও ছিলো। ধীরেধীরে এই আন্দোলন ভারতের অনুন্নত অঞ্চলসমূহে যেমন: উড়িষ্যা, বিহার, মধ্য প্রদেশে,ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, ত্রিপুরা কেরল ইত্যাদি রাজ্যের একবারে প্রান্তিক এলাকাগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ে। এই পার্টির সদস্যর। মার্ক্সবাদ এবং লেনিনবাদে বিশ্বাসী ছিলো এবং ২০০৪ সালে ।ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) নামক দল প্রতিষ্ঠা করে এরা নিজেদের কার্যকলাপ প্রসারিত করেছে। ভারতের প্রায় ৪০% অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে “রেড করিডোর” অঞ্চলে প্রায় ৯২০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তারা তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতের সরকারি গোয়েন্দাসংস্থা “রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং” (“র”) এর হিসেব অনুযায়ী প্রায় ২০,০০০ মাওবাদী সক্রিয় ভাবে এখনও এই কার্যক্রমে যুক্ত আছে। তাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবে শঙ্কিত হয়ে ভারতের আগের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ মাওবাদীদেরকে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিরুদ্ধে সর্বাপেক্ষা বৃহত্তর হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

সিপিআই (মাওবাদী) এবং আরও কিছু নকশালপন্থী দলকে ভারতসরকার এখনও একটি সন্ত্রাসবাদী পার্টি বা সংগঠন হিসেবেই বিবেচনা করে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত সরকার নকশাল নির্মূলে তাদের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলো। এতে উগ্রবামপন্থী আক্রান্ত অঞ্চল ছত্তিশগড়, উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খন্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে, তাদের পলায়নের সব রাস্তা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। নকশাল শব্দটি এসেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি ছোটগ্রাম ’’’নকশালবাড়ি’’’ থেকে। বিগত শতাব্দির ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) বা সি পি এম যে কোনোদিনই আর বিপ্লবেরপথে এগোবেনা এটা পার্টির অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন সময় আলোচিত ও বিতর্কিত হয়ে আসছিল। দলের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় নিয়ন্ত্রক নেতৃত্বের পরিস্কার বার্তা ছিল, "এই সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেও মানুষকে উপকার দেয়া সম্ভব যদি পার্টি সরকারে থাকে"। এর বিরুদ্ধ চিন্তাধারাও তখন থেকেই সক্রিয় ছিল; যারা মনে করতো বিপ্লবের মাধ্যমেই সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন না করলে, মানুষকে কোনো স্থায়ী উপকার দেয়া সম্ভব নয়। ১৯৬৬র খাদ্য আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে বহু প্রাণ বলি হওয়ার পর দল যেভাবে এতগুলো প্রাণের বিনিময়ে ১০০ গ্রাম গম ও ৫০ গ্রাম চালের পরিবর্তে আন্দোলনটিকে নষ্ট করে দিল সেটা ওই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠির মতে দলের নিয়ন্ত্রক নেতৃত্বের বিরুদ্ধ তাদের নতুন করে চোখ খুলে দিয়েছিল। কাজেই নকশালবাড়ির কৃষক বিদ্রোহ ওই বিরুদ্ধ চিন্তার ধারাবাহিক ফল। এই আন্দোলনটাকে বিচ্ছিন্ন করে দেখলে পুরো পরিপ্রেক্ষিতটা পরিস্কার হয় না। প্রকৃতপক্ষে, নকশালবাড়ির ঘটনা দলের ওই মানসিকতার বিরুদ্ধে প্রথম সদর্থক আন্দোলন।এখানে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র একাংশ ১৯৬৭ সালে তাদের নেতৃবৃন্দের বিরোধিতা করে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) একটি পৃথক উগ্র বামপন্থী দল গঠন করেছিলো। এ বিপ্লবী দলের নেতৃত্বে ছিলেন চারু মজুমদার, সুশীতল রায়চৌধুরী, কানু সান্যাল ও জঙ্গল সাঁওতাল। এ বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল ১৯৬৭ সালের ২৫ মে তারিখে। তখন নকশালবাড়ি গ্রামের কৃষকদের উপর স্থানীয় ভূস্বামীরা ভাড়াটে গুন্ডার সাহায্যে নানাবিধ জুলুম আর অত্যাচার করছিল। এরপর এই কৃষকরা ঐ জোতদার ভূস্বামীদের সেখান থেকে উৎখাত করে। চারু মজুমদার তিনি মনে করতেন ভারতের কৃষক এবং গরিব মানুষদের মাও সে তুং এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে শ্রেণিশত্রুদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করা প্রয়োজন। তার কারণ মিল মালিক, ভূস্বামী আর জোতদার কৃষক, পুলিশ আর রাষ্ট্রীয় সহায়তায় সর্বহারা গরীব , কৃষক, শ্রমিকদের শোষণ করে। তিনি নকশালবাড়ি আন্দোলনকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তার লেখনীর মাধ্যমে। তার বিখ্যাত রচনা হল ‘’’হিস্টরিক এইট ডকুমেন্টস্’’’ বা আট দলিল যা নকশাল মতাদর্শের ভিত্তি রচনা করে। বিশিষ্ট বামপন্থী বুদ্ধিজীবী সরোজ দত্ত শ্রেণিশত্রু খতমের রাজনীতির পক্ষে একাধিক প্রবন্ধ রচনা করেন নকশালদের মুখপত্র 'দেশব্রতী' পত্রিকায়। নকশালপন্থীরা পরবর্তীতে সিপিআই(এম) থেকে বেড়িয়ে ‘’’অল ইন্ডিয়া কমিটি অব কমিউনিস্ট রেভুলশনারী’’’(এ আই সি সি সি আর) গঠন করেন। ১৯৬৯ সালে এ আই সি সি সি আর থেকে জন্ম নেয় কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)। বাস্তবে সকল নকশালবাদী দলেরই উদ্ভব হয়েছে সিপিআই(এম এল) থেকে । তবে “মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার্” নামে একটি ভিন্ন মতাদর্শের দল ছিল। তাদের উদ্ভব হয়েছিল “দক্ষিণদেশ গ্রুপ” নামে একটি সংগঠন থেকে; যার নেতৃত্বে ছিলেন অমূল্য সেন, কানাাই চ্যাটার্জি ও চন্দ্রশেখর দাশ। এরা CCCRএর অঙ্গ হিসেবে যুক্ত থাকলেও চারু মজুমদারের নেতৃত্বে সিপিআই (এমএল)এ তারা যুুুুক্ত না হয়ে উক্ত মাওবাদী কমিউনিস্ট কেন্দ্র গঠন করে স্বাধীনভাবে বিপ্লবী আন্দোলন চালয়ে যেতে থাকে। পরবর্তী ক্ষেত্রে, ভেঙ্গে যাওয়া সিপিআই (এমএল) থেকে বেরিয়ে আসা “পিপলস ওয়ার গ্রুপ” (PWG) এবং "মাওবাদী কমিউনিস্ট কেন্দ্র" (MCC) একত্রিত হয়ে ২০০৪ সালে “কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাওবাদী)" গঠন করে। এছাড়া ভিন্ন মতাদর্শের আর একটি দল হল “অন্ধ্র রেভুলশনারী কমিউনিস্টস্” এবং তারা “টি. নাগি রেড্ডি”-র “মাস লাইন” মতবাদের অনুসারী ছিল।১৯৭০ সালের দিকে এ আন্দোলন অন্তর্দ্বন্দের কারণে কয়েকটি বিরোধী অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৯৮০ সালের দিকে প্রায় ৩০ টি নকশালবাদী দল সক্রিয় ছিল এবং তাদের জনবল ছিল প্রায় ৩০,০০০০। ২০০৪ সাল ভারতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে প্রায় ৯৩০০ নকশালবাদী ক্যাডার সক্রিয় রয়েছে এবং তাদের কাছে প্রায় ৬৫০০ অনিবন্ধিত অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে, এছাড়া দেশী অস্ত্র তো আছেই। Judith Vidal-Hall(২০০৬) এর মতে সাম্প্রতিক সময়ে নকশালদের সংখ্যা প্রায় ১৫,০০০ এবং তারা ভারতের বনভূমির প্রায় এক পঞ্চমাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তারা তাদের কর্মকাণ্ড ভারতের ভারতের ৬০৪ টি জেলার ভেতর ১৬০ টিতে বিস্তার করেছে। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সংশোধনবাদী চরিত্রগত কারণে তেলেঙ্গানার সংগ্রামকে নেহরুর পদতলে বিকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিপরীতে নকশালবাড়ি কমিউনিস্ট আন্দোলনের সুবিধাবাদী কেন্দ্র ও কাঠামোর উপর আঘাত হেনেই উপমহাদেশের বিপ্লব আকাঙ্ক্ষী বিপ্লবীদের নিজস্ব পার্টি গঠনের পথকে উন্মুক্ত করে দেয়। তেলেঙ্গানা পার্টি সংশোধনবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল, নকশালবাড়ি তা করেনি।বর্তমানে কিছু নকশালবাদী দল ভারতের মূলধারার রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে,নকশাল আন্দোলন কলকাতার ছাত্র সংগঠনগুলোর ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল।  মেধাবী ছাত্রদের একটি বড় অংশ ১৯৭৭-৮৫ সালে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল। বিশেষত নামকরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্ররা প্রভাবিত হয়েছিল এবং সক্রিয় ভাবে যুক্ত হয়েছিল এই আন্দোলনে। চারু মজুমদার বলেছিলেন বিপ্লবী কার্যক্রম শুধুমাত্র গ্রামাঞ্চলে চালিয়ে গেলেই চলবে না, বরং একে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি নকশালদের শ্রেণীশত্রু খতম করার নির্দেশ দেন। এ শ্রেণীশত্রুদের মধ্যে যেমন ছিল কোনো কারখানার মালিক, ভূস্বামী তেমনি ছিল স্কুল, কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশ অফিসার, রাজনীতিবিদ এবং আরও অনেকে। সে সময় কলকাতার সব স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নকশালপন্থী ছাত্ররা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে নিয়ে তার মেশিন শপে পুলিশদের সাথে লড়ার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করেছিল। প্রেসিডেন্সি কলেজটা ছিল তাদের সদর দফতর। তারা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডাঃ গোপাল সেন কে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। নকশালরা অল্পসময়ের মধ্যে ভারতের শিক্ষিত সমাজের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল। দিল্লীর “সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ” জে এন ইউ এইসব বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে ওঠে।এরপর সরকার নকশালদের কে শক্ত হাতে দমনের সিদ্ধান্ত নেয়। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় নকশালদের উপর প্রতি-আক্রমণের নির্দেশ দেন। পুলিশকে কিছু মানবতা বিরোধী ক্ষমতা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল নির্বিচারে হত্যা এবং অকারণে যে কাউকে বন্দী করার ক্ষমতা। লক -আপ হত্যা, জেলবন্দী হত্যা ও ভূয়ো সংঘর্ষ দ্বারা পুলিশ বিভিন্ন সময় নকশালপন্থীদের হত্যা করেছে। এক মাসের ভেতরে সরকার নকশাল আন্দোলন দমন করেছিল। “ নকশালদের শক্ত হাতে দমন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই” ভারত সরকার এবং পুলিশের মনোভাব ছিল এমনি। তারা দেশের জনগণ কে এ কথাও ভাল ভাবে বুঝিয়েছিল যে “দেশ এখন ঐ চরমপন্থীদের সাথে গৃহযুদ্ধে নেমেছে, এ যুদ্ধে গণতন্ত্রের নামে পরিহাসের কোন স্থান নেই। কেননা ঐ চরমপন্থীদের কাছে গণত্ন্ত্র মূল্যহীন”। এর ফলে দেশবাসীর কাছে নকশালদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যায়, আর তাদের প্রতি সহানুভূতিশীলরা মুখ ফিরিয়ে নেয়।

এছাড়া অর্ন্তকোন্দলের কারণে আন্দোলনে ছেদ পড়ে। দলের একটি বড় অংশ চারু মজুমদারের নির্দেশিত পথের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ১৯৭১ সালে সিপিআই(এম-এল) ভেঙে দু টুকরো হয়ে যায়। চারু মজুমদারের দল থেকে সত্য নারায়ন সিং বেরিয়ে যান। ১৯৭২ সালে চারু মজুমদার পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং আলীপুর জেলে নিহত হন বা তাকে মেরে ফেলা হয়েছিল। তাত্ত্বিক নেতা সরোজ দত্তকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেলে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি, সম্ভবত তাকেও হত্যা করা হয়। পলিটব্যুরোর অন্যতম নেতা সুশীতল রায়চৌধুরী আত্মগোপন থাকা অবস্থায় মারা যান। প্রধান নেতৃবর্গের বড় অংশই জেল বন্দী হন। পরে নকশালপন্থী দল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) বহু ধারা উপধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। অনেক বছর পরে অন্যতম প্রধান নেতা কানু সান্যাল ২০১০ সালের ২৩শে মার্চ পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার নকশালবাড়ী থানার হাতিঘিষা গ্রামের নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। শারীরিক অসুস্থতা সইতে না পেরে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

সম্প্রতি ২০০৯ সালের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের লালগড়ে পুলিশদের তাড়িয়ে দেয় এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির কর্মিদের উপর হামলা চালায়। এ এলাকায় মাওবাদী জঙ্গীরা তাদের প্রভাব বাড়াচ্ছে এই অভিযোগে রাজ্য সরকার জুনের প্রথম দিকে পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে অভিযান চালিয়ে লালগড় পুনরুদ্ধার করে। মাওবাদী নেতা কিষেনজি এক সাক্ষাতকারে বলেন- “তারা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন বাম এবং তাদের পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে নিজেদের জন্য মুক্তাঞ্চল গড়ে তুলতে চায়। আর তারই শুরু হিসেবে তারা লালগড়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। ১৯৭০ সালের পরে তারা আবার সংগঠিত হয়েছে আর ২০১১ সাল নাগাদ কলকাতাতে তারা সশস্ত্র আন্দোলন পরিচালনা করবে। ২০০৯ সালে ১৬ এপ্রিল জাতীয় নির্বাচনের প্রথম দফা ভোট গ্রহণের সময় বিহার, ছত্তিশগড় এবং ঝাড়খন্ডে হামলা চালিয়ে ১৮ জনকে হত্যা করে। ২৩ এপ্রিল জাতীয় নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা ভোট গ্রহণের সময় জামশেদপুর এবং ঝাড়খন্ডে হামলা চালিয়ে কয়েক জনকে আহত করে।মে মাসে সম্ভাব্য মাওবাদীদের হামলায় ১৬ জন পুলিশ নিহত হয়। বিবিসির হিসেব অনুযায়ী নকশালদের কারণে এখন পর্যন্ত ৯০০০ এর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।



  


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract