STORYMIRROR

Prof. Dr. Pranab kumar Bhattacharya

Abstract Romance Others

4  

Prof. Dr. Pranab kumar Bhattacharya

Abstract Romance Others

অবৈধ প্রেম অধ্যায় চার ও পাঁচ

অবৈধ প্রেম অধ্যায় চার ও পাঁচ

54 mins
447


লেখক-:


ডাক্তার (প্রফেসর) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য 

এম.ডি (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) ;এফ আই সি প্যাথলজি, ডব্লু.বি.এম.ইএস (অবসরপ্রাপ্ত)


প্রাক্তন অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান, প্যাথলজি বিভাগ, কলকাতা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন, কলকাতা -700073, পশ্চিমবঙ্গ, এবং জে.এম. এন মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, জেএমএন এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন, চাকদহ, জেলা- রানাঘাট, পশ্চিমবঙ্গ এবং বর্তমানে অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান, প্যাথলজি, জে আই এস মেডিক্যাল স্কুল এবং রিসার্চ, সাঁতরাগাছি, হাওড়া ,পশ্চিমবঙ্গ

ই মেইল করুন -: profpkb@yahoo.co.in (বেশিরভাগ ব্যবহৃত)

prof.pranab@Gmail.com ( কম ব্যবহৃত)


বাসস্থান এর ঠিকানা-:

মহামায়া অ্যাপার্টমেন্ট, ব্লক-বি, ফ্ল্যাট -৩, ২য় তলা, মহামায়াতলা, ৫৪ এন এস সি বোস রোড, পোস্ট অফিস- গড়িয়া, কলকাতা ৭০০০৮৪, পশ্চিমবঙ্গ 


কপি রাইট -: 

Belongs primarily to Prof. Dr. Pranab Kumar Bhattacharya under strict Copyright acts and laws of Intellectual Property Rights of World Intellectual Property Rights organisations ( WIPO) , RDF copyright rights acts and laws and PIP copyright acts of USA 2012 where Prof Dr Pranab Kumar Bhattacharya is a registered member . Please Don't try ever to infringe the copyright of the manuscript to protect yourself from criminal offences suit file in court of law in any places of india and by civil law for compensation in few millions US dollar or in pounds or in Euro in any court of laws in India 




 অবৈধ প্রেম এর অধ্যায় চারের পরবর্তী অংশ অধ্যায় চার ও পাঁচ 

 আমার অপেক্ষা করছিলো। আর একটা দিন কাটিয়ে আমরা বাড়ি যেতে পারবো। ডাক্তার লাহা রবিবার বিকেলে বাড়ি যাবেন। আমি সোমবার দুপুরের মধ্যে হেলথ সেন্টারে ঢুকে পড়ব। 

*সেদিন ভোর রাতে হঠাৎ করেই আমার কোয়ার্টারের কলিং বেল বেজে উঠেছিলো। সদ্য কাচা ঘুমটা ভেংগে দুই চোখ কচলে, বারান্দায় এসে দেখেছিলাম একজন ওয়ার্ডবয় গেটের সামনে দাড়িয়ে আমাকে ডাকছে। আমি বের হতেই বলেছিলো "ডাগদারবাবু গো! নার্স দিদিমনি আপনারে যে কল বুক দিছেন এখুনি লেবার রুমে যাইতে হইবোক আপনারে।" বাবা ঘুমোচ্ছিলেন। বাবা কে ঘুম থেকে তুলেই প্যান্ট জামা গলিয়ে ,লেবার রুমে গিয়ে দেখেছিলাম একজন প্রাইমিগ্রভিদা ( প্রথম বার মা হচ্ছে সে) মা লেবার টেবিলে শুয়ে লিথটমি (lithotomy ) অবস্থায়। শোল্ডার প্রেজেন্ট নাকি বেবির । ভেতরে আঙ্গুল ঢুকিয়ে আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফুটে উঠেছিল। পুরো cervix dilated বেবির একটা কাধ বেড়িয়ে এসে আটকে গেছে। ব্যারাকপুরের হাসপতালে শোল্ডার প্রেজেন্ট নিয়ে কোনো মায়ের ডেলিভারি আগে করিনি। খুবই কঠিন কাজ সেটা। এই অবস্থায় যে মাকে বারাসাত হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স করে পাঠাবো সেটাও সম্ভব ছিলো না। এদিকে নার্সের কাছে আমার প্রেস্টিজটাও রাখতে হবে। সবাই জেনেছে যে আগের হাসপাতালে আমি গাইনী বিশেষজ্ঞ হিসাবেই কাজ করছিলাম। নার্স দিদি ও বেশ অভিজ্ঞ ছিলেন । উনি বললেন " স্যার episiotomy করে বার করে আনি? একবার চেস্টা করি? ডাক্তার লাহাতো এইসব কেসে episiotomy দিয়েই করেন । ব্লিডিং হয় কিছুটা বটে। ওর স্বামীও বাইরে দাঁড়িয়ে আছে । " আমি দ্বিধানিত্ত গলায় বলেছিলাম "বেরোবে তো "? নাকি একবার রোটেশন করিয়ে দেখবো?" নার্সদিদি বলেছিলেন "লাভহবে না আর স্যার। হেড তো পেলভিসে এনগেজড হয়ে গেছে। episiotomy দিয়ে হাত ঢুকিয়ে আস্তে আস্তে টেনে বার করে আনতে হবে। 

আমি নিজেই episiotomy টা দিয়েছিলাম । মেয়েটা সেই মুহূর্তে চিল চিৎকার করে উঠেছিল episiotomy র ব্যথায়। "ও মাগো। ডাগদার বাবু মুইরে মাইরা ফেললো গো ! ও মাগো তুই কইরে মাগো? ওগো ডাগদার আমারে তোরা ছাইরা দে তোর পায়ে পড়ি মুই ডাগদার"

 নার্স দিদি মেয়েটার ডান থাইতে, নিরাভরণ পাছায় ,জোরে জোরে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পর মেরে তার থেকেও জোরে বলেছিকেন " চুপ কর তুই! একদমই চুপ কর! গলা দিয়ে যেনো একটাও আওয়াজ না বের হয় তোর! গলা চিপে একবারে মেরে ফেলব বেশী নাটক করলে! মজা লোটার সময়তো একবারও মনে থাকে না তোদের ? খুব সুখ পাস তখন তাই না মরদের আদর খেতে? এখন তো সহ্য করতেই হবে " এই মাইনর অপারেশনতে মেয়েদের পুরো ভালভা, যোনির ল্যাবিয়ামেজর আর ল্যাবিয়া মাইনরকে ,পেরিনিয়াম সহ , কাচি চালিয়ে কেটে দিতে হয় অনেকটা এবং সেটা করা হয় কোনো রকম লোকাল অ্যানাসথেসিয়া ছাড়াই (লেবারের ব্যাথা ওঠার ঠিক সেই মুহূর্তে কাচি দিয়ে কাটতে হয় । ) । ভীষণই যন্ত্রণাদায়ক আর কষ্টকর অবস্থা এটা একটা মায়ের জন্য। Episiotomy দিতেদিতেই অভ্যস্ত হয়েছিলাম বারাকপুর হাসপাতালের লেবাররুমেই। প্রথমেই pudendal ধমনীর কোনো একটা ব্র্যাঞ্চথেকে বেরোনো রক্তে ভেসেগেল লেবার টেবিলটার অনেকটাই অয়েল ক্লথ। গজ আর আর্টারি ফরশেপ দিয়ে চেপেধরে সিল্কের বাঁধন দিতে, ব্লিডিংটা কিছুটা কমলে পরে, কাটাটা আরোও বাড়িয়ে দিয়ে ছিলাম। আবারো সেই চিল চিৎকার মেয়েটার । , জমাট বাধা রক্তের দলাগুলো পরিষ্কার করে , নার্সদিদি ওনার গ্লাভসপরা হাত ঢুকিয়ে দিয়ে প্রথমে বেবির একটা হাত বার করেন, তারপরে একটা কাধ বার করে এনে বাকিটা দুই হাতে পুরো ডেলিভারিটা শেষ করেছিলেন। ঘাম দিয়ে যেনো জ্বর ছেড়ে ছিলো আমাদের দুজনেরই সেই ভোর রাতে। । বেবীকে কাদিয়ে নিয়ে, বেবীর আর মায়ের দিকের উম্বেলিকাল কর্ড বেধে, কেটে, হাত ধুয়ে আমরা দুজনই ডক্টরস রুমে এসেছিলাম। নার্সদিদি নিজেই চা করে বিস্কিট দিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে। কিছুক্ষন ওনার সাথে দুধচা আর বিস্কিট খেতেখেতে গল্পঃ করেছিলাম। নার্স সুজাতা দিদি এখানেই থাকেন, তিনজন নার্স মিলে একটা কোয়ার্টারে। ওনার শ্বশুড়বাড়ি বেহালা চৌরাস্তাতে। ওনার সাত বছর বিয়ে হয়েছে। এখনও কোনো সন্তান হয়নি তাদের। ডাক্তারও দেখাচ্ছেন ওনারা। এরপরে কিছুক্ষণ পরে আমরা লেবার রুমের ভেতরে গেলে নার্সদিদি প্লাসেন্টাও বের করে এনেছিলেন। Episiotomy এর স্টিচ দিতে দিতে আমাদের ভোর সাড়ে ছয়টার মতো বেজেছিল। সেটাও এখানে নাকি লোকাল অবশ না করেই স্টিচ দেওয়া হয়। আমি জাইলোকানে ইঞ্জেকশন চাইতে উনি বললেন এই ভোর রাতে কোথায় পাবেন ওইসব স্যার। স্টোরে যদিও বা থাকে , কম্পাউন্ডার বাবু না আসলে তো পাওয়া যাবে না। আর সামান্য এই কারণে ডেকে পাঠাবেন ওনাকে ওর ভোরের ঘুম ভাঙিয়ে ? আমিও জিজ্ঞেস করেছিলাম "লেবার রুমে ইমারজেন্সি ওষুধ রাখেন না আপনারা? " উনি মৃদু হেসে বলেছিলেন " এটা প্রাইমারী হেলথ সেন্টার স্যার" সাব ডিভিশনাল বা স্টেট জেনারেল হাসপাতাল নয় স্যার। আমি নার্সদিদিকে পোস্ট ডেলিভারী ইনস্ট্রাকশনস দিয়ে আর সদ্য হওয়া মায়ের ব্লাড প্রেশার, পালস রেট আর নতুন করে vaginal ব্লিডিং হচ্ছে কিনা আর প্যাডে, দেখে রোগিনীকে বেডে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম । এই জন্যই সত্যিই আমার গাইনী বিষয়টা একদমই ভালো লাগতো না। বিশেষ করে ব্রিচ বা শোল্ডার বা হ্যান্ড প্রলাপসে বা লেগ প্রলাপস নিয়ে প্রেজেন্ট করলে আমি খুবই ভয় পেতাম আর অস্বস্তি হতো ডেলিভারি করাতে। বারাকপুর হাসপাতালে তবুতো অন্য কোনো গাইনী বিশেষজ্ঞ থাকতেন কোয়ার্টারে। ডাকলেই ওনারা চলে আসতেন। আমার ওপরে অবশ্যি চোটপাট একটু করতেন যে আমি কবে নিজে থেকে কনফিডেন্ট হবো এইসব ডেলিভারি করতে? কিন্তু ওনারা নিজেরা হাততো লাগাতেন। দরকার হলে সঙ্গে সঙ্গেই ও টি রেডী করে সিজার অপারেশন করে বাচ্চা বার করতেন। আর এখানে তো আমি একা আর সাথে নার্স। obstructed ডেলিভারি , শোল্ডার বা হ্যান্ড প্রলাপসে বা লেগ প্রলাপসে কি করবো আমি এখানে ? যদি আমার হাতে বাচ্চা কোনো ভাবে ডেলিভারি করতে গিয়ে মারা যায় বা মায়ের কিছু অঘটন ঘটে যায় তাহলে এখানকার গ্রামের লোকজনতো আমাকে আর ছেড়ে দেবে না। কথায় কথায় নাকি এরা হাসুয়া, পাইপগান, বন্দুক, ছুরি চালায় এখানে। কি দরকার বাবা ? সেদিনের ভোরেই তাই ঠিক করেছিলাম এখানে কাজ করতে হলে আমাকে ভীষণ ভাবেই এলার্ট থাকতে হবে যেনো নরমাল হেড প্রেজেন্ট ছাড়া অন্য কিছু দেখলেই আগেই রেফার করে দিতে হবে সময় থাকতে থাকতে বারাসাত হাসপাতালে। আমি নিজের থেকে কোনো রিস্ক নেবো না বিশেষ করে প্রাইমিগ্রভিদা মায়েদের জন্যতো বটেই। তাই যে কয়দিন এখানে থেকে একা ডিউটি করবো, রোজ প্রথমেই গাইনী ওয়ার্ডে গিয়ে রাউন্ড দিয়ে বিকেলের মধ্যেই, সামান্যতম কিছু প্রবলেম হচ্ছে বুঝলেই বারাসাতে রেফার করে দেবো। কিন্ত এতেও যে আবার আমার প্রবলেম হবে ভবিস্বতে, সি এম ও এইচ অফিস থেকে একটা শো কজ চিঠি ধরাবে আমাকে সেটা বুঝিনি। জাগুলীয়া হেলথসেন্টারে মায়েদের ডেলিভারি করানোর সংখ্যা অনেক কম হয়েছিলো কেনো তার শো কজ নোটিশ আমার নামে এসেছিলো। এর কারণ হিসেবে দেখিয়েছিল হাসপতালের রেকর্ড বলেছিলো যে আমিই সবচেয়ে বেশী ডেলিভারি কেস রেফার করেছিলাম এই হেলথ সেন্টার থেকে বারাসাত হাসপাতালে। কেনো করেছিলাম সেটার কারণ দর্শাতে হয়েছিলো। স্বাস্থ্য কর্তাব্যক্তিদের আর কি? তারা তো আর পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনোই হন না। রোগির পার্টির রোষেও পড়েন না। ঠাণ্ডা ঘর থেকে শুধু অর্ডার ইস্যু করেন। তারা কি করে বুঝবেন কোন পরিস্থিতিতে ডাক্তারকে রেফার করতে হয় শুধু নিজেকে মার খাবার হাত থেকে বাঁচাতে, অ্যাসল্ট হবার হাত থেকে বাঁচতে। ডাক্তার আর সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাস্পাতাল গুলোই পাবলিকের সফট টার্গেট হুলোগাইসম করবার। 

যাই হোক বৃহস্পতিবার দুপুরে, সকালের আউটডোরটা কোনো মতে তাড়াতাড়ি সামলে, ডাক্তার লাহার অনুমতি নিয়েই খাওয়া দাওয়া সেরে,আমি আর বাবা বাড়ির পথে রওয়ানা দিয়েছিলাম বেলা একটায় । বাবা তৈরি হয়েই বসে ছিলেন কোয়ার্টারে। রিক্সাকে তো বলাই ছিলো। কোয়ার্টারের গেটের আর রান্না ঘরের চাবিটা রেবার হাতে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল যাতে সোমবার সকালে এসে সে দুজনের মত রান্না করে রাখে । মাছ তরকারি কেনার টাকাও দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ডাক্তার লাহাও ও Mrs লাহা রবিবার সকালেই দমদমের বাড়ি ফিরবেন আর ওনারা হাসপাতালে ঢুকবেন বৃহস্পতিবার। আমি সোমবার ফিরে আসবো সকাল ১১ টার মধ্যেই। মাঝখানের সময়টা কম্পাউন্ডার বাবু থাকবেন এবং হাসপাতাল সামলাবেন। সোদপূরের বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যে হয়েছিলো। গত চারদিন চেম্বার খোলা হয় নি। পরোটা আর আলুভাজা দিয়ে টিফিন করেই, সাতটার মধ্যে চেম্বার খুলতে হবে। প্রাকটিসটা অন্তত টিকিয়ে রাখা জরুরি। চেম্বারে গিয়ে বসতে , সামনের রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের পথে কয়েজন বয়স্ক মানুষ (আমার রোগী ছিলেন এরা) জিজ্ঞেস করেছিলেন " কিহে ছোকরা ডাক্তার, তিন চারদিন চেম্বার বন্ধ ছিলো দেখলাম? কোথাও বেড়াতে গেছিলে নাকি ? শরীর টরির ঠিক আছে তো বাপু ? " আমি উত্তর দিয়েছিলাম " হ্যা মেসো একজায়গায় যেতে হয়েছিলো। এখনথেকে শুধু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেথেকে রবিবার সন্ধ্যে পর্যন্ত চেম্বার খোলা থাকবে দুবেলাই" কেউকেউ আবার খুব কৌতুহলী হয়েই জিজ্ঞেস করেছিল " কি ব্যাপার হে বলতো ডাক্তার?" "তুমি তিন দিন একেবারেই যে ডুমুরের ফুল হয়ে গেছিলে? " সত্যি কথাই বলতে হয়েছিলো এনাদের। শুনে সকলেই দুঃখ পেয়েছিলেন বা দুঃখ দুঃখ মুখটা করেছিলেন অন্তত । কেউ কেউ বলেছিলেন "ব্যারাকপুরে ম্যানেজ করতে পারলে না বুঝি থেকে যেতে? সেই জাগুলিয়ার অজ গ্রামে যেতেই হলো? জায়গাটাতো পলিটিক্যালি শুনেছি খুবই নাকি খারাপ। রাজনৈতীক খুনখামারি নাকি সবসময় লেগেই থাকে ওখানে। "

কেউ বলেছিলেন - "রাতে বিরেতে তুমি তবু এখনকার একটু ভরসা ছিলে হে ডাক্তার । সেটা আর গরিবদের সরকারের সহ্য হলো না বুঝি? তোমার প্র্যাক্টিসটা সবে তৈরি হচ্ছিলো এখানে" । 

একজন বলেছিলেন "আমাদের এম এল এ গোপাল ভট্টাচার্যকে বললে না কেনো তোমার ট্রান্সফারটা আটকাতে? তোমার বাবাও তো সি পি এম পার্টির মেম্বার। গোপালদার সাথে ভালই তো তোমাদের পরিচয়। তোমাদের বাড়িতেও উনি মাঝে মধ্যে আসেন" । "তিনকড়িরতো শুনেছিলাম রাইটার্স এ খুবই যাতায়াত আছে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রামনারাযনের ঘরেও যায় সে। এখানকার পানিহাটি হাসপাতালটি স্টেট জেনেরাল হাসপতালে উন্নত করছে নাকি সে। বললে তোমাকে এখানেও তো ট্রান্সফার করতে পারতো।"

আরও একজনের বক্তব্য-" তাও ভালো যে বৃহস্পতিবার রাত থেকে রবিবার তুমি থাকবে পাড়াতে। এই পাড়ায় ডাক্তারের যে কি অভাব রাতে তোমাকে কি আর বলবো? সবই তুমি তো জানো।"

খবরটা রাষ্ট্রহতে বেশি সময় নেয়নি যে আমার

 জাগুলিয়াতে বদলী হয়ে গেছে। রাতে বাড়ি ফিরে মা জিজ্ঞেস করলেন যে ওখানে আমার মন আদৌ বসবে কিনা,। বাবার কাছ থেকে সবাই সব কিছুই পুঙ্খানপুঙ্খভাবে ততক্ষনে শুনে নিয়েছিল। মা বলেছিলেন সোম বার মা যাবে আমার সাথে। আমি অবাক হয়েই বলেছিলাম _"তুমি গেলে এখানে কে সামলাবে মা। রান্না বান্না ঘর বাড়ি?"

- " কেনো ? শেফালীই তো আছে।(তিন দিন ও সামলে দিতে পারবে) " 

শেফালী আমাদের বাড়িতে তখন একই সঙ্গে কাজের এবং রান্নারও মহিলা । আমার মায়ের বয়সী হবে বা একটু বেশী। গত ছয় সাত বছর ধরে আমাদের বাড়িতেই কাজ করে সে। সকাল আটটার পরে এসে সন্ধ্যার ছয়টার পরে ফিরে যায় বঙ্কিমপল্লীর ভেতরের দিকে নিজের বেড়া আর টালির ঘরে! শেফালির চার চারটে সন্তান। ওর স্বামী রিক্সা ভ্যান চালায়। তখন সোদপুরে ভ্যানরিক্সার বেশি চল ছিলো। এমনি রিক্সা বা অটো রিক্সা বা অটো ছিলো না। বাংলাদেশর ১৯৭২ সালের উদ্বাস্তু পরিবার শেফালির। বাংলাদেশে ওদের অবস্থা মোটামুটি ছিলো। ধানী জমি কয়েক একর ছিলো । বসত বাড়ি 

ও ছিলো। সব ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে হয়েছিল পরিবার টাকে এখানে আর প্রথমে ট্রিপালের টেন্ট ব্রজেন সমাজদারদের জলা জমিতে তারপরে মিউনিসিপ্যালিটির কাছ থেকে দুই কাঠা জমি পেয়ে বাঁশের বেড়া আর টালির ছাদের ঘর" । বাংলাদেশি রিফিউজিদের বেশ কিছু লোক ভ্যানরিক্সা চালানোটা তাদের জীবিকা হিসাবে বেছে নিয়েছিল তখন। CPM শাসিত মিউনিসিপ্যালিটি তাদের রিক্সা কেনার টাকা দিয়েছিল। পরিবর্তে ভোটটা পড়বে ফ্রন্টের বাক্সে। এটাই তাদের অলিখিত শর্ত ছিলো। গরীব গুর্বো মানুষের আবার বাছবিচার কিসের গো? যেখানে যাকে বলবো ভোট দিতে সেইখানে ভোটটা দেবে তারা। 

পরের সোমবারে আমার সাথে আমার মা গেছিলেন জাগুলিয়া হেলথ সেন্টারটা দেখে আসতে আর আমার একার সংসারটা কিছুটা গুছিয়ে দিয়ে আসতে। আমরা আমাদের সোদপুরের বাড়ি থেকে সকাল সাড়ে আটটার সময় বেড়িয়ে, পৌনে এগারটার মধ্যেই জাগুলিয়া হেলথ সেন্টারে ঢুকে গেছিলাম। রেবা কোয়ার্টারে রান্না করছিল। দৌড়ে এসে গেটের তালা খুলে দিয়েছিল। মাকে প্রথমেই কোয়ার্টারে রেখে , আমি আউটডোরে গিয়ে দেখেছিলাম, কম্পাউন্ডারবাবু লম্বা লাইনে দাড়ানো গ্রাম্য গরীব গুর্ব রোগীদের প্রেসক্রিপশন আর ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন। আমি গিয়ে ওনাকে বলেছিলাম " আপনিই আজকে লাইনের রোগীদের ছেড়ে দিন আমি ওয়ার্ডদুটো একবার রাউন্ড দিয়েই আসছি। প্রথমেই গাইনী ওয়ার্ডে ঢুকে রাউন্ড দিয়েছিলাম। দুজন মায়ের দেখেছিলেম সবে লেবার পেন উঠেছে। সিস্টার বলেছিলেন -"স্যার একজনের আমার মনে হচ্ছিল বেবীটার ব্রিচ প্রেজেন্টেশন নিয়ে আছে। ডাক্তার লাহা পরশু বিকেলে ওকে ভর্তি করেছেন। আজ ভোরথেকে ওর ব্যাথা উঠেছে অল্প অল্প। সিন্টোসিতন চালিয়ে রেখে গেছে কম্পাউন্ডার বাবু সকাল থেকে slow dripe। cervix কিন্তু এখনও dilated হয়নি । এক আঙুলও নয়। আপনি নিজে কি দেখবেন একবার স্যার?"

আমি শুনেই তো ডিসিশন নিয়ে নিয়েছিলাম যে একে বিকেলের মধ্যেই ট্রান্সফার করবো বারাসাত হাসপাতালে। ওকে লেবার রুমে নিয়ে ইন্টারনাল পরীক্ষা করে দেখেছিলাম সত্যিই ব্রিচ প্রেজেন্টেশন বেবিটার। তখন এনগেজমেন্ট শুরু হয়ে গেছে পেলভিসের মধ্যে । বেবির হেডও ফিল করতে পারিনি আঙ্গুলে চেষ্টা করেও। cervical অসটাও একদমই dilated নয়। আমি নার্সকে বলেছিলাম "ওনাকে বারাসাত রেফার করতে হবে। এখানে ডেলিভারী করানোটা কিন্ত রিস্ক হয়ে যাবে।" নার্স দিদি অবাক হয়েই আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলেছিলেন " কেনো স্যার? , এখানেতো প্রায়ই ব্রিচ প্রেজেন্টেশন বেবির ডেলিভারি করানো হয় কনভার্সন করে নিয়ে। ডাক্তার লাহা নিজেই করেন তো " আমি উত্তরে বলেছিলাম -"ডাক্তার লাহা করাতে করাতে হয়তো বা এক্সপার্ট হয়ে গেছেন । আমি আগে বেশিদিন লেবার রুমে ডিউটি করিনি তো। আমার এতো ভালো অভিজ্ঞতা নেই। আমি এখানে একা থেকে রিস্ক নিতে একদম রাজি নই একদম। অবস্ট্রাক্টেড লেবার হলে সিজার করবে কে অ্যানাসথেসিয়া ছাড়া? সেদিন শোল্ডার প্রেজেন্টেশন ডেলিভারি করাতে গিয়ে যে রক্তে ভেসে গেছিলো? " সিস্টার দিদি বলেছিলেন 

 " শুনেছি স্যার । ,কিন্তু পার্টিকে কি বলবেন আপনি স্যার। ওরাতো এটা জানে যে সব রকম ডেলিভারী এখানেই হয়। তাই হয়েও এসেছে এতো বছর বারাসাতে ডেলিভারী কেস রেফার করাই হয় না সচারাচর এখন থেকে ! গন্ডগোল হবে নাতো এতে স্যার? একবার কম্পাউন্ডার বাবুর সাথে কথা বলবেন?"

 আমার এতে খুবই প্রেস্টিজে আঘাত লেগেছিল সেদিন । আমি রেফারটা ভালো করে গুছিয়ে লিখে মহিলার বাবা মা বোন আর স্বামীকে ডেকে বুঝিয়েছিলাম যে কেনো বারাসাত হাসপাতালে রেফার করা দরকার রোগিনীকে ।প্রথমের দিকে মহিলার স্বামীটা আমার সাথে কিছুটা তর্ক বিতর্ক করলেও যখন বলেছিলাম এখনকার অ্যাম্বুলেন্স গাড়ির সার্ভিসটা বিনে পয়সায় পাওয়া যাবে রোগীকে নিয়ে যেতে এটা শুনে বাড়িরলোক রাজি হয়ে গেছিলো। আমি অন্য মহিলাদের রাউন্ড দিচ্ছিলাম যখন কিছু লোক একজন ১৮ -১৯ বছরের ছেলেকে পাঁজাকোলা করে ইমারজেন্সিতে নিয়ে এসেছিল হৈ হৈ করে।

- "ডাকদর কই? ডাকদর কই গ ? ওই হ হ ডাক্দার ওখুনি আসুনগ তাড়াতাড়ি , সাপেকাটা রোগীরে অননছি তোর লেগে। পোলাটার মুখেখে যে গ্যাজা উঠতাছে গো। বাঁচবোক লাইরে পোলাটা আমাগো ? " 

আমি দ্রুত ইমারজেন্সি ঘরে এসে দেখি চেঁচামেচি শুনে কম্পাউন্ডার বাবুও উঠে এসেছেন। একটা চাষীর ছেলে মাঠে ধান কাটছিলো খালি পায়ে মাঠে নেমে। মাঠের আলে নাকি একটা কেউটে ( ক্রেট ) সাপ ছোবল মেরেছে তাকে। বাড়িতে কিছুক্ষণ ধরে লোকাল ওঝার ঝাড়ফুঁক চলার পরে যখন ছেলেটার মুখ দিয়ে গ্যাজা বের হতে শুরু হয়েছিল, এরা নিয়ে এসেছে হাসপাতালে তখনই। আমার সামনে একজন একটা মুখঢাকা হাঁড়ির মধ্যে সাপটাকে আধমরা করে ধরে সাথে নিয়ে এসেছে। আমার সামনে হাড়ির মুখ খুলে সাপটাকে দেখাতে গেলে আমি চার পা ছিটকে পেছনে গিয়ে বলেছিলাম " দেখাতে হবে না ! দেখাতে হবে না! শিগগির এটাকে নিয়ে বাইরে যান আর মেরে ফেলুন এখুনি " সবাই এতে দাত বের করে হেসে উঠেছিল।

- " ভয় লাইগো ডাগদার। আধমরা সাপটাগো। কিছু করবক লাই তোকে। দেখবি লাই তো চিকিতসা করবি কী ভাবে? " 

আমি ধমক দিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলেছিলাম- "সাপ শুদ্ধ হাঁড়ি নিয়ে বাইরে গিয়ে সাপটাকে এখুনি মেরে ফেলুন। আধ মরা সাপ আবার কখন কাকে কামড়াবে ! এখুনি মেরে পুড়িয়ে দিন" 

কম্পাউন্ডার বাবু ইশারা করতেই লোকটা সাপের হাঁড়িটা নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে গেছিলো। আমি আর কম্পাউন্ডারবাবু দুজনই পায়ের পাতায় দুটো ব্লিডিং স্পট দেখে কম্পাউন্ডার বাবুকে বলেছিলাম

-" শিগগিরই অ্যান্টি ভেনোম সেরাম স্টোরে থেকে বার করে চালিয়ে দিন।"

 আমাদের পশ্চিমবঙ্গের গ্রামের কোবরা সাপ ( ক্রেট) সাধারণত neurotoxic হয় । কখনো কথনও সেটা হেমটক্সিক । species এর নির্ভর করে। নিউরোটক্সিক সাপের বিষ রোগীর আস্তে আস্তে দেহের সমস্ত মাসল প্যারালাইসিস( এমন কি শ্বাস প্রশ্বাস নিতে যে মাসল গুলো দরকার তাদেরও ) করে দিয়ে আর হেমোটক্সিক সাপের বিষ দেহের অক্সিজেন সরবরাহ করে আরবিসি গুলোকে দ্রুত ভেংগে দেয় আর তার সাথে কিডনিকে বিকল করে দিয়েই মৃত্যু ঘটায়। কম্পাউন্ডারবাবু পাঁচটা ভায়াল মাল্টি অ্যান্টি ভেনোম সেরাম নিয়েএলে দুটো ভায়াল( ৬০০০ ইউনিট, প্রতি ভায়াল ৩০০০ ইউনিট থাকে ) সঙ্গে সঙ্গেই শিরার ভেতর দিয়ে ইন্ত্রাভেনাস ইঞ্জেকশন আমি নিজের হাতে খুব আস্তে আস্তে পুস করে তারপরে ছেলেটাকে ওয়ার্ডের বেডে দিয়ে দিয়েছিলাম । সিস্টার সোডিয়াম ringer lactate স্যালাইন চালালে তাতে আরো দুটো ভাইল ( মোট ৬০০০ইউনিট ) অ্যান্টিভেনম সেরাম দিয়ে ঘন্টায় ২৫০ সিসি করে চালিয়ে ছেলেটার পায়ে , মিড থাই, আর কুচকীর কাছে মোটা মুটি শক্ত করে দুটো বাঁধন দিয়েছিল আর পাটাকে ক্ষতর জায়গাটা স্পিরিট আয়োডিন দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ব্যান্ডেজ করে পাটাকে কাঠের স্প্লিন্টারের সাথে বেধে দিয়েছিলেন কম্পাউন্ডারবাবু যাতে সে পা টাকে নাড়াতে না পারে। পায়ের পাতাটা ততক্ষনে বেশ ফুলে উঠেছিল। আমি কম্পাউন্ডার বাবুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম স্টোরে কত ভায়াল অ্যান্টিভেনম সেরাম আছে? কম করে ১৫-১৬ভায়াল লাগতেই পারে । কম্পাউন্ডার বাবু বলেছিলেন সি এম ও এইচ অফিসে ফোন করে দিলে ওরা সাপ্লাই দিয়ে যাবে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই। আমি বাড়ির লোকজন কে নির্দেশ দিয়েছিলাম যেনো ছেলেটা না ঘুমোয় বা খেয়াল রাখতে হবে চোখের পাতা আপনা আপনিই পড়ে যাচ্ছে কিনা বা কোনো রকম শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা বা পেচ্ছাবটা লালচে রঙের হচ্ছে কিনা? যদি হয় তবে যেনো তক্ষুনি নার্স দিদিকে জানাতে। পার্টি কে বারাসাতের কোনো ব্লাড ব্যাংক থেকে ২ ইউনিট রক্ত আর ল্যাবরেটরি থেকে রক্তের কিছু পরীক্ষা

( Hb,কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, ডি সি, প্লেটলেট , creatinin, urea, Hb,coagulation profile PT, PTT FDP Fibrinogen লেভেল ) এবং পেচ্ছাব টেস্ট টিউবে ধরে তাতে (প্রোটিন ,রেড ব্লাড সেল, hb , কাস্ট WBC) এগুলো পরীক্ষা করেও আনতে দিয়েছিলাম যত তাড়াতড়ি সম্ভব।

সি এম ও এইচ অফিসে ইমারজেন্সি ঘরের হটট লাইনে ফোন করলে ওরা বলেছিলো বিকেলের মধ্যেই ওরা এই হেলথ সেন্টারে ২৫০ ভাইল অ্যান্টিভেনাম সেরাম পাঠিয়ে দিচ্ছে একজনের সাথে দিয়ে। রিকুইজিশন সই করে রেডী করে রাখতে। আর বলেছিল যদি রোগীর অবস্থা তেমন বুঝলে বারাসাত বা আর জি করে বা পি জি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে। বারাসাতে তখনও ডায়ালাইসিস হতো না তাই। ততক্ষনে ছেলেটার জন্য গ্রামের প্রায় অনেকেই চলে এসেছে। ওয়ার্ডের সামনের মাঠে জড়ো হয়েছে। মাঝে মধ্যে জানালা দিয়েও উকি মারছে এক একজন। আমি ছেলেটার প্রেসার, পালস চেক করে দেখেছিলাম ঠিকই আছে। নিশ্বাস নেওয়ার রেট টা সামান্য কিছুটা দ্রুত। ফুসফুসে সামান্য অল্প জল জমছে। পালমোনারি (edema)এডেমা শুরু হচ্ছে বলে মনে হয়েছিলো। অক্সিজেন চালিয়ে দিয়ে সব ট্রিটমেন্ট কার্ডে নোট করে সিস্টার নার্স কে বলেছিলাম বোতলে লসিক্স একটা ভাইল ঢেলে দিতে। ছেলেটার ইউরিন আউটপুট নজরে রাখতে। আধ ঘন্টা পর পরে ব্লাড প্রেসার আর পালস নোট করতে। সিস্টার বলেছিলেন

- "স্যার যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলি। আপনি এখানে একবারেই নতুন । তাই এখনকার লোকজন সম্বন্ধে আপনার কোনো ধারনা নেই। আমি বলি কি ছেলেটাকে বারাসাত হাসপাতালে রেফার করেই দিন। অ্যাম্বুলেন্সটাতো বিকেলে ডেলিভারির রুগীটাকে নিয়ে যাবেই বারাসাত , সাথে ওকেও রেফার করে দিলে হতো না? কেউটে, গোসাপ আর চন্দ্রবোরা, কালচে সাপ কাটা আসলে ডাক্তার লাহা প্রাথমিক চিকিৎসাটা প্রথমে এখানে করে , কিছুক্ষণ অবজারভেশন করে, বারাসাতেই রেফার করে দেন। এখানে রাখাটা খুবই রিস্কি হয়ে যাবে স্যার। যদি কিছু খারাপ হয়ে যায় হঠাৎ করে। দেখছেনতো এখানে কত লোক জড়ো হয়েছে এর মধ্যেই। এখানে রাখবেন না স্যার। "

আমি বলেছিলাম- " ঠিক আছে দিদি । বিকেল পর্যন্ত তো দেখি। খারাপ বুঝলে তো রেফার করতে হবেই তবে পি জিতে পাঠাবো। "

-'বেড পাবে তো ওরা পি জি তে? তার চেয়ে আর জি করে পাঠান। ভর্তি করে নেবে হয়তো । আমাদের অভিজ্ঞতা স্যার "

ছেলেটার রক্ত টেনে ওর মা বাবার হাতে দিয়ে দু বোতল রক্ত আর টেস্ট গুলো করাতে বলেছিলাম বারাসাত থেকে। এরপরে অন্য রোগীদের রাউন্ড শেষ করতে করতে প্রায় বেলা দুটো বাজলো। ততক্ষনে আউটডোর শেষ করে কম্পাউন্ডার বাবু ছেলেটাকেই দেখতে এসেছে। দুজনে মিলে আবার ছেলেটাকে দেখলাম। সব প্যারামিটার ঠিকই আছে। ছেলেটার দুই চোখের পাতারও কোনো drooping নেই। চোখের মাসল গুলোর নাড়াচারা নরমাল। নিশ্বাস প্রশ্বাস এর রেট ১৮ প্রতি মিনিটে। নরমাল,। লাংসে কোনো আর এডিমা নেই। সামান্য ফাইন ক্রেপস ছিলো। ইউরিন হয়েছে ঠিকই বটে তবে একটু ঘোলাটে লাগছিল । ছেলেটা কথাও বলেছে। ইউরিনটা ঘোলাটে দেখে মনটা খচ খচ করে উঠেছিলো। ইউরিন টা বারসাতে আবার পাঠাতে হলো পরীক্ষার জন্য। আরও ৬০০০ইউনিট অ্যান্টি ভেনোম সেরাম নতুন ringer lactate বোতলে দিতে বলেছিলাম শেষ হলে এই বোতলটা। কম্পাউন্ডারবাবু আমাকে কোয়ার্টারে গিয়ে লাঞ্চ আর রেস্ট নিতে বলেছিলেন। মা অপেক্ষা করে ছিলেন। ডায়াবেটিস রোগী মা। ইনসুলিন নিতে হয় ওনাকে। আমি মাকে আমার জন্য এবার থেকে আমার ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে না করেছিলাম। রেবা রান্না করে গেছিলো। মাছের ঝোল, ডাল, ভাজা, সবজি তরকারি। আমি দ্রুত স্নান সেরে নিলে পরে আমরা খেতে বসেছিলাম। খেতে খেতেই মাকে সাপে কাটা ছেলেটার কথা বলেছিলাম। মা এখানে গো সাপ আছে শুনে খুব ঘাবড়ে গেছিলেন। হাসপাতাল থেকে কার্বলিক অ্যাসিড নিশ্চয় করেই আনতে বলেছিলেন বিকেলে। 

সেদিন সন্ধ্যার আগেই আমি হাসপাতালে মেল ওয়ার্ডে রাউন্ডে গিয়ে ছেলেটিকে প্রথমেই দেখেছিলাম। ছেলেটি তখন শুয়ে শুয়েই ওর মায়ের সাথে কথা বলছিলো আর ওর মা ওকে ফল কেটে খাওয়াচ্ছিলেন। আমি যেতেই ১৯ বছরের ছেলেটি উঠে বসবার চেষ্টা করলে আমিই বাধা দিয়েছিলাম। ওর মা কয়েকটা রিপোর্ট আমার হাতে দিলে আমি দেখেছিলাম যে ছেলেটার হিমোগ্লোবিন কিছুটা কমে গেছে, ইউরিয়াটা সামান্য বেশী ৪৫ এর মত, ক্ক্রিয়েটিনিন ও ২ এর কাছাকাছি , পেচ্ছাবের রিপোর্টে হিমোগ্লোবিন পজিটিভ রয়েছে। প্রোটিন ও পজিটিভ। এর মানে ছেলেটার মধ্যে হেমোলিসিস ( hemolysis )হচ্ছে । রক্তের লোহিত কনার কোষ গুলো ভাঙছে। কিডনিটাকেও এফেক্ট করেছে। নষ্ট করছে। সিস্টার দিদিই ঠিক বলেছিলেন । এখানে এই ছেলেটাকে রাখা একদমই ঠিক নয়। আমি পালস রেট, ব্লাড প্রেশার শ্বাস প্রশ্বাস নেবার রেট দেখেছিলাম স্বাভাবিক ছিলো। লাংসএর আলভেওলি গুলোর মধ্যেও কোনো ইদেমা জমে নি । তবে হার্ট সাউন্ডটা একটু যেনো কেমন কেমন কানে ঠেকেছিলো। হার্ট এর পাম্পিং মাসল দামেজ ছিলো নাকি?? ই সি জি বা ইকো কারদিওগ্রাফি করবার স্কোপ তো ছিলো না। 

ছেলেটার মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম "আপনার বাড়ির লোকজন কোথায়? একটু ডাকুন তো তাদের"

-" বাইরেই মাঠে বইস্য রইছে যে উয়ারা। কেন গো দাগদার উয়াদের ডাকছ কেন হঠাৎ? রিপোর্ট এর কাগজগুলায় ব্যুঝ কিছু খারাপ আছে গো?"

-"ওনাদের ডাকুন তো। ওনাদের বলবো। আপনি বুঝবেন না এইসব"

-"কেন বুঝুম না দাগডার। পোলা তো আমার আমি বুঝবেন না কেন??"

ছেলেটির মা বেড়িয়ে গিয়ে মাঠ থেকে ওদের কয়েকজন আত্মীয় স্বজনদের ডাকলে আমি ওদের শান্ত গলায় ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলতেই ওরা বলেছিলো 

-" লিশ্চয় , লিশ্চয় , তুই ওরে এখনও বাঁচাইয়া রাখছেন। পোলাটা আমাগো কথাও বলছে এখনে। দাগদরবাবুরে আজ রত্তিরটুকু হিখানেই রাখ নারে পোলাটারে মূরা তোরে মিনতি করি , কাল সক্কালেই মুরা উরে বড় হাসপাতালে লইয়া যামু লিশ্চয়। অ্যাম্বুলেন্স গাড়ীটা ডিবিত তুই হেরে লিয়া যেতে। এখন তো আমাগো সাথে টাকা পয়সা কিছু লাইরে। কোলকাত্তাতে টাকা পয়সা লাগবোতো সাথে লইতে আমগো নাকি? " আমি রাজী হয়ে গেছিলাম আজকের রাতের জন্য রাখতে ছেলেটাকে এখানেই" বিকেলে সি এম ও এইচ অফিস থেকে ২৫০ ভাইল অ্যান্টিভেনম সেরাম দিয়ে গেছিলো হেলথ সেন্টারের জন্য। আমি আরো ৬০০০ ইউনিট অ্যান্টিভেনম সেরাম ringer lactate স্যালাইনের সংগে সারা রাত ধরে যাবে বলে ট্রিটমেন্ট কার্ডে অর্ডার দিয়েছিলাম। ছেলেটির আর জি কর হাসপাতালে ট্রান্সফারের জন্য কাগজ পত্র রেডী করে আউটডোরে গিয়ে আউটডোরের রোগী ছাড়তে শুরু করেছিলাম। পাঁচটার দিকে কম্পাউন্ডার বাবু এসে যোগ দিলেন আমার সাথে। ছেলেটির খবরও নিলেন। ট্র্যান্সফার করেছি শুনে বলেছিলেন "ভালো ডিসিশান নিয়েছেন স্যার। কেউটের কামড় তো। খুব বেশী জন বাঁচে না স্যার। না মানে আমি দেখিনি। দেখা যাক এর ক্ষেত্রে কি হয়। এর পরে রোগী ছাড়তে ছাড়তে আমারা দুজনে গল্পঃ করেছিলাম। উনি চা বিস্কুট অনিয়েছিলেন। 


আমি কোয়ার্টারের জন্য কার্বলিক অ্যাসিড চাইতেই উনি বলেছিলেন " নিয়ে যান স্যার, তবে এখানে কিন্ত খুবই বিষাক্ত অনেক গোসাপ আছে, মাছ খেতে এসে রান্না ঘরে ঢুকে এরা লুকিয়ে থাকে। কার্বলিক অ্যাসিডে এদের কিছু হয়না। সবচেয়ে ভালো ঘরের, রান্নাঘরের জানালাগুলো আর পেছনের ব্যালকনির দরজাগুলো বন্ধ করে রাখা রাতে বা যখন কেউ থাকবেন না ঘরে। কোয়ার্টারগুলোর পেছনের জঙ্গলগুলো পরিষ্কার করাতে হবে ডাক্তার লাহাকে দিয়ে সি এম ও এইচ অফিসে বলে। বছরে একবারই ওরা জঙ্গল সাফ করতে টাকা দেয়। আমরা এখনকারই লোকজন লাগিয়ে সাফ করে নেই। কিন্তু বর্ষা এলেই আর পুজোর সময়টা ভরে যায় জঙ্গলে জায়গাটা । এখন আবার কাশফুলের ঝোপ হচ্ছে। সাপ তো হবেই। এছাডাও অন্য ধরনের সাপ ও আছে স্যার। তার মধ্যে চিতি সাপটা ভয়ঙ্কর। বাদ বাকী সাপগুলোর অবশ্য তেমন বিষ নেই। হেলী, জল ধোরা , কলাচ, বোরা , এগুলো ব্যাং খেতে আসে। রাতে ঘুমোবার আগে তাই বিছানা ,খাট , বাথরুম মেঝে সব চেক করে নেবেন শুতে যাবার আগে । আর রাতে বেরোলে টর্চ জ্বেলে বেরোবেন কল্ বুক গেলে । সন্ধ্যার রাউন্ডে যাবার আগে সাপে কাটা ছেলেটাকে দেখে গেছিলাম। পায়ের ফোলা পাতা থেকে রস গড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল। সিস্টার নার্সকে ব্যান্ডেজ করতে বলেছিলাম। আমার সামনেই নার্স দিদি ছেলেটার পায়ের পাতা ভালো ভাবে স্পিরিট আয়োডিন, স্পিরিট দিয়ে পরিষ্কার করে ড্রেস করে দিয়েছিলেন। ছেলেটার পালস, ব্লাডপ্রেসার , রেস্পিরেশন রেট একবারেই স্বাভাবিক তখন। স্টেথোস্কোপ বসিয়ে লাংস আর হার্ট বিট শুনে নিয়ে ওকে এক ইউনিট রক্ত দেওয়ার কথাটা মনে এসেছিল। এক বোতল রক্তই ওর বাড়ীর লোক বিকেলে এনেছিল বারাসাত সরকারী ব্লাড ব্যাংক থেকে। রক্তের বোতলটা ফ্রিজের মধ্যে রাখা ছিল। বাইরে বের করে, রুম টেম্পারেচার আসতে আসতে আমি অন্য দুটো ওয়ার্ড , আইসোলেশন ওয়ার্ড, ভালো করে রাউন্ড দিয়ে এসেছিলাম। সকালের ব্রিচ প্রেজেন্টেশন বেবী নিয়ে মাকে এখনকার অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে গেলে, বারাসাত হাসপাতালে ভর্তি করে নিয়েছে শুনে আশ্বস্ত হয়েছিলাম। অন্য জনের cervical অস তখন মোটামুটি ভাবে dilated হয়ে গেছে নার্স দিদি বলেছিলেন। মাঝ রাতের দিকেই হয়তো ডেলিভারিটা হতে পারে। আর সব বেশ কিছুদিনের আগের ভরতি কেস। নেফ্রাইটিস নিয়ে বাচ্চা ছেলেটাও ভালো আছে স্টেরয়েড পেয়ে। স্টেরয়েড এর মুখ হয়ে গেছে ছেলেটার। এর পরে সাপে কাটা ছেলেটির রক্তের ব্লাড গ্রুপ, ক্রস ম্যাচ মিলিয়ে দেখে রক্ত চালিয়ে দিয়ে প্রতি আধ ঘন্টা অন্তর পালস চেক করতে বলে রাত আটটা নাগাদ কোয়ার্টারে ফিরে দেখেছিলাম মা রান্নার মহিলা রেবার সাথে বসে কথা বলছিলো। সারাদিন, সারা বিকেল, সন্ধ্যে, মা একাএকাই কোয়ার্টারে শুয়ে আর বসে ছিলেন। সন্ধ্যে নাগাদ মা রেবাকে আসতে বলেছিলেন বলেই সে এসেছিলো তার দুই মেয়েকে সাথে নিয়ে। রেবার বড় মেয়েটি দেখেছিলেম বেশ শীর্ণকায়া। পেটটা বড় শরীরের তুলনায়। তেমন পুষ্টি নেই শরীরে। তাই সেই রকম বাড়েনি বয়েসের তুলনায়। কিন্ত প্রায় রেবার মতই তার গায়ের রং সোনার জলের মত ফর্সা, চওড়া কপাল, গোল মুখ, টানা টানা ভাসানো বিস্ময়ে ভরা দুই চোখ , সুন্দর টিকলো নাক। সুন্দর চোখ মুখ। ড্রইং রুমের মেঝেতে বসে রেবা আর তার দুই মেয়ে আমার মায়ের সাথে গল্পঃ করছিলো হয়ত। টিউব লাইট এর নিয়ন আলোতেই রেবাকে,পূজার প্যান্ডেলে আমার দেখা দুর্গা প্রতিমার মতই লাগছিলো। সৃষ্টিকর্তা যেনো ওনার সবটুকু দিয়েই তিলেতিলে গড়ে তুলেছিলেন রেবাকে। এতোটুকুও সামান্য খুঁত রাখেননি কোথাও। আমাকে ঘরে ঢুকতে দেখে মাথায় ঘোমটা টেনে দিয়ে রেবা উঠে রান্না ঘরে চলে গেছিলো । আমার আর মায়ের জন্য চা জলখাবার তৈরি করে এনেছিল। মা রেবাকে এখানেই রাতের খাবার খেয়ে যেতে বললে বারে বারে সে আপত্তি জানিয়েছিলো। যখন মা ধমক দিয়েছিল তখনই রেবা নিমরাজি হয়েছিল। রাত দশটা নাগাদ রেবা তার মেয়েদেরকে নিয়ে আর তার বৃধ্য বাবার জন্য খাবার নিয়ে চলে গেছিলো। রাতের খাবার খেয়ে, বারান্দায় বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে ,মশারী টাঙিয়ে আমি Harrison এর মেডিসিনের বইটা সুটকেস থেকে খুলে snake bite নিয়ে , হার্ট ফেইলিওর নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছিলাম রাত প্রায় দুটো পর্যন্ত। মা অন্য ঘরে বিছানা আর মশারী টাঙিয়ে শুয়ে ছিলো। কিছুটা ভয়েভয়েই ছিলাম রাতটা কল বুক আসবে বলে। রাত্রিটা কিন্ত মোটামুটি নিরঝঞ্জাটই কেটেছিল। কেউই ডাকাডাকি আর করেনি। ভোরে উঠে মাকে সঙ্গে নিয়েই বাজারে গেছিলাম রিক্সা করে। মা এখনকার সংসারের জন্য টুকিটাকি জিনিস পত্র কিনেছিলেন। আমি চাল, আটা,ময়দা, ডাল, চিনি, দুধ ,সবজি, মাছ , কেরোসিন তেল, একটা চার ব্যাটারীর বড় টর্চ , একটা জনতা স্টোভ কিনেছিলাম। মা আরো কিছু বাসন পত্র, প্লাস্টিকের কৌটা,গামছা, রেবার জন্য একটা সুতির শাড়ি এগুলো কিনেছিলেন। আটটার মধ্যে কোয়ার্টারে ফিরে দেখেছিলাম রেবা গেটের সামনের সিড়িতে বসে আছে ঘোমটা দিয়ে। আমি বাথরুমের কাজসেরে স্নানকরে আউটডোরে যেতে প্রস্তুত হতেহতেই রেবা পরোটা আর বেগুন ভাজা , সাথে চা আর বিস্কুট দিয়ে গেছিলো। নটার কিছু পরেই আমি প্রথমে ওয়ার্ডে গিয়ে ছেলেটার খোজ নিতে শুনেছিলাম ওর বাড়ীর লোকেরা নিয়ে গেছে আর জি কর হাসপাতালে সকাল সাতটার মধ্যেই। মোটামুটি ঠিকই ছিল ছেলেটা। আর গতকাল মাঝরাতে মহিলা একটা ছেলের জন্ম দিয়েছিল। আমি আউটডোর শুরু করেছিলাম। এর মধ্যেই দুজন মুসলিম খালি গায়ে ,লুঙ্গী পড়া , লোক এক বড় বাক্স মিষ্টি আর কচি পাঁঠার মাংস নিয়ে হাজির। যে মুসলীম মহিলাটির episiotomy দিয়ে বাচ্চা ডেলিভারি করানো হয়েছিলো গত সপ্তাহে , তারই বাড়ির লোক এরা। ওদের ছেলে হয়েছিলো। আমি এসব কিছুতেই নেবো না। ওরাও আবার আমাকে ছাড়বে না। দেবেই আমাকে। যতোই তাদের বলি আমি নই , সুজাতা সিস্টার দিদিই ডেলিভারিটা করিয়েছেন , দিতে হলে ওনাকে দিন, উনি এখন মেল ওয়ার্ডে ডিউটি করছেন, ওরা আমাকে দেবেই। ওদের বক্তব্য সিস্টার দিদিদের ,কম্পাউন্ডার বাবুকে আর ডাক্তার লাহা কে আগেই ওরা দিয়ে গেছে এইসব। আমি বাড়ি চলে গেছিলাম বলে সেদিন আমাকে আর দিতে পারেনি। অগত্যা সেগুলো গ্রহণ করে বলেছিলাম দয়া করে কোয়ার্টারে দিয়ে আসতে আমার মায়ের হাতে তবে এতোটা মাংস( আমার কেন যেন হঠাৎ ধারণা হয়েছিল এগুলো হয়তো গোরুর মাংস হতেই পারে) আমাদের দুজনের জন্য লাগবে না। মা যত টুকু রাখবেন বাকিটা না হয় সুজাতা দিদিমনিকেই দিয়ে দিতে। আমার তো ফ্রিজ নেই । তাই নষ্ট হবে শুধু শুধু। এছাড়াও আগে জানলে না হয় মাছ কিনতাম না দুদিনের জন্য। একটা চিরকুটে মাকে লিখে দিয়েছিলাম " মা দুজন লোক আমার কোয়ার্টারে যাচ্ছে , মাংস ( গোরুর ও হতে পারে কিন্ত) আর মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে। মিষ্টির প্যাকেটের একটাও মিষ্টিও তুমি কিন্ত খাবে না । আমিও খাবো না। সবগুলোই রেবাকে দিয়ে দেবে। আর মাংস যদি তুমি রাখ, আজকের একবেলার মত অল্প করে নিয়ে বাকিটা ফেরৎ দিতে বলবে রেবাকে। মাছতো কেনা হয়েছে। নষ্ট হবে না হলে। এখানে কিন্ত বেশীর ভাগ লোক মুসলীম। রেবা হয়তো চিনতে পারবে মাংসটা খাসীর না গরুর" । পরে শুনেছিলাম মুসলিমদের দেওয়া কোনো গিফট নাকি ফিরিয়ে দিলে বা নিতে অস্বীকার করলে তাদের ধর্মে নাকি আঘাত করা হয়। ছোট খাটো ইস্যূ নিয়ে হিন্দু আর মুসলিমে পরবারের মধ্যে মারামারি লাগে এখানে। তখন হাসুয়া পাইপগান এসব চলে। রাজনীতির ইস্যু ও হয়ে দাড়ায়। কী ভয়ানক জায়গা ছিল এই বামনগাছি, আর জাগুলিয়া।

বামনগাছি, জাগুলিয়া, হৃদয়পুর ,দত্তপুকুর হাসনাবাদ এইসব এলাকায় তখনকার দিনে মুসলিম আর বাংলাদেশের থেকে বর্ডার পেরিয়ে চলে আসা রিফিউজি লোকজনের সংখ্যাই বেশী ছিলো। হিন্দু পরিবার আর স্থনীয় লোকজন মুসলিম পরিবারের থেকে কমই ছিলো। যারা ছিলো তাদের অনেক চাষ যোগ্য জমিজমা আর নানা রকম ব্যবসা ছিল এবং তারা বেশ ভালো ঘরের আর সম্পন্ন ঘরের পরিবার ছিলো। এদের জমিতে বা ব্যবসায় মুসলিম এবং রিফুজী লোকজনরা ভাগ চাষী , প্রান্তিক চাষী বা শ্রমিক বা লেবার হিসাবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কেউ বা বাজারে বসতো জমিতে ফলানো তরী তরকারী নিয়ে। শাক সবজি তরকারি সবই টাটকা। রেফুজী হয়ে যারা বাংলাদেশ ছেড়ে এসেছিল তারা সরকার থেকে দুই কাঠা করে জমি পেয়েছিল পঞ্চায়েতের মাধ্যমে বসবাস করবার জন্য আর রেশন কার্ড পেয়েছিল সরকারী বণ্টনে চাল গম কেরোসিন রেশন তুলতে। তখন তো বামফ্রন্টের রাজত্ব চলছে পশ্চিমবঙ্গে। বামফ্রন্টের ল্যান্ড রিফর্ম নীতি আর রেশন বণ্টন নীতি ভারতবর্ষে একটা উদাহণস্বরূপ হয়ে উঠেছিল। 

জাগুলিয়া হেলথ সেন্টারের আমার চাকরীর দ্বিতীয় সপ্তাহের সোম থেকে বৃহস্পতিবার (ডাক্তার লাহার পৌঁছানো পর্যন্ত ) তেমন আর কোনো উল্লেখ যোগ্য ঘটনা ঘটেনি যা আজকে আর মনে পড়ে। সাধারণ সকাল আর সন্ধ্যে দুইবেলা আউটডোরের লম্বা লাইনের রোগীদের ছাড়া প্রেসক্রিপশন আর ওষুধ দিয়ে, নিয়ম করে তিনটে ওয়ার্ডের ভর্তি থাকা রোগীদের রাউন্ড দেওয়া দুই বেলাই , নরমাল ডেলিভারি করানো ( অন ডিউটি নার্সই করতো ডেলিভারি) , ইনকিউবেটরে রাখা সদ্য জন্মানো বাচ্চাটাকে দেখা, আর ইমার্জেন্সিতে আসা টুকটাক কাটা ছেড়া, মেরে মাথা ফাটানো, মাথা ব্যাথা, পাতলা পায়খানা হওয়া, স্বর্দি, কাশি,আস্থমা রোগীর চিকিৎসা করা কিম্বা ধান চাষের জন্য কিটপতঙ্গ মারার কীটনাশক খেয়ে একজন ছেলের (প্রেমের বঞ্চনার আঘাত পেয়ে )সুইসাইড করার চেষ্টা করা( তাকে নাকি কম্পাউন্ডার বাবু নিজেই দেখে, স্টমাক ওয়াশ দিয়ে, পুলিশ রিপোর্ট লিখে আর কয়েক ভাইল Atropin ইঞ্জেকশন দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করে, অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে বারাসাত হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আমার অজ্ঞাত সারেই যাতে আমি এসে আবার তাকে ভর্তি না করি ওয়ার্ডে ) । এই হেলথসেন্টারে চাষের কীট পতঙ্গ মারার জন্য ঘরে রাখা কীটনাশক বা ইদুর মারার বিষ, আরশোলা মারার বিষ খেয়ে অনেকেই নাকি মাঝে মধ্যেই আসে। বেশীর ভাগই তরুণ ছেলে বা মেয়ে। প্রেমে প্রত্যাখ্যান হয়ে বা স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় কয়েকবার ফেল করে বা বাড়িতে মা বাবার হাতে মার বা বকা খেয়ে বা কোনো চাকরী, কোনো কাজ জোগাড় করতে না পেরে বা কেউ বা আবার ঋণগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে অর্গানোফসফরাস খেয়ে। তাদের এখানে নিয়ে এলে স্টমাক ওয়াস দিয়ে কয়েক ভাইল Atropin ইনজেকশন ইন্ত্রা মুস্কুলার দিয়ে, রুটিন পুলিশ কেস লিখে, বারাসাত হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়াটাই রীতি ছিলো । ই সি জি, পালস অক্সমিতার মনিটরিং এর ব্যবস্থা ছিলো না বলে। এখানেই প্রথম (১৯৮৫ সালে ) শুনেছিলাম যে অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিত দরিদ্র চাষী প্রান্তিক চাষী, ছোটছোট ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী, রিক্সাচালক, ভ্যানরিক্সা চালক বা ছোটমুদীর দোকানদার বা বাংলাদেশের থেকে আসা রিফিউজি লোকেদের, বৈধ লাইসেন্সে ছাড়াই ভুঁইফোড় গজিয়ে ওঠা কিছু নন ব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি

( এরা সুদখোড় এবং টাকা ধার দিয়ে সুদের ব্যাবসা করে ) এবং লাইসেন্সবিহীন মাইক্রোক্রেডিট লোন পাইয়ে দেওয়া কিছু ব্যাংকও চরা মাসিক হারে সুদে প্রথমে এদের নাকি টাকা ধার দেয় কোনো বন্ধক রাখার জন্য কাগজপত্র ছাড়াই ( প্রলোভিত করে ) এবং তারপর এই ঋন গ্রাহক গ্রহীতারা মাসিক কিস্তির টাকা কোনো কারণে যদি মেটাতে না পারলে, তখন ঋন গ্রাহকগ্রহীতারা বাধ্য হয়েই অন্য কোনো আরেকটা এন বি ফ সি কোম্পানির কাছে থেকে টাকা ধার করে , পরে আবার অন্য কোম্পানীর কাছে ধার করে, এর পরে ক্রমাগত ভাবে আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে,পাড়ার লোকজনের কাছে টাকা ধার করেই চলে। "বন্ধন "নামে মাইক্রো ফাইন্যান্স ব্যাংক আর "পীয়ারলেস ফাইন্যান্স আর ইন্স্যুরেন্স" বলে নতুন দুটো সরকারী বৈধ লাইসেন্সেবিহিন মাইক্রোফাইন্যান্স কোম্পানি এখানে এই রকম ( রাজ্য সরকারী বা রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার পারমিশন বা টাকা ধার দেবার ব্যবসা করার জন্য রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের বৈধ কোনো লাইসেন্স ছাড়াই) এইসব ব্যাবসা করে লোকাল পঞ্চায়েতের প্রশাসনের নাকের ডগায় অনেক বছর ধরে। প্রশাসন এদের কিছুই বলে না। এতে কিছু কিছু লোক বছর দুই তিন পরে এমন ভাবেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পরে মাইক্রো ফাইন্যান্স বা নন ব্যাংকিং ফাইন্যান্স কোম্পানীর কেবল সুদের টাকা মেটাতে গিয়ে ( এদের মূল টাকা আর পরিশোধ হয় না) , যে এরা কীটনাশক খেয়ে হয় আত্মহত্যা করবার চেষ্টা করে বা বাড়ি ছেড়ে চির দিনের জন্য পালিয়ে যায় ঋণের সুদের টাকা শোধ করতে না পেরে। মাস ছয় সাত পরে এই হেলথ সেন্টারেই কাজ করতে করতে আমি নিজেই এইরকম কিছু আত্মহত্যা করার জন্য অর্গানোফসফরাস খেয়ে বা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল কেস পেয়েছিলাম। কখনো তাদের ভর্তি করে চিকিৎসা করেছিলাম কখনো বা আমাকে বারাসাতে রেফার করে দিতে হয়েছিলো। এমনিই একটা কেস মনে আছে। মাঝবয়সী একজন বিবাহিতা হিন্দু মহিলার কথা। স্টমাকওয়াশ দেবার পরে তার পালস ৪৫ এর নিচে নেমে গেছিলো। লাংশে এদেমা হয়ে গেছিলো। ইন্ত্রাভেনাস ইনজেকশন দিয়েও তোলা যায়নি তার পালস । ভর্তি হবার একঘন্টার মধ্যেই আমার চোখের সামনে মারা গেছিলো সেই মহিলাটি। চার ঘণ্টা পরে ডেথ সার্টিফিকেট লিখে তার বডি হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। পুলিশ বিকেলে এসে বডি পোস্টমর্টেম করতে নিয়ে গেছিলো বারাসাতে। মহিলার বাড়ির লোকের কাছে শুনেছিলাম মহিলা সর্ব প্রথমে "বন্ধন " নামে মাইক্রোফাইন্যান্স ব্যাংক থেকে তখনকার দিনে খেপে খেপে মোট ২০০০০ টাকা ঋন গ্রহণ করেছিলেন বন্ধনের লোন অফিসারদের ভুলভাল বোঝানোতে এবং তাদের পূর্ন বিশ্বাস করে প্রথমে, তারপরে সেই লোনের মাসিক কিস্তি কয়েক মাস শোধ করতে না পেরে , আরো অনেকগুলো বারাসাতের, দত্তাপুকুরের , অশোক নগরের মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানি থেকে ক্রমাগত লোন নিতে শুরু করেছিলেন। এক জায়গা থেকে চরা মাসিক হারে ঋণ নিয়ে অন্য জায়গার থেকে নেওয়া ঋনের সুদ পরিশোধ করার ব্যার্থ চেষ্টা করেন তারপরও একই কারণে লোকাল সুদখোর ব্যবসায়ীদের কাছ( কাবুলিওয়ালা বলা যেতে পারে) থেকেও চরা হারে মাসিক সুদে ঋণ নিতে শুরু করেছিলেন। উনি নাকি লোন করতেন ওনাদের বাড়ির মধ্যেই ওনার স্বামী আর দুই ছেলের সাথে নিজেদের হাতে গড়ে তোলা একটা সূতির গেঞ্জির কারখানাকে বড় করতে গিয়ে আর এর প্রোডাকশন বাড়াতে। এই ভাবে বছর তিনকের মধ্যেই ওনারা ঋনগ্রস্ত হতে হতে একসময় এতটাই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে যে সুদখোর কাবুলি ওয়ালা ব্যবসায়ীদের আর বন্ধনের লোন রিকভারি অফিসার বা এজেন্টদের লোন আদায় করতে আসা ব্যবহারে, হুমকিতে, ক্রমাগত চাপে পড়েই, সুইসাইড করতে বাধ্য হয়। এগুলো আমি জানতে পেরে বয়ান হিসেবে পুলিশ রিপোর্টে পরে যোগ করেও দিয়েছিলাম। কিন্তু যত টুকু জেনেছিলাম যে এইসব সুদখোর ব্যাবসায়ীদের কিছুই হয় নি যদিও মৃত মহিলার স্বামী আমার পুলিশ রিপোর্ট নিয়ে FIR করেছিলেন বামনগাছি থানায় কোম্পানী গুলোর মালিকের নামে। কয়েকটা দৈনিক কাগজে একদিন শুধু ছোট করে একটা রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল সুইসাইডের কারণ হিসেবে "বন্ধনের" বিরুদ্ধে। এইরকম ভাবে বন্ধন ব্যাংক আরো কিছু মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানি গুলো এবং নন ব্যাংকিং ফাইন্যান্স কোম্পানি গুলোর জন্য পশ্চিমবঙ্গে অনেক জেলাতে ঋণগ্রস্ত হয়ে অনেক দরিদ্র মানুষ হয় মানষিক ভারসাম্য হারিয়েছেন, নয় টি বি তে আক্রান্ত হয়েছেন নয় সুইসাইড করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু কোম্পানি গুলোর মালিক বা লোন অফিসারদের শাস্তি হয় নি তেমন ভাবে। টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল প্রসাশনের। আমি আর মা বৃহস্পতিবার দুপুরের খাওয়া শেষ করে সোদপুরের বাড়িতে ফিরেছিলাম


           অধ্যায় পাঁচ

 আলোক , নকশাল পার্টি এবং কমিউনিস্ট পার্টি 

 এমনি ভাবেই কখনো বা আমার বৃদ্ধ বাবা , কখনো বা আমার মা, কখনো বা আমার এগারো বছরের দুই জমজ ভাই পালা করে আমার সাথে সপ্তাহের তিনদিন 

জাগুলিয়া হেলথ সেন্টারে গিয়ে কোয়ার্টারে থাকতে শুরু করেছিলো। যার জন্য নিজেকে তেমন একটা একা মনে হোত না হেলথ সেন্টারে। না হলে একা একা হেলথ সেন্টারে থাকাটা একজন যুবকের জন্য খুবই ডিপ্রেসনের ব্যাপার। এর মধ্যে দুই মসের মাইনে পেয়ে কোয়ার্টারের জন্য আমি একটা সাদা কালো (অ্যান্টেনা যুক্ত ) টিভি , একটা সন্তোষ কোম্পানির রেডিও আর একটা রেকর্ড প্লেয়ার কিছু গানের ক্যাসেট কিনে নিয়েছিলাম। আমার মাস মাইনে প্রায় ১৮০০ টাকার মত হয়েছিলো। রেবার সাথে আমার মায়ের কয়েকবার এখানে আসার পরে, মোটামুটি ভাবে একটা সমঝোতা হয়ে গেছিলো আর আমার দুই যমজ ভাইয়ের সাথেও। রেবা কিন্ত আমার সাথে অবশ্য তেমন খুব একটা কোনো কথাই বলত না। রান্নার জন্য কোনো কিছুর আনবার দরকার হলে সেটাই বলতো। কেবল মা থাকলেই সন্ধ্যার সময়টা ও ওর দুই মেয়েকে নিয়ে কোয়ার্টারে আসতো এবং আমার কোয়ার্টারেই রাতের খাবার খেয়ে ওর বাবার জন্য কিছু খাবার টিফিন ক্যারিয়ারে করে নিয়ে যেতো। আমি দুপুরে আর রাতের খাবার পরে হ্যারিসনের মেডিসিনের বই বা এম সি কিউ মশারীর ভেতরে শুয়ে সলভ করতে শুরু করেছিলাম যাতে এম.ডিতে ভর্তি হতে চান্স পাই তিন বছর পরে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.ডি এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে। তখনকার দিনে এমডি বা MS কোর্সে ভর্তির চান্স পাওয়া আর হাতে চাঁদ পাওয়া একই ব্যাপার ছিলো। সোদপুরের আমার প্রাইভেট চেম্বারটা বৃহস্পতিবার রাতে আর শুক্র থেকে রবিবার দুবেলাই খুলতাম। খুবই অল্প রোগী হত আমার । 

সেই সপ্তাহে নমিতাকাকী বোধহয় ওনার দুই ছেলে সহ বোলপুরের ওনাদের বাপের বাড়িতে গেছিলেন বলেই ,আমার ট্রান্সফার হবার খবরটা এবং জাগুলিয়ার প্রাইমারী হেলথ সেন্টারে জইন করবার কথাটা জানতে পারেন নি। আমিও অবশ্য নিজে থেকে জানাইনি ওনাকে এই ব্যাপারে। বেশ কয়েক সপ্তাহ পরেই জেনেছিলেন উনি পাড়ার লোকজনের কানাঘুসোতে আর পুরোটা জেনেছিলেন আমার চেম্বারে রাত সাতটর সময় নিজে এলে, নিজেকেই দেখাতে এসে একদিন । সেদিন আমার ওপরে খুবই অভিমান হয়েছিলো ওনার । আমি ওনাকে তখনও একদমই আপন বলে একটুকুও মনে করি না বলে। ওনাকে শুধুই রোগিনীর চোখেই দেখি বলে। একবারও মুখ ফুটে বলিনি যে আমার ট্রান্সফার হয়ে গেছে বারাকপুর হাসপাতাল থেকে। অথচ উনি আমাকে নাকি সত্যিসত্যিই মানসিক দিক থেকে ভালোবেসে ফেলেছেন। আর মানসিক দিক থেকেই, ওনার সব কিছুই ( একজন পুরুষ একজন নারীর কাছে যা চায়) আমাকে দিতেও উনি সব রকমের প্রস্তুত ।আমিইতো নাকি মুখ ফিরিয়ে ছিলাম ওনার থেকে। নিতেই চাইছিলাম না। অথচ উনি কিন্ত আমাকে সম্পূর্ন ভাবেই পেতে চান। উনি আর কতই বা বারেবারে বেহায়া হতে পারেন আমার কাছে? ওনার দু চোখ বেশ ছল ছল করছিল। ওনার মান অভিমান ভাঙাতে শেষমেশ আমার ফাঁকা হয়ে যাওয়া চেম্বারের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে এসে নিজের চেয়ারে বসে ওনার ডান হাত ধরে টেনে কোলে বসাতে চাইলে উনি বেশ কিছুক্ষন মাথা নীচু করে গোঁজ মেরে আমার টেবিলের উলটো দিকের চেয়ারে বসেছিলেন । এর পরে নিজেই একসময়ে উঠে এসে আমার কোলের ওপরে বসেছিলেন দুপা ঝুলিয়ে বাচ্চা মেয়েদের মত। বেশ কিছুটা সময় নিয়েই ওনাকে আদর আর মৃদু চুমু খেলে উনি সাড়াও দিয়েছিলেন। ওনার অভিমান ভেঙেছিল এরপরে। আমাকেও আদর করতে করতেই উনিই প্রস্তাবটা দিয়েছিলেন " আমি যদি ওনার ছোট বোনকে বিয়ে করি তবে উনি কৃতজ্ঞ থাকবেন আমার কাছে সারাজীবন। আমি রাজি থাকলে উনি এবং ওনার বাপের বাড়ির লোক আমার মা বাবার সাথে কথা বলতে যাবেন একদিন।" ওনার ছোট বোনকে অবশ্য আগে আমি চাক্ষুষ দেখিনি আগে। আমার চেয়ে নাকি বছর দুয়েকে বা তিনেকের বড়ই হবেন বয়েসে। (হাওড়ার শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিিয়ারিং কলেজ থেকে ওনার ছোটবোন যে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আগেইতো সেটা জেনেছিলাম) তাতে ওনাদের দিক থেকে অসুবিধে নেই যদি আমার মত থাকে। ওনার ছোট বোনও নাকি রাজী আছেন এই প্রস্তাবে। ওনার ছোট বোনের ছবি বাড়িতে গেলে উনি দেখবেন" উনি বলেছিলেন " আমার থেকেও সুন্দরী, স্মার্ট আর বেশ ভালো রোজগার করে, ওর নিজের ফার্ম করেছে বোলপুরের " আমাকে সুখী করতে পারবেন ওনার বোন আমি বিয়ে করলে তাকে। "

 আমি বলেছিলাম _" আপনার ছোট বোন কি কখনো অজ জাগুলিয়া গ্রামের প্রাইমারী হেলথ সেন্টারের কোয়ার্টারে গিয়ে থাকবেন নাকি বোলপুরের শহরের সাছ্যন্দ ছেড়ে ? পাগল হয়েছেন নাকি উনি, না মাথা খারাপ হয়েছে ওনার যে নিজের এতদিনের কষ্টে গড়ে তোলা বিজনেস ছেড়ে, নিজের একটা ভালো রোজগার ছেড়ে কেউ গ্রামে গিয়ে পড়ে থাকে নাকি স্বামীর ওপরে নির্ভরশীল হয়ে?"

_" কেনো? থাকে না বুঝি? আমি বুঝি ছেড়ে আসিনি আমার বাপের বাড়ির সাছ্যন্দ ? আমাদের বাড়ির অমন প্প্রাচুজ্যের একটা জীবন ছেড়ে দিয়ে মাত্র ২৪ বছর বয়েসে, সোদপুরের একতলা চারঘরের আমার স্বামীর যৌথ সংসারে ? আমাদের বাড়ি একবার গেলে বুঝতেগো তুমি ডাক্তার ,কত বড় বিজনেস বাড়ির মেয়ে ছিলাম আমিও বিয়ের আগে। এক ডাকে বোলপুর শান্তিনিকেতনের সবাই চেনে আমাদের বাড়ি। পড়াশুনো ও কিন্তু আমার বিশ্বভারতীথেকেই তাও ,ফরাসী সাহিত্যে। আমার স্বামীতো আবার দোজবরে ছিলেন। যদিও সতীনের সন্তান কেউ ছিলো না। আমার চেয়ে সে আবার ১৬ বছরের বড় বয়েসে। আমাকে কিন্তু তবুও তো তার সাথেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিলো। বলেছিতো তোমাকে ডাক্তার , ইঞ্জনিয়ার স্বামি হবে আমার সেটা আমার খুব সখ ছিলো। সব সখ আর সূখ কী পূর্ণ হয় গো ডাক্তার মানুষের ? হয় না! আর আমি পারলে আমার বোন কেনো পারবে না গো? আর আমার দিদি অন্য খুড়তুতো মামাতো জ্যাঠতুত দিদি বোনদের সবারই বড়োলোক বাড়ির , বিজনেস বাড়ির ছেলের সাথেই বিয়ে হয়েছে। কজন সুখী হয়েছে তারা বিবাহিত জীবনে? আমি তো সবই জানি। আর বিবাহিত জীবনে আমি কিন্তু কম সুখী ছিলাম না এখানে এসে । আমার স্বামী আমাকে চোখে হারাতেন। আমার কোনো সাধ অপূর্ন রাখতেন না তিনি। বাড়ির সবাই আজও স্বীকার করে জামাই হিসাবে কিন্ত আমার স্বামীটিই সব চেয়ে ভালো হয়েছিলো। সবই তো জানো তুমি। কিছুই তো লুকাইনি তোমাকে!" অকাট্য যুক্তি ওনার। আমি বলেছিলাম 

-" বিয়ের পরে যদি আপনার ছোটবোন, আপনার ইচ্ছে অনুযায়ী ,আমার আর আপনার এই গোপন সম্পর্কটা কোনো ভাবেই যদি জানতে বা বুঝতে পারেন কি হবে তখন? " উনি মেনে নেবেন বুঝি? "

 উনি আমার নাক টিপে, গাল খামচে দিয়ে ঠোটে মৃদু চুমু খেয়ে বলেছিলেন 

_ " এই ভয়? নিশ্চিন্তে থাকো ডাক্তার, জীবনে কোনোদিনও সে আমার থেকে অন্তত বিন্দুবিস্বর্গ আমাদের এই সম্পর্কের কথা জানতেও পারবে না, যদি না তুমি নিজে কখনো বল তাকে। আর শুধু আমার বোন কেনোগো, এই পৃথিবীর কেউই সেটা জানতে পারবে না আমার দিক থেকে । তোমার সেই ভয় নেইগো ডাক্তার কথা দিচ্ছি তোমাকে। আগেও কিন্তু কথা দিয়েছি তোমাকে। শুধু তুমি আর আমিই জানবো আমাদের দুজনের সম্পর্ক"

-" সে না হয় পৃথিবীর কেউই জানতে পারবে না আপনার আর আমার থেকে , কিন্তু আপনার হাজব্যান্ড কিন্ত ওপর থেকে সবই দেখছেন এই যে আপনি আমারই কোলে বসেই এখন আমাকে আদর করছেন! উনি রাগ করবেন না বুঝি এতে ?" কষ্ট পাবেন না এতে??"

উনি মুচকি হেসে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলেছিলেন " ইসস । কোলে কে আমাকে হাত ধরে টেনে এনে বসালো শুনি? আমি ? না তুমি?" আর যদি সে দেখেও ওপর থেকে দেখুগে। বয়েই গেছে তাতে আমার !।ডাং ডাং করে দিব্যি ওপরে চলে যাবার সময় এতটুক মনে ছিলো না আমাদের কথা তার? একবারও তো বললো না সে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে যে ? তাও এতো তাড়াহুরো করে ? একদম হঠাৎ করেই? এই ছিলো বুঝি তার ভালবাসা? একবারও ভাবলো নাগো নিজের নাবালক ছেলে দুটোর কথা। কত বয়েস বলো ওদের । ১০ আর ৬! ওরাও তো বাবার মর্মটাই ঠিকমত বুঝলই না। ওরা কি করবে বাবা ছাড়া? কী ভীষণ সার্থপর ছিলো উনি। আর আমিই বা কি করবো ওনাকে ছাড়া? ভাবে নি তো? কতই বা বয়েস এখন আমার। ৩৭-৩৮ । এই বয়েসে একটা মেয়ের বিধবা হবার মানে বোঝো তুমি? বুঝবেই বা কি করে তুমি? হলেও বা না হয় তুমি ডাক্তার? পুরুষ মানুষ তো। আর ডাক্তারদের মনটন বলে কিছু আর থাকে না মনে হয় তোমাকে অন্তত দেখলে তাই মনে হয় আমার। আমার অবশ্য অন্য রকম ধারণাই ছিলো ডাক্তারদের নিয়ে। ভুল ভাবতাম আমি। 

-" তাই বুঝি? ডাক্তারদের কারুরই মন বলে কিছুই থাকে না বুঝি? তারা তো আর মানুষ নয়। তারা তাদের বউ, ছেলে, মেয়েদের বাবা, মা ,ভাই, বোনদের ভালোবাসে না বুঝি মনে হয় আপনার ?

- " তোমার বাবা মা ভাই বোনদের কথা আমি বলতে পারবো না। জানিনা। তবে আমাকে তুমি যে একটুও ভালোবাসোনি, সেটা কিন্ত বুঝতে অসুবিধে হয় না আমার। আমিই ভুল করে ফেলেছি জানো তো মানষিক দিক থেকে এগিয়ে গিয়ে তোমার কাছে" 

-"কিন্ত লাভ কি এই সম্পর্কে জড়িয়ে নিজেদের বলুনতো? বরঞ্চ আপনার দিকথেকে দেখলেও আপনারই লোকসান। কলঙ্কের কালিমা শুধু লেপন হবে আপনার সারা গায়ে। বড় হয়ে আপনার ছেলেরা যখন জানবে তাদের মায়ের সম্পর্কে কি চোখে দেখবে তারা আপনাকে ভাবুন তো "

-"জানি তো ডাক্তার। সবই জানি । তবুও তো নিজেকে আটকে রাখতে পারিনা যে । তুমি তোমার অজান্তেই আমার যে কি সর্বনাশ করেছ সেটা তুমি বুঝতে পারো না আর পারবেও না কোনোদিনও" 

-"একটা কথা বলবো তোমাকে? কিছু মনে করবে না তো? '

-" বলুন না অনেক কথাই তো হলো বলা? নতুন আর কি বলবেন ? "

উনি বেশ কিছুক্ষন আমার চোখেরদিকে একেবারেই পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থেকে চাপা অথচ ফিস্ ফিস্ করে বলেছিলেন " আমি না সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিগো ডাক্তার। পাপ আর পুন্যের কথা আমি জানিনা। বুঝি না। ভাবিও না আজকাল। তুমি ডাক্তার হয়েও মানো পাপ পুন্যের, ভগবানের কথা? আমি এটাও জানি যে আমি তোমার চেয়ে ১৩ বছরের বড় বয়েসে। আমি বিধবা একজন মেয়ে মানুষ। আমার দু দুটো নাবালক ছেলেও আছে। তাদের প্রতি আমার কর্তব্য আছে মা হিসেবে মানুষ করবার জন্য। সেটাই আমার এখন প্রথম কর্তব্য। আমার শ্বশুড়, দেওর, জা এদের প্রতিও আমার দায় দায়িত্ব কর্তব্য, ভালোবাসা আছে। আমার এখনকার সংসারের প্রতিও আমার যথেষ্ট ভালবাসা রয়েছে। এটাও খুবই বুঝি আমার তোমার সাথে আমার এই অবৈধ প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়াটা একদম ঠিক নয় আমাদের দুইজনের। তোমারও তো বড় একটা ভবিষ্যত পড়ে আছে সামনে। তোমারও তো মা ,বাবা, বোন, ছয় ভাই সহ একটা পরিবার আছে । আমাদের দুজনেরই সামনে সমাজ আছে । পাড়ার লোকজন আছে , আমাদের দুজনেরই আত্মীয় স্বজন আছে। এটাও জানি তারাও এই সম্পর্কটা কোনো ভাবেই মেনে নেবেন না কোনোদিনও। আমাদের নামে অনেক কলঙ্ক রটবে আমিও জানি। এর পরিণামও খুবই খারাপ হবে। কিন্ত আমিই বা কী করবো তুমিই বলো না ডাক্তার ! নিজেকে নিজেই কতবার যে বুঝিয়েছি। রাতের পর রাত নিজের মনের সাথে নিজে ঝগড়া করেছি যুঝেছি। নিজেকেই নিজে চাবুক মেরেছি। বিশ্বাস কর ডাক্তার হেরে গেছি নিজের কাছে নিজেই। মানুষের মনের চিন্তা ভাবনার ওপরে আর তার তো আর হাত থাকে না। তাই তো ডাক্তার? তোমাকে যে আমার নিজের কাছে পেতে খুব ইচ্ছে করে । তাইতো এই বিয়ের প্রস্তাবটা আমার বাপের বাড়িতে নিজেই তুলেছিলাম বাবা, বড়দি ,দাদা বৌদিদের কাছে। আমার বোনও কিন্ত ছিলো সেই আলোচনায়। বাড়িতে কারুর তেমন আপত্তি নেই। আমার বোনও রাজি। এখন তোমার যদি মত থাকে তবে আমার দাদা বউদি তোমার মা বাবার সাথে কথা বলতে যাবে। তুমি একটু ভেবে নিয়ে জানিও আমাকে। আমি এখন না হয় বাড়ি যাই। নয়টা বাজতে চললো যে সবাইকে রাতের খাবার দিতে হবে। তোমার কাছে এলে সময় যে কথা দিয়ে ফুরিয়ে যায় টেরও পাই না। তোমাকে ধন্যবাদ।


আলোকের সাথে আমার প্রথম পরিচয় এই হেলথ সেন্টার হাসপাতালেই ,আলোক পায়ে গুলি খেয়ে ভর্তি হবার পরে। অলোক মাঝ থাইতে গুলি খেয়ে ভর্তি হয়েছিলো হাসপাতালে, বামনগাছিতে কোথাও কোনো এনকাউন্টারে। আমার তখন বোধকরি মাস তিনেক হয়েগেছে এই হেলথ সেন্টারে। একদিন দুপুরে ভাতঘুম ঘুমাচ্ছিলাম কোয়ার্টারে, হাসপাতালের আউটডোর আর রাউন্ড শেষ করে, খেয়েদেয়ে । সাথে সেই সপ্তাহে আমার সংগে বাবা এসেছিলেন। হঠাৎ বাবা আমার ঘুম ভাঙিয়ে তুলে বলেছিলেন " তোকে অনেক লোকে ডাকছে বাইরে কেনো দেখ ! কোনো খারাপ রোগী এসেছে হয়তো "। কোয়ার্টারের বাইরে দেখি , গ্রামের অনেকগুলো অচেনা লোক জড়ো হয়েছে " এদের আগে কখনোই দেখিনি হাসপাতালে। সেটা মার্চ মাস ছিলো মনে আছে। আমি তখন গেঞ্জি আর পায়জামা পরে ছিলাম। সেই অবস্থায় বের হতেই, হৈ চৈ করে বেশ কিছু লোক আমাকে প্রায় পাজাকোলা করেই তুলে নিয়ে ইমার্জেন্সিতে এসেছিলো। যতোই তাদের বলেছিলাম যে জামা প্যান্টটা পরে আসতে দিন তারা শোনেনি। তাদের কয়েকজনের হাতে দেখেছিলাম পাইপগান, রিভলভার, দা, হাসুয়া, লাঠি। যেনো কোনো যুদ্ধক্ষেত্র থেকেই ওরা আসছে। ইমারজেন্সিতে এক গাদা লোক জমায়েত। ঢুকে দেখি বছর তিরিশের লিকলিকে, হাড় গিলগিলে, তামাটে গায়ের রং একটা লোক স্ট্রেচারে শুয়ে কাতরাচ্ছে আর তার ডান দিকের থাই বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। সিস্টার দিদিও ভয়ে সিঁটকে আছে। কী ভাবে হলো ওদের জিজ্ঞেস করতে,একজন বললো পায়ে গুলি লেগেছে। আমি দ্রুত ক্ষত স্থানটা গজ দিয়ে টাইট করে ব্যান্ডেজ করে কম্পাউন্ডার বাবুকে ডাকতে বললে দুতিন জন দ্রুত বেড়িয়ে গিয়ে মিনিট দশ এর মধ্যে ওনাকে নিয়ে এসেছিল। আমরা দুজনে মিলে ঠিক করেছিলাম ও টি তে নিয়ে গিয়ে গুলিটা বার করতে হবে আর ব্লিডিং হচ্ছে যে ধমনীটা থেকে সেটা বাঁধতে হবেই। বারাসাতে রেফার করা যাবে না। যেতে যেতে জারকিংয়ে আরও ব্লিডিং বাড়বে। কম্পাউন্ডার বাবু নাকে ইথার অ্যানাসথেসিয়া দেবে আমি আর নার্স দিদি নামবো অপারেশনে। তখনই নামটা জেনেছিলাম । ছেলেটার নাম অলোক দাস । নার্স দিদি অলোককে তৈরি করেছিলেন ও টি র জন্য। প্রায় একঘন্টার অপারেশনে গুলিটা বেরিয়েছিল। ফেমরাল ধমনীর একটা ছোট ব্র্যাঞ্চ ছিঁড়ে গেছিলো। সেটা ভালো করে বেধে দেওয়া হয়েছিলো। গুলিটা অলকের ফিমার 🦴 হাড়ও ফ্র্যাকচার করেছিলো। তখন হেলথ সেন্টারে কোনো এক্সটার্নাল ফিক্সেটর বা এলিসারোভার বা ফিক্স করার প্লেট বা নেল না থাকার জন্য , গুলিতে lacerated মাসলগুলো বাদ দিয়ে মাসলগুলোকে এন্ড টু এন্ড স্টিচ করে ক্ষত স্থান সেলাই করে বেড়িয়ে এসেছিলাম। অলকের সাঙ্গোপাঙ্গোরা কোনোরকম পুলিসকেস না লিখতে আমাকে হুমকি দিতে থাকলে ,কম্পাউন্ডারবাবুও ইশারা করে আমাকে ওদের কথায় সায় দিতে বলেছিলেন। অলোক এরপরে প্রায় তিনমাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলো পায়ের হাড় জোড়া লাগাতে ট্রাকশন দিয়ে। অলোকের বাড়ীর লোক ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলেও সে যায় নি। আমি প্রতি সপ্তাহের তিনদিন ওর ক্ষতস্থান ড্রেসিং করে দিতাম নিজে দাড়িয়ে থেকে। সেই সময়ই ওর সাথে আমার পরিচয় হয় । অলোক কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের ইকোনমিকস এর প্রথম শ্রেণীর প্রথম হওয়া ছেলে শুনে প্রথমেই আমি সত্যিই ঘাবড়ে গেছিলাম। এরপরে ও নাকি ইকোনমিকসের মাস্টার্স ডিগ্রি করে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে। প্রেসিডেন্সিতে পড়বার সময় রাজনীতিতে হাতে খড়ি। সেটা আবার নকশাল পার্টির রাজনীতি। সেই ছেলেকে এখানে এই অবস্থায় দেখতে পাবো এটা সত্যিই আমার কল্পনার বাইরেই ছিলো। অলোককে দেখেছিলাম এই হেলথ সেন্টারের সকলেই চেনে একডাকে, । অলোক নাকি এই গ্রামেই অ্যাক্টিভ রাজনীতি করে আর তার রাজনীতি এখানেও ছিলো নকশাল পার্টিরই রাজনীতি। অলোক আমাকে বলেছিলো সে জাগুলিয়ার হাইস্কুল থেকেই প্রথম বিভাগে তিনটে সাবজেক্টে লেটার মার্কস নিয়ে পাস করে বেরিয়েছিলো। জাগুলিয়ার সচ্ছল এক পরিবারের ছোট ছেলে সে। সেই সময়ে জাগুলিয়া গ্রামে পাকা ইটের বাড়ির সংখ্যা ৩০০ এর মত ছিলো মনে পড়ছে। তার মধ্যে দোতলা বাড়ি হয়তো গোটা ২৪-২৫ এর মত। অলোকদের তিনতলা বাড়িটা ছিলো বেশ কয়েক কাঠা জমি নিয়ে আর অনেকটাই জায়গা নিয়ে । ইংরেজ আমলের কাঠামোতে তৈরি বাড়ি এবং সেখানে অনেক রকম মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে গাছও ছিলো। নানা রকম ফুলের গাছ,আম , জাম, কাঠাল, লিচু নারিকেল,সুপারী গাছ সবই ছিল। অলোক ক্র্যাচ নিয়ে হাঁটতে পারলে একদিন আমাকে নিয়ে গেছিলো ওদের বাড়ি। এর মধ্যে অলকের বাড়ির লোকজনের সাথে আমার পরিচয় হয়ে গেছিলো কিছুটা। আলোকের দুই দাদা বিদেশে থাকতেন। অলকের মা বাবা আগেই মারা গেছিলেন। বাড়িতে বড় দাদা , বড় বৌদি ,কাকা কাকীমা খুড়তুতো ভাই, ভাইপো ভাইজি বিধবা বোন আর তার মেয়েরা। 

 

# ১৯৮৪-৮৭তে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে শহরতলীর এবং গ্রামেগঞ্জের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিন্তু খুব বিশেষ একটা ভালো ছিলো না। বলা যায় টালমাটাল ছিলো । রাইটার্সবিল্ডিং এ এই রাজ্যের শাসন করার জন্য গদিতে তখন বাম ফ্রন্ট সরকার। ১৯৭৭ সাল থেকে শুরু করে দ্বিতীয় বারের জন্য গদিতে আসীন বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে। কংগ্রেস জনতা আর ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এই পার্টি গুলো দ্বিতীয় বারের ভোটে একেবারে ধুয়ে মুছে সাফ। বি জে পি তো ধূলিসাৎ হতে চলেছে। অ্যাসেম্বলি এর বিরোধী আসন প্রায় শুন্য। চারিদিকে শুধুই ফ্রন্ট আর সি পি এম। আর সেই ফ্রন্ট সরকার চলতো ফ্রন্টের প্রধান পার্টি সি পি এম এর অঙ্গুলী হেলনে। সি পি এম এর কেন্দ্রীয় বা রাজ্য কমিটি যা করতে বলত সরকার সেটাই করবার চেষ্টা করতো। তাই এই রাজ্যে তখন কংগ্রেস, বি জে পি, জনতা সংঘ, স্বান্ত্রা পার্টি নকশাল পার্টির আন্দোলন এগুলোতো প্রায় সময় লেগেই থাকতো নিজেদের স্বর্থে। , তার সাথেই ছিলো কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে, প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পরে রাজীব গান্ধীর দিক থেকে যত রকমের সম্ভব অসহায়তা করা এমন কি রাজ্যের প্রাপ্য টাকাটাও ও দিতো না তারা। সব দিক থেকেই এই অসহায়তা গুলো ছিলো পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উন্নয়নের জন্য বড় ধরনের বাধা। ১৯৮২ সালে কংগ্রেস পার্টি এবং কংগ্রেস জোট পশ্চিম বঙ্গে অ্যাসেম্বলি ভোটে দ্বিতীয় বার হেরে ভুত হয়ে পার্টির অস্বিত্ব কোনো ভাবে বজায় রাখতে তখন ব্যস্ত এবং সেটা করত ফ্রন্ট সরকারের প্রায় সমস্ত উন্নান্যান মূলক কাজে বাধা উৎপত্তি করে । নিজদের অস্বিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রায় রোজ কোনো না কোনো ইস্যু তে বনধ ডাকা ,মারপিট করে, দাঙ্গা হাঙ্গামা প্রায়সময়ই করতো । গোদের উপর বিষফরা ছিলো সি পি এম এল বা নকশাল পার্টির রাজনীতি , আন্দোলন, মানুষ খুন। এর ওপরে আবার ছিলো সি পি এম পার্টির মুসলিম লীগের নেতাদের সাথে সমঝোতা ভোটের বাক্স ঠিক ভাবে রক্ষা করবার জন্য আর বাংলাদেশ থেকে ১৯৭২- ১৯৭৪ সালের উদ্বাস্তুদের স্বার্থ রক্ষা করতে। সবটাই ছিলো ফ্রন্টের ভোটের বাক্স যাতে বজায় থাকে। ইউনিয়ন ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ও চেষ্টা করতো একইভাবে মুসলিম আর উদ্বাস্তু শরণার্থী দের ভোট তাদের দিকে ঘুরিয়ে টেনে আনতে সব কিছু দিয়ে চেষ্টা চালানো। এর ফলে রাজ্য রাজনীতিতে আরো দাঙ্গা ,মারামারি, আন্দোলন বেড়ে চলেছিল। ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী তার শিখ দেহরক্ষীর হাতে নিজের সরকারী ভবনে গুলি খেয়ে নিহত হলেন। এবং সারা দেশ জুড়ে শিখ নিধন কর্মসূচি শুরু হয়েছিলো। রায়ট দাঙ্গা শুরু হয়েছিল সমস্ত দেশ জুড়ে। পশ্চিমবঙ্গে ফ্রন্ট সরকার শিখদের পাশে দাড়িয়েছিল এবং কংগ্রেস দ্বারা সৃষ্ট সেই শিখ নিধন রায়ট কে সমর্থন করেনি

পশ্চিমবঙ্গে তাই তখন বেকারত্ব, গরিবী, ইনফ্লেশন, এবং জীবন ধারণের বেসিক আমিনিতিজের অভাব । তার মধ্যেও গ্রামেরগঞ্জের ইকোনমিক উন্নতি কিছু না কিছু ঘটেছিল । তার মধ্যে হেলথ সিস্টেম একটা। 


অলক এই হাসপাতালে ট্রেকশনে থাকবার সময় নিজের জীবনের বেশ কিছুটা অংশ আমাকে বলেছিলো । অলক ছোটো জাগুলিয়া গ্রামের মোটামুটি এক সচ্ছল যৌথ পরিবারের ছেলে। তাদের বাড়িটা তিনতলা সরীকি বাড়ি , ইংরেজ আমলের কাঠামোতে তৈরি করেছিলেন অলকের ঠাকুরদার ,বাবা। এই গ্রামেরই উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকেই তার পড়াশুনো এবং বড় হয়ে ওঠা। তার দাদারা এবং বোনেরাও এই গ্রামের স্কুল থেকেই পড়াশুনো করেছিল। দুই দাদাদের একজন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ার আর একজন কলকাতার বোস ইনস্টিটিউট থেকে পদার্থবিদ্যায় 

পি এইচ ডি করে দুজনেই বিদেশে চলে গেছিলো এবং সেখানে সেটেল্ড ওরা এখন। অলক স্কুলের বরাবরের ফার্স্ট বয় ছিলো কিন্ত ও নবম শ্রেণীতে আর্টস নিয়েছিল। এখানের স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় তিন তিনটে সাবজেক্টে লেটার মার্কস নিয়ে আর্টসে দ্বিতীয় স্থান নিয়ে পাস করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়েছিল ইকোনমিকস হনোরস নিয়ে। হিন্দু হোস্টেলে থাকত তখন অলক । সেখানেই সে নিশিকান্ত বলে প্রেসিডেন্সির এক সিনিয়র ছাত্রের সংস্পর্শে আসে এবং ধীরে ধীরে নকশাল রাজনীতিতে জড়িয়ে পরে। হিন্দু হোস্টেলে থাকা কালীন সে বিড়ি, গাঁজা, চরস আরো অন্য কিছুর নেশায় জড়িয়ে পড়ে। এর জন্যেও দায়ী ছিলো নিশিকান্ত। সেও নেশাখোর ছিলো। অলকের লক্ষ্য ছিলো তার গ্রাম ছোটজাগুলিয়ার গরীবগুর্বু রিফিউজি অল্প শিক্ষিত অশিক্ষিত প্রান্তিক চাষী বা কারখানার শ্রমিক মানুষগুলোর জন্য, তাদের সন্তানদের লেখাপড়া তাদের যাতে মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর বা নন ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানিগুলোর যমদূত গুলোর ঋণের হাতথেকে বাঁচাতে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির, তাদের স্বাস্থের উন্নতির জন্য সে কাজ করবে পড়াশুনো শেষ করে। নকশাল রাজনীতিতে, নেশায় জড়িয়ে পড়লেও কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় কিন্ত সে প্রথমশ্রেণীতেই প্রথম হয়েই ইকোনমিকস নিয়ে বি এ পাস করেছিল। এর পরে সে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ ইকোনমিকস করতে ভর্তি হয়েছিলো। সেখানেই তার প্রথম চারু মজুমদারের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিলো। সে মুগ্ধ হয়েছিল চারু মজুমদারের সমাজ পাল্টানোর কথায়


বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সময় মাঝারি ধরনের ঘরোয়া সুন্দরী কিন্তু বুদ্ধিমতী একটি তারই বয়সী মেয়ের "রোমানার " সংস্পর্শে এসেছিলো অলক। রোমানা তখন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজরা আইন কলেজে, আইন নিয়ে এম এল এল বি পড়াশুনো করছিলো । ও উত্তর কোলকাতার হেদুয়ার ভেংগে যাওয়া , আলাদা হয়ে যাওয়া এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ছিলো। ওদের ভাগে ছোটছোট দুটো ঘর পড়েছিল। তার মধ্যেই ওর বাবা রান্নার একটা চিলতে ঘর তুলে নিয়েছিল। রোমানারা দুই বোন ছিলো। রোমানা ছোট ।ওর বড় দিদি এনাক্ষ্মী প্রেম করে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল তাদের গানের টিচার এর সাথে। বাড়িতে কেউ মেনে নেয়নি তাদের বিয়েটা । তাই তারা আসতে পারেনা এই বাড়িতে। রোমানার বড় দিদির পুঁচকে একটা মেয়ে হয়েছিল। রোমানার তাকে কোলে নিয়ে দুই হাতে কচলাতে খুব ভালো বাসে। তাই সেইই দিদির বাড়ি যেতো। অলক আর রোমানার মেলামেশা একসময় প্রেমের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল। রোমানা কিন্তু অলকের নকশাল রাজনীতি করাটা একদমই পছন্দ করত না। রোমানা সাধারণ ঘরোয়া একটা মেয়ে ছিল। যেমন সব মেয়েরা হয়। কোনো স্পেশাল গুন ছিলো না তার মধ্যে। তার ধারণা হয়েছিলো যে অলকের মত এতো ব্রিলিয়ান্ট ক্যারিয়ারের ছেলে এই নকশাল পার্টির সাথে নিজেকে জড়িয়ে সে ভুল করেছে। সে তার নিজের জীবন আর ভবিষ্যত নষ্ট করছে এবং করছেও। রোমানা অলককে অনেকভাবেই বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে রাজনীতির কোনো ভবিষ্যত নেই, যে রাজনৈতিক মতাদর্শের কোনো দিশা নেই, যে রাজনীতি শুধু মানুষ খুন করে কথায় কথায় তাকে বুর্জোয়া আখ্যা দিয়ে, তার সাথে নিজেকে জড়ানো ঠিক নয়। রোমানা অলকের নেশার কথা জানতো না। রোমানা কেবলই চাইত অলক তাকে বিয়ে করুক, সে একটা ভালো চাকরী করুক, বা তাকে বিয়ে করে তার দাদাদের মত বিদেশ যাক সেখানে তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে একটা সুখের সংসার করুক এবং অলককে সে প্রায়ই বোঝাবার চেষ্টা করতো যাতে সে নকশাল পার্টির সাথে যোগাযোগ ছেড়ে নকশাল রাজনীতি ছেড়ে মেইন স্ট্রিম সোসাইটিতে ফেরৎ আসে। কিন্তু অলক তার কথা এক কানে শুনত আর অন্য কানে বের করে দিত। অলকের মধ্যে একটা বদ্ধ ধারণা হয়েগেছিল নিশিকান্তর প্রতি দিনের মগজ ধোলাইএর মাধ্যমে যে , সে এই নকশাল পার্টির মধ্যে দিয়েই তার 

আইডিওলজি, তার ইগো ,তার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে একদিন না একদিন সক্ষম হবেই এবং এই নকশাল পার্টি একবার রাজ্য ক্ষমতায় এলে এই ঘুণ ধরা পচে যাওয়া ধনতন্ত্রের ধ্বজা বহনকরি সমাজের পরিবর্তন আনতেও সক্ষম হবে। সে ও একদিন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হবে। তাদের হাত ধরেই নাকি পশ্চিমবঙ্গে সত্যিকারের বিপ্লব আসবে। অলোক জানতো যে রোমানা তাকে ভালোবাসে হয়তো বা সেও ভালোবাসে রোমানাকে। প্রেম হলেও অলক আর রোমানার মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক কখনই কিছুই হয় নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্ব চুকে গেলেও রোমানা মাঝে মধ্যেই এই ছোটো 

জাগুলিয়া গ্রামে আসে অলকের বাড়িতে। অলকের বাড়ির লোকজনেরা রোমানিয়াকে ভবিস্বত পুত্রবধূ 

 হিসাবে মেনেও নিয়েছেন সকলে। গ্রামের লোকজনেরা ও সেটা জানে। তাই তারা কিছুই মনে করে না রোমানিয়ার এখানে আসা নিয়ে।

রেবাকে তার শ্বশুড়বাড়ি থেকে বেড়িয়ে চলে আসতেই হয়েছিলো অনেকগুলো বছরের অপমান আর শারীরিক মানষিক যন্ত্রণা সহ্য করে শ্বশুড়বাড়ির লোকেদের থেকে, কোলের দুই মেয়েকে নিয়ে। বিভাস, রেবার স্বামী তার সাথে কিছুতেই ঘর করবে না। তখন রেবার বড়মেয়েটা তিন বছরের আর ছোটটা মাত্র পাঁচ মাসের। রেবার বুকের দুধ খায় সে তখনও। রেবার স্বামী আর শ্বশুড় বাড়ি ছিলো জোতদার ও ধনী চাষী। তাদের অনেক অনেক জমি জায়গা বর্গা হবার পরেও থেকে গেছিলো। গ্রামের ভেতরে যে কয়েকটা সিমেন্ট আর ইটের তৈরী তিনতলা বাড়ি ছিলো তাদের মধ্যে একটা ছিলো রেবার শ্বশুড় বাড়ি। তাই রেবার স্বামী বিভাস, দেওর, শ্বশুর ,শ্বাশুড়ি,ননদ এরা ছিলো অলকের পার্টির শত্রু পক্ষের লোক। রেবা নিজের স্বামীর এবং শ্বশুড় বাড়ির লোকেদের মুখে অলকের অনেক কথা শুনতে পেত। রেবা মনে মনে অলকের প্রেমে পড়েছিলো। পিঠোপিঠি বয়েস ছিলো তাদের। কয়েক মাসের বড় আর ছোট। অলক তার বাপের বেড়ার ঘরে আসতো মাঝে মধ্যে, রেবা স্বামীপরিত্যক্ত হয়ে ফিরে আসবার পরে। 

অলককে দেখতে তেমন একটা ভালো না হলেও, ওর গায়ের রং তামাটে হলেও,সে হাড় গিলগিলে রোগাটে তামাটে চেহারা হলেও , রেবা কিন্তু অলোকের সম্বন্ধে অনেক কিছুই জেনেছিল। গ্রামের অন্য পুরুষদের থেকে অলক কিন্ত অন্য রকমের মানুষ ছিলো। সে গ্রামের লোকজনের স্বার্থে কাজ করতো।

 এদিকে রেবাও যে মনেমনে ভালোবাসতে শুরু করেছিলো অলককে। সেটা রেবা কিন্ত গোপনই রেখেছিল প্রথমে অলকের থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখে । সে তখন বিবাহিতা ছিলো দুই মেয়ের মা ছিলো। এক সম্পন্ন চাষীর বাড়ির বউ ছিলো। যদিও কপালে তার স্বামীর অবহেলা, মারধর, শ্বশুড় বাড়ির লোকেদের দুর্ব্যবহার প্রায়সময় লেগেই থাকতো। অলকের প্রতি শ্রধ্যা থেকেই তার ভালবাসা জন্মেছিল মনে। আলোকও কিন্তু রেবার, (প্যান্ডেলের দেবী দুর্গার মত) অসাধারণ সন্দৌর্য্যটাকে কিছুতেই অবহেলা করতে পারতো না। রেবার প্রতি প্রথম থেকেই সত্যিই একটা শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করতো অলক। যেটা রোমানার ক্ষেত্রে কিন্ত ততোটা ছিলোই না অলকের। অলকও সেটা রেবার কাছে কিন্ত গোপন করেনি , রেবা তার বাপের বাড়িতে ফেরৎ আসার পরে। রেবাতো স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির পরিত্যাক্ত বিবাহিতা আর দুই ছোট মেয়ের মা ছিলো। তার কাচ্ছে তাই খোলাখুলি ভাবে আলোচনা করতে অলকের শিক্ষাদিক্ষ্যায় বাঁধেনি। রেবাও অলকের জীবনে রোমানার কথা জেনেছিল। অলক নিজেই সেটা বলেছিলো রেবার কাছে । গোপন করেনি। রেবা কিন্ত প্রথমে কিছুতেই রাজী হচ্ছিল না তার সাথে অলকের এই শারীরিক মিলনের প্রস্তাবে। এইরকম প্রস্তাবতো গ্রামের অনেক উঠতি বয়েসের ছেলেই , সদ্য যুবতী হয়ে ওঠা অবিবাহিত বা বিবাহিতা মেয়েদের দেয়। গরীব চাষীর ঘরের, বাংলাদেশ থেকে রিফুজি হয়ে আসা ঘরের মেয়েরাও কিন্ত অভ্যস্ত হয়ে যায় কি ভাবে সেইসব প্রস্তাবগুলো পাশ কাটিয়ে বেড়িয়ে আসা যায়। অনেক মেয়ে আবার লোভে পরে রাজিও হয়ে যায় গোপনে মিলনের জন্য তার হওয়া প্রেম টিকিয়ে রাখতে বা এই আশায় যদি বা ছেলেটা তাকে বিয়ে করে ,সহবাস করে। বিয়ে করলে তাদের মা বাবার দুশ্চিন্তা কমে একটা খাবার মুখ কমে সেটা তারা বোঝে। বিয়ে হলে তাদের গরীব মা বাবার গলগ্রহ হয়ে আর থাকতে হবে না সেটাও বোঝে তারা। (শ্বশুর বাড়িতেও যে তারা সবাই ভালো থাকবে বা থাকে সেটাও নয়, সেটাও তারা জানে। ) যদি তার প্রেমিক তাকে বিয়ে করে সহবাসের পর সেই আশায় বা সেই প্রলোভনে তারা সহবাস করে। কেউকেউ সহবাসের পরেও অবশ্য প্রেমে প্রত্যাখিতও হয় ছেলেটির দ্বারা। বা কারুর প্রেমটাই ভেঙে যায় সামান্য কোনো কারণেই। এদের মধ্যে কেউ কেউ হঠাৎ করেই কুমারী অবস্হায় মা হয়ে গেলে তাদের পরিবার তখন কম্পাউন্ডার বাবুর সরণাপন্ন হয়। প্রাইমারী হেলথ সেন্টারে তারা MTP করতে আসে না। কম্পাউন্ডার বাবুটি তাদের বারাসাত শহরে নিয়ে গিয়ে পেট খালাস করে দেন , ওনার এই কাজের জন্য ঠিক করা কোনো গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দিয়ে। এতে কম্পাউন্ডার বাবুর কিছু টাকাও আসে পকেটে। এই প্রেমিক প্রেমিকাদের মধ্যে আবার কেউ আবার প্রেমিক বা প্রেমিকার প্রত্যাখ্যানটা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করবার চেষ্টা করে হয় কিটনাশক খেয়ে , ইদুর মারার বা আরশোলা মারার বিষ খেয়ে ,এমন কি তুতে খেয়েও চেষ্টা করে। তাদেরকে তখন এই প্রাইমারী হাসপাতালে নিয়ে আসে তাদের বাড়ীর বা পাড়ার লোকজন। কম্পাউন্ডার বাবু স্টমাক ওয়াস দিয়ে কিছু Atropine ইনজেকশন intramuscular দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে বারাসাত হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে দিন দুই তিন কাটিয়ে তারা বাড়ি ফিরে আসে। এরপরে তাদের বিয়ে দেওয়া হয দুই পরিবারের বা গ্রাম পঞ্চাযেতের বা সালিশিদের মধ্যস্থতায় যত তাড়াাড়ি সম্ভব। তারাও কয়েক বছরের মধ্যে ছেলে মেয়ের মা ও বাবা হয়। কিন্তু সদ্য স্বামী বা বাবা হওয়া অল্প বয়েসী ছেলেটির পার্মানেন্ট কোনো চাকরী বা কাজ জোটে না গ্রামের মধ্যে। যদি বা হয় সেটা জলা মাঠে দৈনিক অল্প মজুরিতে নতুন প্রান্তিক চাষী হিসাবে বা দৈনিক অল্প মজুরিতে ঠিকা শ্রমিক হিসাবে কাছাকাছি বামনগাছি ,দত্ত পুকুর, বীরা , অশোক নগর, হাবড়া বা বারাসাতের দোকানের কর্মচারী বা কারখানাতে, রাজমিস্ত্রী হিসেব বা জোগানদার হিসেবে অল্পমজুরিতে তাদের আয় হয়। দিন আনে দিন খায়। এতে তাদের সংসারে দারিদ্রতা যে আরও বাড়ে। ছেলেগুলো বা লোক হাড়ভাঙ্গা খাটুনির শেষে সন্ধ্যের পর মদের ঠেকে এসে একসময় বাংলা মদ খেতে শুরু করে আর কোনো না কোনো দলের হয়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পরে। কেউ বা যোগ দেয় সি পি এম, কেউ বা কংগ্রেস, কেউ বা জনসংঘ, কেউ বা বি জে পি কেউ বা নকশাল। এদের মধ্যে ক্রমশ বাংলা মদের নেশা তৈরি হয়। এদের রোজগারের অর্ধেক বা কখনো হয়ত পুরোটাই বাংলা মদ আর বিড়িতে শেষ হয়ে যায়। এরা বাড়িতে মাতাল হয়ে ফিরে এসে নিজের বউকে পেটায় তখন । তারপরে মদের টাকা বিড়ির পয়সা আর সংসারের পরিজনের, ছেলে, মেয়ের, বউএর ,মা, বাবার পেটের খাবার জোগাড় করতে এদের কেউ কেউ সেখানের বন্ধন ব্যাংকের লোন অফিসার বা এজেন্টদের পাতা মৃত্যু ফাদের জালে জড়িয়ে পড়ে তাদের জন্য সহজে পাওয়া যাওয়া মাইক্রোক্রেডিট লোন চরা মাসিক সুদ বা কিস্তিতে বা কাছাকাছি শহরের অন্য কোনো মাইক্রোফাইন্যান্স কোম্পানি বা নন ব্যাঙ্কিং ফাইন্যান্স কোম্পানীর কাছে টাকা ধার করে মাসিক চরা সুদের হরর। এরা মাইক্রোক্রেডিট আর ক্ষুদ্র ঋন কোম্পানীর দনকরান কেন্দ্রীয় সরকারী বা রাজ্য সরকারের আইন কানুন কিছুই জানে না , যেহেতু অশিক্ষিত বা কম শিক্ষিত বলে বা পড়াশুনো জানে না বলে। তারা এটাও জানে না যে বন্ধনব্যাংক বা বাজারের অন্য যে কোন মাইক্রোফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো বা ননব্যাঙ্কিংফিনান্সিয়াল কোম্পানিগুলো পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের ১৯৪০ সালের মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানি গুলোর টাকা ঋন দেওয়া ও পরিশোধ করবার আইন অনুযায়ী বা ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার বাজারে টাকা ঋন দেবার এবং ঋণের সুদ নিয়ে ব্যবসা করবার বৈধ লাইসেন্সে ছাড়া এবং লোকাল থানার পারমিশন ছাড়া কোনো মাইক্রো ক্রেডিট ঋন প্রদান করতে পারেনা এবং তার থেকে সুদও আদায় করতে পারেনা এবং রেজিস্টার্ড মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানি গুলো রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার দ্বারা নির্দ্ধারিত সুদের বেশী সুদ বছরে নিতে পারে না এবং ঋন পরিশোধ করতে ঋন গ্রাহকের বাড়ি গিয়ে কোনো রকম চাপ বা খারাপ ধরনের ব্যাবহার করতে পারেন না এবং এই ধরনের মাইক্রোক্রেডিট ঋন প্রদানকারি কোনো বেআইনি সংস্থা যদি ঋন হিসাবে কোনো ভারতীয় মুদ্রায় টাকা লেদেনের সাথে কোনোভাবে যুক্ত হয় বা থাকে সেটা ভারতীয় আইনের চোখে জামিন অযোগ্য একটা ক্রিমিনাল অফেনস , মাইক্রোক্রেডিট ঋন প্রদানকারি সংস্থাগুলোর লোন অফিসার, মালিক এবং ঋন আদায় করা এজেন্টদের জন্য। এদের ভারতীয় PMLA অ্যাক্ট এর অনেকগুলো ধারায় স্স্বাস্তি দেওয়া যায় প্রথেম জেনেরাল ডায়েরী এবং পরে FIR করে লোকাল পুলিশ স্টেশনে। গ্রামের প্রান্তিক বা গরীব চাষি পরিবারের লোকেরা যদি মাঠে চাষও ঠিক মত না হয়, বা প্রাকৃতিক কোনো দূর্যোগে বা অতি বৃষ্টি বা বিদ্যেধরী নদীর বন্যায় বা খরায় চাষবাসে লোকসান হয় তখনও হয় তাদের মহাজন বা বন্ধন ব্যাংক বা ঋন প্রদান কারি সংস্থা গুলোর কাছে চরা মাসিক সুদ হারে ঋন গ্রহন করা ছাড়া আর উপায় থাকে না। গতি থাকে না । বন্ধন ব্যাংকের লোন অফিসার বা এজেন্টরা এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে বসে থাকতো গ্রামে একটা অস্থায়ী অফিস খুলে যদি মুরগি তাদের জালে ধরা পড়ে। এর জন্য ট্ট্রেনিং প্রাপ্ত লোন অফিসার গ্রামের বাড়ি বাড়ী যেতো বোঝাতে মাইক্রো ক্রেডিট লোন নেবার সুবিধে। চরা মাসিক সুদে বন্ধনের মাইক্রো ক্রেডিট লোনের ফাঁদে তাদের জড়িয়ে ফেলত ভুল ভাল বুঝিয়ে যে লোনের জন্য তাদের বাড়ির কোনো কিছুই বন্ধক রাখতে হচ্ছে না। শুধু ব্যাংকের কয়েকটা কাগজে সই বা টিপ সই দিলেই বেশ কয়েক হাজার টাকা লোন পাবে তারা । তবে মাসিক একটা কিস্তি দিতে হবে প্রতি মাসে। তাতে যে শুধু লোনের সুদটাই মেটানো হয় মূল লোন তাদের থেকেই যায় সেটা উহ্য থাকত। এরপরে ঋণের সেই চরা সুদের টাকা মেটাতে গিয়ে ঋন গ্রাহক/ গ্রহীতারা আবারও লোন করে সেই ব্যাংকের কাছে ।, লোন পরিশোধের কিস্তির টাকা আরো বেড়ে যায়। অথচ লোনের পরিমাণ কমে। সেই বাড়তি লোনের সুদের কিস্তির টাকা মেটাতে গিয়ে গ্রাহক) গ্রহীতারা আবারও টাকা লোন করে অন্য কোনো বেআইনি ঋনপ্রদান কারি সংস্থাগুলোর থেকে বা অবৈধ কোম্পানির থেকে । এই ভাবেই গ্রামবাসীরা আস্তে আস্তে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং বাধ্য হয় এদের পরিবারের সব কিছু বিক্রি করে দিতে, যখন লোন রিকভারি এজেন্ট বা অফিসাররা এসে যমদূতের মত হানা দেয় তাদের বাড়িতে। এরা সত্যিই যমদূত কোনো পরিবারে জন্য। এদের কঠিন দৃষ্টা্তস্বরূপ শাস্তি হওয়া উচিৎ রাষ্ট্রের হাতে। প্রয়োজনে ফাঁসি । এই যমদূতের জন্য ঋন গ্রাহক/ গ্রহীতার পরিবারের সব লোকজন বাচ্চা গুলো অপুষ্টিতে ভোগে । একদিন এদের কারুর কারুর টিবি হয়। এরা তবুও হাসপতালে আসতে পারে না। একদিনের কাজের টাকা এদের কাছে অনেক বেশি মূল্যবান হয়, হাসপতালে এসে ফ্রিতে ডি ও টি তে টি বি র ওষুধ নিয়ে খাওয়া। এই ভাবেই গ্রামে টি বি ছড়ায়। ঋন গ্রাহক/ গ্রহীতার কেউ কেউ বা মানষিক ভারসাম্য হারিয়েও ফেলেন লোনের ই এম আই এর টাকা কোথা থেকে রোজগার হবে এই চিন্তায় যার চিকিৎসা আরো ব্যয়বহুল। কেউ বা যমদূত স্বরূপ লোন রিকভারি অফিসার বা এজেন্টদের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। নিরুদ্দেশ হয়ে যায় । কেউ বা এরপরে সুইসাইড করে। এটাই এখানকার জীবন চক্র ছিলো। অথচ এরা লোকাল থানার পুলিশের কাছে গিয়ে বন্ধনব্যাংক বা অন্যকোন মাইক্রোফাইন্যান্স কোম্পানি বা ননব্যাংকিং ফাইনান্সকোম্পানির বিরুদ্ধে বা তাদের লোন অফিসারদের বিরুদ্ধে বা তাদের লোন রিকভারি এজেন্টদের বিরুদ্ধে কোনো FIR করে না বা জেনেরাল ডায়েরি করে না শুধু মাত্র অজ্ঞতার কারণে আর ভয়ে। এমনকি লোকাল পুলিশ এর নাকের ডগায় এইসব অবৈধ টাকা লেনদেনের ব্যাবসা চললেও পুলিশ কোনো অ্যাকশন নেয় না এইসব মাইক্রোক্রেডিট ঋন প্রদানকারী সংস্থাদের কর্তাব্যক্তি দের বিরুদ্ধে বা অফিসার বা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে । যদিও বা কেউ যায় থানায় অভিযোগ নিয়ে এদের বিরুদ্ধে , থানার অফিসার বা ইন্সপেক্টর গণ ঋণ গ্রাহক/গ্রহীতাকেই প্রচুর ধমক দেয় গালাগাল দেয় কেনো সে বা তারা মাইক্রোক্রেডিট ঋন নিয়ে সেই ঋন ঠিক সময় পরিশোধ করছে না। পুলিশ অফিসার গণ এটা কিন্ত তদন্ত করে দেখে না যে মাইক্রোক্রেডিট ঋন নিয়ে ব্যবসা করার সংস্থটির আদৌ বৈধ রাজ্য সরকারের, কেন্দ্রীয় সরকারের, সর্বোপরি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের দেওয়া বৈধ মাইক্রোক্রেডিট লোন নিয়ে ব্যবসা করার লিখত অনুমতি আছে কিনা এবং সেই সংস্থাটি কেন্দ্রীয় সরকারের বা রাজ্য সরকারের এবং রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার পাবলিশড অর্ডার অনুযায়ী তাদের ব্যাবসা করছে কিনা। জিডি বা FIR তো নেই না। অথচ পুলিশের কাজ রাষ্ট্রের কাজ খবর পেলেই এইসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের নিজের থেকে অ্যারেস্ট করে ১৯৪০ সালের রাজ্যের মানি লেন্ডিং অ্যাক্ট অনুসারে বা ভারত বর্ষের PAMLA অ্যাক্ট অনুসারে কোর্ট এইসব সংস্থার মালিক বা অফিসারদের বা ফিল্ড এজেন্টদের বিচারের ব্যবস্থা করা। পুলিশ বা রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা এই সব অবৈধ ব্যবসায়ী ঋন দিয়ে চরা সুদের টাকা লেনদেন করি সংস্থা গুলোথেকে তাদের অবৈধ ব্যাবসা চালিয়ে যেতে হয়তো বা মাসোহারা পেয়ে থাকে। তাই প্রশাসন জেনে শুনেও অন্ধ হয়ে বসে থাকে। মিডিয়া বা সংবাদ মাধ্যমে সামান্য কিছু নাড়া চাড়া পড়লে এই বন্ধন ব্যাংক বা মাইক্রো ফাইন্যান্স লোন এর জন্য কোন আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলে পুলিশ সাফাই দেয় " আমাদের কাছে কোনো কমপ্লেইন আগে কেউ করেনি । আমরা দেখছি কি ঘটেছিল। যদি সত্যিই এই কারণে উনি আত্মহত্যা করে থাকেন আমরা নিশ্চয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব" অথচ তার আগে রাষ্ট্র কিচুই করবে না। আশ্চর্য নয় কি ডাক্তার?? অলক বলেছিলো আমাকে সেই ১৯৮৫ সালে। ১৯৮৬ -৯০ সালে এইসব বন্ধন ব্যাংক বা রিজার্ভ ব্যাংকের বৈধ লাইসেন্সে ছাড়া এবং রিজার্ভ ব্যাংক বা সরকারের বেধে দেওয়া সুদের চেয়ে বেশি সুদ গ্রহণকারী মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানি বা নন ব্যাংকিং ফাইন্যান্স কোম্পানিগুওলো এই ভাবে তাদের ব্যাবসা চালিয়ে গেছে এবং আজকে ২০২৩ সালেও চালাচ্ছে। যদিও ২০১৫ সালে মাইক্রোফাইন্যান্স কোম্পানিদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সভায় বিল এনে মাইক্রোফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো ব্যাংক গুলোকে নন ব্যাংকিং ফাইনান্স কোম্পানী গুলোকে কিছুটা হলেও আইনের বাধনে বেধেছেন এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক ২০২২ সালের জানুয়ারি মার্চ ও এপ্রিল মাসের মাস্টার ডিরেকশন এবং রেগুলেশন এবং ২০২৩ সালে ৮ জুন মাসে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক এদের রেগুলেশন করতে অনেকগুলো অর্ডার জারি করেছেন কিন্তু আমার সন্দেহ হয় কোনো মাইক্রোফাইন্যান্স ব্যাংক বা কোম্পানি বা নন ব্যাংকিং ফাইন্যান্সকোম্পানি এই সরকারী আর রিজার্ভ ব্যাংকের নির্দেশ মেনে চলেকি আদৌ। ভারতীয় কমার্স এবং ফাইন্যান্স মন্ত্রক এর ডিপার্টমেন্ট এই সব মাইক্রোফাইন্যান্স ব্যাংক বা কোম্পানি বা নন ব্যাংকিং ফাইন্যান্স কোম্পানি গুলোর জন্য ২০২৩ এ মাইক্রোক্রেডিট ঋণ গ্রাহক / গ্রহীতার সুবিধের জন্য অনেক গুলো আইন তৈরি করেছেন। তার মধ্যে ইম্পর্ট্যান্ট হলো কোনো ব্যাংক বা মাইক্রোফাইন্যান্স ব্যাংক বা কোম্পানি গুলো মাইক্রোক্রেডিট ঋন গ্রাহক বা গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে কোর্টে আর কোনো ফৌজদারি( যদি না ফ্রড বা ইচ্ছা কৃত ডিফল্টআর হয়) মামলা করতে পারবে না ঋন পরিশোধ না করতে পারবার জন্য বা কোম্পানির কোনো লোক ঋন গ্রাহকের / গ্রহীতার বাড়িতে গিয়ে চাপ দিতে পারবে না ঋন পরিশোধ করতে। ( রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার (RBI/2023-24/40 DOR.STR.REC.20/21.04.048/2023-24 ) । করতে হবে কম্প্রোমাইজ সেটেলমেন্ট ডিফল্টট্যার দের জন্য তার আয়ের ওপরে নির্ভর করে এবং পর্টিয়াল টেকনিক্যাল রাইট অফ করতে হবে যাদের লোন ফেরৎ দেবার আর কোনো ক্ষমতাই থাকবে না একটি সিভিল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেটের রায় অনুসারে 






অলকের বেশ কিছুদিন ধরেই পীড়াপীড়িতে, রেবা কেবলমাত্র একদিনই দুপুরের পর (ডাক্তার লাহার বাড়ির কাজের শেষে) অলকের সাথে শারীরিক মিলনে যেতে রাজি হয়েছিল। রেবার নিজেরও শরীর / মন সেটা চাইছিলো নিশ্চয়। যতোই হোক রেবারও রক্ত মাংস হাড় দিয়ে তৈরি মেয়েছেলের শরীর। তারও কিছু চাহিদাতো থাকবেই। আর সেটাই তো স্বাভাবিক ছিল। কোলের পাঁচমাসের মেয়েটাকে কোলে নিয়েই অলকের পিছুপিছু গ্রামের সব লোকজনের চোঁখ এড়িয়ে, ঘুরপথে রেবা এসেছিলো কিছুটা। সাইকেলের পিছনের সিটে বসিয়ে অলোক তাকে একটা অনেক পুরনো বাড়িতে এনেছিল। বাড়িটার চারধারে বেশ অনেকটাই জুড়ে লম্বা লম্বা ঘাস, জঙ্গল আর বড়বড় অনেক গাছ । সামনে আর পেছনে শুধু ধানচাষের জন্য জলাজমি তাতে ধান গাছগুলো বেড়ে উঠছে। চার ধারে স্মসানের নিরবতা। রেবার সেইসময়টা খুব ভয়ভয় করছিলো। অলক সাইকেল চালাতে চালাতে বলেছিলো এটাই নাকি তাদের পার্টির একটা গোপন ডেরা। গ্রামের কেউই, এমন কি পুলিশও জানে না এই ডেরার অস্তিত্বটা। রেবা ভয় পেয়েছিলো তাতে। রেবাতো জানতোই কেনো সে অলকের সাথে এখানে এসেছে। রেবার ভেতরে অনেকটাই শারীরিক মিলনের আগের উত্তেজনা হলেও অলক কিন্ত একেবারেই শান্ত আর স্বাভাবিক ছিলো দেখে রেবা সত্যিই কিছুটা অবাকও হয়েছিলো। অন্য কেউ হলে রেবাকে এই একেবারে ফাঁকা আর নির্জন জায়গায় নিশ্চয় একবার হলেও জড়িয়ে ধরতো, অন্তত রেবার শরীরে হাত তো দিত। সেটাই তো পুরুষ মানুষের লক্ষণ। সেটাইতো রেবার জানা ছিলো তার বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞতায়। রেবাও মনেমনে সেটাই কিন্তু আশা করছিলো অলকের কাছে। রেবাতো ভালো করেই জানতো যে তার মত সুন্দরী মহিলা এই গ্রামে আর কেউই নেই। অথচ অলক কেমন যেন স্বাভাবিক ছিলো। এই যে সে রেবাকে তার সাইকেলের পিছনের সিটে বসিয়ে নিয়ে এসেছিলো তাতেও কি তারমধ্যে একটুও উত্তেজনা অনুভব করেনি সে? সেও তো জানে এখানে তাদের আসবার উদ্দেশ্য। রেবার আরও একটা ভয় হচ্ছিলো যদি অলকের পার্টির কেউই হঠাৎ এসে পড়ে তাদের মিলনের মাঝখানে? রেবা কয়েকবার মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করেছিল " কেডা আসবেক নাইতো হিখানে হঠাৎ কইরা?" আলোক রেবাকে অভয় দিয়েছিল " কেউই আসবে না" । অলোক নিজের পাঞ্জাবির পকেটথেকে একটা চাবি বেরকরে মরচে ধরা গ্রিল আর দরজাটার তালা খুলেছিল। দিনের আলোতেও ঘরটা বেশ আলোঅন্ধকারই ছিলো , জানালাগুলো বন্ধ থাকার জন্য। আলোক মেঝেতে বসে একটা হ্যারিকেন জ্বালিয়ে এনে সেটাকে টেবিলে রেখেছিল। ঘরটা বেশ অগোছালো। মেঝেতেই স্তুপাকৃত হয়ে পরে লালরঙের কালিতে লেখা পুরনো পোস্টার গুলো। একটা তাকে কিছু সি পি এম এল পার্টির বইপত্র, কাগজপত্র। একজায়গায় কিছু লিফলেট এর স্তূপ। কোনায় কিছু রান্নার বাসন , কয়েকটা ঢাকা হাঁড়ি। একটা মাটির কলস, খাবার জল ভরা হয়ত বা। একটা জনতা পুরনো স্টোভ, দু তিনটে প্লাস্টিকের চেয়ার আর একটা টেবিল, মেঝেতে পোড়া আধখাওয়া কিছু বিড়ির টুকরো। একটা দুজনের শোয়ার মত চৌকি আর তাতে পুরনো দুটো তোষক আর সস্তা চাদরের বিছানা পাতা। কোণে মশারীটা গুটিয়ে তুলে রাখা। সেটা অনেক দিন ধোয়া হয় নি। রেবা তার মেয়েকে কোলে নিয়েই বিছানায় বসেছিল আর অলককে সে অবাক হয়েই দেখছিল। এতোটা সময়েও এখনো অলক তাকে স্পর্শটুকু করেনি। করতেইতো পারতো। রেবাও বাধা দিতো না। কেই বা দেখবে তাদের এখানে? আর বাধা দেবেই বা কোনো রেবা? রেবারতো নিজেরই ইচ্ছে করছিলো অলককে দুহাতে জড়িয়ে ধরতে। ইচ্ছেটা দমন করেই রেখেছিল সে। ইশশ অলক কিন্ত তাকে উঠোন থেকে পাজাকোলা করেইতো ঘরে আনতেই পারতো। কোনো পুরুষ, এমন কি তার স্বামী বিভাস ও তাকে কখনো পাজাকোলা করে তোলেনি এখনো পর্যন্ত। অথচ শ্বশুড় বাড়ির টিভিতে, বারাসাতে গিয়ে সিনেমায় কতবার দেখেছ স্বামীরা তাদের স্ত্রীদেরকে বা প্রেমিকরা তাদের প্রেমিকাদের পাঁজাকোলা করেই কোলে তুলে নেয়। রেবা লজ্জা পেলেও রেবারও অনেক দিনের সখ ছিলো কোনো পুরুষ তাকেও পাজাকোলা করে তুলে বিছানায় নিয়ে যাবে। তবে অলকের যেরকম রোগা পাতলা চেহারা তাতে রেবাকে পাঁজাকোলা করে তোলা অসম্ভব ও ছিলো তার পক্ষে। রেবার শরীর আর মনের ভেতরেও যে একটা পুরুষের সাথে মিলনের জন্য উত্তেজনা তৈরী হচ্ছিলো। রেবা নিজের মধ্যে চেপে রেখেছিলো সারাটা পথ সাইকেলের পিছনের সিটে বসে । রেবা হাত দিয়ে ব্লাউজের ভেতর থেকে নিজের বাম দিকের স্তন বেশ কিছুটাই বেরকরে এনে নিপলটা মেয়ের মূখে গুজে দিয়েছিল মেয়েটাকে ঘুম পাড়াতে। আরেকটাও অনুচ্চারিত উদ্দেশ্য ছিলো মনেরভেতরে রেবার। অলক সেদিকে তাকিয়ে দেখতে রেবা কিন্তু মনেমনে খুব খুশিই হয়েছিলো। মুখ নিচু করে রেখে অলককে দেখতে দিয়েছিল। সে স্তন ঢাকেনি। তার স্তনে এখনও অনেক দুধ জমে। মেয়েটা ঘুমোলে পরে অলকের হাতে নিজের উপোষী শরীরটাকে তুলেদিলে পরেই তার শান্তি হবে। সেই জন্যিতো এইখানে আসা তাদের আজকে। তার মিলনের ইচ্ছেটা তখন গলা পর্যন্ত যে উঠে এসেছে রেবা সেটাও টের পেয়েছিলো। রেবার হৃদ স্পন্দন দ্রুত চলেছিল। তার শরীরটা তৈরি হচ্ছিলো অলকের জন্য । শরীরের ভেতরে মাঝে মধ্যে মৃদু মৃদু কাপুনীও হচ্ছিলো। শিরদাঁড়ার ভেতর দিয়ে একটা খুব চেনা বিদ্যুৎপ্রবাহ বইছিল রেবার মাথায়, কোমরের চারধারে আর নিচে জঙ্ঘা বেয়ে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত। গুহার ভেতরে ক্ষরণতো অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। ক্লিটোরিসটাও শক্ত হয়ে উঠেছিল। রেবা তবুও অপেক্ষা করছিলো অলকের। দু চোখের তারায় সে ইশারা করেছিলো অলককে । অলক তবুও দাড়িয়ে হ্যারিকেনের আলোয় ছোট এক শিশুকে স্তনদাত্রী রেবার মাতৃত্বের অপরূপ সৌন্দর্য দেখছিল হ্যারিকেনের আলোতে। অপূর্ব সেই দৃশ্য। আলোক নিজের পাঞ্জাবি আর গেঞ্জি খুলতেই রেবা তার মুখে শাড়ির আঁচল চাপা দিয়ে হেসে ফেলেছিল অলকের অবস্থা দেখে। অলক বোকার মতোই জিজ্ঞেস করেছিলো -" কী হোল রেবা , হঠাৎ হাসছ কেন তুমি এভাবে?" রেবাও সেদিকে চোখের ইঙ্গিত করেই হাসতে হাসতে বলেছিল- " মহান বিপ্লবের করুন অবস্থা দেইখা! বিপ্লবের জয় হোক। বিপ্লব দীর্ঘ স্থায়ী হোক ! " রেবা তার সরু জিভ দিয়ে নিজের ওপরের ঠোট বার দুয়েক চেটে নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিল সেও মহান বিপ্লবের এক বিপ্লবীর জন্য সবরকম ভাবেই তৈরি। শিকারীর হাতে শিকার হতে সবরকম ভাবেই প্রস্তুত সে। রেবার মধ্যেও যে উত্তেজনা উঠেছিলো। রেবাও যে উপোষী ছিলো প্রায় এক বছরের । অলক রেবার পাশে গিয়ে বসে বলেছিলো -" এটাইতো স্বাভাবিক ব্যাপার" রেবাও হেসে মৃদু গলায় বলেছিলো " হুমম । হেডা তো বটেকই। আর একটুকু মহান বিপ্লবরে বাইরে না হয় ঠাওর করতে কও আসতে, মাইয়াটারে না হয় ঘুম পারাইয়িয়া লই। এখুনি হে ঘুমাইয়া পড়বো"। অলকের সেই সময়টুকু অপেক্ষা করার ধৈর্য্যটা ছিলো না। কী আর করা। মেয়েকে কোলে নিয়েই, স্তনপান করাতে করাতে,রেবাও নিজের ঘেমে যাওয়া গ্রীবা তুলে,অলকের মুখের নিচেই নিজের মুখ রেখেছিল । চোখ বুজে ফেলেছিল সে। রেবাতো দুই মেয়ের মা আর এক্সপেরিয়েন্সড মহিলা ছিলো। অল্প সময়ের মধ্যেই রেবা বুঝে নিয়েছিল যে অলোক একেবারেই আনাড়ি এক বিপ্লবী পুরুষ। ঠিক পুরুষও নয়। গ্রামের অন্য পুরুষদের মত সে অন্তত নয় । এমনিতেইতো লিকলিকে, হাড়গিলে রোগা সে । খালি গায়ে বুকের খাচার হাড়গুলো দেখাও যায়, গোনাও যায়। তাই এই ক্ষেত্রে যা করতে হবে তাকেই শুরু করতে হবে। অলকের নিজের দ্বারা কিছুই হবে না। কিছুই সে জানেনা ৩০ বছর বয়সে পৌছে। মেয়ে বুকের দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে তাকে বিছানায় রেখে রেবা নিজেই উঠে এসে অলকের কোলে বসে অলককে শৃঙ্গার করেছিল। রেবা নিজের হাতে অলককে নগ্ন করিয়েছিল । কোনো ৩০ বছরের পুরুষও যে তার পরিচিত বিবাহিতা দুই মেয়ের মা এক নারীর কাছে নগ্ন হতে এতোটা লজ্জা পায় সেটা অলকের কাছেই রেবা প্রথম দেখেছিল এবং আশ্চর্য হয়ে বলেছিল -" এতো লজ্জাতো মেয়েরাও পায়না অলকবাবু, তুমি না আবার পুরুষ মানুষ?- " তুমি বিয়ে করলে কি করবে? উকীল বউকে সুখী করবে কি ভাবে?"। এরপরে রেবা উঠে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজেকে নগ্ন করে অলকের সামনে এসে মুখোমুখি দাড়িয়েছিল । না । অলক হ্যারিকেনের আলোয় রেবার সেই নগ্নতা সহ্য করতে পারেনি। রেবার দেবী দুর্গাপ্রতিমার মত চোখ নাক মুখ গ্রীবা, মসৃণ ত্বক ,ভগবানের হাতে , প্রকৃতির হাতে নিখুঁত ভাবে তিলতিল করে গড়া রেবার নগ্ন নারী শরীর আর গলানো সোনার মত গায়ের রং নিয়ে জন্মদিনের পোশাকে রেবা যখন অলকের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল অলকের শরীরের ভেতরের উত্তেজনা তখন একেবারেই কোথায় যেন ভ্যানিশ হয়ে গেছিল। রেবা ও খুব আশ্চর্য্য হয়েছিলো সেটা দেখে। রেবার মধ্যে তখন যে উত্তেজনা উর্ধ গগনে। রেবা চেষ্টা করেছিল তবুও এক গ্রাম্য বধূ হিসেবে তার জানা বিভিন্ন উপায়ে অলককে উদ্দীপিত করতে । হয় নি, । কখনও বা কিছুটা হলেও স্থায়ীত্ব সামান্য কিছু সময়ের জন্য। অলক কিন্ত রেবাকেই সবই করতে দিয়েছিল রেবা যেমন ভাবে চাইছিল। সে রেবার সামনে বিছানায় চুপ করেই বসে ছিলো। আর একসময় রেবার হাতেই সে হঠাৎ করেই ফুরিয়ে গেছিলো। রেবা স্বগোক্তি করেছিল "ছি:" অলক তখন লজ্জায় একবারেই চুপসে গেছিলো রেবার সামনে। রেবা প্রথমে খুবই অপমানিত বোধ করেছিল , তারপরে রেগেই গেছিলো অলকের ওপরে। রোগা অলকের গায়ে কিল ঘুষি চর মেরেছিল। কামড়ে দিয়েছিল। তারপরে নগ্ন অবস্থায় এসে চেয়ারে বসে কেঁদে ফেলেছিল , টেবিলে দুহাতের মাঝে মাথা গুঁজে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদছিল সে তার নারীত্বের তার যৌবনের অপমানে। রেবা কিন্তু তখনও আশা করেছিল অলক তাকে হয়তো পাঁজাকোলা করে আবারও বিছানায় নিয়ে যাবে। একজন সমর্থ্য পুরুষ হয়ে উঠবে। অলক কিন্তু সেটা করে নি। অলক রেবাকে স্বান্তনা দেবারও কোনো চেষ্টা করেনি। একসময় রেবা ঘৃণার চোখে অলকের চোখে চোখ রেখে বলেছিলো -" তুমি ডাক্তার দেখাও অলকবাবু। অনেক তো বিপ্লব করেছ। অনেক দেশ উদ্ধারও করেছ। নিজের অবস্থা কি সেটা ভাবো এবারে। রোমানা জানলি কোনোদিনও তোমারে বিয়া করবো না। নিজেকে নিজেই শেষ করেছ তুমি । তুমি স্বাভাবিক পুরুষ মানুষ নও। তুমি বুঝতে পারছ কি বলছি আমি? আমার কাছে তুমি আর দয়া করে তুমি আর কখনো এসো না।" অলক নিজেকে তৈরি করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। রেবাও তাকিয়ে দেখেছিল সেটা। কিন্তপারেনি। অলক বুঝেছিল হোস্টেল জীবনের নিশিকান্তর পাল্লায় পরে চরস, গাজার,বিড়ি, ড্রাগস এর নেশার ফল আজকের তার এই ব্যর্থতা। কিন্তু সেটা রেবা বা রোমানাকে বলা কখনোই সম্ভব নয়। সে তার পুরুষত্ব হারিয়েছে।

 ইমপতেন্ট। 


  


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract