STORYMIRROR

Prof. Dr. Pranab kumar Bhattacharya

Abstract Others

4  

Prof. Dr. Pranab kumar Bhattacharya

Abstract Others

মিলান কুন্দেরা

মিলান কুন্দেরা

10 mins
260

           মিলান কুন্দেরা


লেখক-:


ডাক্তার (প্রফেসর) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য 

এম.ডি (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) ;এফ আই সি প্যাথলজি, ডব্লু.বি.এম.ইএস (অবসরপ্রাপ্ত)


প্রাক্তন অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান, প্যাথলজি বিভাগ, কলকাতা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন, কলকাতা -700073, পশ্চিমবঙ্গ, এবং জে.এম. এন মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, জেএমএন এডুকেশনাল অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন, চাকদহ, জেলা- রানাঘাট, পশ্চিমবঙ্গ এবং বর্তমানে অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান, প্যাথলজি, জে আই এস মেডিক্যাল স্কুল এবং রিসার্চ, সাঁতরাগাছি, হাওড়া ,পশ্চিমবঙ্গ

ই মেইল করুন -: profpkb@yahoo.co.in (বেশিরভাগ ব্যবহৃত)

prof.pranab@Gmail.com ( কম ব্যবহৃত)


হোয়াটসঅ্যাপ ও মোবাইল -: 9231510435

বাসস্থান এর ঠিকানা-:

মহামায়া অ্যাপার্টমেন্ট, ব্লক-বি, ফ্ল্যাট -৩, ২য় তলা, মহামায়াতলা, ৫৪ এন এস সি বোস রোড, পোস্ট অফিস- গড়িয়া, কলকাতা ৭০০০৮৪, পশ্চিমবঙ্গ 


কপি রাইট -: 

Belongs primarily to Prof. Dr. Pranab Kumar Bhattacharya under strict Copyright acts and laws of Intellectual Property Rights of World Intellectual Property Rights organisations ( WIPO) , RDF copyright rights acts and laws and PIP copyright acts of USA 2012 where Prof Dr Pranab Kumar Bhattacharya is a registered member . Please Don't try ever to infringe the copyright of the manuscript to protect yourself from criminal offences suit file in court of law in any places of india and by civil law for compensation in few millions US dollar or in pounds or in Euro in any court of laws in India 


 মিলান কুন্দেরার জন্ম চেকোস্লোভাকিয়ার বার্নো শহরে। তাঁর বাবা লুডভিক কুন্দেরা ছিলেন খ্যাতনামী পিয়ানোবাদক ও সঙ্গীততত্ত্ববিদ। বাবার হাত ধরেই শিল্পের জগতে প্রবেশ কুন্দেরার। প্রাথমিক ভাবে সঙ্গীতের শিক্ষা লাভ করলেও পরে তিনি মনপ্রাণ ঢেলে দেন লেখালেখিতেই।

মিলান কুন্দেরা শারীরিকভাবে আজকে আর এই পৃথিবীতে নেই। ৯৪ বছর বয়েসে উনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ওনার ক্ষেত্রে, ওনার আত্মা বা পরমাত্মা ইত্যাদিতে কোনও আস্থা রাখবার জন্য কোনোই কারণ নেই। কেননা উনি আত্মা বা পরম আত্মা এইসব বিশ্বাস করতেন না। ছিলেন কমিউনিস্ট তাই। আমার অত্যন্ত প্রিয় লেখকদের মধ্যে উনি একজন হলেও আমার সাথে ওনার এইখানে ফারাক। আমি একজন বাঙালি ডাক্তার হলেও কমিউনিস্ট মনোভাব সম্পন্ন মানুষ হলেও আমি কিন্ত বিজ্ঞান সম্মত ভাবেই সৌল বা আত্মার বিশ্বাসী, কিছুটা হলেও। এর ফলে তিনি তার মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে কোথাও শান্তিতে ঘুমোবেন, এ ধরেনের কোনো প্রার্থনা আমার করার কারণ দেখছি না। আর আমার তো মনে হয় সবথেকে এটাই বড় কথা, তিনি জীবিত অবস্থায় কোথাও শান্তিতে ঘুমোতে পারেনওনি। এর কারণটা যেমন পারিপার্শ্বিক, তেমনই দেশীয় অভ্যন্তরীন ও কিছুটা পারিবারিকও বটে। একান্তই নিজস্ব এক দার্শনিক সংকট নিয়ে মিলান কুন্দেরা মুখোমুখি হয়েছিলেন এক রাজনৈতিক অস্থিরতার চেকের প্রাগে— যে পরিস্থিতি কিন্তু সবসময়ই চেয়েছে ওনার মত ব্যক্তির ভাবনাকে, দর্শনকে এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে চেপে রাখতে, যেখানে ব্যক্তির নিজস্ব প্রেম ভালবাসা যৌনতার এমনকি অস্তিত্বের কোনও মূল্যই নেই। যেখানে অসম প্রেম যৌনতাকেও কেন্দ্র করেও তৈরি হয় ক্ষমতার এক দীর্ঘকালীন সংস্কার।( ওনার বিখ্যাত বই জোক,,"দ্য আনবেয়ারেবল লাইটনেস অফ বিইং’’( রেফারেন্স ৪)‘ইম্মর্ট্যালিটি’‘ ( রেফারেন্স ৫) এবং "দ্য বুক অফ লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’( রেফারেন্স ৬)যে চারটি বই এর জন্য উনি নোবেল পুরস্কার হয়তো বা পেলে ও পেতে পারতেন এবং আমি নিজেও তো অনেকবারই আশা করেছিলাম উনিই হয়ত পাচ্ছেন সাহিত্যের নোবেল পুরস্কারটি ; রেফারেন্স ১-৩) । চেকোস্লোভাকিয়ার প্রাগ ওনাকে অন্যভাবে দেখার জন ওনার উপর নেমে আসে দেশের শাসন । উনি প্রাগ ছাড়তে বাধ্য হন ১৯৭০ সালে। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপ মানেই নানান শক্তির দ্বারা মানুষের উপর কেবল দমন ও পীড়ন। ধনতন্ত্রবাদ বা ক্যাপিটালিজম ও ফ্যাসিবাদের দ্বারা বিংশ শতকের প্রথমার্ধ লাঞ্ছিত হয়েছিল ।এখনো হচ্ছে অনেক দেশে একবিংশ শতাব্দীতে। মানুষের উপর তখন নেমে এসেছিল এক নিষ্ঠুর ধরনের ক্যাপিটালিস্টক শোষণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অমানবিকতার ইতিহাসের উপর গড়ে উঠেছিল আরেক ধরনের ফ্যাসিবাদ, যাকে ফ্যাসিবাদই হয়তো বলা যেত, কিন্তু মৌলবাদও হয়তো আমরা বলতে পারি। সাম্রাজ্যবাদ তো বলতেই হয়। রাশিয়ায় স্তালিনিস্ট জমানায় , রুশ সাম্রাজ্যবাদ, চেকোস্লোভাকিয়ার প্রাগের সরকার যখন মানুষের কণ্ঠরোধ করছে, যখন একজন ব্যক্তিমানুষ কী ভাববে লিখবে বা কী লিখবে, তাও নিয়ন্ত্রণ করছে প্রাগের কমিউনিস্ট পার্টির সরকার, তখনই মিলান কুন্দেরা তার লেখনীর দ্বারা তৈরি করলেন ব্যক্তি মানুষের প্রতিরোধ। কিন্তু এই প্রতিরোধ উচ্চকিত নয়, বরং তীব্রভাবে শ্লেষাত্মক, এবং তিক্ত যৌণরসের যেটা রুশ সমাজের পক্ষে কমিউনিষ্ট শাসনের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব কখনোই ছিলো না । ক্ষমতার সমস্ত রূপভেদ নিয়েই তিনি একপ্রকার সন্দর্ভ তৈরি করলেন তাঁর লেখায়। ১৯৪৮ এ যোগ দেন কমিউনিষ্ট পার্টি তে। ১৯৫০ সালে তিনি প্রাগের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। সেই সময় তিনি প্রাগের পাঠরত ছিলেন। গ্রাজুয়েট হবার পর প্রগেই অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ তে ফিরে আসেন। আবার ১৯৭০ সালে বহিষ্কৃত হন তার যৌনতায় ভরা লেখার জন্য। প্রাগে তাঁর নাগরিকত্বও কেড়ে নেওয়া হয়। তিনি তখন ফ্রান্সে চলে যান ১৯৭৫ সালে। বাকি জীবন আর তিনি তাঁর প্রিয় প্রাগে ফিরে যাননি।

মিলান কুন্দেরার লেখার ভঙ্গি এবং বিষয়বস্তু নিয়ে যদি আমি সামান্য অল্প কিছুটাও বুঝে থাকি তবে আমাকে বলতে হয় যেটা, সেটা হলো, ওর বিষয় বস্তু ছিলো totalitarianism ,explorer of his identity and existentialism ‘ বা নিজেই নিজের অস্তিত্বকে খোঁজা এবং নিজে যেটা ওনার মনপ্রাণ দিয়ে অনুভব করছেন এবং নিজে উনি যেযে পরিস্থতির মুখোমুখি হয়েছেন সেটাই উনি পুংখানুপুংখ ভাবে লিখেছেন। ইংলিশে বললে- "A philosophy that emphasizes the uniqueness and isolation of the individual experience in a hostile or indifferent universe, regards human existence as unexplainable, and stresses freedom of choice and responsibility for the consequences of one's acts."

১৯৮৫ সালে একটি সাক্ষাৎকারে স্বভাবসিদ্ধ রসিকতায় তিনি প্রাগের স্পিরিট সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, “একজন চেক নাগরিক ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন। আধিকারিক প্রশ্ন করলেন, আপনি কোথায় যেতে চান? তার উত্তরে সেই নাগরিক জানালেন,— কোথায় তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তখন তাঁকে একটি গ্লোব দিয়ে বলা হল— বেছে নিন। সেই গ্লোবটা ভালো করে দেখে রেখে দিয়ে সেই নাগরিক বললেন, আর একটি গ্লোব কি পাওয়া যাবে?” মিলান কুন্দেরার এই যে রসবোধ তা তীব্র এক সন্দর্ভ তৈরি করে আসলে। তেতো রসবোধের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর সময়কেই ফালাফালা করেন, তুলে আনেন এমন এক রাজনৈতিক ভাষ্য, এমন সব প্রশ্ন, যা যে কোনও দেশের শাসকের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবেই। আর ঠিক সেটিই হয়েছিল প্রাগে চেকোস্লোভাকিয়ায়। কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বহিষ্কৃত, দেশ থেকে বহিষ্কৃত, শেষে অনেক কষ্টে গিয়ে আশ্রয় পেলেন ফ্রান্সে। যেমন আমাদের এখানে তসলিমা তার উপন্যাস লজ্জার জন্য বহিষ্কৃত হয়েছিলেন বাংলাদেশের মৌলবাদীদের দ্বারা বাংলাদেশ থেকে। আশ্রয় পেয়েছেন পশ্বিমবঙ্গে পরে দিল্লীতে। অথচ সুইডিশ অ্যাকাডেমির নোবেল লাইব্রেরীতে তসলিমার লেখা লজ্জা উপন্যাস তারা রেখেছেন কিন্তু। যেমন আছে কুন্দেরার চারটি উপন্যাস।

 কুন্দেরা কিন্তু উপন্যাস লিখতেন চেক ভাষায় আর ফরাসি ভাষায়।, কেননা তিনি বলেছিলেন, আমার কল্পনা এখনও দানা বাঁধে প্রাগের বোহেমিয়ায়। সে সময় তিনি প্রবন্ধ লিখতেন ফরাসিতে। অবশ্য পরবর্তীকালে, তিনি চেক ভাষার বদলে ফরাসি ভাষাতেই উপন্যাস লিখতে শুরু করেন। এই যে তিনি ছাড়তে ছাড়তে চলেছেন, নিজেকে একবারের জন্যও ছিন্নমূল ভাবছেন না, বরং, যেখানে তিনি থাকছেন, সেখানেই নিজের ঘর তৈরি করছেন, এই বিষয়টাই হয়তো মিলান কুন্দেরাকে আধুনিকোত্তর এক জায়গায় নিয়ে চলেছে। ফলে, যেমন অসম পরকীয়া আর যৌনতাকে তিনি তাঁর উপন্যাসের এক প্রয়োজনীয় সন্দর্ভ করে তুলছেন ‘দ্য আনবেয়ারেবল লাইটনেস অফ বিইং’-এ,( রেফারেন্স ৪) উনি লিখেছিলেন চেখ এর প্রাগে যখন সোভিয়েত ট্যাংক প্রাগের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় সেই অবস্থাতাতেও প্রেম, যৌনতা এবং তার সাথে রাজনীতি কিভাবে মিলেমিশে একাত্ম হয়ে যায় ধীরে ধীরে সেই যৌনতার মধ্যেও তা নিয়ে। ‘দ্য ‘আনবেয়ারেবল লাইটনেস অফ বিইং’- আমার পড়ে যেটা মনে হয়েছিল যে উপন্যাসটা তিনটি মানুষের আর একটা কুকুরের গল্পঃ নিয়ে একজন লোক টমাস - একজন প্রাগের পুলিশ (সার্জন) আর দুই মহিলার চরিত্র টেরিজা- টমাস এর স্ত্রী যে সোভিয়েট সমাজ মহিলাদের সংস্কার বহন করে, যে নিস্কলক বিবাহিত টিকিয়ে রাখার সম্পর্কে বিশ্বাসী কিন্তু সে তার স্বামী টমাসেরপ্রতি যৌনতায় অনীহা আর দুর্বল আর সাবিনা যে নাকি সোভিয়েত শাসিত যখন প্রাগের, রাশিয়ার কমিউনিস্ট সমাজের সমস্ত সংস্কারকে নিয়মকে ফালাফালা করে চিরে দেয় তার চেয়ে বয়েসে অনকে ছোট টমাস এর সাথে শারীরিক প্রেম, ভালবাসা ও মধ্যবয়সের যৌনতায় বিশ্বাস করে ও একটি কুকুরের চরিত্রে,। ‘ইম্মর্ট্যালিটি’তে ( রেফারেন্স ৫) মিলান কুন্দেরা নিজের মনের কল্পনায় গড়ে তোলা সুইমিং পুলে দেখা একনারী চরিত্র আগ্নিস এর সাথে প্রেম ভালোবাসা এবং রিরংসাতে এবং ‘দ্য বুক অফ লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং’ শুধু যৌনতায় ,রিরংসাতে ভরা উপন্যাসই নয়, এক বিশাল দর্শনও তৈরি করছে আমার কাছে। 

‘দ্যবুক অফ লাফটার অ্যান্ড ফরগেটিং এ ক্রিস্টিনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে শুরু হয়, যিনি দর্শন এবং কবিতা অধ্যয়নরত একজন ছাত্রের সাথে একটি রোমান্টিক ও শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তারপরে, এটি চেক শব্দ লিটোস্ট ব্যাখ্যা করে , যা লেখক বলেছেন অন্য কোনো ভাষায় সঠিকভাবে অনুবাদ করা যাবে না। লিটোস্ট হল, কুন্ডেরার মতে, "নিজের দুঃখের আকস্মিক দৃষ্টি দ্বারা সৃষ্ট যন্ত্রণার অবস্থা।" লিটোস্ট মনে হয় সবসময় সেই ছাত্রের মধ্যে উপস্থিত থাকে যাকে ক্রিস্টিনা ভালোবাসেন, এবং এই অনুভূতিটিও তার প্রাক্তন বান্ধবীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার অন্যতম কারণ।

তাই প্রতি বছরই অক্টোবর মাসে হয়তো বা আমি আশা করতাম যে সুইডিশ অ্যাকাডমি এবার হয়তো কুন্দেরা কে সাহিত্যের পুরস্কারটা দিয়েই দিলো। বাস্তবে কিন্তু অনেকবারই কুন্দেরা শর্ট লিস্টেড হলেও তার ভাগ্য কিন্তু সহায় হয়নি এই পুরস্কার পেতে ।

কুন্দেরার ভাষায় বললে "ঔপন্যাসিকের নিজস্ব কোনও স্থির দর্শন থাকতে নেই। থাকতেই নেই। তিনি আবিষ্কার করতে করতে এগিয়ে যান। " কারণ “Only a literary work that reveals an unknown fragment of human existence has a reason for being. To be a writer does not mean to preach a truth; it means to discover a truth.” সাতটি পর্বে তিনি বেশিরভাগ লেখা লিখেছেন। কেন? এর কারণ ক্রিশ্চিয়ানিটি হতে পারে বা সংগীত। কিন্তু একটি বিষয় পরিষ্কার, কুন্দেরা উপন্যাসের চেনাছক ভেঙে দিয়েছিলেন। অনবরত পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন ন্যারেটিভ নিয়ে, ভাষ্য নিয়ে এবং ভাবনা নিয়ে। আর এ কারণে বিষয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে কুন্দেরার যে কোনও লেখার মধ্যেই আঙ্গিকগত অভিনবত্ব চোখে পড়ার মতো। এখানেও যেন সাংগীতিক হারমোনিকেই তিনি ব্যবহার করেছিলেন তাঁর লেখায়।

 Adultism ,পরকীয়া আর যৌনতাকে তিনি তাঁর উপন্যাসের এক প্রয়োজনীয় সন্দর্ভ করে তুলেছেন ‘দ্য আনবেয়ারেবল লাইটনেস অফ বিইং’-‘ আর ইম্মর্ট্যালিটি’তে ( যে তিনটে বই মিলান কুন্দেরার আমি পড়েছি আর যে তিনটে বইয়ের জন্য তিনি সুডিস অ্যাকাডেমির নোবেল কমিটিতে মনোনয়নও পেয়েছিলেন)

যৌনতা সম্পর্কে খুঁতখুঁতানি এবং তথাকথিত নীতিবোধের পাঁচিল তুলতে যারা সিদ্ধহস্ত, অথবা উপন্যাস মানেই গল্পে গল্পে মনোরঞ্জন ও বিনোদনের আশায় যাঁদের দুপুরের উত্তাপ বাড়ে না, সেই বাঙালিও যে মিলান কুন্দেরা পড়েন, এটাও একটা আশ্চর্য ব্যাপার। পাঠক হিসেবে এই বই দুটো পড়লে আমার নিজেরই কেমন কেমন যেনো সংকোচ আসে। সকলের সামনে বসে পড়তেই পারি না। পূর্বপাকিস্তানের ব্রাহ্মণ বেরিয়ার কুমিল্লা থেকে ছিন্নমূল হবার যন্ত্রণা আমাদের জেনারেশন তেমন ভাবে না বোঝার ফলস্বরূপ আমাদের সাহিত্যে এমন ভাবে যৌনতার সাথে সাথে দেশের মধ্যে বিপ্লবের বা স্বাধীনতার মিলন কিন্তু অল্পই এসেছে। পাশাপাশি, চেক জাতীয়তাবাদের প্রতি ঝুঁকে থাকলেও কুন্দেরা যে অভিমানে ও প্রতিবাদে তাঁর শিকড় প্রাগ ত্যাগ করলেন, এমনকী অস্বীকার করলেন, সেই শিকড় পরবর্তীকালে (এ প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমসে এক ইন্টারভিউতে তিনি বলেছিলেন— “তিরিশের দশকে যখন জার্মান বুদ্ধিজীবীরা দেশ ছেড়েছিলেন, তখন একটা ক্ষীণ আশা তাঁদের ছিল যে আবার কোনও না কোনও সময় ফিরতে পারবেন দেশে। কিন্তু আমার সে আশা নেই। বরং ফ্রান্সকেই আমার দেশ বলতে আমার বাধা নেই। নিজেকেও আমি ছিন্নমূলও মনে করি না।”) তিনি অস্বীকারই করবেন। এটিও একপ্রকার দ্বন্দ্ব, যা কুন্দেরার সামগ্রিক লেখকজীবনেরই এক অংশ। আধুনিকোত্তর ভাবনাচিন্তায় যে ‘নির্দিষ্ট’ বা ‘চরম’ বলে কিছু হয় না, বরং নিজের টিকে থাকার অস্তিত্ব নিয়েই একপ্রকার বহুমাত্রিক ও বহুস্তরের অবস্থা তৈরি হয়, তা কুন্দেরার লেখায় স্পষ্ট। একদিকে তিনি ‘আইডেন্টিটি’ , ‘ইগনোরেন্স’, ‘দ্য জোক’-এ তৈরি করছেন মেধাবী শ্লেষাত্মক রাজনৈতিক সন্দর্ভ আর অন্যদিকে তৈরি করেছেন অসমবয়সী যৌনতার এক বিকল্প ভাষ্য। এই ‘বিকল্প’ কথাটির দিকে জোর দেওয়া আবশ্যক বলে মনে হয়। নিথর ছাঁচের মধ্যে লেখা উপন্যাস, গল্প এবং লেখার ভাবনায় যে মৃত্যু দরজার ওপারেই অপেক্ষা করছে, তা বাংলা সাহিত্য হয়তো অনুধাবন করতে পারছে না। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের সাধকরা যে মিলান কুন্দেরা পড়েন, তা একপ্রকার আশার কথা। তেমনই তাঁর নোবেল পুরস্কার না পাওয়ার কারণটাও অনুমান করা শক্ত নয়। ( রেফারেন্স ১-৩) কারণ যে যে বিষয় এবং আঙ্গিক নিয়ে তিনি ক্রমাগত পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন আজীবন, তা তাঁর লেখাকে মেধাবী এক দর্শনে পরিণত করেছে। ব্যক্তিগত জীবনের নির্যাস দিয়েই, তন্ময় এবং মন্ময়ের মধ্যে এক অপূর্ব রসসিক্ত সম্পর্ক তৈরি করে যে অঞ্চল কুন্দেরা তৈরি করতেন, তাকে নিজে হাতেই আবার ভেঙেও দিতেন। একে একপ্রকারের প্যারাডক্স বলা চলে। জীবনের এই প্যারাডক্স নিয়ে তিনি বহুদিন ধরেই লিখে আসছেন। তাঁর উপন্যাসগুলিই এই প্যারাডক্স। কিন্তু প্যারাডক্স শেষ পর্যন্ত কোথায় যাচ্ছে? শেষ পর্যন্ত বিপন্ন করছে। বাঙালি বিপন্ন হতে ভালোবাসে না। তবু তারা কীভাবে যে মিলান কুন্দেরাকে গ্রহণ করছে তা সত্যিই ভাবার বিষয়। মিলান কুন্দেরা যে কারণে সমকালীন কমিউনিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে মাথা তোলেন, ফলে নির্বাসিত হন, সে কারণে এই বাংলা ও ভারতবর্ষের যে কোনও সময়েই যে কোনও লেখকই ব্রাত্য এবং নির্বাসনের উপযুক্ত। অথচ এমনভাবে বিপন্ন কেউ নিজেকে করছেন না। বরং তাঁদের লেখায় এসে পড়ছে শাসকের সঙ্গে এক নিরাপদ সহাবস্থান। কোথাও কোথাও তাঁরা শাসক হয়েও উঠছেন। কিন্তু এভাবে কি মিলান কুন্দেরার কো-অর্ডিনেটের ভিতর পা রাখা যায়?

সমস্যা হল, কেউ মারা গেলে তিনি অবশ্যই মহৎ। সেক্ষেত্রে ব্যক্তি মিলান কুন্দেরার জন্য দুঃখ এবং শ্রদ্ধা প্রকাশ অবশ্যই এক প্রয়োজনীয় কাজ। কিন্তু মিলান কুন্দেরা কি আদৌ মারা গেলেন, না কি যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁরা আদৌ বেঁচে আছেন? মিলান কুন্দেরার যে জায়মান সন্দর্ভ বা প্রতর্ক’ সেগুলির মৃত্যু কি হয়? যেভাবে তিনি ইম্মর্ট্যালিটি, আইডেন্টিটি্‌, দ্য আনবেয়ারেবল লাইটনেস অফ বিইং-এ অস্তিত্বের মূলে রোপণ করেছেন বিপন্নতার বীজ, যেভাবে তিনি চিন্তার মুক্ত আকাশকে এনে দিয়েছেন পাঠকের কাছে, তা বিংশ শতাব্দীর সাহিত্যের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। সেসবের মৃত্যু হয়নি। কারণ বর্তমান সময়ের এই মৌলবাদ-ফ্যাসিবাদ অধ্যুষিত পৃথিবীতে তাঁর উপন্যাস এলিয়টের ‘ওয়েস্টল্যান্ড’ কবিতার মতোই অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। চিন্তাশূন্য ‘হলো মেন’-এর পৃথিবীতে তিনি চিন্তার মুক্তি এনে দিলেন। উপন্যাসকেও মুক্ত করলেন ছাঁচে বন্দি আঙ্গিক এবং বিষয় থেকে। বিষয় ও আঙ্গিকের এক আশ্চর্য ও অভিনব বিবাহ ঘটালেন তিনি। ফলে, বিংশ শতাব্দীর সাত-আটের দশকে যে মুক্তির সূত্রপাত হল, তা অবিচ্ছিন্ন রইল তাঁর মৃত্যুর পরেও। কারণ কুন্দেরা নামক লেখকের যেমন কোনও দেশ নেই, তেমনই কোনও নির্দিষ্ট সময়ও নেই। তিনি এক বিশেষ সময়ের মধ্যে দিয়ে চিরসময়ের কথা বলেছেন তাঁর লেখায়। হয়তো টোটালিটারিয়ানিজমের বিরুদ্ধে তাঁর ভাবনা। এই ভুবনায়নের যুগে এই ভাবনা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। ইউরোকেন্দ্রিকতার আড়ালে যে বিশ্ব-ভাবনা রয়ে গেছে তিক্ত শ্লেষাত্মক পরীক্ষানিরীক্ষায়, সেগুলিকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। যে মেধাবী লেখক ও পাঠক কুন্দেরা পড়েন, তাঁদের মস্তিষ্কে এবং স্বপ্নে কুন্দেরার অস্তিত্ব থাকবেই। এই স্বপ্নকে কুন্দেরা স্বয়ং উপন্যাসের এক আবশ্যিক বিষয় হিসেবে মনে করতেন। 

একজন বাঙালি হিসেবে, নিজের ভিতরে পুষে রাখা ইউরোকেন্দ্রিকতা নিয়েই, যতটুকু কুন্দেরাকে বোঝার চেষ্টা করা যায়, তারও কিয়দংশ এখানে লিখতে পারলাম। যা একপ্রকার ব্যর্থতাই। কিন্তু প্রশ্ন হল, এতদিন কেন লিখলাম না? এতদিন কেন কেউ বললেন না লিখতে? কেন তাঁর মৃত্যুর পরই লিখতে হল? এইখানে এসেই সেই প্যারাডক্সের মুখোমুখি হচ্ছি, অস্তিত্বের সেই বিপন্ন ধূসর অঞ্চলে অসহ্য হয়ে উঠছে সব ভাবনা। কারণ যা বলতে চাই, তা বলতে পারছি না। অন্য কিছু বলছি।


 

Reference 

 1)http://wavefunction.fieldofscience.com/2016/09/2016-nobel-prize-predictions.html?m=1 


2) https://ja-jp.facebook.com/nobelprize/posts/breaking-newsthe-royal-swedish-academy-of-sciences-has-decided-to-award-the-nobe/10154991923149103/

৩) 

https://twitter.com/ProfpkbKr/status/520137494830915584?t=d447YPSJr9pzS4j0AVdGMQ&s=19

৪) https://en.m.wikipedia.org/wiki/The_Unbearable_Lightness_of_Being

৫)

https://en.m.wikipedia.org/wiki/The_Unbearable_Lightness_of_Being

৬) https://en-m-wikipedia-org.translate.goog/wiki/The_Book_of_Laughter_and_Forgetting?_x_tr_sl=en&_x_tr_tl=bn&_x_tr_hl=bn&_x_tr_pto=t



 




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract