AYAN DEY

Horror Crime

3  

AYAN DEY

Horror Crime

পুতুল

পুতুল

4 mins
1.1K


সম্বিত কর নিজের পরিবারকে নিয়ে এলেন একটা পুরাতন বাড়িতে । স্ত্রী অর্পিতা ও মেয়ে রঞ্জনাকে নিয়ে বহরমপুরের এই বাড়িতে এসে হাজির হলেন সম্বিত । সম্বিতের বন্ধু রাহুল বিশ্বাস বর্তমানে এক বিরাট শিল্পপতি । ওরই আদিবাড়ি এইটা । কোলকাতায় থাকে বলে আসা হয় না এখানে । সম্বিতের ট্রান্সফারের চাকরি । ও বহরমপুরে ট্রান্সফার হতেই এক কথাতে রাহুল বাড়ির চাবি দিতে রাজি হয়ে গেছিলো ।

রাহুলের স্ত্রী প্রথমে হ্যাঁ করলেও সম্বিত যেদিন চাবি নিতে আসে সেদিন থেকে আপত্তি দেখাতে শুরু করে ।

" শোনো ওই বাড়ির চাবি কাউকে দিও না । তুমি নেহার কথা ভুলে গেলে এর মধ্যে ? "

" কী বলছো অমৃতা ? সে তো নেহা একটা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলো । মানছি ও আর বেঁচে নেই কিন্তু ওই ঘটনার জন্য ওর কিছু হয়নি , ও স্পষ্ট লাং ক্যানসারে মারা গেছিলো । ওই অগ্নিকান্ডে বেশী চোটও পায়নি ও । "

" কিন্তু ... সম্বিত কখন এলে ? "

" এই তো বৌদি । তা কী বলছিলেন ওই বাড়িতে দুর্ঘটনা নিয়ে ? "

" ও কিছু না রে , বলবো একদিন টেক্সটে । এমন কিছু নয় । তুই চাবি নে । "

সন্দেহ লাগলেও সেদিন আর কিছু বলেনি সম্বিত । কিন্তু বাড়ি উপস্থিত হওয়ার পর থেকেই ওই বাড়িতে অদ্ভুত ব্যাপার হতে শুরু করলো ।

সেদিন বাথরুমে রাতে হাত পা ধুয়ে বেরোনোর পর একটা পুতুল বাথরুমের সামনে পড়ে থাকতে দেখে চমকে গেলো সম্বিত । তার মেয়ে তো পুতুল খেলার বয়সি নয় । যথেষ্ট বড় সে ।

পুতুলটা হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে লম্বা বিনুনিওলা মাথাটা ঝট করে ঘুরিয়ে ফেললো । সাথে কি বিকট কর্ণ বিদীর্ণ করা হাসি ।

" সম্বিত ... সম্বিত ... "

ভয়ে সম্বিত দৌড়তে দৌড়তে ঘরে ফিরে এলো । 

" মামুনি মামুনি তুই পুতুল কবে কিনলি ? "

" কী বলছো বাপি আমি পুতুল কেন নেবো ? আমি ক্লাস ৮এ পড়ি , পুতুল খেলার বয়স আছে নাকি ? "

" তবে বাথরুমের সামনে ওটা কী ? "

" কই দেখছি চলো ! "

" আয় ওই তো দেখ ... এ কী কোথায় গেলো ? "

রঞ্জনা কী ভাবলো কে জানে কিন্তু রাতের বেলা ও কিছু কম ঘাবড়ে গেলো না । সবে ল্যাম্প নিভিয়ে শুতে যাবে অমনি একটা মেয়ে পুতুল ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে চাইলো ও সাথে সেই বীভৎস হাসি ! " আঃ... বাপি মা ! এটা ... এটা কী ? "

" কী হলো মা ? " অর্পিতা যতক্ষণে ঘুম ভেঙ্গে চাইলো রঞ্জনার পাশে কিচ্ছু দেখতে পেলো না । 

" শুয়ে পড় মা কেউ সস্তার মজা করছে আমাদের সাথে , একটু সজাগ থাকলেই ধরতে পারবো । "

পরদিন সন্ধ্যেবেলা কফি খেতে খেতে জানলার পাশে দাঁড়িয়ে অর্পিতা । এবার তার পালা । স্বামী অফিসে । মেয়ে পড়তে গেছে । পুতুলটা এবার তারও চোখে পড়লো । এক লাফ দিয়ে পুতুলটা ওর কাঁধে উঠতেই গলায় প্রচন্ড চাপ অনুভব করলো অর্পিতা । কিন্তু ওই বিপদেও সে বুঝলো চাপটা আসছে পিছন থেকে কিন্তু পুতুলটা সামনে ঝুলে ।

গায়ের জোরে পিছনের হাত বুঝে সেটা টেনে সামনে ফেলতেই চমকে গেলো অর্পিতা । 

" অমৃতা তুমি ? "

" আর চিনেই যখন গেছো তখন শান্তিতে মরো । " বলে একটা ভোজালি বের করে অমৃতা এগিয়ে গেলো অর্পিতার দিকে ।

" এ কী করছো ? " বলে হাতটা শক্ত করে ভোজালিটা ফেলে দিলো অর্পিতা ।

" তোমাকে মারার পর তোমার স্বামী আর মেয়েকে মারা কিচ্ছু কষ্ট ছিলো না । "

" কিন্তু এই হিংসার কী কারণ ? "

" নেহাকে মনে পড়ে অর্পিতা ? পড়ে মনে ? "

" নেহা কে নেহা ? তুমি কি আমাদের কলেজবন্ধু নেহার কথা ... "

" হ্যাঁরে শয়তানি হ্যাঁ । বোনের চেয়েও প্রিয় আমার বন্ধু নেহা এখানে পড়তে এসেছিলো , ছিলো এই বাড়িতে । তুই আর তোর এখনকার স্বামী মিলে ষড়যন্ত্র করে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলি ওকে । ও বেঁচে গেলেও ওর ফুসফুসের প্রচন্ড ক্ষতি হয়ে যায় । তোদের জন্যই ও আজ নেই । "

ততক্ষণে সম্বিত আর মেয়ে রঞ্জনা এসে হাজির । পুরো ঘটনা শুনে সব্বাই স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ।

সেদিনও এরকম এক সন্ধ্যা । নেহার উপর চড়াও হয়েছে দুজন । দোষ নেহার সাথে শারীরিক সম্বন্ধ জোর করে স্থাপন করেছে সম্বিত । দোষ সম্বিতের নয় নেহার কারণ সে গরীবের মেয়ে । আর অর্পিতার সাথে সম্বিতের বিয়ে ঠিক । তাই পিছমোড়া করে বেঁধে রান্নাঘরে সিলিণ্ডার ওপেন করে আগুন জ্বেলে দেয় ওরা । কি ভাগ্যি একটা জানলার গরাদ ভাঙ্গা ছিলো । ফাঁক দেওয়া জানলা দিয়ে বেরোনোর পূর্বে কাপড়ের শেষভাগে আগুন লেগে গেছিলো কিন্তু সেদিন ও পালিয়ে বেঁচেছিলো । কিন্তু বেশ একবছরের মধ্যেই ওর কর্কটরোগ ধরা পড়ে আর কদিনের মধ্যেই ...

হাতজোড় করে ক্ষমা চাওয়ার হিম্মত নেই সম্বিতের আর অর্পিতার । 

" অমৃতা বৌদি , একটা প্রায়শ্চিত্ত আমরা পরে করেছিলাম । যখন খবর পাই নেহা একটা শিশুকন্যার জন্ম দিয়েছে আমি গিয়ে ওই সন্তান নিয়ে আসি । এই রঞ্জনা আসলে নেহারই মেয়ে । "

রঞ্জনা কিছু বুঝতে পারার আগেই অমৃতা তাকে বুকে তুলে নিয়ে আদর করতে লাগলো ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror