পুরাতন ফটো অ্যালবাম
পুরাতন ফটো অ্যালবাম
পুরাতন ফটো অ্যালবাম, ছবি গুলো সব প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও হঠাৎ বনানীর সিদ্ধান্ত বদলে দিলো অ্যালবামটা। এই অ্যালবামটা ওর জীবনের সবচাইতে বড় ভুল তবুও। এই অ্যালবামটাতে ওর মাকে সবচাইতে হাসি খুশি সুন্দরী লাগছিলো। তাই ওর বাবার মতো ও ভুল করবে না।ও বেচে থাকবে ও মায়ের জন্য। কিন্তু ওর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ও কেন যেনো মনে হচ্ছে বুবাই আত্মহত্যা করেছে। কারণ ও এবারেও চরম অপমান করে ফিরিয়ে দিয়েছে বুবাইকে।
বনানী একটা সাধারণ ঘরের মেয়ে। রূপচর্চা করলে সুন্দরীর লাগে। তবে ওর রূপ দেখে ওর প্রেমে পরেছিলো বুবাই এমনটা নয়। তবে ধুমকেতুর মতো এসেছিলো দুইজন দুইজনার জীবনে। কিন্তু ভালো লাগা ছিলো নির্ভেজাল। কোন হিসাব নিকাশ, খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি মন দেওয়া নেওয়ার সময়। দুইজনে একটা লক্ষ ছিলো জীবনে সফল হয়ে ঘর বাঁধার। বুবাই এরও পড়াশোনা চলছিলো তখন সাথে চাকুরী। সত্যি বুবাই না থাকলে বনানীর জীবনটা একটু হয়তো অন্যরকম হতো। সেটা হয়তো ভালোই হতো। শুভ্রাদি, সুজাতাদের মতো হয়তো দুই বাচ্চার মা হয়ে মুখ বুঝে সংসার করতে হতো।
বনানী যদিও তেমন বিশেষ কিছু চাই নি ওর জীবনে। চেয়েছিলো একটা মানুষ যে ওকে খুব ভালোবাসবে। ওর কাজের প্রশংসা করে বুকে জড়িয়ে ধরে বলবে আমি তোমাকে ভালবাসি। আর কখনো দুঃখ পেলে বলবে সরি। বুবাই এই দুই টো করতো। সাথে বকাঝকা করতো। জীবন সফল হবার জন্য অনেক হাতরে বেড়িয়ে বুবাই। তাই ক্যারিয়ার গড়তে বনানী ও একদম সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছিলো। বনানী ওর আজ সফল স্বনির্ভর মহিলা। কিন্তু এই ফলে বুবাই মধ্যে হঠাৎ করে প্রেমিকা সত্ত্বটা হারিয়ে গিয়েছিল। বাবা কাকাদের মতো এটা করো না, এটা করো করতেই ব্যস্ত হয়ে গেলো।
এ সব কিছুর জন্য কিছুটা দায়ী যদিও ওর বাবা। উচ্চ মাধ্যমিক তখন সামনে।কোচিংটা হঠাৎই ছেড়ে দিতে হলো ওকে । তখন ওদের আবার প্রেমের শুরু দিকটা। মানে বন্ধু বান্ধব সাথে দুই একবার রেস্টুরেন্ট আর সিনেমা দেখতে গেছিলো ওরা। কোচিং সেন্টারে আসা যাওয়ার পথেই ওরা দেখা সাক্ষাৎ করতো। যখন বনানী বুবাইকে জানালো ওদের আরে প্রেম করা হবে না। এমন কি উচ্চ মাধ্যমিকটাও দেওয়া হয়তো হবে না। তখন বুবাই বলেছিলো। প্রেম করতে গেলে যতো টাকা পয়সা লাগে কিন্তু যদি পড়াশোনা করার ইচ্ছে থাকে তাহলে অতো টাকা পয়সা লাগে না। বিয়ে করলে তো ওকে ওর ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিতে হবে। তাই প্রেমিক হিসেবে ও ওর পড়াশোনা দায়িত্ব নিতে রাজি। একটা নতুন উৎসাহে বনানী পড়াশোনা শুরু করলো। কিন্তু বুবাই ওর প্রেমিক চেয়ে বেশি হয়ে গেলো অভিভাবক এই ভাবেই।
ফলে আই টি আই করতে গিয়ে অভির সাথে ওর একটু আধটু ঘনিষ্ঠ তৈরি হয়ে গেলো। যদিও অভি ও পিছনে হাত ধুয়ে পড়ে রইলো। অভিকে এড়াতেই। বুবাইকে সাত তারাতারি বিয়ে করতে বাধ্য করলো বনানী। বুবাইএর ভালো চাকরি ছিলো না তো কি হয়েছে বাবা মায়ের ভালো অবস্থা ওরা বেশ সুখেই ছিলো। কিন্তু বুবাই সাদাসিধে মন ওদের সম্পর্কে ধিরে ধিরে ভাঙা পথে এগিয়ে নিয়ে গেলো। বুবাই এর কথাতেই বনানী অভি বনানীর অফিসে চাকরি দিলো। অথচ বনানী কে প্রেমে ফেলার চেষ্টা করতে অভি চাইলো। ওর দেখাদেখি প্রদীপ ও প্রেম প্রস্তাব দিলো। বুবাই ও খুব বিশ্বাস করে তাই সোমাদির উপদেশ দিলো। জীবন একটু আধটু উপভোগ করতে। পরকীয়া প্রেম স্বাদ নিতে। কিন্তু একটু স্বাদ নিতে গিয়ে ও বুবাই এর সম্পর্কটা ভেঙে গেলো। যদিও ও চেয়েছিলো অভিকে প্রমান দিতে যে ও অভিকে ভালোবাসে না। কারণ অভি দাবি করতো বুবাইকে ও বিয়ে করছে টাকা পয়সা লোভে অথবা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে। বুবাইকে ও নাকি কোন দিন ভালোবাসে নি।
বুবাই ভালো না বাসার কোন কারণ নেই। বিয়ে পর ওর মা বাবা ভাই আত্মীয় স্বজনের সবচেয়ে প্রিয় বৌমা থুড়ি ও তো ও বাড়ির মেয়ে মতো হয়ে গেছিলো। ওর কথাতেই শশুর শাশুড়ী ও চলতো। তবে ও গিন্নীপনা কোন দিন দেখায় নি। বরং দুষ্টুমি ফাজলামি করে বেশ ভালো দিন কাটাছিলো ওর।বুবাই সাধারণ একটা ছোট কাগজের অফিসে কাজ করতো। আর জীবন বীমা কোম্পানি এজেন্ট ছিলো। হঠাৎ কেরিয়ার পরিবর্তন করতে চাইলো বুবাই। সেটা থেকেই ওদের প্রথম দূরত্ব তৈরি হওয়া শুরু করলো।
সোমা দি অভিকে এড়িয়ে যেতে প্রদীপ সাথে সম্পর্কটা করার পরামর্শ দিয়েছিলো। না প্রদীপ ম্যানেজার বলে চাকুরীতে বারতি সুবিধা পাওয়া আশা বনানী ও ওর দিকে ঝুঁকে পড়ছিল এমন টা নয়। প্রদীপ বড় কেয়ারিং। বুবাই মুম্বাই চাকুরী খোঁজে ব্যাস্ত। কথা বলতে চায় না কিছুতেই। কিছু একটা গোপন করছে ও। খালি বলে ভালো ভবিষ্যতের জন্য একটুখানি কষ্ট করতে হবে ওদের। বুবাই বনানীকে চাপ দেয় বারবার পড়াশোনা করতে, বলে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে গবেষণা করতে হবে ওকে । কিন্তু বনানী সাধারণ মেয়ে আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখতে চায় না। প্রদীপ সোমা দি বুবাই সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলে ওকে বারে বারে। কারণ বুবাই মানুষটা শুধু স্বপ্ন দেখেছে এতো বছর ধরে সফলতা তো কখনো পায় নি।
স্বপ্ন সফল ওরা তো দুই জন মিলে করবে বলেছিলো। তাই বনানী বুবাই ব্যার্থ বলে ওর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার মেয়ে নয়। কিন্তু হঠাৎ বনানীর মন হলো। ও প্রদীপের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। বুবাইএর বাড়ির দেওয়া স্বাধীনতার ও অপব্যবহার করে ফেলেছে। বুবাই ও মুম্বাই থেকে ফিরে আসতে বললো। বুবাই এর সাথে ওর সম্পর্কটা আর স্বচ্ছ নেই। মুম্বাই হয় যাওয়া চাকুরী ছেড়ে দিয়ে বুবাই বাড়ি ফিরে এলো। আবার জীবন বীমা কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে রাত দিন কাজ শুরু করলো। আসলে বনানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করেনি বলেই বোধ হয় বুবাই রাগ করেছিলো। কিন্তু সোমাদিরা ওকে ভুল বোঝালো। বুবাই পরকীয়া প্রেম করছে এমনটা প্রমান করে ছাড়লো। কিন্তু বনানী যখন বুঝতে পারলো। বুবাই শুধুমাত্র ওকে ভালোবাসে তখন অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। সংসার একঘেয়েমি কাটাতে , পরকীয়া প্রেমের স্বাদ নিতে গিয়ে নিজের চোখে নিজে ছোট হয়ে গেলো। মদ্যপ অবস্থায় এক গেস্ট হাউস থেকে বনানী প্রদীপ পাওয়া যায়। ওখানে সোমা দি একটা মধু চক্র চালাতো। বুবাই নিজে গিয়ে ওকে উদ্ধার করে ছিলো। সংবাদ পত্রের ওর নাম বা ছবি যাতে না আসে তার জন্য ব্যবস্থা করছিলো।
বনানী ওর পর একটা রাতে থেকে ছিলো ওর বাড়িতে। কি একটা ওষুধ খেয়ে সেই জোর করে ওর সাথে সম্পর্ক করেছিলো বারবার বুবাই। কিন্তু বনানীতো যৌন অতৃপ্তিতার জন্য অন্য পুরুষের কাছে যায় নি সে কথাটা কি ভাবে বোঝাবে সে। পুরুষ চিরকাল মেয়েদের স্বামী হয়ে থাকলো। বুবাই ও ওর প্রেমিক হতে পরলো না। যদিও ক্লান্ত হয়ে বুবাই একবার বলেছিলো। "আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। আমি এমন কোন কাজ করি নি যাতে তোমার বিশ্বাস ভঙ্গ হয়। ভুল বুঝে ভুল করেছো। সে ভুল শুধরে চললো নতুন করে শুরু করি।"
নতুন করে শুরু করবো বললেই কি করা যায়। বনানী বুবাইকে ঘৃণা করে। কেন করে তার সঠিক কারণ জানে না। বুবাই তার জীবনের গতিপথ বদলে দিয়েছে। স্বনির্ভর হতে শিখেছে। ও সব সময় বলে পুরুষ যা পারে নারীও সেটা করতে পারে । তাহলে আজ বনানীর বেলায় সে জোর খাটালো কেন? বনানী ভুল করছে। কিন্তু বুবাইতো বলতো নারী পুরুষ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলেই নারী অপবিত্র হয়ে গেছে কোন যুক্তি তা ওর জানা নেই। অথচ সত্যি ঐ গেস্ট হাউস ওর সাথে প্রদীপের কোন শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন হয়েছিল কিনা জানতে না চেয়ে। ওকে ধর্ষণ করলো বুবাই বারবার। সেটা মেয়ে হিসেবে ওর কাছে ছিলো ভীষন অপমানের। তাই ভোরের সূর্যটা উঠতেই বুবাই বাড়ি ও ছেড়েছিলো চারদিনের মতো। ওকে বুবাই ডিভোর্স দিতে চাই নি । ও জোর করে ডিভোর্সটা নিয়েছে। ও কষ্ট পেয়েছে । কিন্তু বুবাই ওর কষ্ট বাড়ি দিতে কাল রাতে আত্মহত্যা করেছে। কাল ওদের ভেঙে যাওয়া বিয়ের দশম বিবাহ বার্ষিকী ছিলো। আত্মহত্যার আগে একটা পোস্ট।
" সফলতার মাপকাঠি হয়তো টাকা পয়সা রোজগার। হয়তো আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তিদের মধ্যে কেউ হতে পারি নি। কিন্তু সে পরিমাণ টাকা পয়সা রোজগার করেছি। যেতে আমি আমার চেনা জানা মানুষের কাছে উদাহরণ হতে পারি। হিংসার কারণ হতে পারি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যার ভালোবাসা পেতে চাই তার আজ ঘৃণার পাত্র হয়ে রেয়ে গেলাম।"
বনানী দুঃখ একটাই বুবাইকে সে ভালোবাসে না ঘৃণা করে সেই টা আজো বুঝতে পারলো না সে।
,,,,
