পটলা কোম্পানির গোয়েন্দাগিরি
পটলা কোম্পানির গোয়েন্দাগিরি
বাপি যা বলছে , তাতে আপ্পুর দাবি সঠিক। বাপি বলছে কেউ একজন যে অদৃশ্য, ওর দোকানে আসে আর জিনিস পত্র নেয় , পয়সা দিয়ে চলে যায়। ফলে বাপির কথা অনুযায়ী এটাই বোঝা গেলো। আপ্পু যা বলছে সেটাই ঠিক। রাঙা দাদুকে কেউ কিটন্যাপ করে নি উনি নিজেই লুকিয়ে আছে আমাদের থেকে। ও আপনারা রাঙা দাদুকে চিনতে পারছেনা। পটলা কোম্পানি আগে পড়েছেন যারা তাদের তো ওনাকে চেনার কথা। উনি ভৌত বিজ্ঞানের প্রফেসর। বয়স কমানোর মেশিন আবিষ্কার করেছিলেন, সে গল্পতো আপনার আগে বলেছি।
এবার মূল ঘটনায় আসি। কিছুদিন আগেই আমরা লক্ষ্য করেছিলাম কিছু সন্দেহ জনক লোকজন আমাদের অঞ্চলে ঘোরাঘুরি করছে। আপু গোয়েন্দাগিরি চালিয়ে যায়। এবং পুরো ব্যাপারটা পুলিশ জ্যেঠুকে বললে তিন জনকে গ্রেফতার করে জানা যায়। তাঁরা নাকি রাঙা দাদুর প্রতিরক্ষা জন্য এখানে ওরা চা ওয়ালা , ভিক্ষরি , পথচারী সেজে লক্ষ্য রাখতেন। আপ্পুর চোখকে ফাঁকি দেওয়া অতো সহজ নাকি? তবে যে কেউ লক্ষ্য করলেই ওটা ধরে ফেলতো। ভিক্ষারি কখনো ভুড়ি থাকে নাকি? সে ততোই অন্ধ হোক। চায়ের দোকানেদারে চুল কদম ছাঁট। চায়ের স্বাদ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম। জমি দালালি, ভাড়া বাড়ির খোঁজ খবর রাখতে আগ্রহী নয়। পথচারী চায়ে দোকানে বসে থাকে কিন্তু কারো সাথে খেজুরে আলাপ করে না।
যাইহোক ওদের কথা অনুযায়ী রাঙাদাদু কিছু একটা আবিষ্কার করেছে। সে কথা সে নিজে তার আমেরিকার এক বিজ্ঞানী বন্ধু বলেছিলেন।আর সেখান থেকেই সবাই খবরটা যেনে গেছে। তবে কিছু আতঙ্কবাদী সংগঠন ওটা নিতে চায়। তাঁর জন্য এই নিরাপত্তা।
কিন্তু কি আবিষ্কার করেছে রাঙাদাদু সেটা কেউ জানে না। আসলে এ ব্যাপারে কারোর কাছে মুখ খোলেননি রাঙাদাদু।রাঙা দাদু বরং মজা করে বলেছিলেন " পটলা কোম্পানি গোয়েন্দাগিরি চালিয়ে দেখুক না আমি কি আবিষ্কার করেছে।"
কথা আমি আপ্পু বাপি বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখলাম। আর দাদুর চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করলাম। কি আবিষ্কার করেছে সেটার কাছাকাছি একটা অনুমান করেছি তখনই খবর রটলো রাঙা দাদু কিটন্যাপ হলো। কিন্তু আপ্পু বলছে রাঙাদাদু কিটন্যাপ হয় নি নিজে নিজেকে কিটন্যাপ করিয়েছেন। আসলে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ খুঁটিনাটি বিষয় লক্ষ্য করুন। অচেনা অজানা মানুষ হলে লুকানো ক্যামেরা কথা কিভাবে জানবে। মাংকি ক্যাপ পড়া মানুষ গুলো তাদের কাছে বন্দুক আছে সেটা ক্যামেরাতে দেখাবে কি করে । আর গত এক বছরে দাদু তার গাড়ি কোন দিন বেড় করে নি। হঠাৎ দুই দিন আগে সে গাড়ি সারানো হলো । আবার সেই গাড়িতে করেই রাঙাদাদু কিটন্যাপ হলো কি করে?? যাইহোক রাঙাদাদু নিজে থেকে কিটন্যাপ হয়েছে আর কেন হয়েছে সেটাও স্পষ্ট । কারণ রাঙাদাদু চায় না তার আবিষ্কৃত যন্ত্রটা খারাপ মানুষ দের হাতে চলে যাক।
আপনি বলবেন কি আবিষ্কার করেছে রাঙাদাদু। আমাদের অনুমান এমন একটি কোন যন্ত্র মা মানুষকে অদৃশ্য করে রাখতে পারে। পুরোটা আমাদের অনুমান নয় এটা সত্য। কারণ কিছু দিন ধরে দাদু বললতো মানুষ চেয়ে দেবতা কিংবা ভুত শক্তিশালী কারণ তারা অদৃশ্য হতে পারে। সে ইউটিউব থেকে আমাদের মিস্টার ইন্ডিয়া বইটা ডাউনলোড করেছিলো। আলোক বিজ্ঞান পড়াশোনা করছিলো। সে বার বার বলছিলো প্রিজম যেমন রঙকে ভেঙে দিতে পারে তেমন সাতরঙ শুসে নিতে পারে এমন একটা জিনিষ আবিষ্কার করতে হবে। যেমন কালো রঙ সব রঙ শুসে নিতে পারে তাই অন্ধকারে আমরা কিছু দেখতে পারি না।সে বলছিলো এমন একটা যন্ত্র চাই যা শুধু রং শুসবে না, সেই যন্ত্র থিডি এফেক্ট দিয়ে আরটা ছবি তৈরি করবে , যা ঐ পরিবেশের সাথে মিলে যায়।তাহলে অদৃশ্য হয়ে যাবে বস্তুটি। আমাদের ধারণা ও যন্ত্র তৈরি করা হয়ে গেছে দাদুর আর দাদু কিটন্যাপের গল্প রটিয়ে বাড়িতে ই আছে। কারণ রাঙাদিদাকে দাদু খুব ভালো বাসেনা তাকে ছাড়া সে কখনোই থাকবেন কোথাও।
কিন্তু প্রমান করতে হবেই রাঙা দাদু বাড়িতে আছেন।পটলা কোম্পানি রাঙাদিদা হাতে নারকেল নাড়ু খাবার অজুহাতে রাঙাদাদুর বাড়িতে ঢুকলাম। সিধা বই ঘরে গেলাম। আগে থেকে করা পরিকল্পনা মতো। একটা বিড়ির প্যাকেট আর দেশলাই বাক্স টেবিলে রেখে। বই খোঁজা অভিনয় করলাম। রাঙা দাদু চুরি করে বিড়ি খায়। বাড়িতে দাদু ঢুকলে দিদা তার তল্লাসি চালায়। ফলে রাঙাদাদু বিড়ি নিয়ে বাড়িতে ঢুকতে পারে না। বিড়ি দেখে লোভ সামলাতে না পেরে বিড়ি নিয়ে সে চললো ছাদে। সে অদৃশ্য বিড়ি দেশলাই তো অদৃশ্য নয়। বাপি ও সুযোগ মতো দিদাকে খবর দিলো দাদু বিড়ি খেতে ছাদে গেছে। দাদুর স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা থাকা দিদা ভুলে বলেই ফেলো। দাদুকে বিড়ি খেতে না দিতে। বিড়ি ধরিতেই। তাই আমরাও রাঙাদাদুকে ধরে ফেললাম। ধরা পরে কিন্তু রাঙা দাদু যা বললো তা সত্যি আমাদের চিন্তা ফেলে দিলো।
সত্যি বিজ্ঞান সব কিছু আবিস্কার করে সমাজের কল্যাণের জন্য কিন্তু মানুষ তা করে না। পরমাণু ভাঙে শক্তি পাওয়া যায়। আবিষ্কার হয়েছিল শক্তি উৎস হিসেবে। কিন্তু পারমাণবিক বিদ্যুৎ তৈরিতে নয় সেটা দিয়ে পরমানুর বোম তৈরি করা হলো। তাই দাদুর আবিষ্কারটা মানুষের ভালোচেয়ে খারাপ কাজেই ব্যবহার হবে তাই দাদুর আত্মগোপনের খবরটা আমারও গোপন করে গেলাম।
