STORYMIRROR

Anindya Biswas

Abstract Romance Others

3  

Anindya Biswas

Abstract Romance Others

-------' প্রোপোজ '-----

-------' প্রোপোজ '-----

5 mins
4

 


-- "শুনলাম নাকি আগে খুব প্রেমিক প্রেমিক ছিলে? কবিতা-টবিতা লিখতে"


বলে ফোনের ওপাশ থেকে দেবমিতার খিখিলিয়ে হাসি।

-" কে বলল?" আকাশের জিজ্ঞাসা।


--" বলেছে, তোমার আসে পাশের লোক থেকেই জেনেছি।"


-" সে লিখতাম আগে"


-- " আবার কি শুরু করা যায়না, দেখো বাইরে কেমন রোমান্টিক আবহাওয়া। রাতে বোধহয় বৃষ্টি আসবে, দেখো কিছু লিখে উঠতে পারো কিনা।"


- " কি হবে ওসব ছাইপাঁশ লেখে? তাছাড়া প্রেমিক সত্তা টাকে অনেকদিন আগেই মেরে ফেলেছি। তুমি তো জানোই সব।"


-- " তাবলে নিজের নতুন শুরুটা সুন্দর ভাবে করা যায় না? আমি কি দোষ করলাম? মানছি দেখেশুনে বিয়ে, সেজন্য আবদারও করতে পারবোনা আমার হবু বরের কাছে। তোমার সবকিছু জেনেই তো গ্রহণ করছি । কিন্তূ আমারও তো কিছু চাওয়া পাওয়া আছে। " বলে দেবমিতার মুখ ভার হয়ে গেলো।


- " শোনো, পছন্দ না হলে বলে দাও। এখনো সময় আছে। নিজেকে পরিবর্তন করবনা আমি। একবার ঠকেছি। আর না।"


-- "কি বললে, পছন্দ না হলে বলে দেবো? এতটা ঔদ্ধত্ব তোমার? আর একবার ঠকেছি, আর ঠকবোনা, মানে আমাকেও কি একই ভাববে তোমার আগের সংসারের মত? আমিও কি বলতে পারিনা যে তুমিও জেনে বোঝে আমায় ধোঁকা দিচ্ছ? এখনো আগের স্মৃতি আঁকড়ে আছো, আর আমায় সেই দহন জ্বালায় একটু একটু করে পোড়াবে?"


- " এই মুখ সামলে কথা বলবে। "


--" কি মূখ সামলে কথা বলব? এত সস্তা নাকি আমি? আমারও সম্মান আছে। এখন আমি তোমাকে বলছি। যদি পুরোনো আঁকড়ে রাখো, আজই হোক শেষ কথা। আমিও আমার বাড়িতে জানিয়ে দেবো। "


বলে দেবমিতা দুম করে ফোন কেটে দিলো।


 আকাশের মুখ রাগে লাল।রাগের মুখে ঘরে থাকা বক্সিং ব্যাগ টাকে উদোম কেলালো। 


-"সাহস দেখো মেয়ের, আমায় সাবধান বানী দেয়। আমি কি যেচে বিয়ে করছি নাকি? আমি তো আর রাজই ছিলাম না।" বলে একটার পর একটা ঘুষি আছড়ে পড়তে লাগলো ব্যাগটার ওপর। হাত ফেটে দরদর করে রক্ত পড়ছে তার।তবুও কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।


---" দাদা কি করছিস? জেঠিমনি দেখলে কি বলবে? আরে পাগল হয়ে গেলি নাকি?" সমস্বরে চিৎকার শুনে আকাশ ঘুরে তাকালো।


পিছনে তার প্রাণপ্রিয় তিনবোন দাঁড়িয়ে। আকাশের দুই কাকার মিলিয়ে তিন মেয়ে।

- " কখন এলি তোরা?"

--" এইতো, মাত্র এলাম। জেঠিমনী বললো তুই নিজের ঘরে। ঢুকে তো অবাক। কি করছিস? দাঁড়া ব্যান্ডেজ বাঁধি। পাগল দাদা একটা। বল কি হয়েছে"

আকাশ পুরো ঘটনা বলল।


সবশুনে বোনেরা বললো " বৌদি ঠিকই বলেছে। আমরাও মেয়ে। মেয়ে হিসেবেই বলছি। আরে যাকে বিয়ে করব তার কাছে একটা আবদারও করা যাবেনা নাকি? আর কোনও মেয়েই সহ্য করবেনা যে যাকে সে জীবনসাথী বানাবে সে এখন তার অতীত আঁকড়ে পড়ে আছে। কেনো মানবে সে? আরে তারও ত কিছু চাওয়া পাওয়া আছে নাকি বিয়েতে। একটা কথা বলি দাদা, তুই হবু বৌদির জন্য কিছু কি করেছিস যার জন্য তোর প্রতি একটা ভালোবাসা, ভরসা জন্মাবে? একটা ছোট জিনিষ চেয়েছে, তুই তাতেও দুই কথা শুনিয়ে দিলি, অপমান করে, কেনো মানবে তোকে বড় হিসেবে? আগের জনের জন্য যা করতই, তার সিকিভাগও করিসনি। একটু নিজেকে না ভাঙলে কি করে।"


আকাশ কিছু না বলে থমথম মুখ করে চলে গেলো।


ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। মোবাইলটা খুলে দেখল কোনো মেসেজ, কল করেনি আজ দেবমিতা। নিজেরই উপর রাগ উঠতে লাগলো একটু একটু করে। ঠিকই তো। এখনো অতীত আঁকড়ে বসে আছে সে। কী দোষ মেয়েটার। কেনো করলো এরকম সে? সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন ছাদে উঠে এসেছে জানেওনা। বৃষ্টি পড়ছে , হাওয়া বইছে। এক ফোঁটা, দু ফোঁটা করে আকাশের চোখ থেকেও আসতে আসতে বৃষ্টি পড়ছে। কাঁদছে আকাশ। চোখের জল দিয়ে বের করতে চাইছে তার ভেতরকার সব জ্বালা, যন্ত্রণা, উপেক্ষা, ক্ষোভ। চাইছে সে, নতুন জীবন পাক, নতুন ভালোবাসা জন্মাক, নতুন অঙ্কুরোদগম হোক, একটি কচি সবুজ পাতা মাটি ভেদ করে মুখ তুলে নবজীবনের স্বাদ পাক।


ভেজা মাথাতেই ঘরে ঢুকে অনেকদিন পর পরম যত্নে রাখা কবিতার খাতা টা বের করলো সে। লিখলো সে । লিখলো অনেকদিন পর। ধুলো সরিয়ে। নতুন ভাবে। দেবমিতার নামে।

----


----

সাতপাঁচ না ভেবে কাগজটা নিয়ে বৃষ্টি মাথায় করে দেবমিতার বাড়ির সামনে চলে গেলো। গিয়ে ফোন করলো।

দ্বিতীয় বারের মাথায় দেবমিতা ঘুম চোখে ফোন তুলল।

-- " হ্যালো?"

-" ফোন করলেনা যে, এত রাগ?"

--" নাহ্ রাগ কেনো । রাগ তো নিজের মানুষের উপর করে।"

- " আমি কি পর?"

--" সেটা তুমিই ভালো জানো।"

-" মাফ করে দাও"

-- " মাফের কি আছে? তোমার থেকে কিছুই আর আশ নেই আমার। আর আমিও ভাবছি আর এগোবো কিনা। রাখি ঘুম আসছে"

-" আচ্ছা, একটু দরজাটা খুলবে? বৃষ্টি খুব "

--" কী?" দেবমিতার যেনো কারেন্ট শক খেলো।

" এত রাতে কোথায় তুমি? কেনো দরজা খুলবো?l"

-" আরে ম্যাডাম খুলোই না। দেখ একবার বাইরে।"

জানালা দিয়ে আকাশ কে দেখলো দেবমিতা। পুরো অবাক হয়ে গেলো। কী করছে এত বৃষ্টিতে? এত রাত্রে?

রাতপোষাকের উপর হাউস কোট টা চাপিয়ে ছাতা নিয়ে বাইরে এলো।


" আরো পাগল নাকি তুমি? এত রাতে কেউ আসে? তাও এই বৃষ্টির মাঝে? কিছু কথা থাকলে সকালেই বলতে পারতে। নাও ছাতা নাও। বাড়ি যাও। " বলে ছাতা বাড়িয়ে দিলো দেবমিতা।

ছাতাটা দূরে ফেলে আচম্বিতে দেবমিতার হাত ধরে হাঁটু গেড়ে বসলো আকাশ। দেবমিতা থ। এ কাকে দেখছে সে?


বলছে আকাশ,

"--

ভরসা দে, এক নতুন ভোরের সূর্য দেখব;

তোমারি হাত ধরে,

ভরসা দে; বিকেলের রক্তিম আভায় মিশবি তুই;

আমারই মতো করে,


কাছে আয় তুই ; পাশে বস আমার, আয় আদরের চাদরে তোকে মোরাই;

দেখ তুই আমার চোখে, দে তুই কথা, প্রত্যেক জন্মে তোকে যেনো পাই।

--

আমি তোমাকে ভালবাসি দেবমিতা। গ্রহণ করো আমায়। এসো আমার জীবনে ভোরের সূর্যর মতো প্রখর হয়ে, পূর্নিমার চাঁদের মত স্নিগ্ধ হয়ে, গ্রীষ্মের কালবৈশাখী হয়ে, শীতের হিমেল পরশ হয়ে, বসন্তের রঙ্গীন ভালোবাসা হয়ে। আমি জানিনা আমি কতক্ষণ, বা কতদিন আছি পৃথিবীতে। কিন্তু এইটুকু জানি, যতদিন বাঁচি, প্রত্যেকটা মুহূর্তের নিশ্বাসে- প্রশ্বাসে তোমাকে চাই। জীবনের শেষ প্রান্তে তোমার কোলেই ঘোমাতে চাই? সেই সুযোগ, সেই নতুন জীবন তোমার সাথেই কাটাতে দেবে আমায়? একটু মায়ায়, সোহাগে, আদরে জড়িয়ে? 


দেবমিতা, বিয়ে করবে আমায়? "

দেবমিতার মুখ দিয়ে কথা বার হচ্ছেনা। খুশিতে চোখ দিয়ে জল পড়ছে।

--" হ্যাঁ, পাগল, একশোবার, হাজারবার হ্যাঁ। ওবাবারে, কি পোড়া কপাল আমার।সারাজীবনের জন্য পাগল জুটলো। কিন্তু আমার যে এই পাগলকেই চাই।"

বলে হাটুগেড়ে বসে আকাশকে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে নিলো। নিজের মধ্যে। নিজের মত করে। নতুন ভরসা, বিশ্বাস নিয়ে।




বৃষ্টিতে সৃষ্টি হলো এক নতুন জীবনের। এক নতুন ভোরের জানান দিয়ে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract