🥰অনবদ্য জন্মদিন 🥰

-" কাল তোমার জন্মদিন নাকি? "

---" হ্যাঁ, মনে তো হয় । "

-"হুঁ, আচ্ছা রাখি "

---"ঠিক আছে, রাখি। "

এইটুকু বলে সৃষ্টি ফোন রেখে দিলো।

অর্পণ ও কিছু বল্লোনা।

অর্পণ আর সৃষ্টি অনেকদিন ধরে ডেট করছে। অর্পনের মনে সৃষ্টির জন্য অপরিসীম ভালোবাসা থাকলেও এখনো সৃষ্টির মনের কথা জানতে পারেনি সে। মাঝে মাঝে মনে হয় সৃষ্টি তাকে খুব ভালোবাসে ; আবার মাঝে মনে হয় তারা শুধুই বন্ধু। নাহ ; অর্পণ সৃষ্টিকে হারাতে চায়না কিছুতেই। তাই মুখ ফুটে নিজের অধিকার, নিজের জায়গাটাও দাবি করেনা। কিন্তু হটাৎ এসে পড়ে ঠিকই।

আসলে একটা বয়সের পর একান্ত ভাবে নিজের একটা মানুষ সবাই চায়। আর দুটো মানুষের মন যদি একে অপরের পরিপূরক হয় ; তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু অর্পণ,সৃষ্টি দুজনেই ব্যক্তিগত জীবনে ভীষণ ধাক্কা খেয়েছে। সে কারণে বিশ্বাস, ভালোবাসা, যত্ন নেওয়া নিয়ে শুধুই দড়ি টানাটানি চলে। যদিও অর্পণ সৃষ্টিকে পুরোপুরি চায়, কিন্তু বোঝে হয়তো সৃষ্টির মনের মানুষ, ভরসার মানুষ এখনো হয়ে উঠতে পারেনি, তাই হয়তো তাকে কাছে টানতে গিয়েও টানে না।

কাল অর্পনের জন্মদিন। ভাবছিলো অর্পণ যদি কোনো চমক দেয় তাকে। সৃষ্টি ফোন রাখার পর বিছানায় শুয়ে শুয়ে তাই ভাবতে ভাবতে অর্পনের চোখ লেগে গেল।

(পরের দিন )

সকাল ৬টার সময় অর্পনের মোবাইল এ সৃষ্টির গলা।

-" এই দরজা খোলো, বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। "

---" হ্যালো, আঁআঁ। "

-" আরে দরজা খোল বলছি"

---"ও ও। " অর্পণ আবার ঘুমিয়ে গেল।

হটাৎ সম্বিৎ ফিরতেই টিশার্ট টা গলায় দিয়েই দরজা খুলে অর্পণ থ।

ব্লু ডেনিম আর ব্ল্যাক একটা টপ গায়ে দিয়ে সৃষ্টি দাঁড়িয়ে। অর্পনের দিকে তাকিয়ে কোমরে হাত দিয়ে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে রইলো।

-" এতক্ষনে সময় হলো দরজা খোলার। "

---" সরি, আমি ভাবছিলাম স্বপ্নে কথা বলছি।"

-" এখন ঘরে ঢুকতে বলবে তো নাকি। "

---"হ্যাঁ হ্যাঁ এসো। দাও ব্যাগ গুলো। "

ঘরে ঢুকে সৃষ্টি ফ্রেশ হয়ে এলো। অর্পণ তখনো কেমন ঘরের মধ্যে আছে।

-" কোনসময় রওনা হলে? "

---" এই তো ৫টার ট্রেন। নেমে মন্দির গেলাম। পুজো দিলাম তোমার নামে। দেখি ব্রাশ করে আসো। প্রসাদ দেই। "

-" হ্যাঁ যাই। "

ফ্রেশ হয়ে এলে সৃষ্টি অর্পনের মুখ হাঁ করিয়ে পেড়া ঢুকিয়ে দিলো।

----" আজকে কিছু কাজ আছে গুরুত্বপূর্ণ? "

-"নাহ। "

---" তাহলে আজকে সারাদিন আমার সঙ্গে কাটাবে। "

অর্পনের মুখ খুশিতে ভরে উঠলো।

-"সত্যিই? "

---"হ্যাঁ, সারাদিন আছি। বিকালে যাবো। "

-" ম্যাডাম, জিমটা সেরে আসি?। "

---" হ্যাঁ স্যার যান। সকালে কি খাবেন? ওটস বানাবো? "

-" তুমি খাবে? তাহলে একসাথে বানাও?"

---" হ্যাঁ। যাও চটপট সেরে নাও। "

( জিম সেরে এসে )

---" খেয়ে দেয়ে নাও। তোমার জন্যে একটা ব্ল্যাক ডেনিম এর শার্ট এনেছি। এইটা পড়ে একটা লং ড্রাইভ এ যাওয়া যায় নাকি?"

-" আরে, নেকি ঔর পুচপুচ। "

দুজনে লং ড্রাইভ এ বেরিয়ে পড়লো।

একটা সুন্দর পাহাড় ঘেরা জায়গায় গেল ওরা।পাশে কলকল শব্দে নদী বয়ে যাচ্ছে।হালকা রোদ্র, শীতে ভালোই লাগছিলো। অর্পনের তো সৃষ্টি-ময় মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন ছিল সারা রাস্তা।

---" দাড়াও একটু, এই জাগাটায়। "

নেমে অর্পনের হাত ধরে নদীর পাশে গিয়ে বসলো দুজনে। একটা মাদুর বিছিয়ে টেবিল পেতে অর্পণ কে বসতে বললো।

---" দেখি, খেয়ে বলো কেমন বানালাম। "

অর্পণ দেখে টেবিল এর উপর সৃষ্টি একে একে নিজের রান্না করা বিভিন্ন পদ এনে রাখছে। টিফিনবাটী খুলতেই

বোনলেস অন্ধ্র চিকেন আর চিকেন ফ্রাইড রাইস এর সুগন্ধে ম ম করে উঠলো। সাথে বুটের ডাল, কুমরি। আর শেষে ফ্রুট কাস্টার্ড। অর্পণকে আর পায় কে।

-" এ এগুলো তো আমার প্রিয়। কি করে জানলে? "

---" একদিন মনে নেই ভিডিও কল এ বলেছিলে বোনলেস অন্ধ্র চিকেন আর চিকেন ফ্রাইড রাইস তোমার কি দারুন লাগে খেতে। তো সেটাই গতকাল রেসিপি দেখে দেখে বানালাম। বল খেয়ে কেমন হয়েছে। "

অর্পণ এক গ্রাস মুখে দিতেই স্বাদে গন্ধে হারিয়ে গেল। সত্যিই অসাধারণ বানিয়েছে মেয়েটা।

-"এই তুমি খেয়েছো? "

---" না , তুমি খেয়ে নাওনা। "

-" আরে, দেখি ; হাঁ করো। " বলে সৃষ্টি কেও খাইয়ে দিলো।

শেষে হাতমুখ ধুয়ে নদীর ধারে বসে রইলো দুজনl সৃষ্টির কি মনে হলো হটাৎ, আস্তে আস্তে অর্পনের কাঁধে মাথা ফেলে দিলো। অর্পণও সৃষ্টির ঘন রেশমি চুলে হাত বোলাতে লাগলো। মাথায় চুমু খেতে লাগলো। একটা মায়াময় সপ্নাবিষ্ট আবেশের সৃষ্টি হলো।

আস্তে আস্তে সন্ধ্যা ঘনালে দুজনে আবার গাড়ি করে বাসার দিকে রওনা হলো । অর্পনের মনটা খারাপ। এতো সুন্দর দিনটা যেন তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে গেল।

শহরের কাছাকাছি আসতে হটাৎ সৃষ্টি একটা ক্লাবহাউস এর সামনে এসে বলে উঠলো।

----"এই থামো থামো। এটার সামনে রাখো গাড়ি। "

-" কেন, যাবে? "

----"হ্যাঁ, চল।তোমাকে নিয়েই যাবো।"

-" হুঁ। " অর্পণ কিছু বুঝে উঠতে পারলোনা।

ক্লাবহাউস এ ঢুকে হটাৎ " সারপ্রাইস সারপ্রাইস " বলে সবাই অর্পনের সামনে লাফ দিয়ে উঠলো। অর্পণ অবাক হয়ে দেখে তার সব ভাই -বোন, বন্ধু, সৃষ্টির বোন, বান্ধবী, বন্ধু সবাই উপস্থিত। খুশিতে বিশ্ময়ে আবেগআপ্লুত হয়ে সৃষ্টির হাত ধরতে গিয়ে দেখে ওমা, কোথায় সৃষ্টি। কৈ গেল?

---" এই যে বার্থডে বয়। দেখো এদিকে।এই গানটা তোমার জন্য। " স্টেজের থেকে সৃষ্টির গলা।

অর্পণ ওদিকে তাকিয়ে হাঁ।

অসাধারণ, সুন্দর, দুধ-সাদা একটা গাউন পড়ে সৃষ্টি স্টেজ এ দাঁড়ানো।

গান ধরলো সৃষ্টি।

---"আপ-কি নাজরো-নে ছামজা, পেয়ার-কে কাবিল মুঝে

দিল-কি এ ধারকান ঠ্যাহের যা, মিল গায়ি মনজিল মুঝে

আপ-কি নাজরো-নে ছামজা........

"

--" অর্পণ, শুভ জন্মদিন। ধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে ছোট করবোনা। এইটুকু বলতে চাই,প্রতি মুহূর্তে পাশে থাকার জন্য, আমাকে বোঝার জন্য, আমার প্রতি এতো খেয়াল রাখার জন্য, আমাকে আরো লোভী বানাচ্ছে তোমার প্রতি আমার আরো অধিকার জন্মাবার। আজকে এতটুকুই তোলা থাক।এইটুকুই বলবো। শুভ শুভ জন্মদিন। "

অর্পণ আর কিছু বললো না। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সৃষ্টির দিকে।বাকরুদ্ধ সে আজ। এতটা করেছে মেয়েটা তার জন্য। অজান্তে এক ফোঁটা জল বেরিয়েও এলো হয়তো। সবাই মিলে এই অসামান্য অনবদ্য আয়োজনের জন্য সৃষ্টিকে ধন্য ধন্য করলো।

সবাই মিলে বলে উঠলো-- "থ্রী চিয়ার্স ফর সৃষ্টি। হিপ হিপ হুররে।"

এরপর খাওয়া দাওয়া, কেক কাটার পালা সাঙ্গ হলে আস্তে আস্তে সবাই বিদায় নিলো। সৃষ্টিরও ট্রেন এর সময় হয়ে যাচ্ছে।

দুজনে উঠলো গাড়িতে।

---" কেমন লাগলো স্যার? কেমন করলাম?। "

অর্পণ কোনো উত্তর দিচ্ছে না।

---"কি হলো, কিছু বলছনা যে?। "

-"কি বলবো? কোনো ভাষাই যথেষ্ট নয়। কি বলে যে আজকের দিনটার মূল্যায়ন করবো, আমার জানা নেই। একটা কিছু যদি বলতে পারতাম। " অর্পনের উত্তর।

---" থাক কিছু বলতে হবেনা, তোমার ভাল লেগেছে তো? তাতেই হবে। "

-" যা করলে আজ , এতটা কেউ করেনি সৃষ্টি।" বলে সৃষ্টির হাতে হাত রাখলো।

দুজনে স্টেশন এ বসে রইলো অনেক্ষন। সৃষ্টিরও যেতে ইচ্ছে করছেনা। অর্পনের কথা তো বলে লাভ নেই। এক মুহূর্তর জন্য সৃষ্টির হাত ছাড়েনি।

ট্রেন এসে পড়লো।

---" চলি অর্পণ। ট্রেন এসে পড়েছে। আবার দেখা হবে। বাই। আবার বলছি হ্যাপি বার্থডে। "

অর্পণ কিছু বললো না। হাত ধরে রেখে দিলো।

---" একই ছাড়ো হাত। ট্রেন ছেড়ে দেবে তো। আবার আসবো তো আমি, বললাম তো। "

অর্পণ তবুও হাত ছাড়েনা।

---"লক্ষীটি এমন করেনা। অনেক কাজ আছে। এই দেখো বাঁশি দিয়ে দিয়েছে। ছাড়ো না। মিস করবো তো। "

- " আর আমি যে মিস করবো সেটা? আর জন্মদিনটা শেষ হয়নি আমার। আরো ৪ ঘন্টা বাকি ১২টা বাজতে। " অর্পনের অভিমানী উত্তর।

এর মধ্যে ট্রেন ছেড়ে দিলো। সৃষ্টির আর ট্রেন ধরা হলোনা।

----"হলো তো? খুশি? দিলে তো মিস করিয়ে ট্রেন। বললাম আসবো আবার। আআ --"

আর কিছু বলতে পারলোনা সৃষ্টি। তার ঠোঁটে যে অর্পণ নিজের ঠোঁট বসিয়ে দিয়েছে। দু হাত দিয়ে যে সৃষ্টির কোমর ধরে কাছে টান দিয়ে কাছে এনেছে। আস্তে আস্তে সব রাগ গলে জল হয়ে গেল। সমর্পন করে দিলো সৃষ্টি নিজেকে। আর পারলোনা সে।

----" বাজে ছেলে। দুস্টু ছেলে। এই ছিল তোমার মনে? নেও , খেয়েছো যখন চুমু, আরো খাও। আরো। "

স্টেশন এ সবাই ওদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো। কেউ মুখ টিপে হাসলো। কেউ বা মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো। কিন্তু উপভোগ করলো সবাই।

এরপরে গাড়িতে উঠলো দুজনে। এইবার সৃষ্টি চুপ।

অর্পণ মুচকি হেসে গাড়িতে সৃষ্টির প্রিয় গান চালালো।

"আজ সারা বেলা

কাটে না সময়

শুধু মনে মনে

কী যেন কী হয়

যদি সে আমায়

না খুঁজে না পায়

ডেকে ফিরে যায়...."

বাড়ির সামনে আসলে অর্পণ আবার সৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরলো, যে জড়ানোতে আত্মসমর্পন, আবেগ, পাশে থাকার প্রতিজ্ঞা, বুকের ধুকপুক, পাশে থাকার অঙ্গীকার, একে অপরকে নিবিড় ভাবে কাছে পাওয়ার প্রয়াস - সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। সব অভিমান মুছে যায়, সব না বলা কথা বলা হয়ে যায়, সব রাগ গলে জল, সব বাধা ভেঙে যায়, সমুদ্রর কাছে পর্বত মাথা নোয়ায়, সাগরে এসে মোহনায় নদী মিলে যায়, যেখানে ভগবান পুস্প বৃষ্টি করেন --- সেই আলিঙ্গন।

সৃষ্টির চোখে জল। একটা দুস্টু মাখা হাসি দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো ---" ১২টা কিন্তু বেজে গেছে স্যার। যান এইবার। আর নিশ্চিন্ত থাকুন এখন থেকে। আর কিছু বলছিনা। "

অর্পণ ( হেসে ):"১২টা তো কবেই বেজেছিল হৃদয়ে। আজ তো শুধু সাক্ষী হয়ে থাকলো জগৎ, ১২টা বাজার।যাও, অনেক রাত হয়েছে, জল খেয়ে ঘুমিও।" বলে বিদায় নিলো সৃষ্টির থেকে।

গাড়িতে একা আসতে আসতে অর্পণ ভাবলো, সত্যিই এক অসাধারণ জন্মদিন আজ। অনবদ্য জন্মদিন। জীবনের সবচেয়ে বড়ো উপহার পেয়েছে আজকে, আর কিছুই চাইনা তার। এখনই কেমন একা একা লাগছে তার। কেন যে মেয়েটা দূরে থাকে।

গাড়িতে তখন গান বাজছে

"কেন দূরে থাকো শুধু আড়াল রাখো

কে তুমি কে তুমি আমায় ডাকো

কেন দূরে থাকো শুধু আড়াল রাখো

কে তুমি কে তুমি আমায় ডাকো

কেন দূরে থাকো?"

............