STORYMIRROR

Anindya Biswas

Romance

4  

Anindya Biswas

Romance

দুষ্টু - বৃষ্টি ভালবাসা

দুষ্টু - বৃষ্টি ভালবাসা

10 mins
117



" তাহলে এই কথাই হচ্ছে, আমার থেকে বেশি আশা করবেননা। আমি কথা দিচ্ছি একটা স্বামী স্ত্রীর জন্য যা যা কর্তব্য, সেখানে কোনো খুঁত বা অভিযোগ পেতে দেব না। কিন্তু ভালবাসা আমার দ্বারা হয় না বা হবেনা। " এইটুকু বলে অঙ্কিত থামলো। 
অঙ্কিত। অঙ্কিত রাহা। পেশায় সরকারি বাস্তুকার। লম্বা চওড়া। ডিভোর্সী।
অঙ্কিত দেখা করতে এসেছে মেঘনার সাথে। মেঘনা বিষয় শিক্ষিকা। সেও ডিভোর্সী। 
" দেখুন, ভালবাসার আশা আমি করিওনা আর। নেহাৎ মা বাবা প্রায় ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে চাইছে দেখে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছি। যা অভিজ্ঞতা ভালবাসার বিয়ে নিয়ে, নতুন আর কোনো স্বপ্নই নেই। এতটুকুই বলি, স্ত্রীর সম্মান টা যাতে পাই, ভালবাসা নাই বা দিলেন। আর হ্যাঁ, আমার যদ্দূর সম্ভব করে যাব। বাকি টা ঠাকুরের ইচ্ছা।"
" ঠিক আছে, চলি। নমস্কার। তাহলে রাজি তো? " অঙ্কিতের প্রশ্ন ।
" হ্যাঁ।" মেঘনার সংক্ষিপ্ত উত্তর।
নির্দিষ্ট দিনে বিয়ে হয়ে গেলো দুজনের। দুই পরিবারই খুশি। আর অঙ্কিত - মেঘনা সুখী দাম্পত্যের অভিনয় করবে ভেবেই একসাথে পথ চলার অঙ্গীকার করলো।
এইভাবে দিন কেটে যায় । অঙ্কিত - মেঘনা অফিস ছুটির পর ঘুরতেও যায়, একসাথে সিনেমা দেখে, ফুচকা খায় সবই করে । বন্ধুর মতো মজাও করে। বাইরের দুনিয়ার সামনে সুখী দম্পতি তারা। কিন্তু ওই ওইটুকুই। কেউ আর কারো ঘনিষ্ঠ হয়না। যেমন হঠাৎ করে বৃষ্টি এলে, বা বাজ পড়লো পড়লে, ঘরের দরজা লাগিয়ে ফেলে, বৃষ্টির ফোঁটা ব্যর্থ হয়ে আবার শুকিয়ে যায়। বা দমকা হাওয়ায় মেঘনার চুলগুলো হঠাৎ বিনুনির বাঁধন অবাধ্য করে নিলে আবার নিজেই সেগুলোকে জায়গায় নিয়ে আসে। অঙ্কিতের মনে আর দোলা দেয়না ।
কিন্তু বিধির লিখনে মিলন থাকলে আটকায় কে।
একদিন মেঘনা স্কুল বন্ধ করে বাড়িতে খাতা দেখছে। হঠাৎ তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা ।
" আশ্চর্য, এমন তো হয়নি আগে। কোনো মাসেই। হটাৎ কি হলো। আহ্ আহ্ । অঙ্কিত ও ঘরে নেই ।মা বাবাও গেছেন ঘুরতে। কি যে করি? আচ্ছা মুস্কিল হলো ।"
অঙ্কিত কে ফোন করলে পুরো বেজে কেটে গেলো। কয়েকবার। এদিকে মেঘনার অসহ্য ব্যথা। যায় যায় অবস্থা। শেষ অব্দি কোনমতে বিছানার কাছে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
হঠাৎ চোখে মুখে জলের ঝাপটা পেয়ে চোখ খুলে দেখে অঙ্কিত বসা বিছানার পাশে।
অঙ্কিত " সরি, ফোনটা দেখা হয়নি। জানতাম তোমার আজকে মাসিকের ডেট। তাই অগ্রিম ফার্মেসি তে ঢুকেছিলাম। আসার সময় ডার্ক চকোলেট আর হট ওয়াটার ব্যাগ নিয়ে এলাম। এসে দেখি এই অবস্থা। একদম সরি।"
" তুমিই কিভাবে টের পেলে"? মেঘনার অবাক প্রশ্ন।
" ওই যে তুমি ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে রাখ। সেটা বুঝে নিজে আপডেট করে নিয়েছি মোবাইল এ।"
মেঘনা এত যন্ত্রণার মধ্যেও মৃদু মৃদু হাসি। নাহ, এ কথা রাখে ।
" শুয়ে পরো। কিছুই করতে হবেনা ।রেস্ট নাও " বলে মেঘনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো অঙ্কিত আস্তে আস্তে। 
সেই হাতের নরম স্পর্শ পেয়ে মেঘনা শান্ত হয়ে ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে গেলো । কতক্ষন ঘুমিয়ে ছিল তারও খেয়াল নেই। 
ঘুম থেকে তড়াক করে উঠে মনে পড়ল কালই খাতাগুলো জমা দেওয়ার শেষ দিন। রান্নাও বাকি।
" এরাম, এখন কি হবে। সেরেছে। খাতাও দেখা বাকি। রান্নাও বাকি। ধুর ধুর।"
চোখ কচলিয়ে পড়ার টেবিলের কাছে এসে দেখে সব খাতা আপডেট করা। কম্পিউটারে মার্কস তোলা ।আর রান্নাঘর থেকে সুন্দর একটা চিকেন রোস্ট এর গন্ধ ভেসে আসছে ।
রান্নাঘরে ঢুকে দেখে অঙ্কিত রীতি মতো শেফ সেজে টেবিলের উপর খাবার সাজিয়ে রেখেছে। 
অঙ্কিত " উঠলে? আচ্ছা কিছু মনে করোনা, তুমি ঘুমাচ্ছিলে দেখে তোমার খাতা গুলো দেখে দিলাম, সঙ্গে মার্কস গুলো আপডেট করে নিয়েছি। আর দেখো খেয়ে হাতের রান্না। বেশি স্বাদ হয়নি হয়তো। রেগে আবার আমার উপর ঢেলে দিওনা। "
মেঘনা ফিক করে হেসে দিল।
খেতে বসে মুরগির ঝোলটা মুখে যেতেই এক অপূর্ব তৃপ্তি পেল মেঘনা। কি অসাধারন স্বাদ । হঠাৎ কি মনে হতে খাওয়া বন্ধ করে অঙ্কিতের দিকে তাকিয়ে রইলো । সে তখন একমনে খেতে ব্যস্ত।
"কি হলো?" অঙ্কিত দেখে মেঘনা এক নজরে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
"খাইয়ে দাও।"
"হুঁ, কি?"
"বলছি খাইয়ে দাও, নাহলে খাবো না " বলে মেঘনা আদুরে ভঙ্গীতে টেবিলে দুটো হাতের উপর মাথা রেখে অঙ্কিতের দিকে তাকিয়ে রইলো।
অঙ্কিত কিছু বললোনা। চুপচাপ খাইয়ে দিলো।
এরপর দিনদিন যেনো আস্তে আস্তে ওদের এক দুজনের প্রতি টান আর বেড়েই চলল। 
যেমন একদিন প্রচণ্ড বৃষ্টিতে মেঘনা ব্যাগে হাত দিয়ে দেখে ব্যাগে ছাতা আনেনি। এদিকে স্কুল ও ছুটি। অঙ্কিতকে ফোন করলো।
" শোনো, অফিস থেকে আসার সময় দুটো ছাতা নিয়ে এসো । আমি ছাতা আনিনি।"
অঙ্কিত আনতে গিয়ে দেখে বাজারে ছাতার দোকান বন্ধ । ওদিকে চিন্তা মেঘনাও আটকা স্কুলে। সাতপাঁচ না ভেবে স্কুলের দিকে রওনা হলো।
" আস্তে এসো, কাদা আছে। পা টিপে টিপে।" অঙ্কিতকে ছাতা নিয়ে আসতে দেখে মেঘনা বলল।
" চলো " বলে অঙ্কিত ছাতা দিলো মেঘনাকে ।
" একই তুমি আননি।"
"নাহ, দোকান বন্ধ। চলো চলো" বলে হাঁটা দিলো।
" এই এসো দুজনে এডজাস্ট হয়ে যাবে" বলে মেঘনা ছাতাটা এগিয়ে দিল।
-" আরে দুজনেই ভিজবো যে" 
--" তাহলে দুজনেই ভিজি চলো " মেঘনার একটা মিষ্টি হাসি ।
-" চল " অঙ্কিতের মুখেও হাসি।
দুজনে হৈ হৈ করে বৃষ্টিতে নেচে নেচে লাফাতে লাফাতে ভিজতে লাগল। দেখে মনে হবে যেন দুটো সদ্যপ্রেমে কিশোর কিশোরী।
বাড়িতে এসে চান করে চুল মুছতে মুছতে হঠাৎ মেঘনার কি মনে হলো।
-" এসো আমি মুছিয়ে দি" অঙ্কিত তখন নিজের চুল মুচ্ছিল ।
--" নাহ পারবো।"
-" বেশি পাকামো করো নাতো। দেখি মাথাটা" বলে অঙ্কিত এর মাথাটা ধরে মাথা মুছিয়ে দিতে লাগলো।
বাইরে তখন আবার বৃষ্টি পড়া শুরু।
এত কাছে মেঘনাকে কোনোদিনও দেখেনি অঙ্কিত। সত্যি মেয়েটা সুন্দর। ডাগর কালো চোখ। পেলব লাল ঠোঁট। চুল থেকে সদ্য শ্যাম্পু করা মিষ্টি গন্ধটা বেরোচ্ছে।
মেঘনার ও শ্বাস আস্তে আস্তে কেমন ধীরে ধীরে পড়তে লাগলো। দুজনের নিঃশ্বাস পড়ছে একে ওপরের ওপর। আস্তে আস্তে কাছে আসছে ওরা। অজান্তে, ধীরে ধীরে নৈকট্য কমছে দুটো ঠোঁটের ।
হঠাৎ বিদ্যুতের ঝলকানিতে দুজনেরই সম্বিৎ ফিরল। 
দুজনেই হেসে উঠলো।
" এই যাহ,কি করতে যাচ্ছিলাম আমরা" অঙ্কিতের দুষ্টু মাখা হাসি।
" সত্যিই" মেঘনার সলজ্জ উত্তর।
কিন্তু মেঘনা ভেতরে ভেতরে কেনো জানি একটু কষ্ট বোধ হলো। অঙ্কিতের ও একটু মন কেমন হলো।
এভাবে দিনে দিনে যা হওয়ার তাই বাড়তে থাকলো। ছোটো খাটো খুনসুটিতে, মিষ্টি দুষ্টু আবদারে, চোখের নজরে, হাল্কা কাছে আশা, দূরে যাওয়ায় , আড়ালে আবডালে, হিমেল হাওয়ায় সুখী দম্পতির অভিনয় থেকে যেনো সত্যি কাহিনীর জীবন কথার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। 
কিন্তু কেউ কাউকে মুখ ফুটে বলেনি। কিন্তু মন কি আর হার মানবে। অঙ্কিত - মেঘনা ও আস্তে আস্তে আরো দূর্বল হতে শুরু করলো । অঙ্কিত লক্ষ্য করে এখন মেঘনা প্রায়ই বন্ধুত্বের গণ্ডি অতিক্রম করে ফেলে অবলীলায় । যেমন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অজান্তেই অঙ্কিতের হাত নিজের ঘাড়ের পাশে তুলে এনে দেয়। প্রায়ই অঙ্কিতের জন্য এটা সেটা রান্না করে রাখে নিজের থেকেই। এমন কি জামা কাপড় কেনো থেকে শুরু করে কি করে অঙ্কিতের আরো কাছে যাওয়া যাবে সেটাই যেনো তার লক্ষ্য। ছোটখাটো কোনো বিষয়েই এখন অঙ্কিতের ওপর রাগ করে, বেশি বেশি অধিকার ফলায়।

'তবে কি মেঘনা আমায় সত্যি সত্যিই ভালবাসতে শুরু করেছে' - ভাবে অঙ্কিত। নাহলে কেনই বা শুধু শুধু কাছে আসতে চায়, নানা অছিলায় কেনই আরো আমার ভেতরে ঢুকতে চায়। ভাবে অঙ্কিত। অথচ মুখ ফুটে মেঘনা কে জিজ্ঞেস করতে সাহসও হয়না।
ওদিকে মেঘনার মনেও আস্তে আসতে ভালবাসা, অভিমান তীব্র হতে তীব্রতর হতে থাকে।
' এ কেমন পুরুষ মানুষ, নিজের বিবাহিত স্ত্রীর মনের কথা একটি বার জিজ্ঞেস করেনা। জানতে চায়না। খালি ভালো বন্ধু , ভালো স্বামী হয়েই খুশি থাকতে চায়। ব্যাস এটুকুই। মনের স্বামী আর হয়ে উঠতে চায়না। ইচ্ছা করেনা কি তার আমায় জাপটে ধরে, কাছে নিয়ে বলতে ' ভালবাসি তোমায় প্রিয়, অনেক ভালবাসি '। খালি দায়িত্ব কর্তব্য পালন করেই খালাস। কোনো রোমান্স নেই, কোনো আদর নেই। সত্যিই কি আমায় এর বেশি চায়না? - ভাবে মেঘনা। রাগ হয় তার।
অঙ্কিত কে জিজ্ঞেসও করে। ফেলে একদিন।
মেঘনা " কিগো আমি তোমার কে? খালি বন্ধুই নাকি?"
অঙ্কিত " হ্যাঁ, খুব খুব খুব ভাল বন্ধু।"
মেঘনা " শোনো, মাঝে মাঝে না মনের কথা বলেই দিতে হয়। বললে কি হয় শুনি? মানলাম বিয়ের আগে আমরা একরকম ছিলাম, তা বলে এখনো কি একই আছি?"
অঙ্কিত " ওভাবেই থাকিনা। সেটাই ভালো চলছে নাকি?"
মেঘনা ( মনে মনে,রাগত স্বরে) " সবই বলবে তুমি অঙ্কিত, খালি সুযোগ হয়তো পাবেনা।"

সবসময় কথা ভাবতে ভাবতে ক্রমশ মেঘনা অন্যমনস্ক হয়ে চলতে লাগলো। প্রায়ই ঘুরে তার মাথায় এই কথা " অঙ্কিত কি আদৌ ভালবাসে, না খালি কর্তব্য পালন?"।
এইরকম ভাবে অন্যদিকে মন দিয়ে চলতে চলতে স্কুল থেকে আসার সময় হঠাৎই একটা বাইক এসে মেঘনা কে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। তাল সামলাতে না পেরে পাথুরে রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে মেঘনা। মাথায় ও মুখে সাংঘাতিক আঘাত প্রাপ্ত হয়। সবাই মিলে ধরা ধরি। করে হাসপাতাল নিয়ে যায় ।
অঙ্কিত পাগলের মতো ছুটে আসে, খবর পেয়ে।
অঙ্কিত " মেঘনা কেমন আছে ডাক্তার? আমার স্ত্রী? কিছু হবেনা তো ওর? বলুন্না দয়া করে।"
ডাক্তার " এখনই কিছু বলতে পারছি না। ৭২ ঘণ্টা কাটুক। ভীষণ ব্যথা পেয়েছেন উনি। আপনি ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করুন। আমরা যথা সাধ্য চেষ্টা করবো, কথা দিলাম ।"
অঙ্কিত ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। 
বাড়িতে আসলে অঙ্কিতের মা বাবা বললেন " দ্যাখ, ঈশ্বর এর ইচ্ছায় যেহেতু তোরা আবার নতুন শুরু করেছিস জীবন, মনে হয়না ওনাকে ডাকলে বৃথা যাবে। একবার ওনাকে বলেই দেখনা।"
অঙ্কিত অনেকদিন ঠাকুর ঘরে যায়নি। আজ গেলো। মেঘনার কারণে গেলো।
অঙ্কিত (হাত জোড় করে) " ঠাকুর, জানি তুমি অনেক রাগ আমার উপর। আমি তোমায় ডাকি না। মানিনা। আমি জানি আমি অপরাধী। তোমার ওপর অভিমানীও।কিন্তু ঠাকুর, আমার পাপের অপরাধ মেঘনাকে দিওনা ঠাকুর। ও খুব ভাল মেয়ে ঠাকুর। আগ জীবনেও পেয়েছে। এখন আমার কারণে পাচ্ছে। একবারও সুযোগ হয়নি বলার। যে ওকে আমি ভালবাসি। সেই গণ্ডি অতিক্রম করতে চাই, সে সুযোগ তুমি আমার থেকে নিও না ঠাকুর। দোহাই তোমার। আর আমায় কাঙাল বানিয়োনা। ওকে ফেরত দাও আমায় ঠাকুর।"
তিনদিন পর মেঘনার জ্ঞান ফিরল। সামনে অঙ্কিত কে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিলো। 
মেঘনা " ডাক্তারবাবু, আপনি আমার বন্ধুকে বলে দিন জাস্ট যা যা হাজবেন্ড এর কাজ সেটা সেরে চলে যায়। আর বাড়ির জন্য একটা নার্সের ব্যবস্থা করুন। ওনাকে সব বুঝিয়ে দেবেন।"
অঙ্কিত " কি বলছ এইসব মেঘনা, আমি থাকতে নার্সের কি দরকার?"
মেঘনা " থাক বন্ধু , ওহ স্বামী মহাশয়, আর ঋণের বোঝা বাড়াবেননা আমার। অনেক করেছেন। আর আপনার ঋণ বাড়াবনা। এমনিতেই বন্ধু হিসেবে অনেক পেয়েছি। আর চাইনা।"
ডাক্তার " বেশ তাই হবে, আচ্ছা অঙ্কিত বাবু, একটু বাইরে আসুন, কথা আছে।"
( বাইরে এসে).
ডাক্তার " আমরা আপনার স্ত্রীর মানসিক কাউনসেল করবো ঠিকই। তবে এখন প্রাথমিক কথা বার্তা শুনে যেটা বুঝছি, ওনার আপনার ওপর সাংঘাতিক রাগ, খুব অভিমান। আপনাকেই ওনাকে জায়গায় আনতে হবে। উনি ঠিক হবেন ঠিকই। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে বাড়িতে আপনার উনি ঠিক কি চাইছেন, সে অনুযায়ী এগিয়ে আসতে হবে। বেস্ট অফ লাক।"
বাড়িতে আসলে মেঘনা নার্সের থেকেই সব পথ্য , খাবার খেতে চাইলো। সব কিছুতেই একটু একটু করে এগিয়ে যেতে লাগলো। তবে রাত্রে বাথরুম আস্তে আসতে যেতে কষ্ট হতো। অঙ্কিত সে দায়িত্ব টা হাসিমুখে নিয়েছিল। মেঘনা কোনদিকে পা ফেলে , সে অনুযায়ী অঙ্কিত শোবার ব্যবস্থা করেছিল। নার্স সেসময় বিশ্রাম নিত। এটা মেঘনার মনে মনে অঙ্কিত এর জন্য খারাপ লাগলেও কিছু বলতো না রাগের চোট এ। 
এমন করে করে মেঘনা আস্তে আস্তে যত্নে পুরোই সুস্থ হয়ে উঠল। নার্স আস্তে আস্তে বিদেয় নেবে।
নার্স " একটা কথা বলবো ম্যাডাম, যাবার সময়?"
মেঘনা " হ্যাঁ বলুন।"
নার্স " আমি অনেক বাড়িতে করেছি নার্স ডিউটি । কিন্তু আপনার স্বামী যেভাবে করেছেন আপনার জন্য, তা দেখিনি বলতেই হবে। আপনি যখন অঘোরে ঘুমাতেন, আপনার স্বামী এসে পায়ে হাতে ম্যাসেজ করে দিত, আপনার সব পথ্য উনিই রান্না করতেন অফিস থেকে এসে। যেটা লক্ষ্য করতাম ম্যাডাম, আপনি বিছানা থেকে নামার সময় যখন বাথরুমে যেতেন, উনি কিভাবে জানি টের পেয়ে জেগে যেতেন। উনি আপনাকে খুব ভালবাসেন ম্যাডাম। আসলে পুরুষদের ভালবাসা এমনি। মুখ ফুটে বলবেনা কোনোদিন। আপনি সত্যিই ভাগ্যবতী।"
মেঘনা কিছু বললোনা। মনে মনে হাসলো।
এমন ভাবে দিন কেটে যায় ।
অঙ্কিত একমনে কাজ করছে একদিন। মেঘনা এসে পাশে বসলো।
মেঘনা " ব্যস্ত নাকি বন্ধু, একটু কথা ছিল।"
অঙ্কিত ( ল্যাপটপ গুটিয়ে) " হ্যাঁ বলো।"
-" বলছি কি, এভাবে বন্ধু - বন্ধু থেকে সম্পর্ক রাখা কেমন যেন অসহ্য লাগছে। না এগোচ্ছি, না পিছিয়ে যাচ্ছি। তুমি তো আর বলবেনা কিছুই, তাই আমি ভাবছি কিভাবে থাকা যায় ।"
অঙ্কিত " কি চাও তুমি? আমাকে ভাল লাগছেনা আর "
মেঘনা ( ক্ষেপে গিয়ে) " তুমি না একটা মর্কট বিশেষ। অদ্ভুত পুরুষ মানুষ একটা। চট করে সীমানার শেষ মাথায় পৌঁছে যাও। আছেনা কিভাবে সুন্দর ভাবে এগোনো যায়, একদম না। খালি খালাস, খালাস , খালাস। যাও তাই যদি চাও, এখনই বেরোলাম আমি।" বলে ব্যাগ গোছাতে উঠে গেলো।
অঙ্কিত " দাড়াও , শোনো, বাইরে বৃষ্টি আসছে।"
মেঘনা " হোক,আর না, থাকবোই না। একটা ভালো বর জুটেনা। খালি বন্ধু-বন্ধু- বন্ধু জুটে। ভাবলাম নতুন ভাবে, সুন্দর ভাবে শুরু করবো, তাও হলোনা। সবাই ছেড়ে দিতে চায়।"
বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো।
অঙ্কিত ( অবাক হয়ে) " সত্যি চলে যাবে?, ব্যাগ নিচ্ছ যে"
মেঘনা " হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ বন্ধু"
অঙ্কিত " মেঘনা, বাড়াবাড়ি করোনা। বললাম ভুল হয়েছে। আচ্ছা বলো, কি করা যায়।"
 " না বন্ধু থাক, বন্ধুই থাকো। আ --" বলে কথা শেষ করতে পারলনা মেঘনা।
অঙ্কিত ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিয়েছে তার।
বাইরে থেকে ঠান্ডা হিমেল বাতাস বইছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, ভিজে মাটির গন্ধের মাদকতায় পেয়েছে দুজনকে আজ। বাঁধ ভাঙছে একটু একটু করে যেনো।
মেঘনা টের পাচ্ছে অঙ্কিত তার দু হাত দিয়ে কোমর জড়িয়ে যেনো আরো কাছে, আরো ঘন নিবিড় ভাবে চাইছে থাকে। অঙ্কিতের বুকের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে মেঘনা। কিছুতেই কাছ ছাড়া করতে নারাজ তাকে অঙ্কিত।অবাধ্য মেঘনা শান্ত হচ্ছে, অঙ্কিতের ভালবাসার ফুল পেয়ে।
হটাৎ বাজ পড়াতে দুজনেরই সম্বিৎ ফিরল। কিন্তু এখন গল্পও যে অন্য। দুজনেই হাসছে এক দুজনের দিকে চেয়ে। সে হাসিতে খালি বন্ধুত্ব নেই, আছে অনেক কিছু। আছে ভালবাসা, আছে কাছে পাওয়া, আছে অধিকার ফলানো, আছে বাঁধ ভাঙ্গা আলিঙ্গন, উল্লাসের ক্রন্দন, সৃষ্টি সুখের সূচনা। আছে পরিতৃপ্তি।
অঙ্কিত ( কপট রাগ দেখিয়ে) " ডেপো মেয়ে, আমায় বলে কিনা ছেড়ে যাবে? একা ফেলে যাবে? পা ভেঙে দেবো আরেকবার যদি শুনি। একা ফেলে যাবে, হুঁ। আসলে আমি ভয় পেতাম তুমি না রাগ হয়ে যাও ভালবাসি বললে। আর আমি ভালবাসতে ভুলেই গেছিলাম মেঘনা। তুমি এসে আবার আমায় বিশ্বাস করালে, ভালবাসতে বাধ্য করলে মেঘনা । আজকে মাথা নোয়ালাম। " বলে 
মেঘনার দুহাত ধরে অঙ্কিত হাঁটু গেড়ে বসে গান ধরলো।
"চাইলে আস্কারা পাক
বেঁচে থাকার কারণ
আজকে হাত ছাড়া যাক
হুম ব্যাস্ততার আর বারণ
লিখবো তোমার হাতে
আমি আমার মরণ
আমি তোমার কাছেই রাখবো
আজ মনের কথা হাজার
দিয়ে তোমার কাজল আঁকবো
আজ সারা দিনটা আমার
তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে
তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে
আর কমলো চিন্তা আমার"

মেঘনার চোখে জল।
" আরে পাগল, বললে কি হয়, এখন হাজার হোক সাত পাকে বাঁধা তো নাকি? কোথায় যাব ছেড়ে? কেনই বা রাগ করব? বুঝিনা নাকি আমি কতটা ভালবাস। সেটা মুখ ফুটে বলতে কি সমস্যা? " অঙ্কিতের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে মেঘনার আদুরে গলায় কথা।
অঙ্কিত " তাহলে ব্যাগ গোছাচ্ছিলে যে?"
মেঘনা ( লজ্জা মিশ্রিত গলায়) " সেটা তো মধু চন্দ্রিমার জন্য। যাওয়াই তো হয়নি বন্ধু বন্ধু খেলায়।"
অঙ্কিত হো হো করে হেসে মেঘনা কে জড়িয়ে ধরলো।
বাইরে তখন বৃষ্টি ,বা বলা ভালো ওদের ভালবাসার সাক্ষী হিসেবে পুষ্পবৃষ্টি হচ্ছে।














Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance