পুরুষ নির্যাতন
পুরুষ নির্যাতন
নমস্কার।
একটু ক্যাচক্যাঁচ করব। মনে কিছু নেবেন না।
আজকে না একটা ছেলেদের অংশের কথা বলব। নিতান্ত মধ্যবিত্ত, ভদ্র, সভ্য, গোবেচারা , নিরীহ বলে যাদের তাদের। এদের অনেকেই দেখবেন, বা দেখেন, কিন্তু এরা কোনো কোথাও ছাপ ফেলে যায়না। এরা সুবোধ বালকের মতো স্কুল - কলেজ যায়, মেয়েদের, বলা ভালো মানুষজনদের থেকে শত হস্ত দূরে থাকেন, চোখে এদের প্রায়ই ক্যাবলা মার্কা গোছের একটা চশমা থাকে, পেট বাইরে বেধপের মতো ঝুলে থাকে,আর একটা ক্যাবলাকান্ত শ্রীবদন। বাড়িঘরও এদের মধ্যবিত্ত থাকে । না পোশাক আশাকের বেশি বাহার, না নিজেকে উপস্থাপন করার মধ্যে।
এরাও না স্বপ্ন দেখে। ভাবে প্রেম টেম করবনা। সিধে বিয়ে করব। তারজন্য কোনমতে চায় একটা ছোট খাটো চাকরি হোক বা ব্যবসা হোক নিজেদের। তার জন্য ছোট ছোট সুখ, বন্ধু দের সাথে আড্ডা , নিজের ক্ষুদ্র আশা আকাঙ্ক্ষা সবগুলো পরিবারের কথা ভেবে হাসিমুখে ত্যাগ করে । ভাবে কোনমতে মাথায় গোঁজার জায়গাটা হয়ে নিক, ব্যাস একদম বিয়ের পরেই প্রেম , ভালবাসা করবো।
সমস্যাটা হয়েছে, এরা একেবারেই বোঝেনা যে তাদের সমাজে সত্যিই কোনো জায়গা নেই। এরা ভাবে খাবো দাবো ঘুমাবো প্রেম করব ব্যাস আর কি। আর এইখানেইতেই তারা ঠকে যায়। এরা বিয়েটা করে। নতুন স্বপ্ন , নতুন আশায়, ভাবে নিজেদের তথাকথিত পবিত্র মন ও দেহ দিয়ে ভালবাসবে। ফুলের মত একটা সুন্দর সংসার হবে - যেখানে থাকবে তারা দুজন, একই বৃন্তে দুটি কুসুম হয়ে, দুজনে একসঙ্গে মিলে সব করবে, দুজনেরই নিজস্ব অপূর্ণতা গুলোকে একসঙ্গে করে পূরণ করবে - দুজন দুজনকে খুব ভালবাসবে। এইখানেই সমস্যা -- এরা বোঝেনা যে এদের কোনো চাওয়া পাওয়া থাকতে নেই ।
দুঃখের বিষয়, এরাই হয় প্রতারণার শিকার, বিভিন্ন বৈবাহিক আইনের শিকার। এরা হতবাক হয়ে দেখে, যে বিয়েটা একটা মেকি , অগ্নি কুণ্ড মাত্র, সাপের বিষের পাতকুয়ার মতো। বিয়ের পরেই যখন সেই বিষে দগ্ধ হয় যখন সে শোনে - যে তাকে নাকি বিয়ে করার ইচ্ছেই ছিলোনা, নেহাত মা বাবার জোরে তার অর্ধাঙ্গিনী দয়া করেছেন, উদ্ধার করছেন বিয়ে করে। এবং যেহেতু দয়া করেছেন , সে দয়ার মূল্য তাকে প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ চোকাতে হবে। সে লাঞ্ছিত হয় মানসিক ভাবে,( হয়তো শারীরিক ভাবেও হয় কয়েকজন, কয়েকজন তো প্রাণ ও হারান)। দিনের পর দিন , মাসের পর মাস, এরা ভয়ে থাকে - এই নাকি কিছু হলো, এই নাকি কিছু ভুল করলাম, এই কাজটা হয়তো শশুরবাড়ির মনঃপূত হয়নি তাই আবার তাকে শুনতে হবে গালি। হয়তো তার বেতনের অংক নিয়েও কথা শুনতে হবে, যে তার বেতন তথাকথিত অর্ধাঙ্গিনীর ১০ দিনের খরচ। তারসঙ্গে নিত্যদিনের ঝামেলা, নিত্যদিনের চিন্তা, মানসিক চাপ, গালিগালাজ সহ্য করা। কেউ কেউ তো আবার মাইল্ড স্ট্রোক ও সহ্য করে । তবুও ছেলেগুলো না হাসিমুখে সব মেনে যায় - মা বাবার সামনে মিথ্যে ভালো থাকার অভিনয় করে, পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজন সবার সামনে খুশি দম্পতির অভিনয় করে - কারন সে বেজার থাকলে যে সবাই তার স্ত্রী কে ধরবে। তার মা বাবার হয়তো নজরে পরে তা- কিন্তু ছেলেটা সন্দেহ টা উড়িয়ে দেয়। ভাবে আমি আমার সবটা দিয়ে সেবা করবো - যদি একদিন ভালবাসার সূর্যোদয় হয়। সে কাঙালের মতো হাতজোড় করে প্রার্থনা করে যে তার স্ত্রী নামক প্রাণীটি একটু যাতে তার মন বোঝে , কাছে ডাকে । চোখের সামনে মা বাবার ভাই - বোনদের আত্মীয় স্বজনের অপমান সহ্য করে, কিছু বলেনা, বলতে পারেনা। তবুও সে তো একটা মানুষ। বারংবার চেষ্টা করে দু পক্ষ কে আলোচনার টেবিল এ দেখে এনে মিটমাট করানোর। কিন্তু যে কে সেই। উল্টো ব্যবধান আরো বেড়ে যায় - বই কমেনা ।
এরাই পরে দেখে আইন আদালত পুরোটাই তাদের বিপক্ষে । একটাও আইন নেই এই তথাকথিত ইকুয়ালিটির দেশে - যা তাদের একটু আশ্রয় দেয়।
' কিন্তু আমি তো কিছু করলাম না, আমি তো পন নেইনি, আমি তো বাজে ব্যবহার করিনি, হাত তো তুলিনি, তাহলে আমার নামে কেনই মামলা হবে, কেনো আমার পরিবারকে জড়ানো হবে, তারা তো কিছুই করেনি। আমার মা বাবাকে তো সবাই ভালোবাসে। সমাজে, আত্মীয় স্বজন মহলে তাদেরকে তো সবাই সম্মান করে, মর্যাদা দেয় , কেনো তারা আজ আমার জন্য কোর্ট এর বেঞ্চে বসবে, কেনোই বা আমি যারা বিবাহে সত্যিই বধূ নির্যাতন করে, পণ এর নামে বধূর গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয় - তাদের সাথে একই বেঞ্চিতে বসবো? সংসারে তো খিটি মিটি লেগেই থাকে , তা বলে কি তুচ্ছ তুচ্ছ ব্যাপার গুলোকেও আইনের আওতায় দেখা হবে? তাহলে আমার সঙ্গে যে নিরন্তর নির্যাতন চলল, সেগুলোর বিচার কে দেবে? কই পাবো একটা জায়গা , যেখানে অন্তত দুটো কথা বলে আমাকে একটু শোনার কান কেউ দেবে? আরেহ সত্যিই কি এইরকম ছেলেদের কোনো মান সম্মান নেই, আইন না থাকুক, অন্তত একটা দুটোও বলার মঞ্চ নেই, যে যেখানে ভুল কেস এর স্বীকার হয়ে প্রকৃত ন্যায়বিচার পাবে? নাহ্, উত্তর পায়না, কেউই উত্তর দেয়না।
সেই ছেলেগুলো তাই খুঁজতে চায় রেল লাইন। বা একা ঘর। নদীর পাড়। শ্মশান ঘাট । রেল লাইনে আসা ট্রেন তখন হয়ে যায় তার জীবন যন্ত্রণা থেকে মৃত্যুর প্রতীক। শ্মশান ঘাটের জ্বলন্ত চিতা দেখে ঈর্ষান্বিত বোধ করে সে - ভাবে যাক এই সংসার থেকে মুক্তি তো পেলো। ডিপ্রেশন, মানসিক উদ্বেগ, অনিদ্রা , নিত্যদিনের মানসিক চাপ, বুক ধড়ফড় করা হয় তার নিত্য সঙ্গী। আদালতের বেঞ্চ এ বসা নিজের মা বাবাকে দেখে - কোনা দিয়ে দেখে আর ভাবে - কয় জন্মের পাপের ফল আমি, যে আমার কারণে আজকে পুরো বংশের, পুরো পরিবারের মান সম্মান আজ রাস্তায় এসে নেমেছে। ভাবে নিজের ছোট ছোট ভাই বোনদের কথা, যাদের সে এক কালে আদর্শ ছিল। প্রশ্ন করে এই কি সেই নারী আন্দোলন, যার জন্য রাম মোহন রায় , ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর রা রাস্তায় নেমেছিলেন? আরে এর দ্বারা সমাজে কি সত্যি যে নারী বিভীষিকার স্বীকার হচ্ছে, সে কি বিচার পাচ্ছে? এটা তো শুধু টাকার মেলা, টাকার খেলা। আর কিছুই না। উত্তর পায়না সে, প্রশ্নই করে যায়। প্রশ্নে প্রশ্নে ক্ষত বিক্ষত হয় সে নিরন্তর। ভাবে, আমি কি এতটাই খারাপ, যে আমার ন্যায় বিচারের কোনো পথই নেই।
আগে তো জানতাম
" ইনসেন্ট আনটিল প্রোভেন গিলটি, এ তো দেখছি গিলটি আন্তিল প্রভেন ইনোসেন্ট"
এই যাঁতাকলে পিষতে পিষতে এদের সারাজীবনের পয়সা, মা বাবার ট্যাক পুরোটাই খালি হয়ে যায়। তীব্র অপরাধবোধে ভোগে সে প্রত্যেকদিন, প্রতিক্ষণ কিন্তু কিছুই করার থাকেনা। খালি মিষ্টি আশ্বাস " ভগবান সব ঠিক করে দেবেন, ভরসা রাখো " ইত্যাদি ইত্যাদি মেকি সান্ত্বনা ছাড়া কিই বা জোটে। তার উপর প্রত্যেকদিন যখন আরো আরও আরও কেস সামনে আসে, এরা বুঝে যায়
আরো আছে তাদের মত সমষ্টি,
যাদের নেই কোনো মানসিক তুষ্টি,
গ্যারাকল পোহাতে হবে -- তাই এদের সৃষ্টি,
আইন, সমাজ, দেশ - দেবে নাকো কৃপাদৃষ্টি।
আস্তে আস্তে না এরাও শিখে যায় বাঁচতে। কেনো? কারণ এই জনমে নিজের মা বাবাকে অসময়ের আগে হারানোর লোভ যে এদের আটকে রাখে, মনে হয় বাঁচলে, বেতন দিয়ে হয়তো মা বাবার এই ত্যাগ কিছুটা হয়তো লাঘব করতে পারব।
এরা ত্যাগ করে নেয় ভালবাসার আশা, আর
আর রাখেনা কোনো মেকি প্রত্যাশা,
এদের কলমে উঠে আসে সমাজের একটা ক্ষুদ্র শ্রেনীর নিরন্তর ন্যায়বিচারের পিপাসা,
ভেঙে ফেলে এরা মনে বাস করা ভালবাসার বাসা।
এরা বুঝে যায় জীবনে দুটোই সত্য : জন্ম দিন, আর মৃত্যুর দিন, বাকি সব বা*** এর দিন।
তাই এরা হৃদয় হতে ভালবাসা কে ছুরি দিয়ে আলাদা করে নর্দমায় এ ফেলে দেয়, কেউ ভালো বাসি বললে হাসে, আর কিছু বলেনা। নিজেকে একা একা কোনো সাহায্য, কারো হাত ধরা ছাড়া নিজেকে স্বয়ং সম্পূর্ণ করে নেয়। আর কারও কাছে এরা করেনা হৃদয় উন্মুক্ত। কোনো জাগতিক বন্ধন এদের আর ছোয় না। কোনো আশা সমাজ থেকে এদের থাকে না। মাঝে মাঝে এদের হৃদয় দুর্বল হয় ঠিকই, কি করবে এরা , মানুষ তো। পরক্ষনেই সামলিয়ে নেয়, কারণ আইনের রসিকতায় এরা যে ক্ষত বিক্ষত । তাই যখন এরা দেখে ৩-৪ টা কেস এর মধ্যে এদের আবদ্ধ রাখা হয়, বোঝে যায়, এদের সত্যিই কিছু আসে যায় না। কারণ শোনাবে কার কাছে, কানই যার নেই। আর দরকারি বা কে, সরকারি খাতায় এদের যন্ত্রণার তো কোনো বিধান নেই, কোনো উপায়ও নেই। তো শুধু শুধু ভিক্ষা চেয়ে কি লাভ?কি লাভ?
তার চেয়ে ভাই " দিয়ে নাও, আর ফিরে নাহি চাও, কাজ থাকলে বলো, সাহায্য লাগল বলো, ব্যাস ওইটুকুই, এরা কেমন আছে , জানতে চেয়ো না।" ভুলেও না।
নমস্কার। মনে কেউ কিছু নেবেননা। কাউকে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। ভালো থাকবেন। ভালো রাখবেন।
