প্রেম ঘৃণা
প্রেম ঘৃণা
বলে প্রত্যেক মানুষের সফলতার পিছনে একটা মেয়ে ভালোবাসা অনুপ্রেরণা কাজ করে। কিন্তু কখনো কখনো হয়তো ভীষণ ঘৃণা ও একটা ছেলের জীবন বদলে দিতে পারে।অয়নের জীবনটা আমাদের মতো ব্যার্থ মানুষের কাছে প্রেরনার অবশ্যই। ভালোবাসার মানুষ গুলো যখন আপনি ব্যার্থ বলে অবহেলায় ফেলে চলে যান তখন অয়নদের গল্প আমাদের কষ্টের গাঢ় অন্ধকারে নতুন করে আশার আলো দেখায়। নীলাঞ্জনার পড়াশোনার দায়িত্বটা আমাকে নিতে হয়েছিলো বিয়ে আগে থেকেই। বিয়ের পর পর ওর পাখা গজালো। পড়াশোনা চেয়ে ও ফোচকেমিতে সময় বেশি কাটাতো। অথচ এই পড়াশোনা নষ্ট না হয় তাই মা বাবা ওকে সংসারের কুটোটিও নাড়তে দিতো না। আমি হঠাৎ করেই পলিটেকনিকটা ছেড়ে দিয়ে ছিলাম তাই ওকে পড়ার নিয়ে কথা বললেই ও খালি ঠেস মেরে কথা বলতো। যথারিতি বি .এ .তে ও খারাপ রেজাল্ট করলো।তাই এ ম তে ভর্তি সময় , ওকে চাপে রাখতেই আমি ও এ ম তে ভর্তি হলাম। এটা অয়নকে প্রভাবিত করলো। ও আমার সাহায্য নিয়ে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বেচেলর ডিগ্রীতে ভর্তি হলো। ওর যদিও এই ডিগ্রীর প্রয়োজন ছিলো না। নীলাঞ্জনা , আর স্নেহা আমাদের এই নতুন করে পড়াশোনা শুরু করা নিয়ে বেশ হাসা হাসি করতো ও কিন্তু আমরা ওতোটা পাত্তা দিই নি সেটা নিয়ে।
ও স্নেহার কথা তো বলা হয়নি। নীলাঞ্জনার প্রিয় বান্ধবী স্নেহা । পয়সা আছে, দেখতে মোটামুটি। অয়ন ওকে ভিষণ ভালো বাসে। যদিও অয়নের মতো অনেক আশিক ওর জীবনে আছে। সবাইকে ফ্রেন্ড জোনে রেখে দিয়েছে। তবে সবার সাথেই ডিসকো , পাব, হুঁকা বারে যায়, কিন্তু কেউ ওর উপর কোন দাবি রাখতে পারে না। কারণ ও একা যায় না কখনো। নীলাঞ্জনাকেও নিয়ে যায়।
অয়ন সাধারণ ছেলে। একটা বিপিওতে কাজ করে। আমার সাথে ওর বন্ধুত্ব নীলাঞ্জনা আর স্নেহার মারফত। স্নেহার জন্য ও সব কিছু করতে পারে। স্নেহা চায় ওর বয়ফ্রেন্ড জীবনে অনেক সংগ্রাম থাকুক। সেটা ওর জীবনে আছে। আর ছেলেটা খুব ফ্যেমাস হোক। মানে টালিউড বা হলিউড ছোট খাটো অভিনেতা হোক । এই স্বপ্নটা সফল করতে ও আমার সাথে বন্ধুত্ব করে। কারণ টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ায় আমার জানা শোনা আছে। এবং কম বেশি টাকা পয়সা আয় করি আমি ওখান থেকেই। মনে আছে ওর খুব কম পয়সায় পোর্টফলিও করে দেওয়ায় আর একটা ছবিতে সুযোগ দেওয়ার জন্য ও আমাকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতে শুরু করেছিলো।
স্নেহার ভালো লাগাটা বদলে গেলো যখন রাহুলের মতো একটা বড়ো লোক বাপের ছেলে সাথে বন্ধুত্ব হলো। তাছাড়া ওর বাড়ির লোকজন ভাবতে শুরু করলো স্নেহার মতো বিগড়ে যাওয়া মেয়ে জন্য রাহুল মতো ভালো ছেলে পাওয়া মুশকিল। তাই রাহুল স্নেহার বেড রুমে ও পৌঁছে গেলো সহজেই।
অয়ন আঘাত পেয়েছিল অনেক। ও শহরটাই ছেড়ে দিলো।পুনে প্রথমে কাজে গেলো। কাজের সাথে সাথে পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে থাকলো। জানেন ওর গল্পটা রূপকথার মতো শোনালেও ও MBA করে এখন লন্ডনে থাকে। আর মুম্বাই বিমানবন্দরে সুমির সাথে ওর আলাপ হয়। সেখানে থেকেই ও মিষ্টি প্রেমের গল্প শুরু। স্নেহা নিশ্চিত আঙ্গুল কামড়াছে। রাহুল থেকে অনেক বেশি সম্পত্তির মালিক এখন অয়ন। কারণ অয়নের বাবা মায়ের সাথে অয়নের কোন সম্পর্ক ছিলো না। উচ্চ মাধ্যমিক ব্যাক পেয়েছিল অয়ন। যদিও উচ্চ মাধ্যমিক পাশের চেয়ে স্নেহার মন জয় ওর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তখন ওর কাছে। তাই ওর বাবা ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো। তাই ও ওর বাবার মায়ের পরিচয় দিতো না কোনো দিন। অয়নের বাবা মা এখন ওকে নিজেদের কাছে ফিরিয়ে নিয়েছে। অয়ন অভিজাত পরিবার ছেলে নয় শুধু , ও জমিদার বংশের লোক।
যাইহোক অয়নকে স্নেহের বাবা মা আবার ডেকে পাঠিয়েছে স্নেহার জন্মদিনে। শেষ মেশ যদি বরফ গলে কারণ সবাই জানে ও এখনো স্নেহাকে ভালোবাসে। ও আমাকে নিয়ে গেলো। ওদের মেয়ের সাথে বিয়ে প্রস্তাবটা অস্বীকার বিনয়ের সাথে। ওর জয়ের সাক্ষী হয়ে। আমি ও নিজের জীবনের গল্পের মোর ঘুরিয়ে দিলাম।
কারণ লোকজন বলে নীলু আমাকে কোন দিন ভালো বাসে নি। শুধুমাত্র সফলতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছে। আজো আমার স্মৃতি গুলো আমাকে খুব কাঁদায়। ওকে এখনো আমি ভালোবাসি সত্যি হয়তো কোন দিন ওকে ঘৃণা করতে পারবো না আমি। আজ যদিও অনেক কাঠখড় পুরিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে আমিও সফল। তবু অনেকটা পথ হাঁটতে হবে আমাকে যাতে ও ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারবে না আমাকে।