Nityananda Banerjee

Horror Romance Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Horror Romance Thriller

প্রান্তিক প্রেম ত্রয়োদশ পর্ব

প্রান্তিক প্রেম ত্রয়োদশ পর্ব

4 mins
365


পর্ব ১৩

একসাথে চার চারটে চাকায় হাওয়া নেই ; ব্যাপারটা কেমন ভৌতিক মনে হচ্ছে না ?

সুকুমার প্লধান উষ্মা প্রকাশ করে বললেন। 

- হতে পারে । জায়গাটার একটা মাহাত্ম্য তো রয়েছেই।

কমলসাধনের উক্তি। তবে বেশি কিছু হয়নি এই যা ।

পবিত্রবাবু থানায় ফোন করবেন নাকি ? যদি একটা গাড়ি পাঠিয়ে দেন - ভালো হবে।

- তার চেয়ে আসুন বাকি রাতটুকু গল্পগুজব করে কাটিয়ে দি। রাত তো বেশি নেই। সাড়ে তিনটে বাজে।

পবিত্র বাবু আরও বললেন - দেখুন ওরা ( সায়ন্তিকা ও মদন) কেমন ঘুমিয়ে পড়েছে।

- আহা ! একটু ঘুমোক ওরা !

বাগাড়িয়া বললেন - অনেক ধকল গেছে। ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আসুন আমরাও একটু চোখ বুঁজে থাকি।

কমলসাধন গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির চারপাশে ঘোরাঘুরি করছেন । টর্চ জ্বালালেন। কি খেয়াল হল চাকাগুলো দেখতে লাগলেন আর তখনই তাঁর মনে হল কোন চাকা পাংচার হয়নি। কাউকে কিছু না বলে সোজা গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিলেন। গাড়ি চলতে শুরু করল। বাগাড়িয়া বললেন - ওরে পাম্প নেই চাকায়। বন্ধ কর বন্ধ কর । তাহলে আর কলকাতা যাওয়া হবে না। কমলসাধন স্পীড বাড়ালেন। গাড়ি মেঠো পথে হেলতে দুলতে ঊলল । কিন্তু একি?

তাঁরা তো উল্টো দিকে যাচ্চেন ! ওই তো পাতকুয়োটার সামনে এসে পড়েছেন । সজোরে ব্রেক কষে দিরেন । গাড়ি ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেল । না থেমে যায়নি। কুয়োতে ধাক্কা মেরে থেমে গেল। সবাই চেঁচামেচি শুরু করে দিদ - মরেছি! আর রক্ষে নেই।

মদনমোহন সায়ন্তিকা নেমে পড়ল। এক লহমায় দৌড়ে গিয়ে কুয়োর পাড়ে উঠে দাঁড়ালো। সমূহ বিপদ দেখে সকলে মিলে চিৎকার করে উঠলেন - ওরে পড়ৈ যাবি কুয়োতে । থাম ।

কে কার কথা শোনে ? ওরা দুছনে ঘড়ঘড়ি টাঙানো দণ্ড ধরে ঝুলতে থিকল। তারপর একসময় ঝুপ করে ঝাঁপ দেবার শব্দ শোনা গেল । ওরা দৌড়ে গিয়ে টর্চের আলো ফেলে দেখলেন জলের নীচে থেকে হাজার হাজার বুদবুদ উপরে উঠে আসছে। আশেপাশে সায়ন্তিকা বা মদনমোহন কেউ নেই। আশি ফুট গভীরে তলিয়ে গেল ।

এবার কি হবে ? সুকুমার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন । বাগাড়িয়া রামনাম জপ করতে লাগলেন। অমলসাধন মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। পবিত্রবাবু স্বগতোক্তি করে উঠলেন সস্ত্রীক স্টেশনমাস্টার এই জন্মে মদন সায়ন্তিকা রূপে পুনরায় জন্ম নিয়ে আবারও ভুতপুরীতে গমন করলেন।

তখন তাদের হা-হুতাশ করা ছাড়া অন্য কিছুই করার ছিল না। পবিত্রবাবু বললেন থানায় খবর দি। ডেডবডি তুলতে হবে তো !

থানায় আবর দিয়ে ওরা আবার গাড়িতে বসে অপেক্ষা করার জন্য দরজা খুলতে গিয়ে দেখেন মদনমোহন এবং সায়ন্তিকা সশরীরে বিরাজমান এবং একই ভঙ্গীতে দু'জনেই ঘুমোচ্ছে। 

বিজ্ঞানমঞ্চের সঙ্গে যুক্ত থেকে পবিত্রবাবুরও মনে হল সত্যি ঐই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা মেলা ভার । সকলে অবশ্যই খুব আনন্দিত হল । বাগাড়িয়া বোতল থেকে জল নিয়ে মদনমোহন ও সায়ন্তিকার চোখেমুখে দিতেই ওদের ঘুম ভেঙে গেল ।

- আমরা কোথাম ? আলসেপড়া গলায় সায়ন্তিকা বলল।

মদনমোহন কিছু বললেন না ঠিকই ; কিন্তু হাবেভাবে মনে হল তিনি যেন কোন অজানা জগৎ থেকে এখানে এসে পড়েছেন।

ঘন্টাখানেকের মধ্যে ডুবুরিসহ পুলিশের গাড়ি চলে এল। মি: নীলমণি রাউৎরায় ধমকের সুরে বললেন - এমন দুর্বুদ্ধি কার? কেন এখানে এসেছিলেন ? আর এসেই ছিলেন যখন রাত কাটানোর দু:সাহস করলেন কেন ? আবার একটা উটকো ঝামেলায় ফেললেন। আর শুধু তাই না ; নিজেরাও তো জড়িয়ে গেলেন ! আমি কিন্তু কাউকে ছাড়ব না বলে রাখছি। রামযতন ! মেজোবাবু! এদের সকলকে থানায় নিয়ে চলুন। আর গাড়িটা বাজেয়াপ্ত করুন ।

সায়ন্তিকা গাড়ি থেকে নেমে এসে বলল - কি বললেন ? এরেস্ঠ করবেন? গাড়ি বাজেয়াপ্ত করবেন ? কোন অপরাধে ?

মি: রাউৎরায় হাসবেন না কাঁদবেন ভেবে পেলেন না। মুখের সামনে মদনমোহনকে দেখে ' ভুত ভুত' বলে লাফ দিতে থাকলেন । মেজোবাবু ওনাকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন - এটা ওই স্টেশনমাস্টারের ভুতের কারসাজি। পট্টবর্ধন সেজে আপনাকে যে টাকার স্যুটকেশ দিয়েছিল ।

পাগলের মত চেঁচিয়ে রাউৎরায় বললেন - এই লোকটাই পট্টবর্ধন।

- না স্যার। ইনি মি: মদনমোহন মুখার্জী। চিফ ম্যানেজার, ইয়েস ব্যাঙ্ক ল্যান্প ডাউন শাখা কলকাতা। আসল পট্টবর্ধন মৃত - সে তো আপনি জেনেছেন । পট্টবর্ধন যদিও রেলের পাত চুরি করার জন্য এখানে ঘাঁটি গেড়েছিল, বৈদ্যনাথই ওকে শেষ করেছে। আর তা' জানানোর জন্যই মদনমোহন স্যারের রূপে আপনাকে দর্শন দিয়েছে পট্টবর্ধন সেজে। আমাকেও ঠকিয়েছে স্যার। আপনার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছিল, কালুর চায়ের দোকানে আমার সাথেও একই ঘটনা ঘটেছে। স্যুটকেশ আমাকেও দিয়েছিল। তখন দেখেছি টাকাভর্তি। এখন পুরো স্যুটকেলটাই গামেব।

নীলমণি রাউৎরাম বললেন- আমি আজই ট্রান্সফার নেব। না পেলে চাকরিতে রেজিগনেশন দিয়ে দেব। তবু আর এক মুহূর্তও এই থানায় থাকব না । বলি আমারও তো পরিবার আছে নাকি ?

ভোর হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাঙা অরুণিমায় পূব দিগন্ত রেঙে যাবে। পবিত্রবাবু বললেন - স্যার তাহলে চলুন ফিরে যাই।

(চলবে)৭


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror