প্রান্তিক প্রেম প্রথম পর্ব
প্রান্তিক প্রেম প্রথম পর্ব
- নাম ?
- শ্রীযুক্ত মদনমোহন মুখার্জী ।
- বাবার নাম ?
- ঈশ্বর পতিতপাবন মুখার্জী ।
- পেশা ?
- নারী পাচার ।
আঁতকে উঠলেন তদন্তকারী অফিসার । নারী পাচার ! এ তো সাংঘাতিক ক্রিমিনাল !
- এই ! কে আছো ?
হন্তদন্ত পেয়াদা রুমে ঢুকে বলল - ইয়েস স্যার ।
- একে পা দুটোয় দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে দাও। বর্ণ ক্রিমিনাল। দেখো যেন হাতদুটোও বাঁধা থাকে । বিশাল চক্রের পাণ্ডা ধরেছি। কোনমতেই যেন অঘটন কিছু না ঘটে ।
মদনমোহন নির্বিকার । গোঁফের আড়ালে একটু মুচকি হেসে বললেন - অফিসার ! এই আপনার বীরত্ব ! একটা পাটকাঠির মত চেহারার লোককে এত ভয় ?
তীব্র কটাক্ষ হেনে তদন্তকারী অফিসার বললেন - অতিথি দেবো ভব । আর দেবদেবীদের তো ভরসা নেই ; এই আছে এই নেই অবস্থা। কাজেই খাতিরদারী করতে গেলে আঁট ঘাট বেঁধে নামতে হবে। নইলে ---
- হা হা হা । অফিসার , হাসালেন আপনি। কেসের তদন্তে নেমেছেন অথচ একটু বেশিই যেন সাবধানী হয়ে পড়ছেন। এই দেখুন আমার দুটো পা-ই পঙ্গু। হাঁটতে চলতে পারি না । দাঁড়াবার ক্ষমতাও নেই। অথচ কি বিপুল আয়োজন করলেন আমাকে ধরে রাখার জন্য ।
- ও সব তুমি বুঝবে না চাঁদু ! ক্রিমিনালদের আমি হাড়ে হাড়ে চিনি । আর তুমি যে ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের ক্রিমিনাল এ' কথা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
মদনমোহন কিছু বলল না । শুধু মুচকি হেসে বলল - পস্তাবেন স্যার । নির্ঘাৎ পস্তাবেন । আর তখন আপনার আপশোষের সীমা থাকবে না । এ আমি বলে রাখলাম ।
অফিসারের ইচ্ছে করছিল কষে একটা লম্বা থাপ্পড় মারার। দুদে গোয়েন্দাকে তো চেন না বাছা। দেখ না কি হাল করি তোমার !
- এই রামযতন ! বাঁধো বেটাকে শক্তি দড়ি দিয়ে । আর কোমরে ঝুলিয়ে দাও। পাছায় ঘা কতক দেই; অনেক কথা বাকি আছে বের করার ।
রামযতন আর মোতিলাল মিলে মদনমোহনকে ঝুলিয়ে দিল । মদনমোহন বলল - একটু দুলিয়ে দে না রে বেটা। দোল খেতে আমার খুব ভালো লাগে ।
থানা চত্বরে তখন পড়ন্ত বেলার রোদ । দু'চারজন উর্দিধারী খোশমেজাজে গল্প করছে। তার মধ্যে একজন বলল - চল, এক কাপ চা খেয়ে আসি। সাহেবের কল আসার আগেই চলে আসব ।
মদনমোহন অফিসারকে বলল - স্যার! ওরা চা খেতে যাচ্ছে ; আপনার জন্য আনবে না ?
সাহেব এত রেগে গিয়েছেন যে ওর কথায় কোন আমল দিলেন না। রামযতনকে বললেন - বেটার পরণের কাপড়টা খুলে দাও; আর ওই কালো রুলটা দাও । ওটা ওর পেছনে ঢুকিয়ে দিয়ে কথা বের করতে হবে । দেখছ না বেটা এখনও কেমন নিস্পৃহ রয়েছে।
ঝালদা পুরসভার কাউন্সিলর মিনু বাউরিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পাঁচ দিন হয়ে গেল মাননীয়ার কোন খবর নেই। ঝালদা থানা থেকে শুরু করে গোটা জেলার পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। এস পি সাহেব নিজের হাতে কেসটা নিয়েছেন । জেলা শাসকের তদ্বির বেড়ে গেছে। আর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঝালদা থানার বড়বাবু নীলমণি রাউতরায়কে ।
নীলমণি স্যার ভীষণ কড়া ধাতের মানুষ। গত ইমার্জেন্সির সময় বাঁকুড়া সদর থানায় ছিলেন । এক ডাকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ওনাকে চেনে । শতকরা আশিভাগ কেসের ফয়সালা করে আসামীদের কঠোর শাস্তি পাইয়ে দিয়েছেন । বাঁকুড়ার জেলা জজ তো সেই সময় ওর ভূয়সী প্রশংসা করে পদোন্নতির সুপারিশ করেছিলেন । সেইজন্যই তিনি আজ ঝালদা থানার স্বতন্ত্র দায়িত্ব পেয়েছেন।আর এই পঙ্গু লোকটা কি না তাকে তাচ্ছিল্য করে। দাঁড়া বেটা ! দেখাচ্ছি মজা।
বলে কালো রোলারটা ( লাঠির মত গোলদণ্ড; একটি প্রান্ত ছুচলোমত ) হাতে নিয়ে প্রথমে সপাটে পাছায় এক ঘা দিলেন । যন্ত্রণায় মদনমোহন কুঁকড়ে উঠল । অফিসার বললেন - বল এবার মিনুদিকে কোথায় পাচার করেছিস ?
- আমি জানি না স্যার ! সত্যি বলছি আমি ওনাকে চিনিই না।
- চেনার প্রয়োজন পড়ে না। সত্যি কথা বল নইলে ---
- সত্যি বলছি স্যার । অন্তত এই কেসটাতে আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।
- রামযতন !
হুংকার পাড়লেন অফিসার । এই রুলটা ওর পাছায় ঢোকাও ; আমি ওর নাকমুখ চেপে ধরছি।
- স্যার , তা'হলে তো মরেই যাবে !
- মরুক গে ! রেললাইনে ফেলে দিয়ে আসব ।
রামযতন কম্পিত হস্তে দুই নিতম্বের মধ্যসথিত মলদ্বারে রুল চালান করে দিল । মদনমোহন তীব্র ব্যথায় কঁকিয়ে উঠল। পরক্ষণেই জ্ঞান হারিয়ে শরীরটা শিথিল করে ফেলল।
নীলমণি স্যার চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিলেন । রোলারটা বের করে নিতে বললেন। রামযতন বের করে নিল । আর সেই মুহূর্তে মদনমোহন অট্টহাসি দিয়ে বলল - আমার লাগেই নি। হা হা হা । সাহেব আমার কিছুই হয় নি।
রামযতনের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল । গলার স্বর বুজে গেল। আমতা আমতা করে বলে উঠল - ভু-ভু-ভুত। আর অমনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল । নীলমণি কোমর থেকে পিস্তল বের করে পরপর তিনবার মদনমোহনের মাথা লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লেন। রক্তে মেঝে ভেসে গেল । মদনমোহন হেসে বলল এবার তুমি মর।
নীলমণি রাউৎরায় পাঁই পাঁই করে দৌড় দিলেন।

