Nityananda Banerjee

Horror Fantasy Thriller

3  

Nityananda Banerjee

Horror Fantasy Thriller

প্রান্তিক প্রেম পঞ্চম পর্ব

প্রান্তিক প্রেম পঞ্চম পর্ব

3 mins
149


পর্ব ৫


ঝালদা থানার অফিসার ইনচার্জ মি: নীলমণি রাউতরায় কোন একটা কেসের তদন্ত শেষে থানায় এসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। তখন সন্ধ্যেবেলা । সাধারণত থানার আশেপাশের দোকানপাটে সবে ঝাঁপ বন্ধ হচ্ছে। তিনি রামযতনকে ডেকে ফিসফিস করে কিছু বললেন । বনওয়ারী পট্টবর্ধন নামের এক ব্যবসায়ী মি: রাউতরায়কে বললেন - স্যার! আপনি ইখানে এসে গেছেন?

মি: রাউতরায় ধুরন্ধর অফিসার । পট্টবর্ধনকে চিনতে ভুল করেননি। বাঁকুড়া লালগোলা রোডে তাঁর লোহালক্কড়ের দোকান। বেশ ইনকাম হত তখন। রেলের চোরাই লোহা কিনতেন । আর বড়জোড়ার কারখানায় তা' গলিয়ে অনেক কিছুই করতেন। অবশ্য মি: রাউতরায়েরও তাতে প্রচ্ছন্ন মদত ছিল। একটা মোটা অঙ্কের বকশিশ ঢুকত তাঁর পকেটে। 

পট্টবর্ধনকে দেখে এখটু খুশিই হলেন ।

- আরে আরে পাটোয়ারী সাব ! আইয়ে আইয়ে।

পট্টবর্ধন একটু ক্ষুণ্ণ হলেন । তাঁর মনে হল অফিসার তাঁকে যেন চিনতে পারলেন না। সেজন্য পিছনে তাকিয়ে দেখলেন পাটোয়ারী কে! কাউকে দেখতে না পেয়ে অল্প হেসে অফিসারকে বললেন - সাব । পাটোয়ারী নেহি; পট্টবর্ধন। বনওয়ারী পট্টবর্ধন।

- ওহ্ ইয়েস পট্টবর্ধন। আপনাদের যা নামের বহর মশাই বেমালুম ভুলে যাই।

- হে হে হে সাব ! ডেলিবারেট মিস্টেক স্যার । হতেই পারে।

- তা বনোয়ারীজী কি মনে করে ? বাঁকুড়ায় পোষাচ্ছে না নাকি? এখানে এই পাণ্ডববর্জিত স্থানেও বেওসা ফেঁদেছেন ?

মা কালীর মত বিশাল লোলজিহ্বা বের করে বনওয়ারী পট্টবর্ধন বললেন - ওমোন কোথা বোলেন না স্যার। বাঁকুড়া আমার পূণ্যভূমি । যা কিছু পাইছি বাঁকুড়ার লেগেই।

- তা'হলে হঠাৎ এইখানে আগমন ?

- শুনিয়াছি এই শহরের কোথাও বা কাছাকাছি কোথাও ভুতের ইস্টিশান আছে। আমি স্যার ভুতেদের খুব ভক্তি করি। ওনাদের পদধুলি লিতে আসিয়াছি স্যার ।

- তো সেখানে যান! এখানে কি করতে এসেছেন ?

- সেটাই তো বলবো বলে এসেছি স্যার। পাকা খবর লিয়েছি আপনি ইখানের কত্তা। দেখছিও ঠিক। পাকা খবর লিয়েছি ওই ভুতের জাইগাটা আপনার দখলে। তাও ঠিক ।

- পাকা খবর লিয়েছেন আমি আপনাকে হেল্প করব সেটাও ঠিক । তাই না ?

দু'জনে এরপর হো হো করে হাসতে লাগলেন । 

- বসেন বসেন বনোয়ারীজী। অনেকদিন পর সাক্ষাৎ পেয়ে খুব খুশি হলাম।

- হামি ভি বহুত খুশ হুয়া সাব। লগতা হ্যায় লছমী কি কিরপা সে জ্যাদা হি কামাই হোগা।

- দেখা যাক কতদূর কি করা যায় । কিন্তু এবার ফিফটি ফিফটি চাই আমার।

- হোয়ে যাবে স্যার । কুছ ভি চিন্তা নাই।

- এডভান্স কিছু ?? এই ধাপধাড়া গোবিন্দপুরে এসে সব শুকিয়ে গেছে । একটু রসসিঞ্চন করবেন না কি ?

বনওয়ারী পট্টবর্ধন একটা ছোট্ট স্যুটকেশ হাতে তুলে দিলেন। রাউতরায় খপাৎ করে তা টেবিলের তলায় লুকিয়ে দিলেন ।

ইতিমধ্যে রামযতনের ফিরে আসার সময় হয়ে গেছে। পট্টবর্ধনকে বিদায় করে মি: নীলমণি রাউতরায় পা জোড়া টেবিলে তুলে তন্দ্রার ভান করে পড়ে রইলেন।

রামযতন ফিরে এল। বলল - স্যার গাড়ি রেডি। 

- জিপ না প্রিজন ভ্যান ?

- দোনো রেডি স্যার । পুরা ফোর্স উঠা লিয়া। আপ চলিয়ে।

- তুমি চল জিপে ওঠো। আমি আসছি।

তারপর টেবিলের তলাকার স্যুটকেশ বের করতে যেয়ে দেখেন তা সেখানে নেই। তার জায়গায় পড়ে আছে মিনু বাউরীর কাপড়ের আঁচলের টুকরো যেটা তিনি সংগ্রহ করে ফরেনসিক ল্যাবে জমা দিয়েছিলেন ।

মুহুর্তে শোরগোল পড়ে গেল থানায়। আঁতিপাতি করে খোঁজা শুরু হল । কিন্তু কিছুই পাওয়া গেল না।

মি: রাউতরায় দমবার পাত্র নন। ওয়ারলেসে খবর পাঠালেন বাঁকুড়া সদর থানা, বড়জোড়ায় । বনোয়ারীর লোকেশন খুঁজে বের করা প্রয়োজন। সত্যিই কি সে এখানে এসেছিল না কি যথাস্থানে বহাল তবিয়তে রয়েছে নিজের ব্যবসায়।

ঘন্টাখানেকের মধ্যেই রিপ্লাই এল। বনোয়ারী পট্টবর্ধন নামের ব্যবসায়ীটি ছয়মাস পূর্বে কোন এক অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক।

মাথায় বাজ পড়ল রাউতরায়ের। তবে কি মদনের কাণ্ড এটা ? ব্যাপারটা কেমন আধিভৌতিক মনে হল। অমন দুর্দান্ত পুলিশ অফিসারও চোখে সর্ষেফুল দেখতে লাগলেন।

বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী নিয়ে লক আপে এলেন; যেখানে মদনমোহনের ট্রিটমেন্ট চলছিল । কিন্তু সেদিনের ওই ঘটনার পর তিনি বা রামযতন কেউই লক আপের ভেতরে যেতে চাইলেন না । মেজোবাবুকে বললেন - মি: রায় দেখুন তো মদন কি করছে ?



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror