Agniswar Sarkar

Horror

3.8  

Agniswar Sarkar

Horror

প্লানচেট

প্লানচেট

3 mins
1.6K


পুজোর ছুটিটা খুব ভালই কাটছিল দক্ষিণ কোলকাতার ' নির্ঝর ' আবাসনের চার বন্ধুর । নীলাদ্রি , অর্ক , সম্বিত আর সম্রাট । এরা চারজনই কোলকাতার যোধপুর পার্ক বয়েস স্কুলের একাদশ শ্রেনির ছাত্র । এরা পড়াশোনাতেও একে অপরকে টেক্কা দেয় । সম্বিত আবার স্কুলের ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন । এরা কিছুতেই একে অপরকে ছেড়ে থাকতে পারেনা ।পুজোর ছুটিতে সারাদিন পড়াশোনার পর সারা বিকেলটা শুধু ক্রিকেট খেলা ।

  কালীপুজোর আর কয়েকদিন বাকি । আবাসনের মধ্যে থাকা মাঠে ক্রিকেট ম্যাচ চলছে । অর্ক আউট হয়ে নীলাদ্রির পাশে বসে বলল , কাল একটা ম্যাগাজিনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্ল্যানচেট করা নিয়ে একটা লেখা পড়লাম। যদি আমরাও প্ল্যানচেট করতে পারতাম তাহলে আমারাও কোনও ভালো প্লেয়ারের কাছ থেকে টিপস নিতে পারতাম । এটা শুনে বাকিরা হো হো করে হেসে গড়িয়ে পড়ল । দুদিন পর অর্করা পিসির বাড়ি যাবে , অর্ক বাবাকে বলল - এবার আমদের সঙ্গে নীলাদ্রি , সম্বিত আর সম্রাটও যাবে । অর্কর মা ও বললেন , চলুক না , এখন ওদের পড়াশোনার চাপও একটু কম , কদিন একসঙ্গে ওরা হৈ হুল্লোড় করে কাটাবে ।

 অর্কর পিসির বাড়ি বহরমপুরের কাছে একটা গ্রামে । কালীপুজোর দুদিন আগে হাওড়া - মালদা ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে সবাই চেপে বসল । বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেছে । রাতের খাবার খেয়ে চারজন একসাথে তিনতলার ঘরে শুয়ে গল্প করছে । হটাৎ অর্ক বলে উঠল - কালীপুজোর রাতে প্ল্যানচেট করবি ? সবাই চুপ । কিছুক্ষণ বাদে সম্রাট বলল , ঠিক আছে , কিন্তু কীভাবে করতে হয় সেটা আগে জানা দরকার ।

 পরদিন সকাল থেকে চলল ইন্টারনেটে সার্চ । প্রায় সারাদিনই সবাই মোবাইলে মুখ গুঁজে পড়ে থাকল । এরপর বিকেল থেকে চলল মোমবাতি , টেবিল , সাদা কাপড় প্রভৃতি সংগ্রহের কাজ । ঠিক হল নীচের যে ঘরে পিসিদের ধান থাকতো সেই ঘরেই পুজো শেষের পরেই হবে ওদের প্লানচেট । পুজোরদিন সকাল থেকেই চারজনে আলোচনা শুরু করল প্ল্যানচেটে কাকে ডাকা হবে , কি কি প্রশ্ন করা হবে , এই সব । সম্বিতের ইচ্ছে কোনও ক্রিকেট ক্যাপ্টেন আর নীলাদ্রির ইচ্ছে কোনও সাহিত্যিক , বাকি দুজনের ইচ্ছে কোনও সাইন্টিস্ট । শেষে ঠিক হল স্কুলের জ্যোতির্ময় স্যার । উনি কিছুদিন আগেই মারা গেছেন । আর উনি কেমিস্ট্রির স্যার ছিলেন একইসঙ্গে খেলা আর সাহিত্য পাগল মানুষও ছিলেন ।

   রাতে পুজো শুরু হল , ওদের মন পড়ে আছে পূর্ব দিকের কোণের ঘরে ।

 পুজো শেষ হতে হতে তিনটে বেজে গেল । চারজনে গুটি গুটি পায়ে ঘরে  ঢুকল । ঘরের মাঝখানে টেবিল আর চারটি চেয়ার । ঠিক হল নীলাদ্রির সামনেই থাকবে কাগজ আর পেন ।ঘরের আলো নিভিয়ে চারজনে চেয়ারে বসে পরস্পরের হাত ধরে জ্যোতির্ময় স্যারের কথা ভাবা শুরু করল । অক্টোবর মাসের শেষ , ঘর বেশ ঠাণ্ডা । সামনের জানলা দিয়ে মাঝে মাঝে ঠাণ্ডা হাওয়া এসে মোমবাতির শিখাকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে । হঠাৎ টেবিলটা যেন একবার অল্প নড়ে উঠল । ওদের হাতের গ্রিপগুলো আরও শক্ত হয়ে উঠেছে । এবার ঘরের মধ্যে টুকটাক আওয়াজ । ওদের মাথার উপরে যেন কি একটা ছুটে বেরাচ্ছে । নিস্তব্ধতাকে ভেঙে দিচ্ছে ওই আওয়াজটা । তার সঙ্গে মোমবাতির শিখার কেঁপে ওঠা । হঠাৎ উপরের দিকে একটা শব্দ হল । সবার মুখ উপরদিকে । সবাই দেখল একটা ছায়ামূর্তি নেমে আসছে ওদের টেবিলের দিকে । ঝুপ .........

ছায়ামূর্তিটা নামল মোমবাতির উপরে , মোমবাতি নিভে গেছে । সবার হাতের সঙ্গে লোমশ ছোঁয়া । আর কিছু মনে নেই , চারজনই ছুটে পালিয়ে ঠাকুরঘরে আশ্রয় নিয়েছে । কারোর চোখে ঘুম নেই । দরদর করে ঘামছে ।

  পরদিন সকালে চারজন ঘরে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছে । নীলাদ্রি , সম্বিত আর সম্রাটের হাতে লাঠি । উঁকিঝুঁকি দিয়ে ঘরে ঢুকে হেসে গড়িয়ে পড়ল......................।

   পিসিদের ধানের বস্তাগুলো উপরে ঝোলানো ছিল , ইঁদুর চলাচলের ফলে বস্তাগুলো সোজা মোমবাতির উপরে পরেছে । ওদের প্লানচেটের ফলে আগমন ওই চটের তৈরি ধানের বস্তার । বাড়ি ফেরার পথে চার বন্ধুর একটাই সান্ত্বনা , তারা প্লানচেট করে জ্যোতির্ময় স্যারের আত্মার বদলে অন্তত বস্তাগুলোকে উপর থেকে নিচে নামাতে সক্ষম হয়েছে ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror