Agniswar Sarkar

Abstract Horror

3  

Agniswar Sarkar

Abstract Horror

লৌকিক না অলৌকিক?

লৌকিক না অলৌকিক?

2 mins
294


আজ আবারও বেরোতে হবে অমিতকে। পূব আকাশের কোণে সেদিনের মতো আজও সেই অদ্ভুত আভাসটা লক্ষ্য করেছে। তার মানে আজও কারোর বাড়িতে দুর্ঘটনা ঘটবেই। গতবার পর্যন্ত এই অজানা বিপদের হাতে থেকে গ্রামবাসীকে ঢালের মতো রক্ষা করে যাচ্ছে, এবারও কি পারবে? পারতেই হবে। বুবুনের জন্য পারতেই হবে। প্রায় পাঁচশ মানুষের বাস এই গ্রামে, কিন্তু আজ কোন বাড়ি? সময় নষ্ট না করে বেড়িয়ে পড়ল অমিত। 


আজ থেকে প্রায় বছর দুয়েক আগে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ফেটে জ্বলন্ত পুড়ে মারা যায় অমিতের পাঁচ বছরের মেয়ে বুবুন। ওই দুর্ঘটনায় প্রবলভাবে আহত হয় অমিত। মেয়ের মৃত্যুর শোক আর আহত অংশ বিষিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয় অমিতের। তার কয়েকবছর আগে একইভাবেই মৃত্যু হয় অমিতের স্ত্রীর। অমিত গ্রামেরই স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিল, সাথে ছিল বিজ্ঞান মঞ্চের স্থায়ী সদস্য। সেদিনও বাড়ির মধ্যে এই অদ্ভুত আভাসটা লক্ষ্য করেছিল। এক সময়ের বর্ধিষ্ণু গ্রাম আজ অনেকটাই ক্ষয়িষ্ণু। জন্ম থেকেই এই গ্রামেরই ছেলে অমিত। আজ চোখের সামনে গ্রামের এই অবস্থা দেখে কষ্ট হয়। জীবিত অবস্থা থেকেই চেষ্টা করেছিল গ্রামের অবস্থার উন্নতি করা, এখনও সেটা বজায় রেখেছে। কোনও এক অজ্ঞাত শাপের করালগ্রাসে মুড়ে গেছে সুজলা-সুফলা-শ্যামলা গ্রামটা। সেই শাপের শিকড়ে পৌঁছানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অমিত। 


ইতিমধ্যে হারাধন জেঠুর বাড়ির সামনে পৌঁছিয়েছে অমিত। গ্রামের একদম শেষের বাড়ি। গরমের জন্য বাইরের দাওয়ায় বসে আছে জেঠু, জেঠিমা রান্নাঘরে। একমাত্র মেয়ে রমার বিয়ে হয়েছে তারাপীঠে। কালই আসবে বলে বাড়িতে একটা সাজো সাজো রব। রমার ছেলে অভি আর বুবুন সমবয়সী। অস্বস্তিটা আবারও অনুভব করল অমিত। উৎস সম্ভবতঃ নদীর পার থেকে। একটা অদ্ভুত হাওয়া এসে ঢুকল বাড়ির ভিতর। আর এক মুহূর্তও নষ্ট না করে অমিতও পিছু নিল। একটা কালো ফুটবলের চেহারা নিয়েছে অশুভ শক্তিটা। চারদিকে ঘন রোমের আবরণ। সোজা পৌঁছিয়েছে রান্নাঘরে। জেঠিমা আনাজ আনতে বেরিয়েছে। হালকা গ্যাসের গন্ধ এলো অমিতের নাকে। ওই শক্তিটাও এবার অমিতের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুততার সাথে বেড়িয়ে যাচ্ছে। অমিত তার লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছে। আজই এটার শেষ করা দরকার। রুখে দাঁড়াল। শুরু হল একটা ঝটপটানি। ঘূর্ণি হাওয়ায় দুলে উঠল বাড়ির সামনের বড় অশ্বত্থগাছটা। দুটো শক্তি আজ মুখোমুখি। রক্ষক আর ভক্ষক। 


জেঠিমা ভাঁড়ার ঘর থেকে জেঠুকে বলল, 

- আপনি ঘরে গিয়ে বসুন। ঝড় উঠলো বোধ হয়। 

- হাওয়াটা ভালোই লাগছে। অদ্ভুত একটা চেনা মিষ্টি গন্ধ আছে হাওয়াটায়। 


অমিত ওই কালো ফুটবলের মতো শক্তিটাকে নিয়ে চেপে ধরল শতাধিক বছরের পুরানো গাছটার গায়ে। আজ গাছটাও সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরেছে ওই অশুভ শক্তিটাকে। এই গাছের নিচে ছোটবেলায় মায়ের হাত ধরে ষষ্টি পুজো দিতে এসেছে অমিত, আজ বৃক্ষের সেই আশিস ফেরানোর পালা। কয়েকমুহূর্তের মধ্যে অতো বড় গাছটা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল। জেঠু-জেঠিমা ঘটনার আকস্মিকতায় বাড়ির বাইরে বেড়িয়ে এসেছে। অশুভ গোলকটাকে চেপে ধরে রান্নাঘরের দিকে ছুটে গেল অমিত। একটা কর্ণ বিদারক আওয়াজে সশব্দে ফাটল আরও একটা রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার। রান্নাঘরের চালটা উড়ে বেড়িয়ে গেল একদিকে। দুটো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠে গেল ওপরের দিকে। একটা সাদা একটা কালো। বাতাসে একটা অদ্ভুত গন্ধ ছড়িয়ে আছে, কিছুটা তেঁতো কিছুটা মিষ্টি। এবার নিশ্চিত শাপমুক্ত হবে গ্রাম, অমিতের বলিদান বিফল হবে না।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract