Agniswar Sarkar

Children Stories Classics Inspirational

3  

Agniswar Sarkar

Children Stories Classics Inspirational

পূর্ণতা

পূর্ণতা

2 mins
243


 দোঠো পয়সা দিজিয়ে না বাবুজি, বলে হাজরা ক্রসিং-এ দাঁড়িয়ে থাকা এস.ইউ.ভি-র দেওয়ালে দুটো থাপ্পড় দিল মিনি ।

চল হিয়াসে। হঠাৎ গাড়ির পিছনের কাঁচটা খুলে একটা সুন্দর প্যাকিং করা প্যাকেট কোলকাতার রাজপথে গোঁত্তা খেয়ে পড়ল। মিনি প্যাকেটটা তুলে নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়াতেই সিগন্যালটা সবুজ হয়ে গেল। থেমে থাকা যন্ত্র-দানবগুলো ধোঁয়া উড়িয়ে ছুটে চলল নিজেদের গন্তব্যে। রাস্তার পাশে তখন দাঁড়িয়ে আছে মিনির মতো কিছু অসহায় মুখ। এই শহরের ভাষায় এরা ভিখারি। এই শহরেরই আরেক মেয়ে মাদার টেরেজার কাছে এরাই ভগবান।

আজ বিকেল থেকে আট বছরেরে মিনির শরীরটা ভালো নেই। গায়ে জ্বর। ইচ্ছে করছিল শুয়ে থাকতে। কিন্তু পেটের জ্বালা বড় জ্বালা। ওদিকে মা-ও বেরিয়েছে কোলের ভাইটাকে নিয়ে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউর ক্রসিং-এ। ভালো লাগছে না মিনির। চোখটা জ্বলছে। হাতের প্যাকেটে কী আছে কে জানে? হয়তো ওই বাবুরা কোনও অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলো । খাবার-দাবার থাকতে পারে। ওদের অবশ্য সেই সব খাবার মুখে রোচে না। বিরিয়ানি-কোফতা ছাড়া ওদের পেট ভরে না। প্যাকেটটা বেশ ভারি। এই প্যাকেটটা আজকের রাতের বেলায় পেটের জ্বালা মেটাবে। ভাইটা আজ রাতে একটু ভালো-মন্দ খেতে পারবে। প্যাকেটটাকে বুকে ভালো করে জড়িয়ে ধরে এগোতে গিয়ে টলে পড়ে গেল মিনি। আশপাশ থেকে মিনির মতো কয়েকটা ছেলে-মেয়ে ছুটে এলো। ফুটপাথের কয়েকজন সহৃদয় দোকানদারের সহায়তায় মিনিকে নিয়ে যাওয়া হল কাছের এক ডাক্তারখানায়। ডাক্তারবাবু মিনিকে দেখে ফ্রি-স্যাম্পেলের ওষুধ দিলেন। ওই ছেলে-মেয়েগুলোই মিনিকে ঝুপড়ীতে পৌঁছিয়ে দিয়ে এলো। ওষুধ খেয়ে মিনি শরীরে কিছুটা বল পেয়েছে। শহরের রাতটা ক্রমশ গাঢ় হয়ে এলো। ভাই সহ মা-ও বাড়ি ফিরল।

শুয়ে আছিস কেন রে মুখপুড়ি? ক-টাকা কামালি আজ? আজ আমার তেমন কিছুই হয় নি। তা তাড়াতাড়ি ফিরে এলি কেন রে? কোলের ঘুমন্ত ছেলেটাকে মাটিতে শোয়াতে গিয়ে বলল মিনির মা।

মা আজ টাকা পাই নি রে, তবে একটা খাবারের বাক্স পেয়েছি। ভাইকে খাইয়ে দে, তারপর তুই আর আমি কিছু খেয়ে নেব। আর আর তোকে টাকা খরচ করতে হবে না রে মা। মুখে একটা উজ্জ্বল হাসি ফুটিয়ে মিনি প্যাকেটটা মায়ের দিকে এগিয়ে দিল।

প্যাকেট খুলতেই রাগে চিৎকার করে উঠল মা। কী এনেছিস হারামজাদী? এই বই পড়ার শখ যখন বড়লোকের ঘরে জন্মাতে পারতিস। যা এটা মুদীর দোকানে বেচে কিছু নিয়ে আয়। যা বেরো মুখপুড়ি।

ক্লান্ত শরীর নিয়ে কোনও ক্রমে পাড়ার মুদীর দোকানে গেল মিনি।

কাকু, এই বইটা নিয়ে একটু চাল-আলু দাও না। আজ এই বইটা দিয়েই পেট ভরাই। করুণ মুখে বলল মিনি।

যা। ভাগ। আগের টাকা মেটা। এই ‘বিদ্যাসাগর রচনাবলী’ নিয়ে আমি কী করব?

শুনে মিনি কপালে জোড়-হাতটা ঠেকালো।

দোকানে থাকা এক সিস্টার গোটা ব্যাপারটা দেখে মিনির সাথে মিনিদের বাড়ি গেলেন। তারপর থেকে মিনিদের দায়িত্ব নিল মাদার্স হাউস। সাথে দায়িত্ব নিল সেই বইখানিরও।

আজ মিনি, মাদার্স হাউসের সদস্যা, স্কুল-শিক্ষিকা।


Rate this content
Log in