পাহাড়ি পথ
পাহাড়ি পথ
অর্থনৈতিক সফলতা এসেছে ঠিকই কিন্তু সেটা ধরে রাখা জেনো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অমিতকে সেই দিন বুঝতে চেষ্টা করেছিলাম। প্রকৃত শ্রেনী শত্রু করা। আসলে সব বড়োলোকরাই কিন্তু পুঁজিপতি নয়। যে সব মানুষেরা শ্রম নয় শুধুমাত্র পুঁজি কে ই খাঁটি অর্থ উপার্জন করে তাঁরা পুঁজিপতি।আমরা পুঁজিপতি না। আমরাও শ্রমজীবিদের মধ্যেই পড়ি, কারণ আমরা, মেধা , শ্রম বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করি।
লকডাউন পরিস্থিতি আমদের মধ্যে চুনোপুটি বড়লোকদের হাল খারাপ করে দিলো। দুই টাকার চাল গম নেওয়া তো সম্ভব নয়, লজ্জার খাতিরে। বাজার থেকে নাহয় কিনে খাবো সব কিছু ।
গাড়ি চলেনি তিন মাস, ইএম আই , ডাইভার মাইনে সব দিতে হলো ঘরে জমানো টাকা থেকে। শেষ মেষ উত্তর বঙ্গের একটা কোম্পানিতে মাল নিয়ে আসা যাওয়া একটা ই টেন্ডার দেখি এপ্রুভাল পেয়েছি। সপ্তাহ খানেক পর যখন যাত্রা দেবো তখন আমার গাড়ির খালাসি কোরোনা ধরা পরলো , অগত্যা আমি গাড়িতে উঠে পড়লাম খালাসি হিসেবে। সবুজ মাঠে বুক চিরে , কত অজানা অচেনা শহর , আঁকা বাঁকা খাল, নদী পারেই উত্তর বঙ্গের, পাহাড়ি পথে ঢোকার আগেই সোনার মুকুট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে কাঞ্চন জঙ্ঘা। বিকালের পাহাড়ি পথ মায়াবী। মিষ্টি রৌদ্র হাসি মুখে যেনো স্বাগত জানিয়ে গেলো আমায়। লজ্জায় মেঘের আঁচলে মুখ ঢাকতে চেষ্টা করেছে যেনো পাহাড় টা। কিন্তু সন্ধ্যা হলেই বিপদ জনক পথটা।
আলো কমতেই , গাড়ি গতি কম করলেও আমার হৃদপিন্ড গতি শতাব্দী এক্সপ্রেস মতো হয়ে গেলো।এমন সময় একটি কাকতাড়ুয়া মতো ছেলে দেখি মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে। ব্রাক চেপায় বেঁচে গেলো। আমার ডাইভার নেমে গালিগালাজ দিলেও। আমি বললাম " মরতে চাই ছিলে কেন? কি কষ্ট তোমার। জীবনটা অনেক সুন্দর এভাবে নষ্ট করোনা।"
কাকতাড়ুয়া মতো লোক টা চওড়া হাসি হাসে বললো " মরতে হলে তো। এই খাদে পড়ে গেলে মরে যুতুম । আমায় একটু লিফট দেবেন গো।"
আমার ডাইভার ভয় বিশাল আপত্তি করছিল, ডাকাত হতে পারে। কিন্তু আমি ঝুঁকি নিয়ে ফেললাম, কারণ লোকটা আমার ঠিকানাতেই যাচ্ছে, পথটা নাকি ওর চেনা। মিনিট দশেক বকবক করে লোক টা। কি যাদু করলো। রাজেশ ওকে ডাইভিং করতে দিয়ে দিলো। কিরকম যাদুমন্ত্র কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম কোম্পানির গেটে। ভোর আবধি অপেক্ষা করতে হবে। মদন বিদায় নিলো। আমার ওকে পছন্দ হয়েছে। আমার কার্ড দিয়ে বললাম আমি গাড়ি চালাতে চাইলে ওর চাকুরী পাকা আমার কাছে।
মদন বললো "একমাস ওর কাজ আছে।একপর চাকুরী র সুযোগ থাকলে । এ কোম্পানির ম্যানেজার বাবু বলবেন মদন ডাইভার কে ডেকে দিতে।"
ম্যানেজার বাবু বেশে ভালো। বহু সহযোগিতা করলেন, আমি আসলে খালাসি নয় জেনে। বললো বাঙালি জাতি অলস জাতি এটা যে ভুল, তার উদাহরণ হিসেবে আমার গল্প তিনি সবাইকে বলবেন। আমার বিদেশে চাকরি ছেড়ে, ব্যবসা করা ঝুঁকি নিয়েছি সেটা নিয়ে ও প্রশংসা করলেন। মোটামুটিভাবে ভাবে, উত্তর বঙ্গের বাঙালি রা বেশ সংকটে, সেটা বুঝতে বাকি রইলো না আমার। কিন্তু মদনের প্রসঙ্গ উঠতেই পরিবেশ বদলে গেলো পুরো গোদাম ঘরের।
মোটামুটিভাবে ভাবে বুঝতে পারলাম, এই আর্থিক বছরে, ওদের আমরা চার নম্বর ভেন্ডার। মদন ডাইভার করেমতিতে। দশটা ডাইভার লরি সমেত হারিয়ে গেছে এই পাহাড়ি পথে। দিন থাকতে ই তাই বেড়িয়ে যেতে হবে আমাদের। রাজেশ এর জ্বর কাল থেকেই, আমি আরেকটু বিশ্রাম দিতে চাইছিলাম। তাও বেড়াতে হলো। কিন্তু যেখানে বাঘের ভয় সন্ধা হয়। মনে মনে রাম নাম জপতে শুরু করলাম। কিন্তু, এ বাংলায় রাম নাম বোধহয় কাজ হয় না। কারণ মুখ্যমন্ত্রী পছন্দ করেনা রাম নাম। হঠাৎ দেখি মদন ডাইভার আমাদের মাঝে খানে বসে। রাজেশ দেখ অজ্ঞান হয়ে পড়লো।
মদন ডাইভার একটা চওড়া হাসি হাসে বললো " এক কালে মানুষ ছিলাম, উপাকার করলে, তাদের ক্ষতি করি না।সৎ ভাবে বাঁচতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ডাইভার হলেই মদ খেতে হবে, অন্য এর দোষে এই খাদে পড়ে গেলাম। চিন্তা করবেন না বাবু তোমাকে ঠিক জায়গায় পৌঁছে দিবো। "
ঘুম ভাঙ্গলো যখন, তখন ভোর আমরা শিলিগুড়ি শহরের থেকে বাইরে একটা ধাবায়। একটু মুখে জল টল দিয়ে, চা নিয়ে হাজির হলাম, রাজেশ এর কাছে। ওর জ্বর একটু কমছে। কিন্তু কোলকাতায় ফিরে ও বোধহয় আমার চাকুরী টা করবে না। খালাসি থেকে, ডাইভারের প্রমোসান হলো। ধন্যবাদ মদন ডাইভার কে।
