ওয়ান ইডিয়ট
ওয়ান ইডিয়ট
(এক)
দেবাশিস কর্মকার, ওরফে দেবু, এ বছর সিক্সে উঠল।এই বয়সে অনেকটা হাইজাম্প দিতে পারে।আগের বছর জেলা স্তরে একটু ভুলের জন্য প্রথম পুরস্কারটা হাতছাড়া হয়ে যায়।
তাতে ওর কোনরকম দুঃখ নেই। লাফ দিয়ে যে এতকিছু পাওয়া যায়, তার ধারণা ছিল না।
সকলের চোখ-মুখের দিকে তাকিয়ে তার মনে মনে খুব হাসি পায়।তার লাফ দেখে সকলেই কেমন হাঁ করে থাকেন!
ওদের গাঁয়ের কেউ অবাক হন না। ও তো ছোটবেলা থেকে এমনই।ছোটবেলা বললে বরং ভুল হবে, মায়ের পেটের থেকেই ওরকম ছিল। রাত বিরেতে তার মায়ের পেটে লাথ মেরে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিত।
ওর মা দু-এক সময় রাগে আলতো করে চাপড়ে বলে উঠতেন,একবার বাইরে বেরো।তারপর দ্যাখ কী করি? কানদুটো মুলে যদি লাল না করি, আমি মোহিনী নই।
সেই ছেলেকে ডাক্তার টিকা দিতে গিয়ে খালি কলসির মত উল্টে পড়েছিলেন।উনি ধারণায় করতে পারেননি ,তিনদিনের বাচ্চার পায়ে এতখানি জোর! ডানপায়ে সূচটা ফুটতেই,রাগে ও বাঁ পায়ে ডাক্তারের নাক বরাবর এক লাথি মারে।
ডাক্তার আলগোছা হয়ে বসেছিলেন।হোল ডাক্তারি লাইফে এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হননি।তাই বুঝতে পারেননি। টাল সামলাতে না পেরে একেবারে মোজাইক করা মেঝেয় লম্বালম্বি দুম করে পড়ে গেলেন।
আশেপাশের সকলে রে রে করে দৌড়ে এলেন।ভেবেছিলেন,নিশ্চয় কোন মাতালের কাজ হবে।
এসে সবাই দেখে,আসামী একজন দুদিনের লাল মত পুচকে বিচ্চু।
আবার ফোকলা মুখটা বুনো হাতির মত হাঁ করে হাসছে!
এতবড় একজন পাস করা ডাক্তারকে বিনা কারণে পেঁদিয়েও কোন আফসোস নেই?
সেদিনই সবাই ডাক্তারখানায় একযোগে বলেছিলেন, এ ছেলে একদম বেহায়া!
আজ অব্দি সবার মুখে দেবু সেটাই শুনে আসছে।
(দুই)
সন্নবুড়ির পেয়ারা গাছটা এই দেবু নামক বাঁদরটাই ফাঁকা করে দিল।
বুড়ি সারাদিন গাছের নিচে চাটাই পেতে লাঠি হাতে দোক্তা চিবোতে থাকেন।
চোখে একটু কম দেখতে পান বলে একটা চশ্মা ব্যবহার করেন।না হলে সামনের মানুষটিকে চিনতে পারেন না।
আর দেবু এদিকে পুরনো আমলের সাত ফুট খাঁড়াই পাথরের ইয়া মোটা পাঁচিল টপকে সন্তর্পনে উঠে পড়ে গাছে।
বুড়ি আন্দাজেই একবার করে মাটিতে লাঠি ঠুকে বলে উঠেন,
কেরে...এ্যাই দেখেছিস বাছা লাঠিটা!...বাপের নাম ভুলিয়ে দেব।
সেবার তো সরু ডাল নিয়েই পড়ল একেবারে বুড়ির ঘাড়ে।
ভাগ্যিস চোখ থেকে চশ্মাটা নিচে পড়ে ভেঙে গেছিল তাই খুব জোর বেঁচে গেছিল।
দেবু যেমন তিন মিনিট ব্যথায় উঠতে পারেনি।তেমনি সন্নবুড়িও তার মৃত মা,বাবাকে সমান তালে ডেকেও কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছিলেন না।
পরে হাতড়ে যখন চশ্মাটা পরে কোমরে ব্যথা অবস্থায় দেবুর দিকে চাইলেন।
তিনি চিনতেই পারলেন না। কাঁচদুটো পরিস্কার করতে গিয়ে দেখলেন,ফাঁকা।সন্ন বুড়ির সেকি কান্না!
বেগতিক দেখে সেই প্রথম,ব্যথা পা নিয়ে দেবু এক দৌড়ে বুড়ির সাত ফুট পাঁচিল টপকে গাঁদা লতার ঝোপে ঢুকে দম নিয়ে ছিল।
ওর পাঁচ জোয়ান ছেলে সেবার লাঠি বল্লভ পর্যন্ত বের করে ফেলেছিল।
বাঁদরটাকে খুঁজে মারার জন্য।
সবাই দেবুকেই সন্দেহ করেছিল।কারণ ওর থেকে লম্বা লাফ তো স্বয়ং হনুমানই দিতে পারে।
কেউ ওর টিকিও ছুঁতে পারেনি।ও তো ব্যথার জায়গায় গাঁদাল পাতা দাঁতে চিবিয়ে লতা দিয়ে বেঁধে আর নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে পড়েছিল।ঘুম যখন ভেঙেছিল ,তখন পায়ে এতটুকু ব্যথা নেই। বাইরে বেরিয়ে দেখল,চারিদিক ধবধবে জ্যোৎস্না ফুটেছে।
বাড়ির আম গাছে হয়ে টালির চাল বেয়ে সোজা তার মায়ের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়েছিল।
(তিন)
স্কুলের লাস্ট বেঞ্চের আগেরটায় ও বসে।একেবারে জানলার ঠিক পাশেই।ওটা ওর অলিখিত সংরক্ষিত জায়গা।ওর জন্য ফাঁকা রাখতে হয়।
যেদিন ক্লাসে কম ছেলে আসে।মুশকিলটা দেবুর সেদিন হয়।
তার জায়গা অব্দি ছেলে গড়ায় না। দু তিনটে বেঞ্চি ফাঁকা রেখে বসলেও স্যার টেনে সামনে বসাবেন।জায়গা পাল্টালে স্কুলে তার মন বসে না। পড়ার ফাঁকে জানলা পথে মোড়ের দোকানে মানুষগুলোর আদব-কায়দা আর নেড়ি কুকুরগুলোর লাফ-ঝাঁপ না দেখতে পেলে,এতক্ষণ ধরে এক জায়গায় বসা যায় না।
মনটা সব সময় উসখুশ করে।
তাই প্রথম পিরিয়ডে হাজিরা দিয়ে জানলার একটা রড খুলে বেরিয়ে পড়ে।যাওয়ার আগে রডটা আবার ঠিকভাবে বসিয়ে দেয়।ব্যাগটা পাশের বাড়ির একটা ছেলেকে দিয়ে যায়।ও ঠিক ছুটির সময় বাড়ি ঢোকার আগে নিয়ে নেবে।
সেবার বেরিয়েই দেখল একটা তার বয়সি ছেলে এ দোকান,সে দোকান হাত পেতে ফিরছে।সবাই তাকে মুখ ঝামটা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে।
একজন তো কেটলি ধোয়া জলটাই ওর গায়ের দিকে ছুঁড়ে দিল।এক মাথা উস্কোখুস্কো চুল।ময়লা ছেঁড়া,ফাটা জামা আর একটা হাফ প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
দেবু বুঝতে পারল ,ছেলেটার খিদে পেয়েছে।কেউ বিনা পয়সায় ওকে খাবার দিতে চাইছেন না।
দেবুর নরম বুকটা অজানা একটা ব্যথায় চিনচিন করে উঠল।
আম গাছের মোটা গুঁড়ি থেকে ইশারায় ছেলেটাকে তার কাছে ডেকে নিল।
---খিদে পেয়েছে?
উত্তরে ছেলেটা ঘাড়টা উপর,নিচ দুবার নাড়ল।
---বুঝেছি।এক কাজ কর ,তাড়াতাড়ি করে তোর প্যান্টটা খোল।
ছেলেটা বিম্মিত হল।
---আরে বাবা ,চট করে কর।সময় নেই। আমাকে যেতে হবে ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে।
ছেলেটা তাই করল।
দেবু এরপর নিজের জামা,প্যান্টটা খুলে ওর প্যান্টটা তাড়াতাড়ি করে পরে নিল।গায়ে রইল স্যান্ডো গেঞ্জিটা।
---আমার ইউনিফর্মটা পরে এই দাওয়াতে বসে থাক।কোথাও যাবি না। আর ভিক্ষাও চাইবি না। একটু বাদে টিফিন টাইমে ইস্কুলের গেট খুলবে।তখন নির্ভয়ে ভেতরে ঢুকে বারান্দায় সবার সাথে খেতে বসে যাবি...আর শোন পেট পুরে খাবি।একদম লজ্জা করবি না। ওটা সরকারের খাবার।জামা,প্যান্টটা নিজের কাছে রেখে দিবি।পারলে রোজ একবার করে ধুয়ে নিবি।তোর প্যান্টটা আমি নিয়ে গেলাম।অসুবিধা নেই তো?
ছেলেটার দু চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়ছে।
হঠাৎ দেবুর একটা আঙুল ধরে ফেলল।
---একি রে! তুই কাঁদছিস কেন?চোখ মোছ।একদম কাঁদবি না।আমার আবার দেরি হয়ে যাচ্ছে।ওরা সবাই অপেক্ষা করবে।চললাম।একদম ভয় পাবি না।
ওর চোখদুটো মুছিয়ে দেবু একশোর স্পীড ধরে দৌড়ে চলে গেল।
(চার)
প্রোগ্রেস রিপোর্ট হাতে নিয়ে দেবুর বাবা হারাধনবাবু রাগে একেবারে খ্যাপা ষাঁড়ের মত ফুঁসতে লাগলেন।
আসুক দেবু। দেখাচ্ছি মজা! ভেলকি পেয়েছে! সারা বছরটা ডিগডিগি মেরে অঙ্কে কুড়ি,ইংরেজিতে তেইশ নাম্বার পেয়েছে।পাস-ফেল থাকলে তো আজ আমায় পাড়ায় মুখ দেখাতে হত না।
p>
এমন হারামজাদা ছেলে আমার না থাকাই ভাল।ওদিকে গাঁয়ের লোকে জ্বালিয়ে মারছে।এদিকে ইস্কুলের মাষ্টারমশাইদের তলব।দেবু পড়াশুনো একদম করছে না। বড় হয়ে একটা আস্ত ষাঁড় ছাড়া আর কিচ্ছু হবে না। এই বলে দিলাম।ওই গায়ে,গতরেই বাড়।আসল জায়গায় গোল্লা।ওই তো আমাদের বাড়ির পাশেই নিতাই খুড়োর নাতিটা।শুনেছি সবকটা বিষয়ে আশির উপরে নাম্বার পেয়েছে। ওই হল সোনার টুকরো ছেলে।
দেবুটার জন্য আমার মাথা কাটা যাবে একদিন।
উনার স্ত্রী মোহিনীদেবী বলে উঠলেন,ওগো তুমি চুপ করো।আর কত অলুক্ষণে কথা বলবে তুমি...হ্যাঁ?
ও তোমার রক্ত! তোমার সন্তান!
জীবনে লেখাপড়াই কি সব? সব ছেলে কী আর বুদ্ধিমান হয়? তাহলে! তারা বাঁচবে না? এ কেমন কথা?সোনা আমার জেলা থেকে এতবড় মেডেল নিয়ে ফিরল।তখনো কী তোমার মাথাটা কাটা যাচ্ছিল? বেশ তো সেদিন বাড়িতে লুকিয়ে বাউরি পাড়া থেকে এক কেজি মাংস নিয়ে ছেলেটাকে পেট পুরে খাওয়ালে? আজ সেসব দিন ভুলে গেছ, না?
----ওভাবে লাফ,ঝাঁপ করলে লোকে চ্যাম্পিয়ান বলে কেউ ডাকবে না। বাঁদর বলেই ডাকবে। আর শান্ত,বুদ্ধিমান ছেলেদের লোকে ...আয় সোনা...বলেই ডাকে।
দেবু এসে পড়েছে।হাতে,পায়ে কাদা লেগে আছে। মুখে এতটুকু অপরাধবোধের কালিটুকু লেগে নেই। চোখ জোড়া যেন দুটো জলজ্যান্ত মনি।
মুখে সব সময় সকালের মালতী ফুলের মত হাসিটি!
এ ছেলেকে দুঃখ দিতে স্বয়ং ঈশ্বরও হয়ত দুবার ভাববেন।
কিন্তু তার অভিমানী বাবা ভাবলেন না।
সটান দেবুর কাছে গেলেন।তারপর তার নরম তুলতুলে একটা কানকে শক্ত করে ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেলেন কাঠ ,ময়লার ঘরটায়।
বদমায়েশ ছেলে কোথাকার! আজ আবার মুখুজ্জ্যেদের ডোবায় মাছ ধরতে গেছিলি?
সেদিন একবার বাড়ি এসে তলব করে গেলেন মনে নেই? ভুলে গেছিস..না?
দিন দিন তোর বাঁদরামি বাড়ছে বৈ কমেনি।
এই তোর রেজাল্ট! একটা বিষয়েও পঞ্চাশের উপরে নাম্বার পাসনি।লজ্জা করে না বেহায়া কোথাকার? তোর মত গাঁয়ের কোন ছেলেটা এভাবে নেচে বেড়ায় বল তো? কতবার মানা করেছি।শুনিস নি।
আজ তোর খাওয়া,দাওয়া সব বন্ধ।থাক কাঠ-কয়লার মত পড়ে।তোর সব বাঁদরামি আজ বের করে তবে দম নেব।
তিনি দেবুকে ভেতরে রেখে বাইরে থেকে কুলুপ এঁটে দিলেন।
মোহিনীদেবী কেঁদে উঠে বললেন,কী করছো কী তুমি অ্যা!...অপরাধ করলে তাকে এভাবে শাস্তি দিতে হবে?
ছেলেটা সেই সাত সকালে খালি পেটে বেরিয়েছে।এখনো মুখে চাট্টি খাবার পড়েনি!!
--ওগো তোমার দুটি পায়ে পড়ি।তালাটা তুমি খুলে দাও।ছেলেটাকে দুটো খাইয়ে দিই।তারপর তুমি ওকে যা ইচ্ছে করো।
হারাধনবাবুর মাথায় আজ যেন রাগের ভূত চেপে বসেছে!
স্ত্রীর হাতদুটো ছাড়িয়ে হনহন করে বাইরে বেরিয়ে গেলেন।
দেবুর দরজার আগায় বসে মোহিনীদেবী কাঁদতে লাগলেন।
ভেতর থেকে দেবু ডাক দিল,মা..মা..মাগো।
মোহিনীদেবী শুনতে পেয়ে ধড়মড় করে উঠে কপাটের ফাঁকে কেঁদে, কেঁদে বলে উঠলেন, কী হয়েছে সোনা!...বাবা...মানিক আমার!...খিদে পেয়েছে তাই না বাবা?...ও তেষ্টা পেয়েছে বুঝি?..জল খাবি বাবা?
ভেতর থেকে দেবু শান্ত গলায় বলে উঠল,তুমি একদম কষ্ট পেও না মা।আমি খাবার খেয়ে এসেছি।
সকালের দুধটা বরং এনে দাও।
মোহিনীদেবী চোখদুটো মুছে বলে উঠলেন,বলিস কিরে!কে দিল খেতে?
---আরে বাবা!তোমার দেবুর খাবার ভাবনা!পাখিদের কী কেউ জিজ্ঞেস করে?তুমি কী খেয়েছ?আমি তো লাফ দিতেও জানি মা।
তুমি বরং বাবা আসার আগে দুধটা দিয়ে যাও।
---কী করে খাবি বাবা? তুই তো ভেতরে!
----ওই পেপসির সরু পাইপগুলো আমার জ্যামিতি বক্সে আছে।একটা নিয়ে আসবে।এই ফাঁকে গলে যাবে।তারজন্য তুমি একদম ভেবো না মা।
মোহিনীদেবীর মুখে এইবার সকালের রোদ খেলে উঠল।এক বিন্দু দুঃখ রইল না। বরং তার ছেলের এমন বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে খুব খুশি হয়ে উঠলেন।
(পাঁচ)
একবার কোথা থেকে দুনিয়ার মেঘ এসে পুরো এলাকা জুড়ে মুষলধারায় বৃষ্টি শুরু করল।
চারদিক জলে থৈ থৈ করছে।পুকুর,নালা,কুয়ো,নদী সব উপচে পড়ছে।দিন তিনেক এভাবে যাওয়ার পর বৃষ্টি থামলেও নদী নালা একই রকম বয়ে চলল।
এদিকে তাদের গাঁয়ের মুখুজ্জ্যেমশাই-এর প্রচন্ড শরীর খারাপ।এক্ষুণি গাড়ি ডেকে জেলা হাসপাতালে চালান করতে হবে।নইলে মৃত্যু অবধারিত।
গাঁয়ের এখন তিনিই কর্তা।সমস্ত রকম বাদ বিবাদের মীমাংসা এখনো তিনি দাঁড়িয়ে থেকে করেন।তাই সকলেই সমীহ এবং শ্রদ্ধাও করেন।
মানুষ হিসেবেও ভালো।তিনবার পরপর ভোটে জিতেছিলেন।
তার দয়াতেই জোড়ের ভাসা পুলটা নির্মাণ হয়েছে।না হলে আগে বর্ষাকালে বেশি বৃষ্টি হলে যে যেখানে সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়তেন ,জল কমার অপেক্ষায়।আসলে গাঁয়ের একেবারে মাথায় এই হিংস্র জোড়খানা পড়ে।একটু জোরে বৃষ্টি পড়েছে কী কলকল করে ফুলে ওঠে।
এখন ভাসা পুলটা থাকাতে অল্প জলে অসুবিধা হয় না।তবে মুষলধারায় হলে রক্ষে নেই।
এখন যেমন হয়েছে।মুখুজ্জ্যেমশাই অজ্ঞান হয়ে পড়লেন।সারা গাঁয়ে হাহাকার পড়ে গেল! এখন উপায়? দাঁড়িয়ে থেকে মৃত্যু দেখা ছাড়া কোন পথ নেই।
....ঠিক সেই সময় দেবু ভিড় থেকে বেরিয়ে এসে বলে উঠল,আপনারা কোন চিন্তা করবেন না ,বামুনদাদুকে জোড় ডিঙানোর দায়িত্ব আমার।আপনারা শুধু সাথে আসুন ,উনাকে একটা খাটুলিতে শুইয়ে।
দেবু প্রথমে জোড়া তালগাছে উঠে দুটো সমান্তরাল শক্ত নাইলনের রশি বাঁধল।রশির শেষ প্রান্ত দুটো জোড়োর ওই পাড়ের মানুষ জনদের শক্ত করে ধরে থাকতে বললেন।তারপর বামুনদাদুর খাটুলিখানা সেই রশিতে সুন্দর করে ঝুলিয়ে দিল।একদম লিফ্টের আকার ধারণ করল।এদিকে তালগাছের দিকটা একটু উঁচু করা হল।আর ওই দিকটা নিচু।খাটুলিটা যাতে আস্তে আস্তে নামে,সেইজন্য এদিক থেকে খাটুলির মাথায় একটা রশিও বাঁধা আছে।
ওপ্রান্তে খাটুলি পৌঁছে যাওয়ার সাথে,সাথেই বামুনদাদুকে গাড়িতে চাপানো হল।গাড়ি চলল হাসপাতালের দিকে।আর সকলের কাঁধে চেপে দেবু চলল গাঁয়ের দিকে ।
আজ তার বাবা হারাধনবাবু সবথেকে পিছনে নিজের চোখদুটো মুছতে মুছতে আসছেন।
ছেলেটাকে তিনি আজ পর্যন্ত কতই না শাস্তি দিয়েছেন!
...সেই সব মনে করে বুকটা কান্নায় ফুলে ফুলে উঠছে।
দেবুর ইস্কুলটা আসলে চার দেওয়ালের ওই বন্দি ঘরখানার ভেতরে নয়।ওর ইস্কুল হল এই মুক্ত আকাশ।আর শিক্ষক হল প্রকৃতি।
তাই সে পরীক্ষার খাতায় নাম্বার না তুলতে পারলেও.... একজন মানুষকে বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।
তবে পৃথিবীতে এই দেবুদের সংখ্যা বড় নগন্য।