Krishna Banerjee

Abstract Romance Others

4  

Krishna Banerjee

Abstract Romance Others

ও কেমন আছে ?

ও কেমন আছে ?

5 mins
46


ও কেমন আছে ?

                       প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য

                               পর্ব - 8

                     কলমে - কৃষ্ণ ব্যানার্জী

                        ঝুমড়ির কথাতে কিছুটা আশ্বাস পেয়েছিলাম সেই মুহূর্তের জন্য কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বুঝলাম ঝুমড়ি হয়তো আমাকে প্রাণ ভিক্ষা দিয়েছে , আর সেই বিষয়টা আরো পরিষ্কার হলো যেদিন ওদের বস্তিতে গিয়েছিলাম একটা দরকারে । বস্তির একটা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি এমন সময় সেই রাতে ঝুমড়ির বাবার সাথে যারা এসেছিলো তাদের একজনের সাথে দেখা হয়ে গেলো দু - একটা কথার পর ঝুমড়ির প্রসঙ্গ এসে উপথিত হয়েই গেলো , তার কথাতে বুঝলাম ঝুমড়ি একাই কম্প্রোমাইজ করছে আমাকে । ওনার কথা মতো ঝুমড়িদের সম্প্রদায়ে মেয়েদের বিয়ে একবারোই হই আর তারা একবার যাকে স্বামী হিসাবে মানে দেহের শেষ নিঃস্বাস পর্যন্ত তাদের তাকে ছাড়া কাউকে পাশে ঘেঁষতেও দেয় না । ওদের কাছে স্বামী মানে ভগবান । কথাটা আমার মাথাতে গিয়ে লাগলো । ঝুমড়ি সেদিন সকালে যে কথাগুলো আমাকে বলেছিলো সেগুলো শুধু মাত্র আমাকে স্বান্তনা দেবার জন্য , কারণ সেই রাতের পড় থেকে তার মধ্যে একটা বিশেষ পরিবর্তন আমি লক্ষ করছিলাম তার মধ্যে , আমি ভেবেছিলাম সে হয়তো সেদিন রাতের ঘটনাতে একটু লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলো কিন্তু এখন সবটাই আমার কাছে পরিষ্কার , ঝুমড়ি প্রতিটা মুহূর্তে আমার স্ত্রী হবার কর্তব্য পালন কোরে চলেছে , আমার প্রতী কিছুটা বেশিই প্রাধান্য দিচ্ছে সে । আমার খাবার সময় আমার কাপড় জামা পরিষ্কার রাখা সবদিকেই একটু বেশিই নজর রাখছে ঝুমড়ি । আমি বোকার মতো ভেবেছিলাম সেদিনের ঘটনাতে অনুতপ্ত হয়ে হয়তো আমাকে একটু অধিক প্রাধান্য দিচ্ছে সে কিন্তু আজ বুঝলাম ঝুমড়ি প্রচন্ড বুদ্ধিমান মেয়ে । সেখান থেকে ফিরে ঝুমড়িকে ডেকে পাঠালাম আমার কেবিনে । কিছুক্ষনের মধ্যে সে সেখানে উপস্থিত হলো , আমি জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম , আমার পিছন থেকে তার গলাটা ভেসে আসল আমার কানে , “ আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন ? “ আমি পিছন ঘুড়ে তাকে একটু ভালো কোরে লক্ষ করলাম ঝুমড়ির মধ্যে একটা পরিবর্তন ঝুমড়ির পরণে একটা লাল শাড়ি। সেদিনের পরথেকে ঝুমড়ি বেশিরভাগ সময়টাই শাড়ি পড়ে থাকে , থাকে বেশ পরিপাটি হয়ে । কাল পর্যন্ত বিষয়টা গায়ে মাখিনি তবে আজ মেখেছি । ওকে জিজ্ঞাসা করলাম তুমিকি আমাকে দয়া করছো ঝুমড়ি ? সে বলল কেন হটাৎ এই কথা ? আমি বললাম আমিকি একেবারেই ছেলে মানুষ ? ঝুমড়ি একটু হেঁসে বলল তা কিছুটাতো বটে ? আমি বললাম মানে ? ছেলে মানুষ না হলে এভাবে ডেকে এই ধরনের প্রশ্ন করতেন না । আমি এবার নিজের মধ্যে একটু গম্ভীর্য আনার চেষ্টা করলাম তারপড় তাকে বুঝিয়ে বললাম প্রজেক্ট শেষ হলে আমি চলে যাবো তখন তুমি বস্তির লোকদের কি বলবে ? ঝুমড়ি একটু হেঁসে বলল কাল কে দেখেছে বাবু ? আর আপনার যেতে এখনো বছর তিনেক সময় লাগবে , তখন নাহয় এটা নিয়ে ভেবে দেখবো , আপনি চা খাবেন ? আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে এবার ঝুমড়ির হাতটা ধরে কাছে টেনে বললাম সেদিও কি এভাবে সিঁদুর - শাখা পড়ে ঘুড়ে বেড়াবে । ঝুমড়ি বলল আপনাকে আমি সেদিনের ঘটনা থেকে মুক্তি দিয়েছি বটে কিন্তু আমিজে আ জীবনে এগুলো থেকে মুক্ত হতে পারবোনা , কারণ আমাদের সমাজে মেয়েদের একবারই বিয়ে হয় বার - বার নয় বাবু । আমি উপযাচক হয়ে বললাম আমি যদি তোমাকে স্ত্রীর সন্মান দেই তাহলে । ঝুমড়ি বলল কেনো নিজেকে আমার সাথে জড়াতে চাইছেন একটা অশিক্ষিত নিচু জাতের মেয়েকে সাথে নিয়ে আপনাদের মতো শিক্ষিত সমাজে দাঁড়াবেন কি কিকরে ? আপনার সমাজ , আপনার পরিবার কোনদিনকি মেনেনিতে পারবে আমাদের সম্পর্ক টা ? আমার জন্য আপনি প্রতিটা মুহূর্ত অপমানীত হন সেটা আমি চাইনা । 

                  জানিনা সেদিন ঠিক আমার কি হয়েছিল —---- সমাজ - পরিবার সবকিছুকে উপেক্ষা কোরে বললাম আমিজে তোমাকে বিয়ে করেছি সেটাতো মিথ্যানয় । ঝুমড়ি বলল ওটাকে ভুল বলে ভুলে যাওয়াটা হয়তো আপনার জন্য ভালো হবে , আমি ওকে আবার কিছুটা কাছে টেনে নিলাম , আবার ওর নিঃস্বাস তা পরিষ্কার আমার বুকে এসে পড়ছিলো , আমি বললাম এভাবে তোমাকে আমি ছাড়তে পারবোনা , তুমি বুঝতে পারছ যদি বিষয় টা তোমার বাবা আমি চলে যাবার পড় বুঝতে পারে তাহলে তোমাকে জোর কোরে বেচে দেবে । ঝুমড়ি বলে আপনার বাড়িতে কি বলবেন ? আমি বললাম ওটা আমার বিষয় —--- প্রজেক্ট শেষ হবার আগেই আমি বাড়িতে গিয়ে ওদের সবটা জানিয়ে দেবো। ঝুমড়ি বলল এই ধরনের ঘটনাকে ওনারা যদি মানতে না চায় ? আমি সেদিন জোর দিয়েই বলেছিলাম সেটা আমি বুঝে নেবো , আজ থেকে তুমি আমার সাথেই থাকবে কেমন ? ঝুমড়ি বলল আমি যখন আপনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি তখন আপনার কথা মানতে আমার কোনো অসুবিধা নেই , তবে আমি আপনাকে অনুরোধ করছি আর একটু ভেবে দেখুন , আমার সবটুকুই আপনার কিন্তু আপনিকি আপনার সবটুকু আমাকে দিতে পারবেন ? আমার মুখ থেকে সেদিন কেন জানিনা বেরিয়ে এসেছিলো পারবো , কানো পারবোনা ? তুমি যদি পারো আমার পারতে অসুবিধা কোথায় ? প্রজেক্ট শেষ কোরে বাড়িতে ফিরেই সবটা জানাবো তারপরেই তোমাকে নিয়ে যাবো আমাদের বাড়িতে । ঝুমড়ি সেদিন বেশ জোরদিয়েই বলেছিলো পারবেন না , যেটাকে আপনার সহজ বলে মনে হচ্ছে বাস্তবে সেটা ততটা সহজ নয় । আমি ওর হাত ধরে টানতে টানতে কম্পাউন্ডার সকলের সামনে এনে উপস্থিত হলাম , তারপড় সকলকে জানালাম আজথেকে আমি ঝুমড়িকে আমার স্ত্রীর সম্পূর্ন সন্মান জানাতে চাই আর তাই কালথেকে আমি ঝুমড়িকে নিয়ে কোম্পানির গেষ্টহাউসে সিফট করবো , তাই আগামী কালথেকে ঝুমড়ি আর এখানে কাজ করতে পারবেনা তাই কাল সকালেই শহর থেকে একজন রাঁধুনিকে নিয়ে আসবো সেই আমাদের ক্যান্টিনের রান্নাবান্না করবে বোঝাগেলো । ওদের মধ্যে একজন বলল ঝুমড়ি থুক্কি বৌদি আপনার হাতের রান্নাটা কালথেকে মিস করবো তাই আপনার কাছে একটা অনুরোধ , কালকে দুপুরের রান্নাটা আপনার হাতেই খাবতো ? ঝুমড়ি মিষ্টি ভাবে বলে এভাবে বলছেন কানো ? ছুটির দিন আপনারা সকলে আমাদের কয়াটারে চলে আসবেন আমি রান্না কোরে আপনাদের খাইয়ে দেবো । সেদিন আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম আর ভাবছিলাম ও কতটা সহজ আর সরল ,আর আমি এটগুলো দিন ধরে ওর সাথে প্রতারণা কোরে গিয়েছি । হয়তো সেদিন এটা না ভাবলেই ভালো হোতো, যেমনটা চলছিলো তেমনটা চললে ,আজ নিজেকে অপরাধীর কাঠগড়াতে দাঁড়করাতে হত না । যেমন চলছিল তেমনটাই চলতো , একদিন প্রজেক্ট শেষ হয়ে যেতো দুজন দুদিকে চলেযেতাম ……………কিন্তু সেটা হোলনা আমার এই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য…………………. আজ অনেকগুলো বছর পর হঠাৎ আবার আমাকে মনে করিয়ে দিলো আমি একজন অপরাধী …….।

                                    চলবে …………………


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract