Krishna Banerjee

Abstract Romance Classics

3  

Krishna Banerjee

Abstract Romance Classics

ও কেমন আছে ?

ও কেমন আছে ?

3 mins
17



                সাধারণত I.C.U রুমে ডক্টর আর নার্স ছাড়া কাউকেই অ্যালাউ করা হয় না । বাবা বারবার আমার নাম ধরে ডাকার কারনে ডক্টর আমাকে ডেকে পাঠাতে বলেছিলেন । আমি ভিতরে যাবার আগেই তিনি আমাকে মোটামুটি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এটাই হয়তো বাবার সাথে আমার শেষ দেখা । কিন্তু আরো একজন যে সেখানে উপস্থিত ছিলো সে বিষয়ে তিনি আমাকে কিছুই বলেননি। আমি বাবার বেডের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই আমার চোখ পড়ল বাবার মাথার দিকে । দু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে আর বাবার মাথাতে হাত বুলিয়ে চলেছে জবা । জবাকে অবস্ব আপনারা চিনবেন না, জবা হলো আমার বাবার ছেলেবেলার বন্ধু নির্মল কাকুর মেয়ে । আমার থেকে বছর পাঁচেকের ছোট। ছোটবেলায় আমিও নির্মল কাকুর কোলে চড়ে মাঝে মধ্যেই ঘুরতে যেতাম । নির্মল কাকার স্ত্রীও খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন , যদিও পাঁচ বছর বয়সে মানুষ চেনাটা খুবই কঠিন কাজ তবে ওইটুকু সময় পর্যন্ত ওনাকে আমি পেয়েছিলাম । একদিন শুনলাম কাকিমা হসপিটালে ভর্তি । দিন তিনেক পর নির্মল কাকু একটা ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চাকে মায়ের কোলে দিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে বলেছিলেন তোর বৌদি আর নেই । এই নেই কথাটার মনে বুঝতে পারলাম যখন একটা কাঁচের গাড়িতে করে সাদা কাপড়ে ঢেকে নিয়ে আসা হলো কাকিমার দেহ টাকে । মানুষ মারাগেলে যে অমন নীরব হয়ে পড়ে , অমন নিস্তেজ হয়ে যায় সেটা জানলাম কাকিমাকে ওই অবস্থাতে দেখে । মার কাছে জানতে চাইলে মা বলেছিলেন কাকিমা আমাদের ছেড়ে দেবতাদের দেশে চলে গিয়েছেন। দেবতাদের দেশ বোলে কিছু আছেকিনা তা আমার আজও জানা নেই , সেদিন মাকে জিজ্ঞাসা করতে মা সেটাই বলেছিলেন । আমরা একই পড়াতে থুড়ি একই বাড়িওয়ালার পাশাপাশি দুটি ঘরে আমরা ভাড়া ছিলাম , যাইহোক জবা এলো কাকিমা চলেগেলেন। কাকিমার চলেজাওয়ার পিছনে জবাকে অনেকেই দোষারোপ করেছেন কেউ কেউ আবার বলেছে সবটাই কপাল যা হয় আরকি কিন্তু বাসাবাড়িতে জবা যেদিন এলো সেদিন থেকেই ওর সাথে আমাদের পরিবারের একটা মিষ্টি সম্পর্ক গড়েওঠে । 

                         তারপর থেকে ধীরে ধীরে সবটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠতে থাকে । পাশাপাশি থাকলেও জবা সারাটাদিন আমাদের বাড়িতেই থাকতো। একসাথে পড়াশুনা , খেলাধুলা, মারামারি সবটাইচলত আমাদের মধ্যে , তবে কি জানেন জবা পড়াশুনায় আমার থেকেও অনেক ভালো ছিলো কিন্তু ওর তখন বারো বছর বয়স , যখন আমার বাবা আর জবার বাবা মিলে যে ছোট্ট ব্যাবসাটা শুরু করেছিলেন সেটাও বেশ একটা ভালো পজিশনে আসে পৌঁছেছে , বাবা আর কাকাবাবু মিলে কাটা তিনেক জমি কিনলেন । বাড়ি নির্মানের কাজ সবে শুরু হয়েছে , আমি তখন দিল্লিতে ।হঠাৎ বাবার ফোন এলো জবার বাবা একটা দুর্ঘটনাতে মারা গিয়েছেন । খবরটা আমার কাছে এসে পৌঁছালেও সেই মুহূর্তে আমার পক্ষে আসা সম্ভব ছিলনা , কারণ পরেরদিন ছিলো আমার ফার্স্ট ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা । ফলে চার বছরের মধ্যে আমার বাংলাতে ফেরা হয়ে উঠলনা। 

                      জবা যদিও আমাদের বাড়িতে মেয়ের মত করেই ছিলো কিন্তু দিল্লি জবার পর ওর সাথে আমার আর দেখা হয় নি কারণ , আমি যখন বাংলাতে ফিরলাম তখন জবা পড়াশুনোর জন্যে চেন্নাই চলে গিয়েছিল । বাড়ি ফিরে একবার অভারফোন কথা হয়েছিল বটে কিন্তু দেখা হলো আরো চার বছর পরে কিন্তু এই দেখাজে আমার জীবনে এতবড় একটা ধর্ম সংকট এনেদীতেপারে সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি । ওকে বাবার মাথার সামনে ওকে দেখে কিছুটা খুশী হয়েছিল আমার , আমার আসতে কিছুটা সময় লাগলেও জবা থাকতে বাবা - মায়ের দেখাসুনাতে কোন ত্রুটি থাকবেনা , ওরদিকে তাকাতেই ছোট্ট করে বলে কাল থেকেই কাকাবাবু শুধু তোমাকে খুঁজছেন , হয়তো কিছু বলতে চান ? আমি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়ে মুখটা বাবার কানের কাছে নিয়ে গিয়ে বললাম বাবা ……….বাবা ……. , আবার বুঝতে পারলাম বাবা শুনতে পেয়েছেন , হয়তো বেশ কিছুটা চেষ্টার পর তিনি আমার দিকে চোখ মেলে তাকালেন …………..!।

                                   চলতে থাকবে …………


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract