নোংরা ভার্সেস পরিস্কার
নোংরা ভার্সেস পরিস্কার
মানুষ যখন নানা ধরনের তাদের স্বভাব ও জনে জনে ভিন্ন । কেউ ভীষণ সাহসী আবার কেউ ভীতুর ডিম । কোন মানুষ খুব খোলামেলা উদারমনস্ক । কোন মানুষ খুব কৃপণ । আমি আজ একজোড়া পাবলিকের সাথে আলাপ করাতে এসেছি যারা দুজনে একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর। একজন ভীষণ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন , এককথায় সূচিবাইগ্রস্থ আর একজন প্রচন্ড অপরিচ্ছন্ন যাকে লোকে আস্তাকুঁড়ের সঙ্গে তুলনা করতেই পছন্দ করে । তো পয়লা জনের কথা আগে বলি । তিনি হলেন আমার রাইবাঘিনী ননদ ধাত্রী । ধাত্রীর সব ভালো , বেশ মিশুকে আর কাজের মেয়ে । তবে ওর বাড়ি গিয়ে বিশ্বাস করুন একদমই টিকতে পারবেন না মশাই । কি বিশ্বাস হচ্ছে না তো ? চলুন তা হলে আমি খুলেই বলি ওর ধোপদুরস্ত স্বভাবের কথা । ধাত্রীর একেবারেই না পসন্দ কেউ ওর বাড়ি আসুক বা থাকুক । কারণ ও মনে করে যে ব্যক্তি ওর বাড়ি আসবে সে ওর বাড়ি থাকবে , ওর বিছানায় নিদ্রা দেবে আবার ওর হেঁসেলের থালায় খাবে । এতে ওর ভীষণ ভাবে মনে হয় যে ওর প্রাইভেসি নষ্ট তো হবেই উপরন্তু ওর জিনিসপত্র বাইরের লোক ব্যবহার করে যাক সেটাতেও আপত্তি ।
তবুও লোকে তো সেটা জানে না । তাই নিকটাত্মীয়রা দুমদাম চলেই আসে ধাত্রীর বাড়ি । তাদের এই দুম করে চলে আসা যে ধাত্রীর কত কাজ বাড়িয়ে দেয় সেটা ধাত্রী ছাড়া তার স্বামী ও সন্তান বুঝতে পারে । কাজের লোক সে রাখে না , এর বাড়ী ওর বাড়ী বাসী কাজ করে আমার বাড়িতে ঢুকবে কাজের মেয়ে ! শুনলেই শিউরে ওঠে ধাত্রী । তাই সংসারের জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ তাকেই করতে হয় । এর মধ্যে স্বজন বন্ধুদের এসে থাকা মানে তাদের জন্য রান্না , কাজ সব করতে হয় ধাত্রীকে । তারপর গেস্ট চলে যাবার পর ওদের ব্যবহৃত সব কাচাকুচি করা , ধোয়া মোছা এসব করতে গিয়ে জীবন কয়লা হয়ে যায় । একবার এক দূরসম্পর্কের মামা পিতার শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণ করতেএসেছিলেন ধাত্রীর বাড়ি । ওনাকে কাছা পরিহিত আর অশৌচ অবস্থায় দেখে ধাত্রী খুশি হয়নি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । উল্টে হয়রানি বাড়াতে ওই মামাবাবু কিছু না বুঝেই ধাত্রীর সোফায় বসে পড়েন এসেই । ধাত্রী ভেবেছিল একটা প্লাস্টিকের টুলে মামাকে বসাবে আর মামা চলে গেলেই ওটা ধুইয়ে স্নান সেরে নেবে । এবার তো হলো মহা মুশকিল । ধাত্রীর স্বামী খুব বুঝে গেছে ততক্ষণে যে সোফাটার আগামীদিনে কি ভবিষ্যত হতে চলেছে । মামা বাবুও অনেকটা পথ উজিয়ে এসেছিলেন নিমন্ত্রণ করতে ওনার আশা ছিল ভাগ্নি হয়ত চা জল খাওয়াবে মামাকে।
সেসবের ধার দিয়েও যখন ধাত্রী গেল না তখন তিনি নিজেই সেধে চা চেয়ে বসলেন । তারপর আর কি ? উনি চলে যাবার পর সোফাটা আর লাউপালার কাপ সেটটা আস্তাকুঁড়ে ঠাঁই তো পেয়েই ছিল সঙ্গে সারা বাড়ি ধোয়া মোছা শুদ্ধিকরণ করতে গিয়ে জলের ট্যাঙ্ক ও শেষ হয়ে গিয়েছিল । ধোপদুরস্ত ধাত্রীর এই পিটির পিটির স্বভাবের জন্য ওকে লুকিয়ে সবাই ঠকিদাসী বলে । ওই দলে অবশ্য আমার নামও আছে ।
এবার বলবো আস্তাকুঁড় নামক প্রাণীটির কথা । ওনার নাম মগনলাল চৌবে , থাকেন আমার পাড়ায় । এককথায় আমরা প্রতিবেশী । তো ওনার হয়ত খুব শীঘ্রই গিনেস বুক না হোক লিমকা বুকে নাম তো উঠবেই । কেন ভাবছেন তো ? সিম্পল ওনার নোংরা স্বভাবের জন্য । চৌবে জি মাসে একদিন স্নান করেন কি না সন্দেহ । নখ না কেটে কেটে পাথর হয়ে গেছে । চুল কোনদিন কাটেন না তা উকুনের পার্মানেন্ট বাসা আর এখন বাড়তে বাড়তে জটা হয়ে গেছে । আমি ভাবি রোজ দুবেলা বিজ্ঞাপনে দেখানো নিম , নুন , তুলসী ইত্যাদির দ্বারা নির্মিত মাজন দিয়ে ব্রাশ করেও দাঁতের ডাক্তারের কাছে অহরহ ছুটছি আর চৌবে জি জীবনে দাঁত না মেজে , গোড়াকুর নেশা করেও দিব্যি বত্রিশটা লাল কালো দাঁত দেখিয়ে হাসছেন । ওনার দুই চোখের দিকে তাকিয়ে আপনি কিছুতেই কথা বলতে পারবেন না মাইরি বলছি । কেন ? ওনার চোখের গভীরতা তে হারিয়ে যাবার ভয় ? না না তেমন কিছুই না । ওনার দুচোখের কোলে দিবারাত্রি পিচুরি কেটে কেটে গব্য ঘৃতের আকার ধারণ করেছে । আরে এত ঘেন্না পেয়ে ওয়াক ওয়াক করলে চলে ? বমি পাচ্ছে ? প্লিস ওরকম করবেন না । শুনুন একটু মন দিয়ে পুরো গল্পটা । হ্যাঁ আমরা যেন কোথায় ছিলাম ? চৌবে জি , হ্যাঁ ওনার কথাই তো বলছিলাম । চৌবে জির সামনে ভুল করেও কিন্তু বেশি সময় দাঁড়াবেন না । যদি দাঁড়ান তা হলে কিছুক্ষণ পর নিজের সারা গায়ে আপনি আবিষ্কার করবেন চৌবে জির নাক খুটে খুটে বের করা ওই মালপত্রের স্যাম্পল । সেদিনই তো আমার কাছে এসে বললেন ওনার নাকি কান কট কট করছে তাই ওষুধ দরকার । আমার ওষুধের দোকান তাই বললাম কানে একটা ড্রপ দিয়ে ভেজান দিয়ে , তারপর এয়ার বাড নামক ওই কাঠি দিয়ে কানের বাড়তি মোম বা নোংরা বের করতে হবে । উনি হেসে বললেন আমি কানে ড্রপটা দিলে ভালো হয় । আমি ইচ্ছা না থাকলেও উপাই নেই দেখে কানের ড্রপ দেবার জন্য এগিয়ে গেলাম । ওমা কানের দিকে তাকিয়ে দেখি কানের বাইরে ও ভিতরের নোংরা ও মোমের চাক দেখে তো মৌমাছি ও লজ্জা পাবে । তো অবাক অবস্থাতাই কানে ড্রপ দিলাম । একটু পড়ে চৌবে জি এয়ার বাড নিয়ে আমার দোকানের বাইরে কান খোঁচাতে লাগলেন । একে একে একশো দশটি কাঠি শেষ হয়ে গেল তার পর উনি বললেন একটা প্যাকেটে একটা কান কমপ্লিট আর একটা প্যাকেট হলেই দ্বিতীয়টিও পরিস্কার হয়ে যাবে । হতবাক হয়ে ওনার দিকে আরেকটা প্যাকেট এগিয়ে দিলাম ।
