নিষিদ্ধ স্পর্শ 🌵 পর্ব ৪
নিষিদ্ধ স্পর্শ 🌵 পর্ব ৪
অফিসের বাইরে যেসব বন্ধু বরুণ জোগাড় করে তারা ছিল চূড়ান্ত মদের নেশায় আসক্ত । এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কাজে যুক্ত । কথায় আছে না যে যেরকম সে ঠিক সেরকম বন্ধু বেছে নেয় । বরুণ ঠিক তাই করে । তাদের সাথে থেকে বরুণ আস্তে আস্তে অনেক বদলে যেতে শুরু করে । সেটা তরুণ ও অরুনিমা বুঝতে পারে কিন্তু কিছু বুঝতে পারছিল না কি করবে । বরুণ প্রায় রাতেই নেশা করে বাড়িতে ফিরতে শুরু করে । এইগুলি ছিল তরুণ ও অরুর সহ্যের অতীত । সবথেকে বড়ো সমস্যা হতে শুরু করে অরুর ক্ষেত্রে । অরু অনেক দিন রাতে খেয়াল করে তরুণ ঘুমিয়ে পড়ার পর বরুণ ওদের শোবার ঘরে উঁকিঝুঁকি মারতো , কখনো বা ঘরে ঢুকে পড়তো । বিশেষ করে তরুণ ও অরুর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের সময় দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতো । অরু অনেক দিন দরজার বাইরে থেকে একটা ছায়া দেখতে পায় । অরু বুঝতে পেরে শোবার ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দিতে থাকে । অরু অনেকবার ভেবেছিল তরুনকে এই ব্যবস্থা জানাবে কিন্তু অশান্তি হবার ভয়ে চুপ করে থাকে । কিন্তু দিন দিন বরুনের দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকে ।
রোজ সকালে তরুণ সকাল আট'টা নাগাদ অফিসে বেরিয়ে যেত আর বরুণ বেরোতো সকাল ন'টা নাগাদ । ঐ একঘন্টার মধ্যে বরুণ বেশ কয়েকবার নানা ভাবে বৌদি অরুর সাথে কিছু খারাপ আচরণ করতে থাকে । অরু আর কিছুতেই সহ্য করতে পারছিল না । একদিন তো অরু যখন মেয়ে রুনিকে স্তন পান করাচ্ছিল তখন হঠাৎ ঘরের মধ্যে অন্য কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছনে ঘুরে দ্যাখে বরুণ একদৃষ্টে অরুর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । অরু তাড়াতাড়ি শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজেকে আড়াল করে নেয় । প্রচন্ড ভয়ে অরুর তখন শরীরে কাঁপন ধরে । অরু বরুনকে দেখে ফেলায় বরুণ বলে " আমি অফিসে বেরোচ্ছি , সেটা বলতে এসেছিলাম " এই বলে বরুণ বেড়িয়ে যায় । অস্বাভাবিক রকম ভয় পেয়ে অরু এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয় তরুনকে সব জানানোর জন্য । কিন্তু অরু মনে মনে ভাবতে শুরু করে "তরুনকে সব জানানোর পর যদি তরুণ আমার কথা বিশ্বাস না করে তাহলে কি করবো ? কি করে তরুনকে সব বিশ্বাস করাবো । " সাত পাঁচ ভেবে কোনো উপায় না পেয়ে বন্ধু মৌ-কে ফোন করে সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত জানায় । মৌ তখন অরুর অবস্থা বুঝতে পেরে একটা বুদ্ধি বের করে । মৌ অরুকে বলে , " অরু তুই একটা কাজ কর , তোর বেডরুমে , রান্নাঘরে, বসার ঘরে ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা কর । তরুন দা আর বরুণ অফিসে বেরিয়ে গেলে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা কর । তরুণ দা ভাইয়ের এইসব গুণকীর্তি বিশ্বাস না করলে তখন ক্যামেরার ফুটেজগুলো দেখাতে
পারবি । তখন তরুন দা বিশ্বাস করতে
বাধ্য । " মৌ - এর এই বুদ্ধিতে অরুর মন থেকে যেন ভয়ের পাহাড়টা এক নিমেষে ধসে গেল । মৌ - য়ের কথামতো পরের দিনই তরুণ ও বরুণ অফিসে চলে যাওয়ার পর অরু লোক দিয়ে সব ঘরের কোণে কোণে ক্যামেরা লাগিয়ে নেয় । ক্যামেরাগুলো এমনভাবে লাগানো হয় যাতে কারো চোখ না পড়ে । ক্যামেরা লাগানোর কথা একমাত্র অরু ও অরুর বন্ধু মৌবনি ছাড়া কেউ জানতো না ।
যেদিন ক্যামেরা লাগালো সেদিন অকস্মাৎ দেওর বরুণ তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরে এলো । তখন রান্নাঘরে কাজ করছিল অরু । বরুণ আস্তে আস্তে রান্নাঘরে ঢুকে বৌদির পিছনে দাঁড়িয়ে ঘাড়ের কাছে ঠোঁট ছোঁয়ায় আর সাথে সাথে অরু ঘুরেই কষিয়ে এক চড় মারে । চড় খাওয়ার পর বরুণ অরুকে চেপে জড়িয়ে ধরে । কোনোরকমে নিজেকে ছাড়িয়ে অরু রান্নাঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে নিজের বেডরুমে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় । আর রুম থেকে ভয়ে বেরোতে পারে না । সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ তরুণ ফেরে অফিস থেকে । তরুনের গলার আওয়াজ পেয়ে অরু দরজা খুলে দৌড়ে বেরিয়ে এসে তরুণকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে । আচমকা অরুকে কাঁদতে দেখে খুব ভয় পেয়ে যায় তরুণ । বারবার অরুকে জিজ্ঞাসা করতে থাকে," কিগো কি হোলো তোমার ? রুনি ঠিক আছেতো ? কিগো তুমি এতো কাঁদছো কেন "’ । এই কথা শুনে অরু বললো ,
" তোমাকে কয়েকটা কথা বলতে চাই , তুমি শুনবে ? অনেকদিন ধরে ভাবছি তোমাকে সবকিছু জানানো দরকার । কিছুতেই বলে উঠতে পারছি না । কিন্তু আর সহ্য করতেও পারছি না । দয়া করে আমার কথাগুলো বোঝার চেষ্টা কোরো । " তরুণ বললো , " কি হয়েছে আমাকে খুলে বলো , কি বলতে চেয়েও বলতে পারছো না ? কি এমন হয়েছে যার জন্য তুমি এতোটা ভেঙে পড়েছো । বলো লক্ষীটি , বলো বলো please " । তরুণের কাছ থেকে স্বান্তনা পেয়ে অরু দেওর বরুণের কথা সব বিস্তারিত জানালো । আজ পর্যন্ত তার সাথে ঠিক কি কি করেছে ছোটো ভাই সম বরুণ সব জানানোর পর অরু তরুণের এরকম প্রতিক্রিয়া আশা করেনি । অরু স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি তরুণ যে এতো বছর ধরে যে তরুণ ওর সাথে সংসার করছে , যে ওকে এতো বছর ধরে চেনে সে কিনা !! তরুণ সব শুনে অরুকে বলেছিল, " আমি আমার ভাইয়ের সম্পর্কে একটাও বাজে কথা শুনতে চাই না । ছিঃ ছিঃ ! অরু । তুমি বৌদি হয়ে ছোটো ভাইয়ের মতো দেওরের গায়ে কলঙ্ক ছেটাচ্ছো । তুমি কি মানুষ ? আমার ভাই আর যাই হোক এতো নীচ নয় । You should be ashamed Aru . আমার তো ভাবতেও লজ্জা করছে । " অরু অবশ্য জানতো তরুণ ওর কথা বিশ্বাস করবে না কিন্তু তাই বলে ওকে এতোটা হীন মনে করবে সেটা ভাবতেও পারে নি । অরু আর কোনো কথা না বাড়িয়ে কম্পিউটারের টেবিলের সামনে চলে গেল । কম্পিউটারের সাথে ঘরের কোণায় কোণায় লাগানো ক্যামেরা গুলোর কানেকশন করে চালিয়ে দিলো । একবার শুধু তরুণকে বললো, " আমি জানতাম তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে না তাই কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দ্যাখো । আমার আর কিছু বলার নেই । " এই বলে অরু বিছানার এক কোণে গিয়ে চুপ করে বসে পড়লো । তরুণ ততোক্ষণে কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । কম্পিউটারের স্ক্রিনের মধ্যে তখন চলছে অফিস থেকে ফিরে আসার পর বরুণের সমস্ত কীর্তিকলাপ । সমস্ত কিছু চোখের সামনে দেখে তরুণের চক্ষু
চড়কগাছ । তরুণ মনে মনে ভাবলো, " ছিঃ! আমি এতোক্ষণ ভুল বুঝে অরুকে কতো কথা শুনালাম , অরু তার কোনো প্রতিবাদ করলো না ! না আমি এটা ঠিক করিনি । এক্ষুনি আমাকে অরুর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে । " তারপর অরুর সামনে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে অরুর হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে , " অরু আমাকে ক্ষমা দাও please । আর বরুণকে আমি আজকেই বাড়ি থেকে বের করে দেব । মা - বাবাকে আজই সব জানাবো । " এই বলে হনহন করে বরুণের ঘরে চলে গেল । বরুণের ঘরে গিয়ে দ্যাখে বরুণ বসে বসে মদ্যপান করছে । এই কান্ড দেখে তরুণ আর নিজের মাথা ঠিক রাখতে পারলো না ।
চলবে
