Sharmistha Mukherjee

Tragedy Crime Inspirational

2  

Sharmistha Mukherjee

Tragedy Crime Inspirational

নিষিদ্ধ স্পর্শ পর্ব ৩

নিষিদ্ধ স্পর্শ পর্ব ৩

4 mins
518


সেদিন অরুর সাথে এরকম কিছু ঘটবে অরু ভাবতেই পারে নি । ছোটো ভাইয়ের মতো দেওরটির এরকম ভুল অরুর কল্পনার বাইরে । অফিস থেকে ফিরে বাইরের ঘরে সোফার উপর ব্যাগ রেখেই বরুণ উঁকি মেরে দেখে নিলো অরু রান্নাঘরে চুল্লিতে কিছু রান্না করতে ব্যস্ত । আচমকাই পিছন দিক থেকে গিয়ে জরিয়ে ধরে শাড়ি পরিহিতা বৌদির পেটের উন্মুক্ত অংশ । পেটের উপর হাত পড়তেই অরু চীৎকার করে ওঠে । হাত ছাড়িয়ে বরুনের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বরুনের গাল লক্ষ্য করে কষিয়ে চড় মারে । চড় খাওয়ায় বরুনও হকচকিয়ে যায় । বোকার মতো বৌদিকে প্রশ্ন করে বসে , " বৌদি চড় মারলে কেন ? " রাগে তখন যেন অরুর চোখ থেকে অগ্নি বর্ষিত হচ্ছে । বেয়াদপ দেওরটির কথা শুনে যেন রাগের বিস্ফোরণ ঘটে । অরু বলে , " লজ্জা করে না তোর ? আবার গলা উঁচু করে প্রশ্ন করছিস ? চড়টা আমার আরও আগেই মারা উচিত ছিল যেদিন তুই প্রথম আমার শরীরে হাত রেখেছিলি । সেদিন তোর ছেলেমানুষি ভেবে তোর দাদাকে কিছু জানাই নি কিন্তু আজকে সব জানাবো । " বৌদির মুখে একথা শোনা মাত্র বরুণ অরুর পা জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করে আর বলে, " আর কোনোদিন এইরকম ভুল করবো না। এই আমি তোমার পা ধরে প্রতিজ্ঞা করছি । ও বৌদি তুমি দয়া করে দাদাকে কিছু জানিও না । দাদা জানতে পারলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে । আমার খুব বড়ো অন্যায় হয়ে গেছে , এবারের মতো আমাকে মাফ করে দাও । " অনেক কাকুতি মিনতি করার পর অরু একটু শান্ত হয়ে বললো , " আজ থেকে তুই আমার সাথে একটাও কথা বলবি না । আর তোকে যেন আমার আশেপাশে কখনও না দেখি । মনে থাকবে ? " বরুণ বললো, " হ্যাঁ মনে থাকবে " বলে দ্রুত পায়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো । 


ছোটো ভাইয়ের মতো যাকে ভালোবাসে সেই এরকম একটা কাজ করলো ভেবে অরু রীতিমতো আৎকে উঠলো । কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছিল না অরু । 


বরুণ বৌদির কথামতো আর কোন কথা বলতো না , সামনেও খুব একটা যেত না । রাতে খাবার সময় বরুণ ও অরুনিমার মধ্যেকার এই দ্বন্দ্বের আঁচ খুব সহজেই তরুণ অনুভব করলো । তরুণ মজার ছলে বলে উঠলো, " কি ব্যাপার ! আজকে দেখছি বৌদি আর তার দেওর কারো মুখে কোনো কথা নেই । কিরে ভাই খুব জোর বকা খেয়েছিস মনে হচ্ছে । কিগো অরু তোমার আবার কি হোলো ? " তরুনের কথা শেষ হতেই অরু নিজের খাবার থালা নিয়ে উঠে রান্নাঘরে চলে গেল । অরুর এই আচরণে তরুণ বুঝতে পারলো নিশ্চয়ই এমন কিছু ঘটেছে যেটা অরুকে কষ্ট দিচ্ছে । নয়তো অরুতো শত রাগেও এরকম কোনোদিন করে নি । হ্যাঁ অনেকবারই রাগ করে কথা বলে নি কিন্তু খাবার নিয়ে উঠে চলে গেল , কি ব্যাপার !! " দাদার চোখেমুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট বুঝতে পারে বরুণ তাই কোনো কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে উঠে সোজা নিজের ঘরে চলে যায় । তরুণ তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে গিয়ে দ্যাখে অরু কাঁদছে । খানিকটা অবাক হয়ে তরুণ অরুকে প্রশ্ন করলো , " কি হয়েছে বলোতো ? তুমি কাঁদছো কেন ? ভাই কি তোমাকে কিছু বলেছে ? আরে দূর! ছাড়োতো ওর কথা , পাগল ছেলে একটা। ওর কথায় আবার তোমার রাগ করার কি আছে । তুমিতো আর ওকে আজকে থেকে দেখছো না , জানোই তো এখনও কতোটা ছেলেমানুষ বরুণ । " তরুনের এই কথাগুলো শুনতে শুনতে অরু আরও কেঁদে ফেললো, মনে মনে বলতে লাগলো , " তোমাকে আমি বলতে পারছি না তরুণ, যে তোমার ভাই আমার সাথে কতোটা ঘৃণ্য আচরণ করেছে । ওকে এখন আমার খুব ভয় করে । " অরুকে অঝোরে কাঁদতে দেখে তরুণ আদর করে বুকের মধ্যে জরিয়ে ধরলো । অনেক কষ্টে বুঝিয়ে- সুঝিয়ে শান্ত করলো অরুকে । রাতে শুতে গিয়ে অরু বললো , " শোনো একটা কথা বলবো ? " তরুনের সম্মতি পেয়ে অরু বললো, " তুমি বরং বরুনকে কলকাতায় পাঠিয়ে দাও । ওখানেই থাকুক বরুণ । " অরুর কথা শুনে তরুণ কেমন যেন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অরুর মুখের দিকে । তারপর বললো , " কিন্তু অরু তুমিইতো বললে বরুণকে চাকরি জোগাড় করে দিতে আর তুমি বলেছিলে বরুণ আমাদের সাথে থাকলে কোনো অসুবিধা নেই বরং বাবা - মাকে এখানে নিয়ে আসার পরামর্শ তুমিই আমাকে দিয়েছিলে । তাহলে এখন এমনকি হোলো যে ...... " তরুনের কথা শেষ না হতেই অরু বললো, " আমি ভালোর জন্য বলছি এবার তোমার ব্যাপার । " এই বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো । 


এইভাবে কেটে গেল মাস তিনেক । বাড়ির পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও অরু যথেষ্ট সাবধানে থাকতো । দু - চার বার বরুণ কোনো না কোনো অছিলায় অরুর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেও সফল হয় নি । অরু এখন ওর থেকে শত হস্ত দূরে সরে থাকতো । 


এদিকে মাস তিনেক ধরে তরুণের বন্ধু ঋষির অফিসে কাজ করছে বরুণ । বুদ্ধিমত্তার জোরে ও পরিশ্রমের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ঋষির মন জিতে নেয় সে । বেশ কিছু বন্ধু-বান্ধব হয় অফিসে । শুধু অফিসেই নয় অফিসের বাইরেও বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু গড়ে ওঠে । তবে অবশ্য তারা কেউই ভালো ছিল না । 


( চলবে)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy