Sharmistha Mukherjee

Tragedy Crime Inspirational

3  

Sharmistha Mukherjee

Tragedy Crime Inspirational

নিষিদ্ধ স্পর্শ 🌵পর্ব ২

নিষিদ্ধ স্পর্শ 🌵পর্ব ২

5 mins
413


       

স্নান সেরে বেরিয়ে এসে তরুণ অরুনিমাকে ডেকে বললো , " আচ্ছা আর রাগ করতে হবে না , তুমি কাজের জন্য লোক ঠিক করে কথা বলো । টাকাপয়সা নিয়ে ভাবতে হবে না । আর হ্যাঁ, আমি অফিস থেকে ফেরার পথে খাবার কিনে আনবো । মিস্টার আর মিসেস চোপড়া রাতের ডিনার করেই ফিরবেন । তুমি এতো চিন্তা কোরো না । " এই শুনে অরুর মুখে ঈষৎ হাসি ফুটে 

উঠলো । খাবার খেয়ে রুনিকে আদর করে তরুণ অফিসের পথে পা বাড়ালো । অফিসে গিয়ে কাজের ফাঁকে তরুণ তার বন্ধু ঋষিকে ফোন করে ভাইয়ের কাজের ব্যাপারে । ঋষি জানায় " Ok dear friend, don't worry . You send your brother to my office tomorrow at 11'o clock in the morning . I want to talk to him . "এই কথা শুনে তরুণ তখনই ফোন করে অরুনিমা ও ভাই বরুণকে সব জানায় । 


অফিস থেকে সেদিন একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ে তরুণ । বাড়িতে ফেরার পথে রাতের ডিনারের জন্য খাবার কিনে নিয়ে 

যায় । সন্ধ্যা ঠিক সাতটা নাগাদ মিস্টার আর মিসেস চোপড়া আসে । মিস্টার চোপড়ার আসলে ভীষণ সময় ধরে চলার অভ্যাস । তাই কথা মতো ঘড়ির কাঁটা ধরে একদম ঠিক সময়ে চলে এসেছেন । সেদিন হাসি - ঠাট্টা - গল্পের বেশ জমজমাট আসর বসে খাবার টেবিলে । রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ওনারা চলে গেলে তরুণ ও অরু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে । প্রতিদিনের তুলনায় অরু সেদিন বড্ড বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ায় শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমের দেশে পৌঁছে যায় । 


পরদিন সকালে বরুণ ও তরুণ দুভাই একসাথে বেড়িয়ে পড়লো । অফিস যাওয়ার পথে তরুণ ভাইকে কথামতো বন্ধু ঋষির অফিসে নামিয়ে দিয়ে গেল । ঋষি প্রায় ঘন্টা খানেক কথা বলে বরুণকে বললো , " Ok Barun , আমার ব্যাবসার সব হিসাব কাল থেকে তুমি দেখবে । কিভাবে কি করতে হবে সেটা নিবিড় তোমাকে বুঝিয়ে দেবে । মাসে আপাতত পনেরো হাজার , কি ঠিক আছে তো ? " এটা শুনে বরুনও সম্মতিসূচক মাথা নাড়লো । ঋষি আবার বললো, " Ok dear, any question ? তাহলে কালকে সময়মতো চলে এসো । পরে আমি তরুনের সাথে কথা বলে নেব " এই বলে করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিল । করমর্দন করে উল্লসিত হয়ে বরুণ বাড়িতে ফিরে গেল । বাড়িতে গিয়েই বৌদিকে প্রনাম করে বাবাকে ফোন করে সব জানালো । সুকুমার বাবু উওরে বললেন, " ভালো করে কাজ কোরো , দাদার বন্ধুর সামনে যেন লজ্জায় তোমার দাদার মাথা নিচু না হয় । সাবধানে থেকো, আর হ্যাঁ একটু ভদ্রভাবে বাঁচতে চেষ্টা কোরো । " 

সব শুনে " হ্যাঁ বাবা তুমি আর আমাকে নিয়ে চিন্তা কোরো না "এই বলে ফোনটা কেটে দিয়ে হঠাৎ করে রান্নাঘরে কর্মরতা বৌদিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে । আচমকা পিছন থেকে জড়িয়ে ধরায় অরুনিমা খুব ঘাবড়ে যায় । এরকম আচমকা পিছন থেকে জাপটে ধরলে ভয় পাওয়া বা ঘাবড়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক । যাইহোক কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে অরু বললো , " কি ব্যাপার আমার ছোটো ভাইটির কি কিছু খাবার লাগবে ? খিদে পেয়েছে ? " হঠাৎ যেন কেমন অস্ফুট কথা " হ্যাঁ তোমাকে " শুনে অরু আরও ভয় পেয়ে যায় । সে নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করাতে পারছে না যে তার আদরের ছোটো দেওরটির চোখ তার দিকে !! আবার নিজেকে সামলে নিয়ে এক ধাক্কা মেলে বরুণকে সরিয়ে দিয়ে বললো, " সরে দাঁড়া , চা খাবি ? এখুনি তোর দাদা চলে আসবে । আজকে একটু তাড়াতাড়ি ফিরবে, ওই যে আজকে মিস্টার আর মিসেস চোপড়া আসবেন তাই । " বেগতিক দেখে বরুণ বলে, " হ্যাঁ বৌদি একটু চা দাও খেয়ে বিশ্রাম করে কালকের জন্য প্রস্তুত হতে হবে । কালকে আমার চাকরির প্রথম দিন । 


আচ্ছা ও বৌদি তুমি কি ভুলে গেলে ওনারা তো গতকাল এসেছিলেন । কথাটা শুনে অরুর বুকের ভিতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো । তাও কিছুটা হেসে বললো , " এই দ্যাখো কান্ড ! দেখেছিস আমি একদম ভুলেই গেছিলাম, সত্যিই তো ওনারা কালকেই না আসলেন । আচ্ছা তুই যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আমি চা দিচ্ছি । " বরুণ চলে গেলে অরু একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবলো , " এটা কি হোলো ! বরুণ আমাকে এইভাবে ? আর কি যেন বললো হঠাৎ " তোমাকে " মানে ওর নজর আমার দিকে ? এখন কি করি ? তরুণ কে কি কিছু জানাবো নাকি আর দু - একদিন ব্যাপারটা লক্ষ্য করবো ? " এই ভাবতে ভাবতে চা করে বরুণকে দিয়ে সোজা মেয়ে রুনির পাশে গিয়ে বসে পড়লো । মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়ে ঘুমাচ্ছে , ঘুমন্ত মেয়ের কপালে একটু আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো, " My cutie little princess " । সন্ধ্যায় তরুণ অফিস থেকে ফিরলে অরু বরুণের ব্যাপারে কিছুই জানালো না । রোজকার মতোই গল্প করতে করতে তিন জন রাতের খাবার শেষ করে ঘুমাতে গেল । রাতে শুয়েও বরুণের সেই অস্ফুট " তোমার " কথাটা যেন কানে ভাসছিল অরুর । তারপর নিজেই ভাবলো, " আমি বোধহয় ভুল শুনেছি । বরুণ আমার ভাইয়ের মতো আর আমি ওর সম্পর্কে এসব ভাবছি ! ছিঃ ছিঃ । " 


পরদিন সকালে অরুর তাড়াহুড়ো আরও বেড়ে গেল । আগেতো একজনের অফিসের রান্না ছিল, আজ থেকে আবার দুজনের শুরু হোলো । অবশ্য একটা কাজের লোকের সাথে কথা হয়েছে কিন্তু তারা এখনও কিছুই জানায় নি তাই অগত্যা সব কাজ একা অরুর ঘাড়ে গিয়েই পড়লো । সকাল ৯ টায় দুভাই একসাথে অফিসে বেড়িয়ে গেলে অরু তাড়াতাড়ি মৌ - কে ফোন করলো । মৌ মানে মৌবনি রায়, অরুনিমার best

 friend । মৌ সব শুনে অরুকে একটু সজাগ থাকতে বলে । 


সন্ধ্যার একটু আগেই বরুণ অফিস থেকে বাড়িতে ফিরে আসে কিন্তু সেদিন আর অরুর সাথে কোনোরকম অদ্ভুত আচরণ করে না । এভাবে বেশ কিছুদিন বরুণ কোনো দৃষ্টিকটু কাজ না করায় অরু ভাবে সেদিন তাহলে সে ভুলই ভেবেছিল , তার জন্য মনে মনে লজ্জাবোধ করে । 


বিগত এক সপ্তাহ পর বরুণ আবার একই কাজ করে । এবার অরুর ভুল ভাঙে । এটা কখনোই মাফ করা যায় না । কিন্তু অরু ভয়ে এসব কথা তরুণকেও জানায় নি । শুধু বরুনের সাথে একেবারে কথা বলা বন্ধ করে দিলো । এবারেও আবার একই ব্যাপার

 ঘটে । এবার আর যেকোনো ভুল নয় রীতিমতো ঘৃণ্য অপরাধ করে বসে বরুণ । 


চলবে







Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy