STORYMIRROR

Sharmistha Mukherjee

Tragedy Crime Inspirational

3  

Sharmistha Mukherjee

Tragedy Crime Inspirational

নিষিদ্ধ স্পর্শ পর্ব ১

নিষিদ্ধ স্পর্শ পর্ব ১

5 mins
419

স্পর্শ অনেক রকমের হয় । আর এক একটি স্পর্শে এক এক রকমের অনুভূতি । কোনোটা স্নেহের স্পর্শ , কোনোটা প্রেমের স্পর্শ , কোনোটা কাতর স্পর্শ , কোনোটা বিশ্বাসের স্পর্শ আবার কখনো কখনো নিষিদ্ধ স্পর্শ । হ্যাঁ নিষিদ্ধ স্পর্শ যা অন্তর আত্মাকে নিমেষের মধ্যে ভেঙে গুড়িয়ে তছনছ করে দিতে সক্ষম । নিষিদ্ধ স্পর্শের জন্য প্রয়োজন একটি শরীর অবশ্য তা সম্পুর্ন নারী নাও হতে পারে আর একটি বিকৃতমনস্ক নিষিদ্ধ চোখ আর হাত । কোনো বিকৃত মানসিকতার পুরুষের ক্ষেত্রে তার কামোত্তজনা চরিতার্থ করতে প্রয়োজন একটি নারী রূপের শরীর । যদিও সেক্ষেত্রে সুডৌল স্তন বা পরিস্ফুট যৌনাঙ্গের বিশেষ প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না । 


আজ আমার গল্পটি এমনই এক নিষিদ্ধ স্পর্শ নিয়ে । 


তরুণ ও অরুনিমার ছোট্ট সংসার । চাকরিসূত্রে তরুণ সস্ত্রীক থাকে মুম্বাই-এর একটি শহরে । পাঁচ বছর বিয়ে হয়েছে কিন্তু অনেক প্রয়াসে কোনো সন্তান না হওয়ায় তরুণ ও অরুনিমা একজন বিশিষ্ট গায়নোকলজিস্ট এর সাথে যোগাযোগ 

করে । তারপর আরো দেড় বছরের চেষ্টায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করে অরুনিমার কোল আলো করে এলো এক ছোট্ট কন্যাসন্তান । তরুণ ও অরুনিমা খুব শখ করে দুজনের নাম মিলিয়ে মেয়ের নাম রাখলো তরুনিমা । আর তাদের আদরের ডাক নাম ছিল রুনি । মাত্র ছয় মাস হয়েছে ছোট্ট রুনির । নাদুসনুদুস হাত -পা, ফর্সা গোলগাল ঠিক যেন একটা জীবন্ত পুতুল । মেয়ে হওয়ার পর অরুনিমা চাকরি ছেড়ে দেয় । বাড়িতেই থাকতো সবসময় । 


অন্যদিকে তরুণের মা - বাবা আর ভাই থাকতো কলকাতায় । ভাই বরুণ একটি বিখ্যাত কলেজের কমার্স নিয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে । উঠতি বয়সের ছেলে তার উপর অবাধ্য সব বন্ধু-বান্ধব । তাই নেশা করা, মেয়েদের নিয়ে ফূর্তি করাই ছিল তার শখ । কোনোরকমে পড়াশোনাটা শেষ করে যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে । ছোটো ছেলের এরকম বাউন্ডুলে ভাবগতিক দেখে সুকুমার বাবু বড়ো ছেলে তরুণের সাথে কথা বলে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে কিছুদিনের জন্য বরুনকে মুম্বাই পাঠান । ভাবলেন কিছুদিন ঐসব অসভ্য বন্ধুদের থেকে দূরে থাকলে ছেলেটা একটু ঠিক হবে । 


বরুণ মুম্বাই পৌঁছে দাদা - বৌদিকে প্রনাম করেই ছোট্ট রুনিকে নিয়ে খেলতে শুরু 

করে । রুনি প্রথমে নতুন মুখ দেখেই কেঁদে ওঠে অবশ্য পড়ে আবার ঠিক হয়ে যায় । বরুণ আসাতে অরুনিমার একটু সুবিধাই হোলো , সে মাঝেমধ্যে ছোটো দেওরটির কাছে মেয়েকে রেখে দোকান - বাজারে যেতো । দেখতে দেখতে কেটে গেল এক সপ্তাহ । বেশ ভালোই কাটছিল ওদের সময়টা । সারাদিন পর রাতে খাবার টেবিলে বসে দুই ভাই ও বৌদিতে মিলে আড্ডা বেশ জমে উঠতো । আর একদিকে রুনিও বেশ চিনে গিয়েছিল তার কাকাই -কে ।         


একদিন রাতে খাবার টেবিলে বসে তরুণ ছোটো ভাইকে জিজ্ঞাসা করলো, " কিরে এবার কি করবি কিছু ঠিক করলি ? " এই বলতেই বৌদি অরুনিমা ফুট কেটে মজা করে বললো " আরে দারাও দারাও বেচারা এখন ঠিক আরও পড়াশোনার মুডে নেই । কি তাইতো বরুন ? " বরুণ তখন মাথা নীচু করে খাচ্ছিল । বৌদির কথা শুনে হঠাৎ বলে উঠলো " আবার পড়াশোনা!! রেহাই দাও আর পড়াশোনা আমার দ্বারা হবে না । দাদাভাই তার চেয়ে বরং তুই আমাকে একটা চাকরি জোগাড় করে দে । " তরুণ বললো " হুম চাকরি ? তা কোথায় চাকরি করবি ? " বরুণ বললো , " কেনো এইখানে একটা ছোটোখাটো চাকরি হলেই হবে । আর তোর এখানে থেকেই চাকরি করবো । " এই কথা শুনে তরুণ হা করে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো । বরুণ সঙ্গে সঙ্গে বৌদিকে বললো, " ও বৌদি আমার এখানে থাকতে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো ? না মানে তোমরা যখন এখানে আছোই তাহলে আমিও....... "। বরুনের কথা শেষ না হতেই অরুনিমা বললো, " ভালোই তো এখানে থেকেই চাকরি কোরো । আর বছর খানেক বাদে বাবা - মায়ের সাথে কথা বলে ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়ে দিয়ে দেবো । কিগো তুমি কি বলো ? " বলে তরুনের দিকে তাকালো । তরুণ আর কি বলবে ভেবে না পেয়ে বললো, " ঠিক আছে দেখছি যদি তোর জন্য কাজের সন্ধান পাওয়া যায় । কালকে বরং আমার চেনা জানা দু-চার জনের সাথে কথা বলবো । " তারপর সবাই মিলে উঠে গেলে অরুনিমা টেবিল পরিস্কার করে বাসন মেজে শোবার ঘরে গিয়ে দ্যাখে তরুণ জালনার সামনে দাঁড়িয়ে সিগন্যাল খাচ্ছে । তরুনকে একটু চিন্তিত দেখে অরুনিমা বললো, " কিগো কি এতো ভাবছো ? আর তুমি ঘরের মধ্যে সিগারেট খাচ্ছো ? তোমাকে না কতোবার বলেছি ঘরে রুনি আছে, তুমি এই ঘরে সিগারেট খাবে না । সিগারেটের ধোঁয়া বাচ্চাদের জন্য খুব 

খারাপ । তুমি না সত্যি !! " তরুণ সাথে সাথে সিগারেট ফেলে বললো, " Sorry sorry অরু একদম ভুল হয়ে গেছে । তুমি রাগ কোরো না লক্ষীটি । আসলে একটু চিন্তায় আছি ওই হতচ্ছাড়াটাকে নিয়ে । ও করবে চাকরি !! " অরুনিমা বললো, " তুমি চিন্তা কোরো না , দেখো একটা কাজের মধ্যে ঢুকে গেলে বরুণ একদম বদলে যাবে । আর এই বয়সে অসৎ পাল্লায় পড়ে একটু ভুল করাটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার । ওকে একটু সময় দিতে হবে আমাদের । আর দেখেছো এখানে আসার পর থেকে ও কিন্তু অনেক বদলে গেছে । " তরুণ বললো, " ঠিক আছে দেখি ওকে কোনো কাজে ঢোকানো যায় কিনা । কিন্তু ও এখানে থাকলে কলকাতায় বাবা - মা পুরো একা হয়ে যাবে, তার উপর বাবা - মার বয়সও হচ্ছে । কি যে করি ? " অরুনিমা বললো, " ঠিক আছে একটা কাজ করলেই তো হয় । বরুণ একটা কাজে ঢুকে গেলে তোমরা দুই ভাই মিলে বাবা - মাকে এখানে নিয়ে চলে আসবে । আমাদের দুটো ঘরতো ফাঁকা আছে । একটাতে এখন বরুণ আছে, আর একটাতে বাবা - মা থাকবে । " তরুণ বললো, " হুম, তাতো বুঝলাম কিন্তু কলকাতার বাড়িটার কি হবে ? " অরু বললো, " তুমি বরং কালকে বাবার সাথে এ ব্যাপারে একটু আলোচনা কোরো । দ্যাখো বাবা কি বলেন । এখন ঘুমাওতো , অনেক রাত হয়েছে । কালকে অফিস নেই নাকি ? " এই বলে ঘরের মৃদু আলোটা জ্বালিয়ে শুয়ে পড়লো । তরুণ ও অরুনিমা দুজন দুদিকে আর মাঝখানে তাদের ছোট্ট রাজকুমারী । 


সকাল হতেই অরুনিমার দম ফেলার সময় থাকে না । একদিকে রুনিকে খাওয়ানো , তরুনের অফিসের রান্না করা , দেওরের জলখাবার করা, সংসারের কাজ একেবারে নাজেহাল অবস্থা । কাজ করতে করতেই একেবারে রাগে গজগজ করতে শুরু করলো অরু । তার মধ্যে তরুন বললো, " শোনো না অরু আজকে সন্ধ্যায় মিস্টার আর মিসেস চোপড়া আসবেন আমাদের বাড়িতে । অনেক দিন ধরেই বলছিলেন আসবেন, তো এক্ষুনি ফোন করে জানালেন আজকেই আসছেন । " এই শুনে অরু তেলে বেগুনে জ্বলে একেবারে আগুন । অরু বললো, শোনো সারাদিন কাজ করে করে আমি আর পারছি না, এবার একটা কাজের লোক ঠিক করো নাহলে নিজেরা হাত পুড়িয়ে রান্না করে খাবে । আমি সারাদিন এতোসব কাজ করতে থাকলে রুনিকে সময় দেবো কখন ? আমি আর পারবো না, এই সাফ বলে দিচ্ছি " বলে জোরে মাটিতে পা ঠুকে ধপ্ করে সোফায় বসে পড়লো । ভাবগতিক দেখে আর কথা না বাড়িয়ে তরুণ স্নান করতে চলে গেল । 

(চলবে)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy