Abanti Pal

Abstract Drama Inspirational

3  

Abanti Pal

Abstract Drama Inspirational

নৈবেদ্য

নৈবেদ্য

3 mins
571



'কাকা, আমি খুব আশা নিয়ে আপনার কাছে এসেছি' হাতজোড় করে সেদিন বলেছিল পূজারিণী।


'এখানে আবার কি আশা নিয়ে আসা? বেলা পেরিয়ে গেছে, আজ আর পুজো নেওয়া যাবে না' মন্দিরের পুরোহিত মাধবঠাকুর বলেছিল।


'আসলে আমি আজ পুজো দিতে আসিনি, আর্থিক সাহায্য প্রার্থনা করতে এসেছিলাম'


'কি? এইটা কি দানকেন্দ্র পেয়েছিস! যা যা, অযথা সময় নষ্ট করিস না আমার' রোষে গর্জে উঠেছিল মাধবঠাকুর।


'কিন্তু কাকা, মন্দির তো সবথেকে অমূল্য কোষাগার! ভগবানের আশীর্বাদ সবসময় আছে এখানে। ওনার সেবকদের কাছে চাইলে কি উনি নিজের ভান্ডারের থেকে সাহায্য দেবেন না?'


'বলিস কি? ভগবান কি ধনরত্নের ভান্ডার খুলে বসেছেন!'


'ভক্তিভরে কত প্রাথনার্থীরা দান করে মন্দিরে এসে, সেইসব তো ঈশ্বরের খাতাতেই লেখা হয়। সেই ক্ষমতা দিয়ে, দরকারে মানুষের পাশে দাঁড়ালে তার থেকে ভালো আর কি হতে পারে!'


'জ্ঞান দিতে এসেছিস এখানে? এত বড় স্পর্ধা! দূর হ এখনই এখান থেকে' পূজারিণীকে একপ্রকার তাড়িয়ে দিয়েছিল মাধবঠাকুর।


চোখের সামনে এহেন ঘটনা দেখে, পাড়ার বয়োজ্যেষ্ঠ প্রদীপবাবু পূজারিণীকে কাছে ডেকে নিয়েছিলেন

'মনখারাপ করোনি দিদিমনি'


ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্রী পূজারিণীকে উনি চিনতেন। হঠাৎ মস্ত বিপর্যয়ে পড়ে ওদের বাড়ি-জমিজায়গা-ধনসম্পত্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ায়, পথে এসে বসতে হয়েছিল পূজারিণীদেরকে। মেয়েটার পড়াশোনা থেমে গিয়েছিল অচিরেই। কিন্তু কাঁচা বয়সেই যখন ওর বিয়ে ঠিক করা হলো একজন বৃদ্ধের সাথে, তখনই রুখে দাঁড়ানোর জেদটা চাগার দিয়ে উঠেছিল ওর মনে। সমস্যার কথা জানাতে, এক বান্ধবী এই পুণ্যস্থানগুলোর থেকে সাহায্যপ্রার্থনার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু হায় নিয়তি! 


দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিল সেদিন পূজারিণী

'এ কেমন বিদ্রুপ জেঠু? মানুষের পাশে মানুষ না দাঁড়াতে পারলে কেমন ধর্মের প্রতীক হলো এই মন্দির?'


'এ ভগবানের বিচার নয় দিদিমনি, দুর্বলচিত্ত মানুষের দুর্বুদ্ধি আর অপরিপক্কতা মাত্র। তারাই এই প্রতীককে কলুষিত করছে' 


'বড় আক্ষেপ হয় জেঠু। নিশ্চিন্তপুরে পিঠোপিঠি মন্দির-মসজিদ-গির্জা স্থাপিত হলো সাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অর্থব্যয়ে। আমার বাবাও কি কম দিয়েছিল তখন? 

জনসাধারণের কল্যানের জন্য যাতে সবসময় এরা পাশে থাকতে পারে, নিশ্চিন্তপুরের নিশ্চিন্তাগার হতে পারে দেশের-দশের জন্য। আজ এরাই মুখ ঘুরিয়ে নিল আমার চরম দুর্দিনে'


'আমীর ঈশ্বর মনে বাস করে দিদিমনি, কোনো চারদেওয়ালের পীঠস্থানে নয়! তুমি ওই পাশের বাড়িতে যাও, দেখো ওখানে কিছু সাহায্য পাও কি না'


'কিন্তু জেঠু ওটা তো...' 


'ওখানেই তোমার কাঙ্খিত ঈশ্বরকে পাবে। ওনার এই অবতার বিশ্বব্যাপী' স্মিত হাসলেন প্রদীপিবাবু।


আজ ১২ বছর পর, মহাসমারোহে স্বাধীনতা দিবস পালিত হচ্ছে নিশ্চিন্তপুরে। পূজারিণী এখন মস্ত আই. এ. এস অফিসার। সে আজ নিশ্চিন্তপুরের গর্ব। বিশেষ অতিথিরূপে এসেছে তার জন্মস্থানে। অভিনব আয়োজনের সাথে পতাকা উত্তোলন হবে ওর হাত দিয়েই। লোকমুখে চলছে, নিশ্চিন্তপুরের উন্নয়নের জন্য মোটা অংক দান করবে আজ সে।


পতাকা উত্তোলন পর্বের পর, বক্তৃতার শুরুতেই পূজারিণী বলল

'আমার জীবনে স্বাধীনতা আর সাফল্য এনেছেন যে ঈশ্বরের প্রতিনিধিরা, তাঁদের মন্দিরে আমি আজ যৎসামান্য নৈবেদ্যদান করতে চাই। ওনাদের ধর্মের পরিকাঠামো আরো মজবুত হোক, ওনাদের সেবার মাধ্যমে জাগ্রত হোক মানুষ' 


'এসো তোমাকে মন্দিরে নিয়ে যাই। সেখানেই ভগবানের চরণে নৈবেদ্য প্রদান করবে' হঠাৎ মাঝপথে পূজারিণীকে থামিয়ে বলে ওঠে মাধবঠাকুর। মন্দিরের পুরোহিত হয়ে, তারই বুঝি এই গুরুদায়িত্ত্বের ভার নেওয়া প্রাপ্য! 


'ক্ষমা করবেন, আমার ঈশ্বরের অধিষ্ঠান চারদেওয়ালের তথাকথিত কোনো মন্দিরের ভেতরে নয়' পূজারিণীর করজোড়ে আজ ভিক্ষা নয়, প্রত্যাখ্যান। 

'তবে কোথায় দিদিমনি?' বৃদ্ধ প্রদীপজেঠু লাঠিতে ভর দিয়ে এগিয়ে আসেন। 

'জ্ঞানপীঠস্থানে। একযুগ আগে তোমার দেখানো মন্দিরের পাশের ওই ইস্কুলবাড়িতে খুঁজে পেয়েছি আমার ঈশ্বরকে। আমি মানবধর্মে হয়েছি ব্রতী' আসে উত্তর। 'আজ বুঝি, সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম বিরাজ করে মানুষের মনে আর তার প্রকৃত শিক্ষায়!'


সমাপ্ত।।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract