কর্মচক্র
কর্মচক্র
রিকরিক-ঝিকঝিক বাদাম নিয়ে ফিরে এসে যারপরনাই বিস্মিত। ওদের আস্ত পেয়ারাগাছ বাড়িটা একটা মস্ত গাড়ি বোঝাই হয়ে চলে যাচ্ছে কোথাও! এবার এই কাঠবেড়ালি দম্পতি যাবে কোথায়? যেদিন থেকে এই বাগানের দাদু প্রয়াত হয়ে ওনার নাতিকে এবাড়িতে স্থান দিয়েছেন, সেদিন থেকেই ভারী উৎপাত শুরু হয়েছে বাড়ীর সংলগ্ন বাগানে। ওনার যত্নের সমস্ত গাছ একে একে কেটে ফেলছে এই নতুন লোকটা।
বাগানের দুটো উদ্ভ্রান্ত কাঠবেড়ালিকে দেখে বড্ডো হাসি পায় অগ্নির! আরামকেদারায় বসে, নিজের আগামী দিনের বাণিজ্যিক সাফল্যের স্বপ্ন বুনতে ও মশগুল। ছোটবেলায় মাত্র কয়েকবার এসেছে এই খুড়তুতো দাদুর বাড়িতে। দাদুর এই বহুপুরোনো ভঙ্গুর বাগানবাড়ি ওর ছেলেবেলার বেশ কিছু স্মৃতির খেলাঘর। শেষ দিনগুলোতে, ওনার ইচ্ছে ছিল নাতি এখানে একটা প্রাইমারি স্কুল খুলুক। আর সেই ইচ্ছার কথা জানিয়ে অগ্নিকে এই বাড়িটা লিখে দেওয়া। নিজের কেউই ছিল না এই নাতি ছাড়া। তাছাড়া, কাউকে তিনি বিশ্বাস করতেন না। তাই নিজের জীবদ্দশায় যেটা শারীরিক অক্ষমতার কারণে করে যেতে পারলেন না, তার দায়ভার দিয়েছিলেন স্নেহের এই নাতিটিকে।
কিন্তু উন্নতির খাতিরে বাগানবাড়িটাকে বিক্রি করাই এই মুহূর্তে অগ্নির কাছে একমাত্র উপায়। এর থেকে যে মোটা অংক হস্তগত করবে, সেটা দিয়েই বিদেশে পাড়ি জমানোর পরিকল্পনা করেছে। ব্যস্ত শহরের এককোনে এই একটুকরো নন্দনকানন এখন ওর কাছে সোনার ভান্ডার। সেটাকে নিঃস্বার্থভাবে অর্পণ করবে স্কুলের কাজে, এমন স্বভাবের মানুষই ও নয়। বদস্বভাবকারণবশতঃ আজ সম্পূর্ণ দেউলিয়া হলেও, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া বাড়িটাই এখন ওর সমস্ত স্বপ্নপূরণের চাবিকাঠি।
দুপুরে ঘর থেকে কিছুদূর যেতেই, আচমকা ভীষণভাবে নড়ে উঠল চারদিকটা। সামনের রাস্তায় বড় গাছ ভেঙে পড়ল পথে। রাস্তা পুরোপুরি আটকে গেল। অগত্যা, ক্রুদ্ধ অগ্নি ঘরে ফেরার পথ ধরল।
কিন্তু বাড়িটার কাছাকাছি এসে ও স্তম্ভিত হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল মাঝরাস্তায়। কোথায় বাগান-বাড়ি? প্রবল ভূমিকম্পের জেরে সমস্ত ধুলিস্যাৎ হয়ে ভূগর্ভে ঢুকে গেছে!
রুষ্ট প্রকৃতি অগ্নিকে জানান দিয়েছে যে কর্মের চাকা ঠিকই ঘোরে, সে যে অপ্রতিরোধ্য নিয়তি। তাছাড়া, দাদু ওকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, জীবদ্দশাতে যে কল্যাণের কাজ করে যেতে চেয়েছেন, পরলোকগমনের পরেও সেটার অন্যথা উনি হতে দেবেন না কিছুতেই। জননীতুল্য প্রকৃতির আক্রোশই তার বহির্প্রকাশ!
সমাপ্ত।।