SHUBHAMOY MONDAL

Abstract Drama Fantasy

4  

SHUBHAMOY MONDAL

Abstract Drama Fantasy

ন-হন্যতে (শেষ পর্ব)

ন-হন্যতে (শেষ পর্ব)

3 mins
782


সেদিন, আমি দুটো পাপ করেছিলাম। প্রথমত আমি ভুলে গিয়েছিলাম, আমাদের শাস্ত্রে বর্ণিত 'বেশ্যা' -র অর্থ আমার মত বিপথগামী, পতিতা নয়। 


তিনি তো দশ মহাবিদ্যার উপাসনায় পূর্ণাভিষিক্তা, যিনি মন্ত্রচৈতন্য হওয়ার ফলে দেবত্বে উন্নিতা হয়েছেন, তিনি! আমি সে সব ভুলে, প্রবীণ মৃত্তিকাশিল্পীকে অপমান করেছিলাম।


নিজের যে রাগ সমাজের প্রতি ছিলো, বলা ভালো পুরুষের প্রতি ছিলো, তাই অপাত্রে বর্ষণ করেছিলাম আমি। তিনি ঐভাবে অপমানিত হবার যোগ্য ছিলেন না।


দ্বিতীয় ভুলটা অবশ্য আমার সেদিনের করা কোনো ভুল নয়, বরং সেদিন উপলব্ধি করা আমার জীবনের নিকৃষ্টতম ভুল। 


সেদিন আমার ঘরে এসেছিলো যারা, তাদেরই একজন আমার ঘরে থাকার সময়েই মোবাইলে কথা বলছিলো। তার সেই ফোনে বলা কথাগুলো শুনে বুঝতে পারি, সে কুণালের বিষয়ে কথা বলছে।


আমার আগ্রহ বেড়ে যায়। আমি খুব মন দিয়ে তাদের বাক্যালাপ শুনতে থাকি। আর সব শুনে উপলব্ধি করতে পারি - কুণাল আমায় সেদিন আসলে কি কথা বলতে এসেছিলো।


ঐ লোকটি ছিল সেনাবাহিনীতে চাকরির জন্য পরীক্ষা দেয় যারা, তাদেরই দালাল। সে ফোনে তার কলারকে যে কথাগুলো বলছিলো তা' শুনে যা বুঝলাম তার মর্মার্থ - কুণাল নিজের যোগ্যতাতেই নাকি আর্মিতে চাকরির জন্য কোয়ালিফাই করেছিলো। 


ঐ দালালটি সেটা কোনোভাবে জানতে পেরে, তাকে গিয়ে বলেছিলো - সে যদি তাকে কিছু টাকা ঘুষ দিতে পারে, তবে তাকে ঐ চাকরিটা সে পাইয়ে দেবে। কুণাল নাকি তখন কোন খোঁজ খবর না নিয়েই রাজীও হয়ে গিয়েছিলো দালালটার কথায়।


আর ঐদিন যখন দালালটার লোক গিয়েছিলো তার থেকে টাকাটা আনতে তখন নাকি তাকে জানিয়েছিলো কুণাল - তার চাকরির দরকার নেই। কারোর জন্য অনেক কষ্ট স্বীকার করে, বহু পরিশ্রমে নিজেকে তৈরী করেছিলো সে। ভেবেই রেখেছিলো, একটা চাকরি পেলেই সে তাকে স্ত্রী রূপে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে। 


কিন্তু কুণাল যাকে নিয়ে এত সব ভেবেছিলো সেই মেয়েটাই নাকি চলে গেছে তাকে ছেড়ে, ভুল বুঝে! তাই, সে দালালটাকে আর এখন চাকরিটা পাবার জন্য কোনো টাকা দিতে চায় না!


সেদিন লোকটা চলে যাবার পর আমার মনে হয়েছিলো - আমার সত্যিই কিছু সমস্যা আছে। নাহলে, নিজের প্রেমকেও কি কেউ এত অবহেলা করতে পারে, এত সহজে ভুল বোঝে? নিজের প্রতি যে আস্থা আমার অবিচল ছিলো, তা টলে যায় সেদিন। 


নিজেকে সেইদিন নিজের চোখে সত্যিই পতিতা মনে হয়েছিলো। সমাজ তো আগেই আমায় অনেক আঘাত দিয়েছিলো। কিন্তু সেসব আঘাত ছিলো আমার শরীরের প্রতি। আর আমি নিজে আহত করেছিলাম আমার আত্মাকে।


নিজের আত্মার শুদ্ধতা আমি নিজে নষ্ট করেছি। যার পরিশীলন করে, আমার মনুষ্যজন্ম ধন্য করে, উত্তরিত হওয়ার কথা ছিলো - পরমাত্মার প্রতি, আমি তাকে প্রেতযোনির প্রতি ধাবিত করেছি।


আমি পরমেশ্বরের বাণীটাই ভুলে গিয়েছিলাম - 


অজো নিত্যঃ শাশ্বতোহয়ং পুরাণো

ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে৷৷

অর্থাৎ, আত্মা জন্ম রহিত শাশ্বত, নিত্য এবং নবীন। শরীর নষ্ট হলেও, আত্মা কখনো বিনষ্ট হয় না।


আমি সেই আত্মাকেই হননের বৃথা চেষ্টা করে বসেছিলাম। আমার উচিত ছিলো শরীরের কথা নয়, নিজের আত্মার বিশুদ্ধীকরণের প্রতি ধ্যান দেওয়ার। আমি তা করিনি। এটা আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল।


ঈশ্বরদত্ত এত গুণের অধিকারিনী হয়েও, আমি না তো নিজের, না অন্যের, কারোর কোন হিতের কাজে আসিনি। মানব সমাজের প্রতি আমার অবদান শূন্য। অথচ আজীবন আমি সমাজকেই ঘৃণা করেছি।


নিজের প্রতি হওয়া অন্যায়ের জন্য দোষারোপ করেছি, কিন্তু না তাকে শোধরানোর জন্য কিছু করেছি, না অন্যদের সেই অপরাধের শিকার হওয়া থেকে সাবধান করেছি।


আমি আজীবন শুধু নিজের কষ্ট, নিজের সুখ, নিজের ভালো ভেবেছি। চাইলেই আমি নিজের অপ্রাপ্তির বা মন্দপ্রাপ্তির ভাঁড়ার উজাড় করে, আমারই মত কত মানবীকে ঐরকম অপরাধ থেকে ভবিষ্যত সচেতন করতে পারতাম! আমি করিনি, আমি এসব কিছুই করে উঠতে পারিনি।


ধর্মরাজ, আমি মুক্তি চাই না, শুধু একটু দয়া চাই আপনার থেকে, শুধু একটা সুযোগ। আমি আবার মনুষ্যলোকে ফিরে যেতে চাই। যত ভুল সারা জীবন জুড়ে করেছিলাম, তাকে শোধরাতে চাই। আমি এবার প্রকৃত মানুষ হতে চাই।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract