Sourya Chatterjee

Fantasy

5.0  

Sourya Chatterjee

Fantasy

মুখোমুখি

মুখোমুখি

3 mins
395


বাস থেকে নেমেই বুঝলাম গোটা অঞ্চল টা তেই লোডশেডিং। একটু তো রাগ হবেই। তার উপর আবার আজ এ.সি বাসে ফিরলাম। ধুর! গরমটা আরো বেশি লাগবে।

পাশ থেকে একজন বললেন

-এখানে সব কিছু এত improve করছে। শুধু লোডশেডিং টা রয়েই গেল। বিরক্তিকর।

- যা বলেছেন দাদা!

- কোন দিকে যাবে?

-বটতলা।

- আমিও ওই দিকেই যাবো। চলো একসাথেই যাওয়া যাক।

- চলুন।

অন্ধকারে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তবে এটুকু বুঝলাম লোকটি শুটেড বুটেড। একটু হাই স্ট্যান্ডার্ডের।

হাঁটা শুরু করলাম একসাথে।

ওদিক থেকে একজন আসছে। ও সুরঞ্জনা না? হ্যাঁ, সুরঞ্জনাই তো। ও হাত নাড়লো। আমিও হাত নাড়লাম। দেখি আমার পাশের সদ্য পরিচিত ভদ্রলোক ও সুরঞ্জনা কে দেখে হাত নাড়লেন।

আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই উনি ই জিজ্ঞেস করলেন আমায়

-চেনো?

-হ্যাঁ, ইয়ে মানে ও তো আমার প্রেমিকা।

- মানে! কি বলছো? She is my girlfriend.

আকাশ থেকে পড়লাম। কি বলছে লোকটা! সুরঞ্জনা তো আমায় পাগলের মতো ভালোবাসে। না না! কে একটা অপরিচিত লোক কি বললো, তা বিশ্বাস করা উচিত নয়।

পাশে উনি দেখলাম সিগারেটে সুখটান দিতে শুরু করছেন।আমাকেও অফার করলেন। টানি মাঝে মধ্যে লুকিয়ে চুরিয়ে। উমম, একটু ইতস্তত করলাম। কিন্তু শেষমেষ নিয়েই নিলাম। কি জানি মনে হলো লোকটা খারাপ না। ভালোই বেশ।এটাও কেন জানিনা মনে হচ্ছে লোকটা বেশ চেনাও আমার! কি জানি!

খানিকক্ষণ চুপ থাকার পর উনিই জিজ্ঞেস করলেন

-কোথা থেকে ফিরছ?

-কলেজ। আপনি?

-আমি অফিস থেকে। তা এই সময়ই ফেরা হয় বুঝি?

-হ্যাঁ। মোটামুটি এই সময়েই। তবে এ.সি বাসে রোজ ফিরি না। আজ অনেকদিন পর ফিরলাম।

- আমিও। অনেকদিন পর এসি বাসে! ভালো লাগে এরকম ঢিক ঢিক করে ফিরতে ! বলো! আজ নেহাত ওলা টা পেলাম না। কিছু প্রবলেম আছে। তাই না?

- ঠিক জানি না। আমি আসলে এমনি বাসে ফিরি। আজ শরীর টা খারাপ লাগছিল বলে ফাঁকা এসি বাস টায় উঠে পরলাম।

-বলো কি গো! রোজ এই সব ধাক্কাধাক্কি সামলে যাও! পারো বটে! তা কোন কলেজে পড়ো?

-এম. জি কলেজ।

-wow!আমিও ওই কলেজ থেকেই pass out।

-তাড়াতাড়ি কলেজ টা থেকে বেরোতে পারলে বাঁচি।

- পরে খুব মিস করবে, দেখো। এখন যেমন আমার মনে হয় আবার কলেজ লাইফে ফিরে যাই।

কথা বলতে বলতে প্রায় বাড়ির গলির সামনে চলে এলাম।একটা অদ্ভুত ব্যাপার জানেন!

লোকটার সাথে কথা বলতে মন্দ লাগছে না। যে লোকটার সাথে আমার স্ট্যান্ডার্ড,মানে দেখুন উনি ওলায় যান, আমি পাতি বাসে যাই রোজ, তারপর লাইফস্টাইল,এরম সবকিছুর কত ফারাক! সবচেয়ে বড় ব্যাপার সুরঞ্জনা কে নিজের গার্ল ফ্রেন্ড বলে দাবি করছে লোকটা! তাও লোকটার সাথে মনে হচ্ছে যেন অনেক্ষন গল্প করে যাই। নিজেই বুঝছি না ব্যাপার টা।

-কি ভাবছো! আমরা বেশ ভালো বন্ধু হয়ে উঠলাম না এই টুকু time এ। exactly, আমিও সেটাই ভাবছি just।

-হা হা! আমাদের ভাবনার ও তবে মিল পাওয়া গেল!

- আরেকটা সিগারেট চলবে নাকি?

- না না। আপনিও আর খাবেন না । এত ঘন ঘন উচিত নয়।

-বলছো যখন, আর খাবো না।

-আরেকটা অদ্ভুত ব্যাপার জানেন আপনিও দেখছি গোল্ড ফ্লেক ই পছন্দ করেন। আমার ও না তাই পছন্দ।

- ও তাই নাকি!

প্রতিদিনের মতো আজ ও একটা কুকুর, ওর নাম দিয়েছি কালু, এলো আদর খেতে। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। একটা বিস্কুট দেই। ও চলে যায়। আজ ও দিলাম। উনিও দেখি একটা বিস্কুট বার করে দিলেন কালু কে।

-ওর নাম না কালু! জানো!

-আমিও তো ওকে কালু নামেই ডাকি।

বাড়ির সামনের গলিটা এসে গেছে দেখলাম।এবারে এনাকে বিদায় জানাতে হবে। কিন্তু মনে হচ্ছে কি জানেন, খুব পরিচিত এক বন্ধুকে বিদায় জানাতে হবে। যাই হোক! কিছু তো করার নেই। এভাবেই কত ক্ষনিকের বন্ধু আসে, আবার হারিয়েও যায়!

- দাদা, এই গলিতে আমার বাড়ি। আমি তবে…

- বলো কি গো! এই গলিতে তো আমার ও বাড়ি।

হঠাৎ করে লোডশেডিং এর অন্ধকার ভেদ করে একটা গাড়ির হেডলাইটের আলো চারিদিক আলোকিত করে তুলল।

লোকটির চেহারা প্রথম বারের মতো দেখতে পেলাম।

অবিকল আমার মতো দেখতে।কয়েকটা ফারাক বলতে আমি পরে আছি টি শার্ট,জিন্স। উনি শুটেড বুটেড।আমার চোখে চশমা, ওনার বুকপকেটে সানগ্লাস।একটু বয়সের ফারাক। এই সব টুকটাক।এসব বাদ দিয়ে চেহারার গঠন, চোখ, নাক, মুখ সব হুবহু আমি বসিয়ে দেওয়া।

উনিও ব্যাপার টা লক্ষ করেছেন। একটু অবাক হয়ে মুখে একটা অদ্ভুত হাসি রেখে উনিও চেয়ে আছেন আমার দিকে।

-আমরা এতক্ষন কথা বললাম। অথচ নামটাই জানা হয়নি দেখুন।

উনি হাত টা বাড়িয়ে দিলেন হ্যান্ড শেক এর জন্য।

-hello,আমি পুস্পক মুখার্জি।

আমি হাত টা মেলাতে গিয়েও পুরো থ মেরে গেলাম। এটা কি করে হয়!

উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন

-তোমার নাম টা?

থতমত খেয়ে বললাম “পু স প ক মুখার্জী”।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy