STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Drama Inspirational

3  

Manab Mondal

Abstract Drama Inspirational

মনের অসুখ

মনের অসুখ

4 mins
22

সকাল সকাল ঘুম ভেংগে গেলো রূপার চিৎকারে।

"দিদি টাকা অল্প কিছু দিন না,ঘরে চাল নেই,ওর কাজও নেই,বাচ্ছা গুলো খিদের জ্বালায় কেঁদে কেঁদে শেষ দিদি,মা হয়ে আমি আর পারছি না গো কিছু টাকা দিন না দিদি, "

রূপা বলল "বাবা দেখন মায়ের জন্য এই সব উটকো ঝামেলা গুলো জরো হয়।এই যাও তো কোথা থেকে এসে সব জুটে, আমি কি টাকার কুবের নাকি, কোনো টাকা নেই,এখন যাও ,এখান থেকে"

"দিদি-বেশি লাগবে না, পঞ্চাশ, একশো টাকা হলেও হবে,,লাগলে বলুন আমি আপনার ঘরের কাজ করে দিচ্ছি,বাসন মেজে দি আপনার?বা জঙ্গলেটা সাফ করে দিচ্ছি ।"

রূপা তারো স্বরে চিৎকার করে বললো "না বললাম না,কোথা থেকে এসেচে কে জানে আবার বাড়ি বইয়ে এনে ভাইরাস দিয়ে যাবে, এখন বিদেয় হও, প্রসাদ টসাদ হবে না , মা বৃন্দাবন গেছে।"

"সত্যি বলছি দিদি খিদের জ্বালা যে বড় জ্বালা গো, বাচ্চার চোখের জল সহ্য করা যায় না দিদি," ধরাম করে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয় গৃহ কর্তি রূপা উপর ওঠে এলো।

বন্ধ দরজার দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে দাঁড়িয়ে থাকে এক হতভাগা মা, আজও তার বাচ্চারা অভুক্ত ই থেকে যাবে হয়তো,নায়তো আজ লাগলে চুরিই করবে তবুও বাচ্চার মুখে খাওয়া যোগাবেই হয়তো ওই মা, বাচ্চার কষ্টের জ্বালা যে চোর হওয়ার জ্বালা থেকে অনেক বেশি। এসব ভাবতে ভাবতেই নিচে নেমে গেলাম আমি । মহিলাকে পিছন থেকে ডাকলাম আমি। সে বুজতেই পারে নাই, কেন আমি ডাকলাম। চেনে না সে তো আমায়।

আমি জিজ্ঞেস করলাম"-কে তুমি??তোমাকে তো আগে কখনো দেখি নাই,আমাদের বাড়ির চেনো কি করে? "

"আপনি আমাকে চিনতে পারলে না দাদাবাবু, আমি অতশী গো, আমার মা তোমদের বাড়ি কাজ করতো। আমি এ পাড়ায় ঝি খাটতাম। করোনা পর কেউ কাজ দিচ্ছে না।মুদি দোকান আর ধার দিচ্ছে না।আমি এক হতভাগা মা, বাচ্চার মুখে খাবার জোগাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছি, কিন্তু কেউ বুজতেই চাইছে না গরিবের ও খিদে পায়,গরিবের ও কষ্ট হয়"

আমি সাথে সাথে মনিবাগ থেকে টাকা বের করে মহিলার হাতে দিলাম  , বললাম"এই নাও ধরো,

এখন মনে হয় তোমার এই টাকায় কিছুদিন হয়ে যাবে,,তা আবার দরকার পড়লে এসে নিয়ে যেও আমার থেকে কেমন,"

টাকা ধরে মহিলার হাত কাঁপতে লাগলো" এতো অনেক টাকা । দাদাবাবু, টাকা আমার খুব দরকার,আজ কত দিন পরে আমার সন্তানরা আবার পেট পুরে খাবে দাদাবাবু , কিন্তু এতো,অনেক টাকা। আমি কিন্তু ঐ ধরনের মেয়ে ছেলে নয়। ধন্যবাদ লাগবে আমার এতো টাকা লাগবে না "

আমি খুব বিব্রত হয়ে পড়লাম, বললাম " তোমার মা আমাকে কোলে পিঠে করে বড় করছে, সে আমার মায়ের মতো। আমি তার জন্য তোমাকে টাকা দিলাম, কোন বাজে মতলব নেই আমার।"

মহিলা বললো" দাদাবাবু অনেক ভদ্রলোকের মুখোশ পড়া মুখ খুলতে দেখেছি আমি তাই দয়া দেখলে ভয় পাই, আপনারা শিক্ষিত ভদ্র লোক জন অনেকে হিসাবে করেন যে। দাদা বাবুবার ধার হিসেবে টাকা নিতে পারি। আমরা গরীব ঘরের মেয়ে, গতর খেটে দিতে পারি কিন্তু গতর বিক্রি করতে পারবো না। দাদাবাবু সত্যি সাদা মনে টাকা দিলে ,বাড়ি গিয়ে আগে বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দেবো আপনার আর সারা জীবন ভগবানের কাছে প্রার্থনা করবো আপনি যেনো সব কষ্ট থেকে মুক্ত থাকেন। তবে যদি আবার আসি তবে আমি কিন্তু কাজের বাবদ ই টাকা নেবো, কোরনা কেটে গেল নিশ্চিত কাজের লোক রাখবেন , তখন আমায় রেখেন"


আমি বললাম " ঠিক আচ্ছা তা নেবো,এবার তাড়াতাড়ি বাড়ি যাও,"

এক মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে,একটা শান্তি পেলাম । আমি কাল রাতে মনে যে কষ্ট পেয়েছিলাম সেটা নিমেষে উড়ে গেলো ওই মায়ের খুশি মুখে চলে যাওয়া দেখে । মন মনে ভাবলাম করোনা করোনা তুমি মানুষ মারার ক্ষমতা তো রাখো কিন্তু মানুষের মনের বিষ দূর করার ক্ষমতা নেই তোমার। এই মেয়েটা অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই আজ সাহায্য নিতেও ভয় পাচ্ছে। কি নির্দয় এই পৃথিবী।

সঞ্জয় ওপর থেকে সব কিছু দেখছিলো। ফোন করে বলল " তুই ঐ ছেনাল টাকে টাকা দিলি ?? শালা সেইদিন নেশার ঘোরে একটু জরিয়ে ধরে ছিলাম বলে পরে দিন থেকে কাজ আসে নি ,এমন ছেলান মাগি ওটা , কোন লাভ পাবি নারে ও মাগিকে টাকা দিয়ে।"

আমি বললাম " টাকা দিয়ে শরীর কেনা যায় অনেক , কিন্তু শান্তি কেনা যায় নারে। আজ শান্তি কিনালাম একটু ওসব তুই বুঝবি না। তোর বৌতো নেই হাজার দশেক টাকা খরচ কর নতুন একটা আইটেম এসেছে বাজারে তিন ঘণ্টায় ফুল মস্তি দিয়ে যাবে। কেন এসব ছোট লোক মাগীদের গায় হাত দিয়ে ছুঁচ মেরে হাত গন্ধ করবি।"

ও বলল " সত্যি বলছিস। ভাই নাম্বার আর ছবিটা what app কর।"

আমি বললাম" করছি করছি। তোর কষ্ট আমি বুঝি‌।সত্যি, মহিলার মনে কষ্ট হলে আছে দেবতা। আর পুরুষের কষ্ট হলে আছে পতিতা। বাদবাকি সবাই অভিনয় মঞ্চে শুধুই অভিনেতা। হা হা"

© Manab Mondal


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract