Priyanka Chatterjee

Tragedy

5.0  

Priyanka Chatterjee

Tragedy

মিত্রা

মিত্রা

4 mins
704


নিজের কথা

'পূজোর জন্য আজ রাস্তায় এতো ভিড়।অটোর লাইনে কুড়ি জনের পেছনে আমি। ধুর বাবা রোজ এই দাঁড়িয়ে থাকতে কার ভালো লাগে। ঘরে গিয়েই সেই ক্যাচক্যাচানি। মিতু বকবক করবে।শান্তি নেই। প্রায় ঘন্টাখানেক কেটে গেল,উফ্ এবারে পেয়েছি অটো। বৃষ্টিও পড়ছে টিপটিপ করে। বরটা মরল না বাঁচল জানার প্রয়োজন বোধ করে না।কি ভাবে কে জানে? সেই পাঁচটার সময় ফোন করেছিল। আমি খাওয়াচ্ছি আমি খরচ করছি অথচ আমায় অবহেলা করে। ভালো লাগে না। এদিকে মা আর বাবা খোঁজ নিয়েই যাচ্ছে'। বৃষ্টির তোড় বেড়েই যাচ্ছে। মিনিট দশ পরেই বিবেকানন্দ পার্কে এসে গেলাম।আবাসনের দোতলায় উঠে দেখি ঘরে তালা।সকালে বলছিল, মিঠুনের জন্মদিন। জানানোর প্রয়োজন নেই যে ওরা যাচ্ছে পার্টিতে। আমিও কথা বলব না আজ, ঘরে ফিরুক। তালা খুলে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে দেখি গোটা ঘর অন্ধকার।মনটা খারাপ হয়ে গেল। জামা ছেড়ে মুখে হাতে জল দি। এত ধকল যায়।ছেলেটাও সেরম মা এর ন্যাওটা। পরশু পরীক্ষা। কোথায় পড়বে তা নয়।ফ্রিজে ডিম আছে। রান্নাঘরে ডিম ভাজতে গিয়ে দেখি ডাল ভাত মাছ তরকারি রান্না করা আছে। অগত্যা নিজেই বেড়ে নিজে খেলাম। মাস দুই এই ফ্ল্যাটে এসেছি। খুব বেশী চেনা হয়নি আমার। মিতুকে সবাই চেনে। কারো কিছু দরকারে মিতু লাফিয়ে যায়।কিছু ভালো মন্দ করলেই একে ওকে দেবে। আমার পুত্র আর্য। ডাক নাম দাশু। আমি শ্রীমান অমিত। প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম মিতু ওরফে মিত্রাকে। সব বাধা কাটিয়ে বিয়ে করে ফেলি। দাশু হবার পর থেকে মিতু পালটে গেছে। শুধু ছেলে আর ছেলে। ছেলে আমার পাগলা দাশু। ভীষণ ছটপটে।কিছুতেই সে পড়বেনা। আর মিতুও ওকে পড়াবেই। ঘরে যেন তাণ্ডব হচ্ছে। আর আমায় খালি এই কর আর ওই কর।সকালে ওঠ। ফিল্ম দেখোনা। টিভি আস্তে কর। স্মোক কোরো না। এই জন্য বিয়ে করতে নেই। কিন্তু এ বাবা রাত এগারোটা যে। কোথায় গেল ওরা???

  অগত্যা নড়েচড়ে আমি ফোন করি। ফোনতো সুইচ অফ্ বলছে। মিঠুনের বাড়ির ফোন নম্বর নেই আমার কাছে।পাশের দুটো ফ্ল্যাটে খোঁজ নিলাম। ওরাও জানে না। উপরে পরেশকাকুর ঘরে গিয়ে দেখি তালা দেওয়া। এদের কাছে মিতু খুব আসে।আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। পরেশ কাকুকে ফোন করতেই উনি ধরলেন। আমার চারিদিকটা খুব ফাঁকা লাগছে।কি বলছেন উনি। মিতু হাসপাতালে ভর্তি!! একটা ক্যাব নিয়ে হাসপাতালে যাই। মিতু আই সি ইউ তে ভর্তি। দাশু কাকিমার কোলেই ঘুমিয়ে গেছে।বুকের ভেতরটা মুচড়ে যাচ্ছে।ডাক্তার বলছে স্ট্রোক। ওভার টেনশন।চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে আমার মিতু। দাশু ঘুম ভেঙে বলছে ও বাবা, মা কোথায়, মা ঠিক হয় নি এখনো?? কাকিমা বললেন "বাবা সংসারে দুজনকে মানিয়ে নিতে হয়।দুজনেই যে দুজনের পরিপূরক। মেয়েটা কদিন ধরেই বলছিল বুকে বড় ব্যথা কাকি। আজ দাশুকে এনে খাইয়ে পড়াতে বসিয়ে জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলেছে।দাশুইতো খবর দিল।" চুপ করে রইলাম।বড্ড কষ্ট হচ্ছে আমার। কদিন ধরেই ছেলের পড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। কিন্তু সে তো হয় সব সংসারে।হ্যাঁ আমি খেয়াল করিনি ওর দিকে। কিন্তু এত বড় শাস্তি!!

        এক রাতেই সব শেষ। মিতু বাপ মা মরা মেয়ে। আমার বাবা মা কাল আসবে। অবশ্য সবই তো শেষ। কি করে শুরু করব জানি না। ভোরবেলা দাহকাজ শেষ করে ঘরে এলাম। দাশু এক নাগাড়ে কেঁদে চলেছে। ঘরটাকে কি কুশ্রী লাগছে।সব যেন ছন্নছাড়া, শ্রীহীন। কি সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতো মিতু। দাশু হঠাৎ বলল আমায় --"কেন দিতে মাকে কষ্ট? দেখ মা চলে গেছে। আর আসবে না। আর ঝগড়া করবে না। মা বলত ভালোবাসলে যত্ন করতে হয়, খেয়াল রাখতে হয়।" মিতু বলেছিল যে ইদানিং ওর বুকে ব্যথা হচ্ছে, মাথা ঘুরছে, আমি টাকাও দিয়েছিলাম ডাক্তার দেখানোর জন্য, ও যে অভিমান করে ডাক্তার দেখায়নি তা জানতাম না। নিজেকে নিয়ে যে বড্ড ব্যস্ত ছিলাম।

  বেশ কিছু দিন কেটে গেলেও আজও আমার বড্ড কষ্ট হয় মিতু নেই বলে।ছেলের চোখে অপরাধী আমি। পছন্দের মাছের ঝোল, ইস্ত্রি করা জামা, আদা দেওয়া চা, ওর কথা বলা, কখনো জোর করে সকালে উঠিয়ে লেবুজল দেওয়া আরো কত কি, পুরো ভালোবাসাটা খুব মিস করি। ঘরে তাণ্ডব হয় না আর। দাশু দুষ্টুমি করে না। নিজের ব্যাগ গোছায়।পড়া তৈরি করে। চোখের আড়ালে ওর মা এর জামায় নাক ডোবায়, বলে "মা এর গা-এর গন্ধ আছে।" রাতে ঘুমের ঘোরে "মা মা "বলে মা কে খোঁজে।আমি এখন সকালে উঠি, ছেলেকে পড়াই, টিফিন বানাই। বাকিটা বাবা মা সামলে নেন। ছেলের যত্ন নি। মিতু এটাই চাইতো। রাতে ছেলেকে জড়িয়ে শুই।দাশু "মা মা" বলে কেঁদে উঠলে ওকে ভালোবেসে বলি এই তো মা আছে তো। শুধু আমায় আগলে রাখার মানুষটাই নেই। ঘুম না আসলে মিতুর ফটোর সামনে বলি "মাত্র সাতটা বছর রইলে মিতু! ক্ষনিকের অতিথির মত এলে স্বর্গসুখে ভরিয়ে আমায় চলে গেলে।রাগ হলে ঝগড়া করতে, চলে কেন গেলে আমায় রিক্ত করে।" বুুঝি ফটোর ওপাশ থেকে মিতু হাসে আর বলে, "সেদিন যদি একটু পাশে থাকতে আমিও তোমার সাথেই থাকতাম"।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy