Mitali Chakraborty

Tragedy Action Inspirational

3  

Mitali Chakraborty

Tragedy Action Inspirational

মহৎ:-

মহৎ:-

3 mins
347



পুজো নিয়ে তখন উত্তেজনা তুঙ্গে। শরৎমেঘের ভেলায় চেপে মনের গুমোট ভাবটাও কাটতে থাকে একটু একটু করে। এ'বছর সুমন খুব খুশি। প্রথমবার পুজোর বোনাস হাতে পাবে সে। গতবছর পুজোর পরেই তো সরকারি চাকরিটা পেয়েছিল সুমন। কবে থেকে ইচ্ছে ছিল পুজোর সময় বাবা মাকে নতুন কাপড় উপহার দেওয়ার। গেলো বছরের প্রায় পুরোটাই তো চাকরি বাকরি কিছুই ছিল না, ওই দুটো টিউশনি আর বাবার সঞ্চিত অর্থ থেকেই একবেলা ভরপেটে আরেকবেলা আধপেটে খেয়ে দিন কাটছিল তাদের। কিন্তু কথায় আছে না যে অন্ধকার শেষেই আলোর আবির্ভাব। অবশেষে মা দুর্গার কৃপায় প্রাথমিক স্কুলের চাকরিটা পেয়ে গেল সুমন। স্বভাবতই সুমনের মনে তখন আনন্দ আফুরান। পুজোর বোনাস হাতে পেলে কী কী কাজ সেরে ফেলতে হবে সেটা নিয়ে পরিকল্পনাও করেছিলো অনেক।


****************


বোনাসের টাকাটা হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরছে সুমন। তখন সকাল গড়িয়ে দুপুর প্রায়। স্কুল থেকে তার বাড়িটা নেহাত কম দূরে নয়। অনেকটা সময় লাগে বাড়ি পৌঁছতে। কিন্তু আজ ক্লান্তি তেমন ভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছে না সুমনকে। নিজ মনে গুনগুন করতে করতে করতে ধীর পায়ে হেঁটে ফিরছিল সে। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় হেঁটে আসাই সুমনের বরাবরের অভ্যাস। এমন সময়

হঠাৎ সে পিছনে সাইকেলের শব্দ শুনতে পায়। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে তাদের পাড়ার হারুদা সাইকেল নিয়ে তরিঘড়ি আসছে তার দিকেই। 

হারুকে দেখেই সুমন বলে, "আরে ও হারুদা? এত তাড়াহুড়ো করে চললে কোথায়?"

হারু মুখ তুলে তাকায়। তার মুখে বিষাদের ছাপ স্পষ্ট। সুমনের দিকে তাকিয়ে শুকনো গলায় উত্তর দেয়, "আমার ছোটভাইটা হাসপাতালে ভর্তি রে সুমন। অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে!" আর কিছু বলতে পারছে না হারু। ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে। সুমন তাকে সান্ত্বনা দিলে সে জানায় তার ঘরে টাকাকড়ি প্রায় কিছুই নেই। ভাইয়ের ওষুধের খরচ বাবদ এই মুহূর্তে অনেকগুলো টাকার দরকার। হাসপাতালে তার বাড়ির লোকেরা আছে। সে বেরিয়েছে, যদি কিছু টাকার জোগাড় করতে পারে। 

হারুর কথা শুনে আর শান্ত থাকতে পারে না সুমন। একমুহুর্ত একটু চুপ থেকে বলে, "চলো হারুদা,আমিও যাবো তোমার সঙ্গে হাসপাতালে। পরিস্থিতিটা কী একটু বোঝা দরকার.." 

সুমনের কথায় হারুর মুখে যেন প্রাণের সঞ্চার হয়। হারুর সাইকেলে চেপেই ওরা দু'জন রওনা হয় হাসপাতালের দিকে।

হাসপাতাল চত্বরে দেখা হয়ে গেলো হারুর পরিবারের বাকিদের সঙ্গেও। সবার মনেই উৎকণ্ঠা, ভয়। সুমন গিয়ে কথা বলে নার্সের সঙ্গে। নার্সের দেওয়া ওষুধের প্রেসক্রিপশনটা হাতে নিয়েই দৌড়ায় ওষুধের দোকানে। কড়কড়ে দুটো দুহাজার টাকার নোট ওষুধের দোকানির হাতে তুলে দেওয়ার সময় সুমনের হাতটা কেঁপে উঠেছিল একবারের জন্য। কিন্তু নিজেকে সংযত করে টাকাটা দিয়ে ওষুধগুলো তুলে দেয় হারুর হাতে।

*****************

হাসপাতালের ঝক্কি সেরে বাড়ি ফিরতে অনেকটা দেরী হয়ে গেল সুমনের। বাড়ি ফিরে দেখে তার মা দাওয়ায় বসে, আর বুড়ো বাপ ঘরে বাইরে পায়চারি করছে। চাকরি পাওয়ার পর কিছুদিন আগে সুমন একটা মোবাইল কিনে দিলেও ওরা এখনও যন্ত্রটার ব্যবহারে সেভাবে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি। আর সুমনও উত্তেজনার চোটে ভুলে গেছে ওদের ফোন করতে।

সুমনকে বাড়িতে ঢুকতে দেখে বাবা মায়ের ধড়ে যেন প্রাণ এলো। সুমনের মা কাছে এসে দেরি হাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করতেই পুরো ঘটনাটা খুলে বলে সুমন। বলতে বলতে চোখের কোনটা চিকচিক করে উঠছিল তার। হাতে এখন পুজো বোনাসের টাকা প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই। ছেলের মনের দশা আঁচ করতে পারেন মা। সুমনের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করে বলেন, "দুঃখ করিস না বাপধন। তুই তো একটা মহৎ কাজে টাকাটা খরচ করেছিস। নাই বা হলো এই বছর নতুন কাপড় চোপড়। একটা মানুষের জীবনের দাম যে এই কাপড় চোপড়ের থেকে অনেক বেশি। প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করি টাকার গরিমায় তুই যেন অন্ধ না হয়ে যাস বাবা। এমনই থাকিস আজীবন


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy