মেল প্রস্টিটিউট একজন পুরুষ বেশ্যার গল্প ৪
মেল প্রস্টিটিউট একজন পুরুষ বেশ্যার গল্প ৪
পর্ব ৪
(লেখকের কথাঃ গত বছর ‘অন্য পুরুষের গল্প’ পেজে আমার একটা ধারাবাহিক প্রকাশিত হয়েছিলো ‘কল বয়’। সেই গল্প অনেকের ভালো লেগেছিলো আবার অনেকে আমাকে ব্যাক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন। এই গল্পটা অনেকদিন মাথায় এসেছিলো আর লিখলাম। গল্পটা আমি উৎসর্গ করলাম পেজের সব পাঠক এবং সামজীদ, রহস্য, দিহান, নিশো, মেঘ, পরাগ ও রক্তিমকে।)
মহান সমাজ,
তোমরাই ওই রাস্তার মোড়ে, কিংবা
ফেসবুক আর গে ডেটিং অ্যাপে আমাদের যৌবন খোঁজো।
কেউ খোঁজো টপ,
কেউবা বটম।
কেউবা কচি আবার কেউ বুড়ো ভাম।
তাইতো আমি আর আমরা সবাই
নষ্ট পুরুষ সত্তা।
ইনবক্স বলি কিংবা ওয়াটসআপ, গ্রাইণ্ডার, ব্লুড থেকে অন্যান্য অ্যাপ... এক গতানুগতিক কথা আর জিজ্ঞাস্য।
বয়স কতো?
বাড়ি কোথায়?
রোল কি?
সাইজ কতো?
প্লেস হয়?
পিক দাও?
ন্যুড দাও?
এই পাঁচ থেকে সাতটা লাইন মিললে শুরু একটা জান্তব খেলা।
সবার একই প্রশ্ন একই বাসনা।
কেউ কেউ আবার একটু অন্যভাবে ভাব জমায়, মানে কয়েকদিন আলাপ তারপর নানান আছিলায় জেনে নেয় একই জিনিষ।
সমকামী বলুন কিংবা উভকামী সবাই ভজন, নামাজ আর প্রেয়ারের আছিলায় স্ট্রেইট সেজে ঘুরে বেড়ায়।
মেসেজ পার্লার কিংবা রাতের বিছানায় শরীরের খিদে মিটিয়ে বেড়াল সেজে বলে ‘মাছ খাই না, দুধ খাই না’
দার্জিলিং
হাঁটতে হাঁটতে আচমকা থমকে দাঁড়িয়ে প্লাবনের চোখে চোখ রাখে অনুভব। অনুভবের এই মর্মভেদী দৃষ্টিতে টলে যায় প্লাবন। ‘জিগোলো’, ‘কল বয়’ ম্যাক বা প্লাবনের বুকের মধ্যে দামাল ঝড় ওঠে।
“চলুন সামনেই গ্লেনারিজ। একটু বিয়ার সসেজ দিয়ে খাবো।”
হেঁটে দুইজনে ঢোকে সত্যজিৎ রায়ের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ সিনেমার সেই বিখ্যাত গ্লেনারিজে।
“এই সেক্সি কিউট বয় কি হয়েছে?”
“কি আবার হবে?”
“কি ভাবছেন?”
“সেরকম কিছু না।”
“আমার সম্পর্কে ভাবতেই পারেন আপনি। কপালে কি অদ্ভুত ক্লায়েন্ট জুটল রে বাবা।”
মাথা নিচু করে প্লাবন।
এই খবরটা আপনাদের কাছে না থাকলেও আমার কাছে আছে...
পান খেয়ে পিক ফেলা দালালগুলো গোধূলি, দ্বিপ্রহর, ভোরের স্নিঘতা বেচেছে এই সমাজের বাজারে আর তার বিনিময়ে কিনেছে ওদের রাতগুলো...
সমকামী-উভকামী-হিজড়ে কিংবা রূপান্তরিত হোক না কেন সবার মনের কোটরে জমে থাকা রাত কিন্তু একটা হিংস্র দানব...
এই সমাজের বুকে প্রতিটি রাতে সমকামী-উভকামী-হিজড়ে কিংবা রূপান্তরিত সবার সম্ভ্রমের কাপড় মাটিতে লুটোয়...
যোনি-পায়ুর ওপর লাফিয়ে পড়ে একরাশ নিকষ কালো আঁধার...
পিষে-কামরে-চটকে নোংরা করে সত্তাগুলোকে...
“না আপনি ভাবতেই পারেন এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম। বসিয়ে বসিয়ে গল্প করছে।”
“না না। আপনি পেমেন্ট করছেন এবার আপনি গল্প করবেন না কি করবেন সেটা একান্তই আপনার ইচ্ছে।”
“এইভাবে কোন ক্লায়েন্ট সময় কাটিয়েছে?”
“একদম মিথ্যে বলব না তবে দুই বা একজন হবে।”
“দারুণ।”
“আসলে ক্লায়েন্ট যা চায় আমাদের সেটাই করতে হয়।”
“বেশ। আমরা এখানে চার-পাঁচদিন আছি।”
“হ্যাঁ সেটাই আমি জানি।”
“এই ৪-৫ দিন আমি আপনার মতন চলব।”
“মানে!!!”
“মানে আপনার মনের যা যা ইচ্ছে আছে সেটা পূরণ করব। এই ৪-৫ দিন আপনি আপনার মতন করে নিজের ইচ্ছাতে বাঁচবেন কারণ সেটা তো পারেন না।”
“আপনি অকারণ কেন এইসব করবেন?”
“একান্তই আমার ইচ্ছে এবং আপনি এটা করতে বাধ্য।”
কি বলুন তো...
মানবিকতা মনুষ্যত্বের সার্বিক আদালতে আইনের দেবী অন্ধ না কি চোখে কালো কাপড় বাঁধা...
না হলে ৩৭৭ নিয়ে এতো... বাদ দিন...
গান্ধারীর স্বেচ্ছায় অন্ধ হওয়া আবার প্রতারিত হয়ে চোখের ফেট্টি খোলার সাথে নকল মানুষগুলোর মেকি অন্ধত্বের ভেক ধরে থাকার তফাৎ কি?
আসলে চোখে কালো কাপড় পরে আছে আমাদের রোজকার বেঁচে থাকা...
আমরাই তাকে বলি সমাজ, কেউ আবার দেশ বলে...
জন্ম তারপরে শৈশব...
ছেলেবেলার দামাল মাঠ হারিয়ে গিয়েছে অন্ধকারে
জায়গা দখল করে যৌবন শুয়ে আছে মিডিয়া কিংবা ইন্টারনেটের লাল দুনিয়াতে
নেশায় মাতছে জৈবিক চাহিদা।
এই সমাজে সব সম্পর্কের জগাখিচুড়ির মধ্যেই লিভ টু গেদার, ডেটিং, চ্যাটিং এমনকি বার্ধ্যকেও নিয়ম মেনে চুল পেকে যায়।
“আমি কিছুই বুঝতে পারছি না মিঃ অনুভব।”
“শুধু অনুভব আর আপনি?”
“ম্যাক।”
“বাবা-মায়ের দেওয়া নামটা কি?”
“সেটা এই সমাজের অয়াবর্জনাতে জলাঞ্জলি দিয়েছি।”
“খুঁজুন।”
“প্লাবন।”
“প্লাবন আমি হবার মুন্নাভাই সিনেমার জাদু কি ঝাপ্পি। আমি আপনার জন্য আলাদীনের প্রদীপ।”
“আমি কোন কারণ বুঝতে পারছি না। আপনি কেন করছেন এসব? কে আপনি?”
“আপনাদের প্রফেশানে কি ক্লায়েন্টদের প্রশ্ন করা যায়?”
“না মানে...”
“তাহলে কোন প্রশ্ন না প্লাবন। আমার রাগ হলে কিন্তু...”
প্লাবন বুঝতে পারে না কে এই অনুভব?
কি উদ্দেশ্য?
আচ্ছা ‘ইন্টুমিন্টু’ শব্দটার মানে কি জানেন?
যে কোন প্রকারের সেক্সকে প্রকাশ করার ভাষা?
না কি এই পাড়ার হাত কাটা কার্তিকের সাথে পাশের পাড়ার ঝিঙ্কু মামনির লটরঘটরকে বোঝাতে?
আসলে আমরা আপামর বাঙালির যৌনতা সংক্রান্ত শব্দমালা সীমিত...
প্রতিটি বাঙালি কুমিরের কান্না আর কাব্য প্রতিভা নিয়ে জন্মায়... সেখানে কিংবা ট্রেনে-বাসে অথবা চায়ের দোকানে তুফান তোমার সময়ে অফুরান শব্দভাণ্ডার...
অন্যদিকে সঠিক যৌন জ্ঞানের ক্ষেত্রে পা পিছলে আলুর দম...
তাহুলে কি জ্ঞানে খামতি না কি গোড়ায় গলদ?
কেন যৌনতার কথা হলেই বিদেশী ভাষা প্রয়োগ?
আসলে বাঙালির জীবনে সেক্স সহজলোভ্য মানে জলভাত... সেখান যৌনতা বা যৌনশিক্ষা একদম নয়...
আর একটা মজা আছে... সেক্স আর সেক্সুয়ালিটি... আপামর বাঙালির কাছে সেক্স বস্তাপচা প্রাচীন ধারনা... আধুনিক হতে গেলে সেক্সুয়ালিটি চাই... অথচ এটা কেউ ভাবল না যে আলু আর আলুবখোরা এক নয়... বাঙালির কাছে যাহাই বাৎস্যায়ন তাহাই ফ্রয়েড... সবই হলো ইন্টুমিন্টু...
“মিঃ প্লাবন এবার আমাকে জানতে হবে আপনার মনের প্রথম বাসনা বা ইচ্ছে কি?”
ইচ্ছে?
প্লাবনের মনের ইচ্ছে?
জেল থেকে আসার দিন থেকে অবধি প্লাবনের সব ইচ্ছে হারিয়ে গিয়েছে কোথায় একটা।
“আরে কি হলো?”
“না মানে আসলে কি বলব সেটা বুঝে উঠতে পারছি না। সেইভাবে আমার কোন ইচ্ছে নেই।”
আমি সমকামী পুরুষ কিংবা সমপ্রেমী মন।
আমার ছোটবেলার নগ্নতা আঁকড়ে বাঁচিয়েছিলো
আমার প্রথম ভালোবাসাকে।
সময় পেরিয়ে গিয়ে যৌবনের মধ্যাহ্নে,
আমার শত্রু হলো
আমার পুরুষ নগ্নতা।
আমি আমার শৈশবে, কৈশোরে, যৌবনে বারবার প্রতিবার ক্ষতবিক্ষত হতে দেখেছি
আমার সমকামী নগ্নতাকে।
“ইচ্ছেগুলো হারিয়ে গিয়েছে কিংবা চাপা পড়ে গিয়েছে।”
আসলে সত্যি শরীর বেচতে বেচতে প্লাবনের দুইচোখ স্বপ্ন দেখতে ভুলে গিয়েছে। অনুভবকে কি বলবে বুঝতে পারে না প্লাবন। সব ক্লায়েন্টের মধ্যে এই অনুভব একটা অন্যরকমের। অস্বস্তি হতে থাকে প্লাবনের।
“এই চলুন।”
“চলুন মানে কোথায়?”
“আরে চলুন না আমার সাথে।”
আচ্ছা কেন সবাইকে না হলেও অনেককেই নগ্ন লাগে?
বলতে পারেন নগ্নতা কি শারীরিক?
না বোধহয়...
আসল নগ্ন হল সবার মন
সেটা প্রকাশ পায় হাবভাব, আচার-আচরণে।
আচ্ছে দেহে একটাও বস্ত্র না থাকলে সেটা কি নগ্নতা না কি হীন-দীন মানসিকতা বিক্রিত বিবেক হলো আসল নগ্নতা।
কেভেন্টারের সামনে থেকে সাবান গোলা ফুঁ দেওয়া কেনে অনুভব। অবাকভাবে দেখতে থাকে প্লাবন এইসব কান্ডকারখানা। অনুভব পাগলের মতন হাসছে আর সেই হাসি দিয়ে যেন মুক্তো ঝরে পড়ছে।
“নাও ধরো।”
“এটা দিয়ে কি হবে।”
“আরে বোকা ছেলে। ফুঁ দিয়ে সাবানের ফেনা ওড়াও।”
“কেন?”
“আবার প্রশ্ন করে এই ছেলেটা।”
ম্যালে চেয়ারে গা ঘেঁষে বসে সাবানের ফেনাত ফুঁ দেয় প্লাবন।
“সব মন খারাপের সাথে দুখ-কষ্ট-বেদনা মিশিয়ে ফানুসের মতন উড়য়ে দাও তুমি।”
ক্লায়েন্টের মুখে তুমি শুনে থমকায় প্লাবন।
আসলে কি জানেন, আমরা স্বীকার করি কিংবা নাই না করলাম, কারণ সেই দায়বব্ধতা নেই। কিন্তু তবুও এই শিক্ষিত শালীনতার মুখোশ পড়া সুশিল সমাজের প্রতিটি মাঠঘাট, রাস্তার মোড়ে, বিত্তবানের বিছানায়, গরিবের উঠোন কিন্তু একটা গোলাপের স্বপ্নের পচা-গলা শরীর আর দুর্গন্ধ পাবে। সেই সমপ্রেমী শিশু কিংবা যুবক নিজের পরিচয় পরিচিত হতে চাইলেই প্রশ্ন তুলবে এই অচলায়তন সামাজিকতা।
কি উত্তর দেবে সেই সত্তা তখন?
কে শুনছে তার মননের আর্তি?
কলঙ্ক কারোর শরীরে নয় নরং কালিমা লেপা থাকে লোলুপ চোখে তাকিয়ে থাকা লকলকে জিভগুলোতে। গন্ধ পরিচয়ে নয় বরং থাকে সেই বিবমিষা ক্ষণিকের সুখ ভোগের বীর্যপাতে। জানেন আমাকে যেদিন আমাদের পাড়া থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো সেদিন একমাত্র বাবা-মা আর আমার অতীত কেঁদেছিল... কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারেনি...
চোখ বন্ধ করে প্লাবন। ছোটবেলার নিবিরকাকু কিংবা পাড়ার পলাশদা অথবা স্কুলের স্যার এবং কৌশিক। অতীতের সব ঘটনা সব ক্ষত ঝলসে ওঠে, সব দগদগে ঘায়ের রক্তক্ষরণ চোখে জলের ধারা আটকায় না। আচমকা একটা হাতের স্পর্শ অনুভব করে প্লাবন।
“কাঁদলে মন হালকা হয় জানো প্লাবন। আমারও মন খারাপ লাগলে কাঁদি কিন্তু একা। আমার তো কেউ নেই।”
অনুভব একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্লাবনের দিকে। কোথাও এই চোখের অতল গভীরে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। এই মায়াবী চোখের নজর মনের মধ্যে চলতে থাকা সব কিছু পড়তে পারে।
“আবার চলো উড়িয়ে দিই সব মন খারাপ।”
কানের লতিতে অনুভবের চুম্বনের আবার নিজের থেকেই চোখ বন্ধ হয়ে যায় প্লাবনের।
“চলো চলো এবার ফেরা যাক। আজ খাঁটি ষোল আনা বাঙালি খাবার খাবো আমি অর্ডার দিয়ে দিয়েছি।”
মেঘ আকাশের কোলাকুলি আর
জন্তু মানব গলাগলিতে
আদিম ন্যাংটো মানবতা
আবার এসেছে ফিরে।
আমার কেন জানিনা এই নগ্নতা উপভোগ করতে ভালোলাগে... কিন্তু নিজেকে বিলিয়ে দিতে ইচ্ছে করে... আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবার হাতেই মোবাইল... একটা ক্লিকেই শরীরের লালসা-কামনা পূরণ... কার ক্ষমতা আছে সেই তৃষ্ণা না মেটায়? দেশী-বিদেশী চ্যানেল হোক কিংবা ইন্টেরনেটের নিষিদ্ধতা অথবা ডেটিং অ্যাপের প্রাধান্যের কারণেই ভাঙছে এই সমাজ এবং চুরমার হচ্ছে সংস্কার... কিছু পারছেন করতে... খালি চ্যানেলে চ্যানেলে ঘণ্টাখানেক বুলি কপচিয়ে বা মোমবাতি মিছিল করে রণে ভঙ্গ দিচ্ছেন...
আচ্ছা ধরে রাখতে পেরেছেন আদব-কায়দা কিংবা সম্ভ্রম?
নাহ সর্বত্র ব্যার্থতার গ্লানি
পরাভবের কালো ছাপ
রাস্তাঘাটে বিজ্ঞাপনের মোড়কে বিক্রি হচ্ছে নগ্নতা... মনে হচ্ছে মেলা বসেছে শরীর বিক্রির... দেখেও কেউ দেখে না... জানেন আপনারা, অন্ধকার ঘরের বিছানায় প্রতিনিয়ত বিবেকের পর্দা তুলে হাত বাড়ায় পঙ্কিল ছায়া... নিরাভরণ শরীর হল ভোগ... শরীরের খাতে বয়ে যায় জোয়ার-ভাঁটা... নেই কূলকিনারা, নেই চাঁদ কিংবা সুর্য... আছে এক জান্তব আদিমতা...
হোটেলের রিসেপশানে এসে একটু অবাক হয় প্লাবন। কারণ এই প্রথম সে দেখল দুইজনের দুটো রুম বুক।
“ফ্রেস হয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে ডাইনিং রুম। বাঙালি ক্যান্ডেল লাইট ডিনার।”
মন্ত্রমুগ্ধের মতন নিজের রুমে ফিরে এই প্রথমবার শাওয়ারের নিজে দাঁড়িয়ে নিজের শরীর দেখে না প্লাবন। ফ্রেস হয়ে একটা সিগারেট ধরায় প্লাবন। সকাল থেকে তার সাথে যা যা হচ্ছে সব কি কল্পনা নাকি বিধাতার অন্য কোন খেলা।
ডাইনিং টেবিলে গিয়ে আয়োজন দেখে চমকে যায় প্লাবন। গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত সঙ্গে বেগুন ভাজা, বড়ি ভাজা, কাতলা মাছের মাথা দিয়ে ডাল, পমফ্রেটের ফ্রাই, ডাকবাংলো চিকেন আর চাটনি-পাঁপর।
“এই প্লাবন। হাঁ করে তাকিয়ে না থেকে শুরু করো। পেটে ছুঁচো, ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করছে।”
“কি করে বুঝলে আমার পছন্দের খাবার এইগুলো?”
“ভার্চুয়াল মিডিয়া বাবুসোনা। তোমার ওরিজিনাল ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আছে এইসব। এই দেখো।”
অনুভবকে যতো দেখছে চমকে উঠছে প্লাবন। সব নাড়িনক্ষত্র জানে সে।
আপনারা সবাই শিক্ষিত কিন্তু কোথাও প্রথগত শিক্ষার মোড়কের মধ্যেই থাকতে চান কিংবা ভালোবাসেন... তাই তো কন্যাভ্রুণ হত্যা হোক কিংবা নারী নির্যাতন সেটা পৌরুষ বীর্যের মিথ্যা আস্ফালন... শিশুশ্রম নিয়ে মোমবাতি মিছিল নেই অথচ সমকামিতা এখানে শূন্যস্থান পূরণ... আসলে কি বলুন তো সব কিছুই বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো... আজকের এই পাষাণ হৃদয় সমাজে সবাই শুধু নিজেকে ভালোবাসে, খেয়াল রাখে একমাত্র নিজস্বতার, নিজস্ব ভঙ্গিতে ভালো থাকার পন্থা খুঁজে বেরায়, যেখান থেকে পায় মুঠো মুঠো সুখ তুলে জমায়...
“এইসব আমারও ফেভারিট। চলো চলো হাত চালাও।”
অনুভব ভাতের প্রথম গ্রাস নিজের হাতে মেখে খাইয়ে দেয় প্লাবনকে।
“প্লাবন আর অনুভবের আজকের লহমার সাক্ষী এই ভাত।
আমাদের বন্ধুত্বের সূত্রপাত এই খাদ্য।
আজ শুরু হোক নতুন আগামী
লেখা হোক নতুন এক সংজ্ঞা।”
“রান্না দারুণ।”
“এই পাশেই একটা বাঙালি হোটেলের রান্না। দারুণ বানায়।”
“আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেবে?”
“তুমি জানতে চাও তো আমি কেন এইসব করছি?”
“হ্যাঁ।”
“শুধু তোমার যাতে ভালো লাগে। তোমরা তো সবসময়ে ক্লায়েন্টের খুশী রাখতে সব করো তাই না?”
এই তথাকথিত শালীন-শিক্ষিত সমাজ আরো সুখ পায় গরীবদের আরো গরিব করে, শোষিতদের বেশী শোষণ করে আর অভুক্তদের মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে... লজ্জা-শরমহীণ এই মানবিকতা ভণ্ডামির মুখোশ পড়ে সকাল থেকে রাত অভিনয় করে... আসলে একই কারণে রাস্তার মোড়ের পাগলিটাকে মা হতে দেখেও আমার মতন মানুষ নবজাতকের বাবকে খোঁজে...
আমি আসলে উবে যাওয়া কর্পুরের সুবাসে নিজেকে সাজাচ্ছি... হাসছেন আমাকে দেখে... আপত্তি নেই, তবে জঞ্জাল মনে করে আস্তাকুড়ে ফেলে দেবেন না...
আচ্ছা এই পৃথিবীতে কেউ এমন আছে যে হারার জন্য খেলে?
আমাকে কি এমন কাউকে দেখাতে পারবে যে খেলায় জিততে ভুলে যায়?
একটা কথা বলবেন আমাকে, খেলায় জেতা-হারা কি আবশ্যিক?
“আমিও একইরকমভাবে চাইছি তোমাকে ভালো রাখতে। সেটা কি ভুল?”
“ভুল ঠিক জানি না কিন্তু কেন?”
“কারণ ছাড়া কি কিছু করা যায় না প্লাবন?”
“আজকের এই সমাজে যায় না।”
“তোমাদের মতন এই পেশাতে যেসব ছেলেরা আসো তাদের রোজকার কষ্ট দূর করতে চাই। কৈশোর, শৈশব, যৌবন নষ্ট হয় যাদের তাদের একটু আনন্দ, একটু সুখ দিতে চাই আমি। এটা কি খারাপ?”
“কিন্তু?”
“ধরে নাও এটাই আমার জীবনের লক্ষ্য।”
“কিন্তু এইসব পাগলের মতন কাজ। রিস্ক আছে।”
“হ্যাঁ আছে। সেটা যে কোন কাজেই আছে। আমার অনেকে ক্ষতি করতেই পারে।”
ভালোবাসা, আমি তোমাকে চাই...
এই বিশ্বব্যাপী অখণ্ডতার বিনিময়ে।
ভালোবাসা, আমি তোমাকে চাই
আমার একাকী নিঃসঙ্গতায়।
ভালোবাসা, আমি তোমাকে চাই
ঘুম না আসা চোখের চাউনিতে।
ভালোবাসা, আমি তোমাকে চাই
প্রজাপতির ডানা মেলে ওড়া স্বপ্নে।
ভালোবাসা, আমি তোমাকে চাই
দুপুরের ঝলসানো রোদে।
ভালোবাসা, আমি তোমাকে চাই
সব সুখ-দুঃখ, ব্যাথা-বেদনা, আশা-নিরাশায়।
ভালোবাসা, আমি তোমাকে চাই
আদি থেকে অন্ত, সীমা থেকে অসীমে।
নমস্কার অনেক কষ্ট করে চতুর্থ পর্ব অবধি পড়লেন। আগামী পর্বের জন্য চোখ রাখুন ‘অন্য পুরুষের গল্প’ পেজে। লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করে আমাদের সাথে থাকুন।
(ক্রমশ)

