Manab Mondal

Abstract Comedy Inspirational

2  

Manab Mondal

Abstract Comedy Inspirational

মেছো ভুত

মেছো ভুত

4 mins
245


পিসি বাহিরে এলে আমি ছাড়া হাতপা। যখন তখন বেড়াতে পারি বালুদা অপেক্ষা করছে, খাল পারে ডিঙি নিয়ে। একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে তাই মাঠের পথ নিয়েছি। হঠাৎ দেখি আমার দিকে অনেক গুলো আত্মা এগিয়ে আসছে।আমি ভয়ে চুপসে যাচ্ছি। সাধা সাধা ধোয়া গুলো দেখে।তাও আবার রাত তিন টা হবে বোধহয়, পুকুরের মাছ ধরবে তাই যাচ্ছি ভোরে হাঁটে বেচোতো। সামনে আবার সাদা কাপড় পড়া কে যেনো বসে আছে। পেত্নী হলে ঠিক ঘাড় মটকাবে।সেখান থেকেই ধোয়া আসছে। ধোয়া গুলা ছোট ছোট ভুত হবে হয়তো আত্মা হতে পারে হয়তো। ভাবছি পিছনের দিকে দৌড় দিতে পারবো না যখন,তখন আগাই যাই।অনেক সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলাম,আত্মা হোক ,যাই হোক হয়, সালার আত্মা থাকবো নয়তো আমি।

সামনে যেতেই বলদ হয়ে, গেলাম আমাদের গ্রামে সালমা চাচি বিড়ি খাছে।ছেলেরা খাতে দেয় না দেইখা রাতে আইসা চুপি চুপি খাছে। 

একটা কথা বলি , বাংলায় অনেক রকম ভুত আছে কিন্তু সব ভুতকে পাত্তা দিলে চলবে না।শাঁকচুন্নিরা অবশ্য বিবাহিত ভুত। তাই তাদের হাতে থাকে শাঁখা, পলা ও সিঁথিতে সিঁদুর , হাতে শাখ থাকে বলেই এই রকম নাম। সবার বাড়িতে খেয়াল রাখে এরা। আর এ বিবাহিত মেয়ে উপর ভর করে ।

আছে মামদো ভূত ,মুসলমানদের অপঘাতে মৃত্যু হলে তারা হয়ে যায় মামদো ভূত। মামদো নাকি 'মহম্মদ' থেকে এসেছে। মামদোরা ঘাড়ে চাপলে ব জিনে ধরেছে বলা হয়।

মাছপ্রিয় বাঙালি মৃত্যুর পরও নাকি মাছের লোভ সামলাতে পারে না তারাই হয় মেছো ভুত। আর সেই কারণে মরে গিয়েও তারা মাছের সন্ধানে পুকুরের চারপাশে ঘোরাঘুরি করে। এমনকী, রাতে বা ভরদুপুরে কেউ যদি মাছ কিনে রাস্তা দিয়ে ফেরে তাহলে তাদের ঘাড়ে চেপে বসে মাছ ছিনিয়ে নেয় এই ভূত।

ট্রেন বা বাসে কাটা পড়লে মুণ্ডচ্ছেদ হলে, মৃত্যু পর হয় স্কন্ধকাটা ভূত। নিজের কাটা মাথাটার খোঁজেই নাকি সে রেল লাইন ধরে ঘুরে বেড়ায়।

রাতের অন্ধকারে নিশি দের একটু ভয় করা উচিত কারণ তারা আমাদের নাম ধরে ডাকে। জানা নেই যে তারা কীভাবে আমাদের নাম জানে। সেই ডাকে সাড়া দিলেই বিপদ সোজা টেনে নিয়ে যায় ঘরের বাইরে। সেই ডাকে সাড়া দিলে , আর কখনও ফিরে আসা যায় না।

অত্যন্ত দুষ্ট ভূত চোরাচুন্নি । এরা মানুষের অনিষ্ট করে খুব।সাধারণত কোন চোর মারা গেলে চোরাচুন্নি হয়ে যায়, পূর্ণিমা রাতে ছাড়া এরা বের হয় না।

পেঁচাপেঁচি ভূত ধারণাটি পেঁচা থেকে এসেছে, ছেলে আর মেয়ে জোড়া ধরে থাকে ও জোড়ায় শিকার করে থাকে। বাংলার বিভিন্ন জঙ্গলে এদের দেখা যায় , এখানে এর দেখা মিলবে না।

দেও ভূত একটু ভয়ের , পুকুর-ডোবা, নদী জলাশয়ে বসবাস করে। জলাশয়ে স্নান করতে আসা লোকজন কে একা পেলে , এরা নীচ থেকে তাদের পা টেনে ধরে জলের গভীরে নিয়ে চলে যায়।

গলায় দড়িতে জড়িয়ে অপঘাতে গরু মরে গোভূত হয়ে যায় । এদেরওমাথা থাকে না। গভীর রাতে প্রচন্ড খুড়ের শব্দ করে এরা রাস্তা ধরে ছুটতে থাকে।

মানুষ গাছের ডালে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে, সেই আত্মা গাছেই থেকে যায় এদের গেছো ভূত বলে। এরা শুধু ভয় দেখায়।

কানাভুলো ভূতেরা দুষ্টু বেশি পথিকের গন্তব্য ভুলিয়ে দিয়ে ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয় এবং অচেনা স্থানে নিয়ে আসে।

বাঘের আক্রমণে মারা যাওয়া ভুত হলো বেঘোভূত। সাধারণত সুন্দরবন এলাকায় এধরণের ভূতেরা লোকজন কে ভয় দেখায়।

পত্নী, ব্রম্ভদত্যি , আলেয়া দের কথা তো সবাই জানে। যদি ভুতদের মেয়ে ভুত গুলোই ঝামেলা করে বেশি, যেমন ধরুন , পেত্নী, ডাইনী , সব একটু ভয়ঙ্কর।

তালগাছের তলায়, রাজা দা বসে আছে কিন্তু বিড়ি ফুঁকছে না। অন্যদিন ডিঙ্গি চালতে দেয়না আমায় আজ আমকে দিলো। বকবক করছে না। নদীর দিকে ডিঙি নিয়ে যাবো তখন বললো " উঁত্তর দিঁকে চঁল"

আমি বললাম " নাকি গলায় কথা বলছো কেনো?"

ও বললো " সঁর্দিকাঁশি হঁয়েছে তাই,"

প্রথমে ও কে বুঝতে না পাড়লেও পরে বুঝতে পারলাম আমি একটা মেছো ভুত পালায় পরেছি, কারণ রাজা দা কখনো জমিদারের দিঘিতে মাছ চুরি করতে ঢুকবে না। আমি প্রতিবাদ করে বললাম "আমি মাছ চুরি করবো না"

ও মুলোর মতো দাঁত দেখিয়ে বলল" দাঁত গুলো দেখেছিস কামড়ে দেবো কিন্তু।"

আমি বললাম " তুই তো মেছো ভুত , তুই ঘাড় মটকে দিতে পারিস না? কিন্তু কাঁমড় আগে দাঁত ব্রাশ করে আয়, তোর মুখে গন্ধ।"

ও বললো" আমি পেত্নী নাকি যে ঘাড়ে চাপবো, ঘাড়মটকাবো। অতো শতো বুঝিনা, তুই মাছ ধরে দেনা please "

Please বলছে যখন তখন মাছ তো ধরে দিতে হবেই, কিন্তু জমিদারি না থাকলে ও জমিদারদের ছেলেপুলেদের দাপট কমে নি। মাছ চুরি করলে ভীষণ ভাবে ঝামেলা করবে। তাছাড়া যা মাছ ধরবো, এই ভুতটাই তো সব খেয়ে নেবে আমার খাটনি জলে যাবে, থুড়ি ভুতের পেটে যাবে। তাই বুঝি খাটিয়ে বললাম গান না গাইলেও আমি মাছ ধরতে আমি পাড়বো না।

ও তো খুব খুশি হয়ে বললো " কিঁ গাঁন শুঁনবি ? টঁপ্পা, ঠুঁংরি, ভঁজন"

আমি ধমকে বললাম " ও ওস্তাদ আলাউদ্দিন এসেছে আমি যা বলেছি সেটা গা"

ও গাইতে শুরু করলো " রাজার ডিঙি করে

/ ঢুকেছি জমিদারদের পুকুরে / আমি মেছো ভুত/

কি করবে করুক/ দেখে নেবো এলে দশরথের পুত/

আজ রাতে সব মাছ করবো সাবার/ দিখি আটক আমায়কে, / কার ক্ষমতা আছে আটকাবার।"

ফোন ওপারের ছিলো জমিদারে ছেলে দল বল নিয়ে হাজির সে। কিন্তু মেছো ভুতের কোনো সাজাই হলো না। কারণ মেছো ভুতটা ছিলো জমিদার নিজে। বরং আমার মাছ ধরা বন্ধ হলো কারণ ও আমাকে আর ছাড়বে না ।🥺


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract