মায়াবতী
মায়াবতী
মায়াবতী
— কামরান চৌধুরী
শীতের বিকেল।কর্ণফুলীর নদী সংলগ্ন অভয়মিত্র ঘাটের এক কোণে চড়ুই পাখির মতো সরল এক জুটি রিসাত এবং অনন্যা আজ নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে।দুই জন দুই দিকে একমনে তাকিয়ে কি যেন দেখছে।হঠাৎ করে এই চড়ুই জুটির নিশ্চুপ থাকাটা অনেক কৌতূহলের জন্ম দেয়।
এভাবে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকার পর হঠাৎ ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে রিসাত।তারপর তার গায়ে জড়ানো চাদর ঠিক করতে করতে অনন্যাকে জিজ্ঞেস করলোঃ
- "তোমার এতো মন খারাপ হয় কেনো?"
(এটি শুনে অনন্যা একটু আশ্চর্য হয়ে রিসাতের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো)
- "কই আমার তো মন খারাপ হয় না!"
- "তোমার প্রায় সময় মন খারাপ হয়।কিন্তু কেনো মন খারাপ হয় তুমি তা বলো না।"
- "তুমি পাঞ্জাবীর সাথে কেনো চাদর গায়ে জড়াও তা কি আমি জিজ্ঞেস করেছি কখনও?"
- " তা অবশ্য করো নি। তবুও বলতে চাই একজন মায়াবতী যদি শাড়ী পড়ে যদি গোলাপী রঙের শাল গায়ে জড়িয়ে আমার পাশে বসে থাকতে পারে। তাহলে আমিও সেই মায়াবতীর পাশে পাঞ্জাবী সাথে চাদর গায়ে জড়িয়ে বসে থাকতে পারি।"
এটি শুনে অনন্যার মুখে মৃদু হাসি দেখতে পেল রিসাত।অনন্যাকে হাসতে দেখলে রিসাতের মনে যেন শীতলতা অনুভূত হয়।
- "দেখো, মাঝেমধ্যে মানুষের মন খারাপ কোনো কারণ ছাড়াও হয়।কিন্তু কেনো হয়? তার উত্তর গায়ে জড়ানো রঙিন শাল বা চাদরের মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যায় না।"
রিসাতকে বললো অনন্যা।
- "বুঝতে পেরেছি আজ মায়াবতীর ভীষণ মন খারাপ। কিন্তু আমি চাই না আমার মায়াবতীর মন খারাপ হোক। মায়াবতীর মন খারাপ বদলে মন ভালো হোক। এই যে দেখো আমার পাঞ্জাবীর পকেটটা আবারও ছিড়ে গিয়েছে।ওরে! তোমার জন্য দুটো গোলাপ এনেছিলাম,সেগুলো গেলো কই?"
- আপনার বাম হাতে কি এটা? কলম?
এটি শুনে রিসাত কিছুটা বোকা হওয়ার ভাব নিলো এবং তার বাম হাতের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো
- এই দেখো, আমার নিজের হাতে গোলাপ থেকেও পকেটে গোলাপ খুঁজি।
- ভুলো মনের মানুষের ভান ধরেও হয়ে আপনার নাটক আমি বুঝি!
- বাহ্, কি কবিতা ছিলো। হা হা হা।
এটি শুনে অনন্যাও রিসাতের সঙ্গে একটু উচ্চস্বরে একসাথে হাসতে লাগলো।যেন মনে হচ্ছে অনন্যার অকারণে মন খারাপ থাকার অসুখটা সেড়ে উঠেছে। মায়াবতীদের আসলে মন খারাপে মানায় না, তাদের হাসতে দেখতে যেমন সুন্দর দেখায়,তেমনি তাদের চোখের মায়াগুলোর উপরও প্রেম বাড়তে থাকে। তাই রিসাতের মতো সরল প্রেমিকদের হয়তো ভাগ্যবান চড়ুই প্রেমিকও বলা চলে।